প্রায়ই রাস্তা-ঘাটে, অফিস-আদালতে, নিজেদের বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের মাঝে আমরা একটা অদ্ভুৎ জিনিস আবিষ্কার করে থাকি- তা হলো কেউ কেউ একা একা আনমনে বা নিজের সাথে কথা বলে। একা একা কথা বলা সেসব মানুষকে আমরা প্রায়ই একটু পাগলাটে বা একটু আনমনা বা আত্মভোলা ভেবে থাকি। তবে আমরা অনেকেই জানিনা এই একা একা কথা বলা বা সেল্ফ টক আসলেই কি।
একা একা কথা কিন্তু আমরা মাঝেমধ্যে অনেকেই হঠাৎ বলে ফেলি। রাগে দুঃখে বা ক্ষোভে আমরা অনেক সময় একা একা নিয়তীর সাথেও কথা বলি। রাগে পাগল হয়ে চিৎকারও করে উঠি। এছাড়াও আমরা আমাদের আশেপাশেও অনেক বাচ্চাদেরকে দেখি যারা খেলতে গিয়ে একা একা কথা বলে। খেলনার সাথে বা তার পুতুলের সাথে কথা বলে। এসব খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু এসব ছাড়াও একা একা কথা বলা তখনই সতর্ক সংকেত বয়ে আনে যখন মানুষ সিজোফ্রেনিয়ার মত মানসিক রোগে ভোগে।তাদের কথা গুলোর মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকে না। আমরা অনেক সময়ই এমন টাইপ মানসিক রোগীদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনবরত কথা বলতে দেখি। কেউ কেউ ট্রাফিক কন্ট্রোল করেন বা একা একাই বক্তৃতা দেন।
কিন্তু কেনো মানসিক রোগীরা এমন একা একা কথা বলে? আসলে মানসিক রোগীদের এমন একা একা কথা বলার প্রধান কারণ তাদের অডিটরি হ্যালুসিনেশন। অডিটরি হ্যালুসিনেশন হলো অবাস্তব কিছু শুনতে পাওয়া। এমনটা শুনেই আৎকে ওঠার কারণ নেই কারণ অনেক সময়ই স্বাভাবিক মানুষেরাও গভীর চিন্তায় থাকলে বা অসতর্ক থাকলে শুনতে পারেন। এটি অবশ্য শ্রুতি ভ্রম বা হঠাৎ করে শোনার ভুল বা অনেক সময় অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, টেনশন, ডিপ্রেশন, এনজাইটি এসব কারণে হতে পারে। এছাড়াও যারা মদ, গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা এই টাইপের ড্রাগ এডিক্টেড তাদেরও অনেক সময় অডিটরি হ্যালুসিনেশন হয়।
কিন্তু মানসিক রুগীদের ক্ষেত্রে এই অডিটরি হ্যালুসিনেশন মাঝে মধ্যে না অনবরত হতে থাকে। তারা অনবরত শুনতে থাকেন, তাদের কেউ ডাকছে, তাদের সাথে কেউ কথা বলছে, কিংবা তাদের নিয়ে কেউ কিছু বলছে। তাই তারা এসব কথার উত্তর দিতে থাকেন বা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নানা রকম উদ্ভট কান্ড কারখানা ঘটায়। এসব উত্তর আর কথাবার্তা সাধারণত অগোছালো এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
যাইহোক রোগীর কানে গায়েবি কথা আসছে। মানে রোগীর হ্যালুসিনেশন ঘটছে। এবং তা অডিটরী হ্যালুসিনেশন। এই হ্যালুসিনেশনের নানা রকম আছে যেমন-
(ক) কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীকে সরাসরি তুমি বা তুই সম্বোধন করে হ্যালুসিনেশন ঘটে থাকে। যেমন তুই শব্দ, তুই ঘরের বাইরে যা, তোর দিন শেষ বা যাও দরজা খুলে দাও.... এ টাইপহ্যালুসিনেশনের নাম সেকেন্ড পারসন হ্যালুসিনেশন।
