আনন্দ রে আনন্দ, তুই কোথায় থাকিস বল।
তুই কি ভোরে ফুলের বুকে শিশির টলমল??
তুই কি সারা দুপুর জুড়ে খাঁ খাঁ রোদের খেলা?
নাকি সবুজ ঘাসের বুকে প্রজাপতির মেলা?
মাঝে মাঝেই আমি যখন আনন্দে ভাসি তখন আমার আহসান হাবীবের লেখা এই কবিতার এই লাইনগুলি মনে পড়ে। আর এই মনে পড়ার কারণ আমার আনন্দ কই থেকে আসে, কেনো আসে, কিভাবে আসে আমি তা প্রায়ই ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারি না। শুনেছি ডোপামাইন আর সেরাটোনিন এই দুই হরমোনের খেলায় নাকি মানুষের মস্তিস্কে আনন্দ বেদনার সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হয় আমার মাঝে এই সেরাটোনিন নিশ্চয়ই মাঝে মাঝেই বেড়ে যায় নইলে অকারনেই এত আনন্দ আসে কেনো আমার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ?
যাইহোক বলছিলাম আনন্দ নিয়ে। আসলেই তো আনন্দ মানে কি?
একবার আমার এক আত্মীয়ার বিষন্নতা রোগ হলো। তাকে ডক্টর দিলেন সেরাটোনিন ওয়ালা এক মেডিসিন। সেই তখন থেকেই জানা হল সেরাটোনিন বিষন্ন মানুষকে আসন্ন ওপস স্যরি আনন্দিত করে। তারপর সেই রোগীর তো আরও ভয়াবহ অবস্থা। যেই মানুষ মুখ গোমড়া করে পড়ে থাকতো ঘরের কোনে সারাদিন সেই মানুষটাই অকারণে হে হে করে হাসে। খুশিতে এইদিকে দৌড়ায়, ঐ দিকে লাফায়। তার লাফ ঝাঁপ ডিগবাজী দেখে তো তাড়াতাড়ি তার সেরাটোনিন মেডিসিন বন করে দেওয়া হলো। কিন্তু হ্যাঁ তার সেরাটোনিনের প্রভাব দেখে সেই প্রভাব পড়লো গিয়ে আমার উপর। হা হা হা মানে তার পাগলামী আনন্দ দেখে আমার পাগলামী আনন্দ বহুগুন বেড়ে গেলো। আমি তো হাসতে হাসতেই শেষ। সেরাটোনিন মেডিসিন ছাড়াই।
যাইহোক আমি অনেক ভেবে দেখেছি এবং খুঁজে বের করেছি আমার মাথায় আসলেও বুঝি সেরাটোনিন একটু বেশিই আছে। নইলে কারণে অকারনে আমার আনন্দ আসবে কেনো? যেমন দুনিয়ায় কত শত গল্প নাটক নভেল আছে এবং তার মাঝে যে সব পড়েওছি আমি তবুও সবার মাঝে আমার সবচেয়ে মজাদার বইটাই যা এই জীবনে পঞ্চাশ ষাটবার পড়েছি সেটাই হাস্যরসের শিবরাম রচনা সমগ্র হবে কেনো?
শিবরাম রচনা সমগ্র
ওহ ডোপামাইনও নাকি আনন্দের এক বিশাল কারণ। এই ডোপামাইনের কার্য্যকলাপ পড়তে গিয়ে তো আমি একদম আমার আনন্দের উৎস খুঁজে পেলাম। ডোপামাইন বা ডোপামিন নাকি আমাদের সার্বিক মুড বা মনের ভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে। আবেগ বা উত্তেজনায় আমরা কিভাবে সাড়া দেব, তাও ডোপামিন নিয়ন্ত্রণ করে। ডোপামিনকে নাকি ফিলিং গুড হরমোনও বলা হয়।
যে কাজে পুরস্কার লাভের সম্ভাবনা আছে সেই কাজ করার প্রেরণা যোগায় ডোপামিন। আরে এত দেখছি একেবারেই আমি। ছোট থেকেই আমাকে এই করতে হবে সেই করতে হবে। এই প্রেরনা তাহলে ডোপামিনই যোগালো!!!!! আচ্ছা!
