বছর খানেক আগে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মহোদয় শাড়ি নিয়ে প্রথম আলোতে একটি নিবন্ধ রচনা করেছিলেন।
এই নিবন্ধ পাঠ করে বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী তো বটেই সিংহভাগ পুরুষও ঘৃনায় ছিঃ ছিঃ করে করে উঠেছিলেন। যেন তারা রসময় গুপ্তের কোন প্রবন্ধের চেয়েও খারাপ প্রবন্ধ পাঠ করেছেন।
তবে আমার কাছে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ এর লেখাটি একটি অনন্য সাধারণ লেখা মনে হয়েছিল।
শাড়ি নিয়ে যদি বাংলাদেশের দশটি ভালো লেখা থেকে থাকে তাহলে এটা তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।
এমন একটা সময় ছিল যখন শাড়ি আর নারী পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিল । একটাকে বাদ দিয়ে অনবরত আরেকটাকে কল্পনাই করা যেত না। নারীদের সার্বক্ষণিক পোশাকই ছিল শাড়ি। সময়ের প্রয়োজনে অথবা অন্য কোনো অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশের নারীরা এখন অনেকটাই শাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন বলা যেতে পারে।
এখন কয়টা মেয়ে পাওয়া যাবে যে শাড়ি পড়ে কলেজে যায়, বিশ্ববিদ্যালয় রায়। কয় জন মহিলাকে পাওয়া যাবে শাড়ি পরে অফিস করতে যান বা অন্য কোন কাজে যান ? আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগেও নারীরা যেভাবে শাড়ি পরতেন এখন তারা আর আগের মতো শাড়ি পরেন না। আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগে তরুণ তরুণীরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গামী মেয়েরা কেউ কেউ এবং একটু বয়স্ক মহিলারা সবাই শাড়ি পরতেন।
কিন্তু সময়ের আবর্তে এখন কোন বয়স্ক মহিলাও শাড়ি পরতে চাচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা সালোয়ার-কামিজ পরছেন। আবার বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে অনেকে যদিও শাড়ি পড়ছেন কিন্তু সেটাও করছেন কিম্ভূতকিমাকার পোশাক হিসেবে। এখনকার নারীরা আগের মত ব্লাউজ পরেন না। হালে ফুলহাতার একটা অন্য রকম জামা পরেন। এটার সাথে আগের দিনের ব্লাউজ এর কোন মিল থাকেনা । সাথে অতিরিক্ত একটা কাপড় তারা মাথায় পেঁচিয়ে কিন্ভূতকিমাকার করে রাখেন।
তাদেরকে আগের মত চিরন্তন আবহমান বাংলার নারী মনে হয় না। এর পিছনে কারণটা আসলে কি?
মূলত দুটি কারণে মানুষ শাড়ি পরা বাদ দিয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
প্রথমত পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের তুলনায় বাংলাদেশে বর্তমানে ধর্মীয় গোড়ামী অনেক বেড়ে গেছে। হুজুরদের দাপটও পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের চেয়ে শতগুণ বেড়ে গেছে।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে আমরা দেখতে পাই অনেক নারীই শাড়ি পরে ঢাকার রাজপথে মিছিল করছেন । ১৯৬৯/৭০ এর আন্দোলনের সময় অনেক মহিলাকে দেখা গেছে তারা শাড়ি পড়ে আন্দোলন করছেন।
বর্তমান সময়ে সেটা আর ভাবাই যায় না। মহিলাদের শাড়ি না পরার আরেকটা কারণ হল শাড়ি পরে দ্রুত হাঁটা সম্ভব হয় না। তবে এটা একটা গৌণ কারণ ।ধর্মীয় কারণ টাই বেশি।
শাড়ি পরিহিত শ্রীলংকান নারী
আমি বেশ কিছু দিন শ্রীলংকায় ছিলাম। সেখানকার মহিলারা তাদের বাসা বাড়িতে থাকাকালীন অন্য পোশাক পরিধান করলেও অধিকাংশ মহিলা অফিস করেন শাড়ি পরে । তাদের শাড়ি পড়ার ধরণটা একটু অন্য রকম। আমার মনে হয় শাড়ি পরার প্রচলনটা এক সময় শ্রীলঙ্কার মহিলারাই হয়তো ধরে রাখবে।
বাংলাদেশের মহিলারা এখনও প্রচুর শাড়ি কিনেন বিভিন্ন উপলক্ষে । কিন্তু সেগুলো মূলত বাক্সবন্দী হয়েই থাকে। কদাচিৎ পরা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:২৬