(খ) কোনো কোনো সময় যেন দুই বা ততধিক লোক রোগীকে নিয়ে আলাপ করছে মনে হয়। রোগীর অবস্থান অনেকটা থার্ড পারসনের মতো। যেমন আর্কিওপটারিক্স একজন পন্ডিৎ ছেলে ওর মজা দেখানো হবে, নিজামউদ্দিন কই গেলো? রাকু হাসান এবার লিখবে এর নাম থার্ড পারসন হ্যালুসিনেশন।
(ঘ) কোনো কোনো ক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশনের ধরন আরো মজার। রোগী মনে মনে যা চিন্তা করে সেটিই সে শুনতে পায়। কেউ যেন তার মনের মাঝের চিন্তাগুলোকে শুনিয়ে যাচ্ছে। চিন্তাগুলো কথার মাধ্যমে শোনার মাঝেও নানা রকমফের বিদ্যমান। কেউ কেউ মনে চিন্তা আসার আগেই কানে শুনতে পায়, সেটিই পরক্ষণে চিন্তনে রূপ নেয়। অপর দল চিন্তা সমসাময়িকে শব্দ বাক্যে শুনতে পায়। তৃতীয়পক্ষের বেলাতে প্রথমে চিন্তা মনে আসে। অতঃপর মনের সে সব চিন্তা কেউ যেন সশব্দে উচ্চারণ করে শুনিয়ে দেয়। যেন চিন্তাগুলো মনের মাঝে প্রতিধ্বনিত হতে পারে।
(ঙ) এক ধরনের শ্রবণ হ্যালুসিনেশন গায়েবি আওয়াজের অবস্থান সার্বক্ষণিক। ক্রিকেটের ধারাবিবরণী প্রকাশের মতো করে ব্যক্তি যেন রোগীর কার্যকলাপ বলেই যেতে থাকে। যেমন করিম ভাত খাচ্ছে, ভাতের সাথে সামান্য তরকারি নিল, তার তরকারি ভালো লাগছে না…। এ ধরনের হ্যালুসিনেশনের নাম রানিং কমেন্টারি।
ঠিক এমনটি ঘটতে পারে শ্রবণ ক্ষমতার বেলাতেও। আমাদের শোনার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। বাংলাদেশে বসে আমেরিকায় কোনো আত্মীয় কথা বলছে তা শোনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মানসিক রোগে এ অসম্ভব সম্ভব হয়ে যায় মনের মাঝের কোনো এক অজানা প্রক্রিয়ায়। রোগী তার কাছ হতে হাজার মাইল দূরে থাকা কারো কথা শুনতে পায়। এর নাম এক্সট্রা ক্যাম্পেইন অডিটরি হ্যালুসিনেশন।
ফাংশনাল হ্যালুসিনেশন এটি আরেক ধরনের মজার শ্রবণেন্দ্রিয় হ্যালুসিনেশন। কেউ হয়তোবা বাথরুমে গিয়ে পানির ট্যাপ ছাড়ল আর সাথে সাথে কানে গায়েবি আওয়াজ আসতে শুরু করে দিল। মজার ব্যাপার হলো যখনই পানির ট্যাপ বন্ধ করে দেয়া হয় তখন সাথে সাথেই কানের শ্রবণেন্দ্রিয় হ্যালুসিনেশন বন্ধ হয়ে যায়।
যাইহোক হ্যালুসিনেশন কথাটির সাথে মনে হয় অনেকেই পরিচিত তবে হ্যালুসিনেশন বলতে অবাস্তব কিছু দেখা বা শোনাকেই বুঝানো হয়।
হ্যালুসিনেশন অডিও, ভিজুয়াল বা অনেক ধরনের হয় যেমন-
ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টিভ্রম - এই হ্যালুসিনেশনে মানুষ দেখে তার সামনে কারো ছায়া বা জীবন্ত মানুষই যে কথা বলে বা ইশারা করে। অথবা অনেকেই দেখে মৃত প্রিয়জন অথবা অচেনা কাউকেই।
এক্সট্রা ক্যাম্পেইন হ্যালুসিনেশন- দৃষ্টির সীমানার বাইরে কিছু দেখা আবার এক্সট্রা ক্যাম্পেইন হ্যালুসিনেশন। এখানে রোগী দেখে সে পরীস্থানে কোনো পরীর সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে বা টাইটানিক করে ভেসে বেড়াচ্ছে।