আরও দেখি ডোপামিনের প্রভাবে কি কি হয় আমাদের মাঝে। ডোপামিন এর প্রভাবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ কাজ যেমন ভালো পরীক্ষা দেওয়া, বিশেষ কোনো কাজ আয়ত্ত করা যেমন সাইকেল, গাড়ি, নৌকা ( নৌকাটা অবশ্য শেখা হয়নি) চালানো বা সাঁতার শেখার মত কাজ করে আমরা তৃপ্তির আস্বাদ পাই। আরো ভালো করে কাজ করার প্রেরণা পাই। ঠিক ঠিক নৌকা চালানোটা খুব তাড়াতাড়ি শিখে ফেলতে হবে। কারন আমার মধ্যে ডোপামিন আছে।
ডোপামিনেরই অনুপ্রেরণায় আমরা নাকি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিজেকে নিযুক্ত করতে পারি। এর মধ্যে পড়ে স্কিইং, স্কাই ডাইভিং, সি সার্ফিং,প্যারা গ্লাইডিঙ,রিভার রাফটিং,মাউন্টেনিয়ারিং বা স্কুবা ডাইভিং এর মত এডভেঞ্চারাস স্পোর্টস। হায় হায় এইসব শুনে তো আবার আমার সন্দেহ হচ্ছে। যাকগে সব কিছু ডোপামিন আমাকে দিয়ে করাতে পারবে নাকি! ফুহ!
যাইহোক আবারও বলছি আমার আনন্দ নিয়ে। এই দুনিয়ায় কত শত অস্কার পাওয়া ম্যুভি হয়, কত কি হয় তবুও আমার পছন্দ কেনো সবচাইতে বেশি মিঃ বিন ? থ্রী স্টুজেস? ডোনাল্ড ডাক কার্টুন বা টম এ্যান্ড জেরী?? হুম!! সবই ডোপামিন, সেরোটোনিন এর খেলা। খুব বুঝা হয়েছে আমার!!!!
মিঃ বিন
যাইহোক আবারও বলি আমার আনন্দের কথা। কত শত নাচই তো দেখি, কত শত নাচই তো নাচি। তবুও কেনো ঐ নাচটাই সবচেয়ে পছন্দের? ঐ যে ঐ যে মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে তা তা থই থই তা তা থই থই তা তা থই থই .....
তাই তো আমি মাঝে মাঝে ক্লাস ট্লাস ফেলে আমার বাচ্চাদেরকে নিয়ে নেচে উঠি -
Don't think about it
Just move your body
Don't think about it
যাক নাচ গান গল্প, সিনেমা অনেক আনন্দ নিয়ে কথা হলো এইবার আসি গোমড়ামুখো দুঃখী মানব মানবীরা কেমনে হাস্যমুখী হতে পারে সেই বুদ্ধিটা নিয়ে। অঞ্জন দত্তের একটা গান আছে।
ভেংচি কেটে দেখ, লেংচে হেঁটে দেখ......
একটা ডিগবাজী পাচ্ছে হাসি খেক......