রিফ্লেক্স হ্যালুসিনেশন- এটা ইন্টারেস্টিং এক রকম হ্যালুসিনেশন যা হয় মানসিক রোগীদের। রোগী চোখের সামনে লাল নীল রঙ এর আলো ভাসতে দেখে কিংবা তার কানের মধ্যে ভেসে আসে কোনো শব্দ বা মিউজিক। কাজেই রিফ্লেক্স হ্যালুসিনেশন ফাংশনাল হ্যালুসিনেশন থেকেও আরও চমকপ্রদ। এখানে রোগী শুধু কানেই শোনে না, তা চোখেও দেখতে পায়। মানে কানের শ্রবণ উদ্দীপনাতে ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন শুরু হয়ে যায়। গাঁজা বা এলএসডি আসক্তিতেও এটি দেখা যায়।
অটোস্কোপিক হ্যালুসিনেশন- নিজেই নিজের দেহকে সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পাওয়াকে বলে অটোস্কোপিক হ্যালুসিনেশন। আমার লাইফে আমি এমন রোগী দেখেছি। ঘোরতর মানসিক রোগে এমনটা হয়। তবে ডিপ্রেশন, এনজাইটি, মানসিক চাপ, অনিদ্রা এসবেও হেলুসিনেশন হতে পারে।
স্মেল হ্যালুসিনেশন- এটা খুব কম পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ ধরনের হ্যালুসিনেশন হয়। গন্ধের হ্যালুসিনেশন সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় মৃগী রোগে। মৃগী রোগীরা খিঁচুনি আসার আগ মুহূর্তে নাকে রাবার পোড়া গন্ধের মতো বিশ্রী গন্ধ পায়। ভাইরাস সংক্রমণ, ব্রেন টিউমার, ব্রেনে আঘাত লাগা বা ব্রেন অপারেশনের ফলে ঘ্রাণের হ্যালুসিনেশন হতে পারে। কোনো কোনো ওষুধ বা রাসায়নিক দ্রব্য ঘ্রাণের হ্যালুসিনেশন সৃষ্টি করতে পারে।
সেন্সেশন হ্যালুসিনেশন - এ ধরনের মানসিক সমস্যায় রোগী অনেক সময় বলে তার স্কিনের ওপর দিয়ে বা নিচ দিয়ে শুয়ো পোকা চলছে। কারো কারো মনে হয় কেউ তাকে ইলেকট্রিক শক দিচ্ছে।
টেস্ট হ্যালুসিনেশন- জিহ্বার হ্যালুসিনেশনে রোগী কোনো এক অজানা জায়গা হতে খাবারের স্বাদ পেয়ে থাকে।
বিষণ্নতা রোগে হ্যালুসিনেশন - আমাদের অনেকেই ভাবি হ্যালুসিনেশন কেবল সিজোফ্রেনিয়ার মতো মারাত্মক সাইকোসিসে ঘটে থাকে কিন্তু তা নয় হ্যালুসিনেশন অন্যান্য অনেক রোগেও ঘটতে পারে। যেমন মৃগীরোগ, বিষন্নতা, হিস্টিরিয়া এমনকি ব্রেন টিউমারের বেলাতেও। বিষন্নতা রোগে মূলত দু’ধরনের হ্যালুসিনেশন ঘটে থাকে। একটি অডিও হ্যালুসিনেশন আর আরেকটি ভিজু্য়াল হ্যালুসিনেশন। কানের হ্যালুসিনেশন প্রায়ই ক্ষেত্রে সেকেন্ড পারসন হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে। কানে কানে কেউ বলে যায় অমুক তারিখে তোর মরন হবে। সামনে তোর মহা বিপদ ইত্যাদি ইত্যাদি।
সিজোফ্রেনিয়া রোগী ও বিষণ্নতা রোগীর মাঝে হ্যালুসিনেশনের পার্থক্য হলো বিষণ্ন রোগী কানে ভেসে আসা কথাগুলোকে একদম যৌক্তিক ধারণা করে মাথা পেতে নেয়। সিজোফ্রেনিয়ার রোগী এগুলো শুনে মেন্টাল ডিস্টার্বড হয়। হ্যালুসিনেশনে রোগি প্রথমদিকে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সে ভাবে এমন কেনো হচ্ছে! তাদের চাহনী উদ্ভ্রান্ত ও আতঙ্কিত হয়। অনেকে সামনের লোককে আঘাত পর্যন্ত করতে পারে। কারণ হ্যালুসিনেশনে কানে কোনো আদেশ আসতে থাকে। একে কমান্ড হ্যালুসিনেশন বলে।
ডিমেনসিয়া বা পারকিনসন রোগেও এমন হতে পারে- ডিমেনশিয়া আক্রান্তরা সাধারণত ষাট পঁয়ষট্টি বয়সের উর্ধ্বে হন। তারা প্রায়ই অলিক কথা বলেন। সোজা দোষ দিয়ে দেন আপনজনদের বিরুদ্ধেও। তারা বলে থাকেন কেউ তাকে মেরে ফেলতে চায় বা কেউ তাকে আটকে রাখছে। একে দেখেছেন তাকে দেখছেন এসব। এ এটা বললো, সে ওটা করলো এসবও।