ভেংচি কেটে দেখ, লেংচে হেঁটে দেখ
হা হা হা খুবই পাগলাটে গানা হলেও কথা কিন্তু সত্য। সকল গোমড়ামুখো ভাইয়া আপুনিরা তোমরা যদি নিজেদের মাঝে আনন্দের হরমোন সেরাটোনিন ডোপামিন বাড়াতে চাও তো এখুনি আয়নায় দাঁড়িয়ে পড়ো। ভেংচি কাঁটো, লেংচে হাঁটো বা একটা ডিগবাজী খেয়ে দেখো আমি হলফ করে বলতে পারি আনন্দ বা হাসি পাবেই পাবে এবং খুশ হয়ে যাবেই যাবে। হা হা হা
শুনলাম এক মেয়ে অলিভিয়া তার নাম তার নাকি দুঃখ বেদনা, যন্ত্রনা কিছুই নেই। নেই খানাদানা নেই ঘুম তাই নাকি সে রোবট মানবী কিংবা এলিয়েন। বাপরে এটা কি জিনিস জানিনা আমি।
শেষে একটা মজার কথা বলি-
কিছুদিন যাবৎ পেঁয়াজ পেঁয়াজ করে মানুষজন নিজেরাই পেঁয়াজীবড়া হয়ে পড়েছেন। আমি অবশ্য পেঁয়াজ রসুন তেল নুনের খবরে আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করি না। কিন্তু সবার এত পেঁয়াজ পেঁয়াজ দুঃখ দেখে আমি ঘোষনা দিলাম আমরা এখন থেকে আর পেঁয়াজই খাবো না।
শুধু শুধু দুঃখ পাবার আমি বান্দা না। পেঁয়াজ না খেলে কি কেউ মরে যায়? মোটেও না কখনও না। হু হু সেরাটোনিন ডোপামিনের আনন্দে ভাসা মানুষ আমি। এই জীবনে কেউ দুঃখ দিতে পারলো না আর দেবে কিনা ঐ ফেসফেসে পেঁয়াজ!!!!!!! কাভি নাহি!!!!!!!!
কাজেই বসে বসে বের করে ফেললাম কিছু নিউ স্টাইল মজাদার রেসিপি। আর তারপর আনন্দে ভাসলাম আবারও-
আমার নিউ স্টাইল কিছু খানা খাদ্য রেসিপি-
১। চিকেন পেঁয়াজাড়িয়া-( পেঁয়াজ+এড়িয়া বা এভোয়েডিয়া)
গরম মসলা সব রকম,হলুদ মরিচ গুড়া, লবন আর পানি দিয়ে মুরগী টুকরা সিদ্ধ করে নিতে হবে। তেলে কাঁচা মরিচ ফালি দিয়ে ভেঁজে নিতে হবে। তাতে আদা রসুন বাটা মসলা দিয়ে নাড়তে হবে। কিছু টোমাটো টুকরা দিতে হবে। জিরা ধনে গোল মরিচের গুড়া দিতে হবে।
সিদ্ধ মুরগীর টুকরো গুলো দিয়ে নাড়তে হবে। একটু পানি দেওয়া যেতে পারে। পানি শুকিয়ে নিয়ে হাল্কা বা বেশি ঝোল যা ইচ্ছে তাই রাখা যাবে। হয়ে গেলো মজাদার চিকেন পেঁয়াজাড়িয়া বা পেঁয়াজ+এড়িয়া বা এভোয়েডিয়া।
চিকেন পেঁয়াজাড়িয়া
২। চিকেন পেঁয়াজাছাড়িয়া (পেঁয়াজ+ ছাড়িয়া)
তেল কড়াতে দিয়ে গরম হলে মাংসগুলো ছেড়ে দিতে হবে। নেড়ে চেড়ে কিছুটা ভেঁজে নিয়ে তুলে নিতে হবে। সেই তেলে টোমাটো পেস্ট, মরিচ বাটা দিতে হবে। জিরা ধনে, লবন, হলুদ গুড়া দিতে হবে। গরম মসলা দিয়ে নেড়ে চেড়ে ঢেকে দিতে হবে। এবার চিকেন টুকরোগুলো দিয়ে নেড়ে চেড়ে নিতে হবে। একটু পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। হয়ে গেলো মজাদার চিকেন পেয়াজাছাড়িয়া। উপরে কাঁচামরিচ দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া যায়।