এমন আচরণ দেখে অনেকেই বলে থাকে ভীমরতি রোগে পেয়েছে । তবে ডিমেনসিয়াতে এসব হবার কারণ হ্যালুসিনেশন।
ডিলিউশন বা ভ্রান্ত বিশ্বাস - ডিমেনসিয়া রোগে অনেক সময় ডিলিউশন হয়। রোগী অনেক উলটা পালটা কথা বলেন, আজগুবী কাজকর্ম করেন বসেন, সন্দেহ করেন সবাইকেই।
পারসিকিউটরি ডিলিউসন এর জন্যে ডিমেনসিয়া আক্রান্ত পরিবারের বয়োবৃদ্ধরা অনেক সময় বলেন, তার সকল সম্পত্তি তারই ছেলে মেয়েরা আত্মসাৎ করতে চাচ্ছে, এমন কি তাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছেন।
লস অব ইনহিবিশন - নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে অপ্রীতিকর কোন আচরন করাই লস অব ইনহিবিশন। সাধারণত ফ্রন্টো-টেমপোরাল টাইপের ডিমেনসিয়াতে ব্রেইনের ফ্রন্টাল লোব ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে এমন হয়।
হ্যালুসিনেওশনের কারণ- অনেক ধরনের মানসিক রোগ বিশেষ করে স্কিজোফ্রেনিয়াতে অনবরত হ্যালুসিনেশন হয় কারন ব্রেইনের ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটারের ইমব্যালেন্সের কারণে। এ নিয়ন্ত্রণে সাইকিয়াট্রিস্টরা ডোপামিন রিসেপ্টর ব্লকার ঔষধ দেন। এ ওষুধ সেবনে অবিশ্বাস্য রকম ভাবে হ্যালুসিনেশন বন্ধ হয়ে যায়। রোগীদের একাএকা কথা বলা কমে আসে। এক সময় সে সাধারণ মানুষের মতই সুস্থ হয়ে উঠে।
ইলিউশন এবং হ্যালুসিনেশন - হ্যালুসিনেশন আর ইলিউশন দুটোই বুঝতে পারার ভুল বা বিভ্রান্তি। তবে ইলিউশনে কোনো উদ্দীপক থাকে কিন্তু হ্যালুসিনেশনে তেমন কোনো উদ্দীপক থাকে না। রজ্জু দেখে সাপ ভাবার প্রবাদ মনে হয় এমন ইলুশন থেকেই এসেছে। যেমন সামনে একটা দড়িবা সুতা পড়ে থাকতে দেখে তাকে সাপ বা সাপের বাচ্চা ভেবেই ভয়ে মরা। কিন্তু যদি কোনো দড়ির অস্তিত্ব ছাড়াই কেউ সাপ দেখতে পায় তাহলে তা হ্যালুসিনেশন।
কখন ইলিউশন ঘটে? হ্যালুসিনেশনের মতো ইলিউশনও স্বাভাবিক অবস্থাতে ঘটতে পারে। নানা অবস্থাতে ইলিউশন ঘটে থাকে। এ ধরনের কয়েকটা অবস্থা-
(ক) যখন উদ্দীপন তীব্রতা কমে আসে তখন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষও ইলিউশনের শিকার হতে পারেন। বা ক্রমাগত ভুল ধারনা পোষম করা, ভূতের ভয় পাওয়া এমন মানুষও ইলুশন দেখতে পারে। অন্ধকারে ছায়া দেখে কোনো জীব জন্তু ভেবে ভুল করা বা গাছের আরালের আবছায়াকে কোনো সত্যিকারের মূর্তী ভাবা।
(খ) ব্যক্তির সজ্ঞানতাও ইলুশনের কারণ হতে পারে। যখন কোনো রোগের কারণে আমাদের হুঁশ অবস্থা কমে যায় তখনো এমন বিভ্রান্তি ঘটতে পারে। জ্বরের প্রকোপে বা এমন কোনো রোগে।
কিছুদিন আগে সাইকিয়াট্রিস্ট মো. সাঈদ এনামের একটি আর্টিকেল পড়তে গিয়ে মনে পড়ে গেলো জীবনের নানা সময়ে নানাভাবে দেখা আমার জীবনের কিছু মানুষের কথা। এমন এক প্রায় সিভিয়ার পর্যায়ে চলে যাওয়া রোগীকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম আমি। এবং খুব দ্রুত বুঝতে পারায় সাইকিয়াট্রিস্টের দ্বারস্ত হয়েছিলাম। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ্য এবং সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে। তাই আমাদের সকলেরই উচিৎ পরিবারের যে কোনো একজনের মাঝেই এমন সব সিমটম দেখতে পেলে বুঝতে চেষ্টা করা আসলেই তার সমস্যা কি ও সমাধান কোথায়।
সাইকিয়াট্রিস্ট সাঈদ তার পোস্টে লিখেছিলেন,
একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর চেম্বারে কিংবা একটি মানসিক রোগ হাসপাতালে গেলে অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করা যাবে যে রোগী বা রোগিণী কে এক মাস আগেও অসংলগ্ন কথা বার্তা আর আচারন নিয়ে আসা হয়েছিলো, যাকে অনেকটা ধরে বেঁধে মেরে চেম্বারে আনা হয়েছিলো, এক মাস পর সে কি সুন্দর সুস্থ..! দিব্যি সবার সাথে চলাফেরা করছে, গালগল্প করছে, কাজকর্ম করছে। হাসছে..., কি সুন্দর নিষ্পাপ সেই হাসি।
ঠিক তাই আশা হারালে চলবে না। যে কোনো মানসিক আঘাত না মানসিক সমস্যাগুলো রোগী নিজে বুঝতে পারেনা। সবার আগে বুঝতে পারে তার পরিবারের প্রিয়জনেরাই। তাই প্রিয়জনকে রক্ষা করতে প্রিয়জনদেরকেই সচেতন হতে হবে, রক্ষা করতে হবে। একটি জীবন অনেক মূল্যবান। এই মূল্যবান জীবনে সুন্দর করে বেঁচে থাকার অধিকার সকলের। শুধু সেই চেতনাটি যখন হারিয়ে যায় তখনই প্রয়োজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার। সেই হাতটি হতে পারে আপনার.....
সবাই ভালো থাকুক। হাসি আনন্দ গানে আর সাফল্যে কেটে যাক প্রতিটি জীবন .....
মনে রাখতে হবে হ্যালুসিনেশন কোনো রোগ নয়, এটা রোগের একটা উপসর্গ। যেই রোগের উপসর্গ হিসেবে হ্যালুসিনেশন দেখা দেয় হ্যালুসিনেশনের পাশাপাশি সেই রোগের অন্যান্য উপসর্গ উপস্থিত থাকে। সামগ্রিকভাবে সেই অসুস্থতাটি ব্যক্তির পারিবারিক সামাজিক ব্যক্তিগত পেশাগত জীবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করে, তাহলে সেই অসুস্থতার চিকিৎসা নিতে হবে আর মূল অসুস্থতার চিকিৎসা করালে হ্যালুসিনেশন এমনিতেই চলে যাবে ।
যাইহোক এটা হ্যালুসিনেশনের একটা ছবি। গুগল সার্চ দিয়ে পেলাম। মাই গড! কি সুন্দর হ্যালুসিনেশন চোখ! আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
আর এই যে আমিও এঁকেছি.......
হায় হায় আমিও হ্যালুসিনেশন উপসর্গে ভুগছি নাকি!!!!!!!!
যাইহোক হ্যালুসিনেশনে ভুগে ভুগে আমি স্মরণ করছি আমার প্রিয় পুরোনো চেহারার সামহ্যোয়ারইন ব্লগটাকে! স্মরণ করছি আমার প্রিয় ভাইয়া আর আপুনিদেরকে। তাদেরকে অনেক দিন দেখিনা। ওহ অনেকদিন না দেখার ফলে কোনো হ্যালুসিনেশন হলে সেটাকে নিশ্চয়ই মিসিং সামওয়ান হ্যালুসিনেশন সিম্পটম বলে! সো আই এম সাফারিং ফ্রম মিসিং হ্যালুসিনেশন!!!
মিস ইউ মাই আগের সামু!
তাড়াতাড়ি ফিরে আসো ঠিক আগের মত করে !
সহযোগী বই-
Hallucinations – Oliver Sacks
A Dictionary of Hallucination- Blom, Jan Dirk
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:৪৫