চিকেন পেঁয়াজাছাড়িয়া
৩। মাখনি মাখন চিকেন পেয়াজাহীনা (পেঁয়াজ+ হীনা)
চিকেন টুকরো, আদা বাটা, রসুন বাটা মরিচ গুড়া লবন দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। ১৫ মিনিট পরে হাল্কা তেলে ভেঁজে নিতে হবে।
অল্প তেলে টোমেটো, আদা রসুন, লবন দিয়ে ভাঁজতে হবে একটু পানি দিতে হবে। ২ টেবিল চামচ ভিনেগার দিতে হবে। অল্প একটু চিনি, গরম মসলা পাউডার, একটু মরিচ গুড়া নেড়ে চেড়ে নিতে হবে ১৫ মিনিট। নরম হয়ে আসলে চুলা বন্ধ করে দিয়ে ভালো করে ঘুটে ছেঁকে নেওয়া যায় বা ব্লেন্ড করা যাবে। এই ব্লেন্ডটার মধ্যে মাখন আর ভাঁজা চিকেনগুলো দিয়ে কিছু গুড়া মেথি দিয়ে নাড়তে হবে। মেথি গুড়া আর ক্রিম দিয়ে পরিবেশন করা যায়।
মাখনি মাখন চিকেন পেয়াজাহীনা
শুধু কি চিকেন? ফিসও রেঁধেছি আনন্দ নিয়ে।
দূরদূর পেঁয়াজা মাছের কালিয়া
রুই বা কাতলা টুকরো হলুদ লবনে মেখে নিতে হবে। চুলায় সরিষার তেল দিয়ে মাছগুলো ভেঁজে নিতে হবে। আলু টুকরো করে কেটে ভেঁজে নিতে হবে। কাঁচা জিরা, তেজপাতা, শুকনা মরিচ, দারচিনি এলাচ গরম তেলেনেড়ে নিয়ে টোমাটো টুকরা দিতে হবে। আদা রসুন বাটা, মরিচ গুড়া, হলুদ লবন, নেড়ে একটু পানি দিয়ে কষিয়ে প্রথমে আলু এবং আলু সিদ্ধ হয়ে আসলে মাছের টুকরোগুলো ছেড়ে দিতে হবে। ঝোল কষে আসলে গরম মসলা জিরা গুড়া ও একটু ঘি ছড়িয়ে দিতে হবে। এই মজার দূর দূর পেঁয়াজা রুই কালিয়া খেলে আর কেউ ভুলবেই না।
দূরদূর পেঁয়াজা মাছের কালিয়া
ভাগ যা পেঁয়াজ ইলিশ সরিষা/ ভাপা ইলিশ/ইলিশ পাতুরী ( ইলিশে তো পেঁয়াজের চৌদ্দ গুষ্ঠিরও কোনোই প্রয়োজন নেই)
পেঁয়াজাবিহীন সব্জী সব্জা ইউটিউবে দেখে নেওয়া যায় হাজার হাজার
মুলাজী
একটু আগে খেলাম মুলাজী। মুলাজী হলো পেঁয়াজীর সৎভাই। পেঁয়াজীর মূমুর্ষ শয্যায় সে আমাদের মনোরঞ্জনে এসেছেন।
চিকন করে মুলা কেটে নিয়ে তাদে ডাল বাটা, কাঁচামরিচ আর লবন দিয়ে মেখেই ভেঁজে নিয়েছি পেঁয়াজীর সৎ ভাই মূলাজী!!!!!!!! ইয়াম্মী!!!!!!!!!
কাজেই নো মোর দুঃখ!!!!!!! শুধুই আনন্দে বাঁচো!!!!!!!!! আনন্দে হাসো, আনন্দে কাঁদতেও পারো...... সেরাটোনিন ডোপামিন তোমার হাতের মুঠোয়, পেঁয়াজের সাধ্য কি কাঁদায় তোমাকে !!!!!!!!!! ভেংচি কাটি, লেংচে ছুড়ি, ডিগবাজী দিয়ে ছুড়েই ফেলি পেঁয়াজকে আর পেঁয়াজের চৌদ্দ গুষ্ঠিকে..........
ভেংচি কেটে দেখ, লেংচে হেঁটে দেখ......
একটা ডিগবাজী পাচ্ছে হাসি খেক......
ভেংচি কেটে দেখ, লেংচে হেঁটে দেখ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:১০