somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের রসুল (সাঃ) নূরের তৈরি ছিলেন না

২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের সমাজে অনেক মুসলমানের একটা ভ্রান্ত ধারনা যে আমাদের রসুল (সাঃ) নূরের তৈরি ছিলেন। এই প্রসঙ্গ নিয়ে বিতর্কের সৃস্টি করে বা সমালোচনা করে তারা যে আয়াতের উদাহরন দিয়ে থাকেন সেটি লক্ষ্য করুন; পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (সূরাহ আল মায়িদাহ আয়াত ১৫ এর শেষাংশ)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় কোনো মুফাসসীরই নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে নুরের সৃষ্টি বলেননি। নিম্নে দুইটি প্রসিদ্ধ তাফসীরের আলোকে দলিল উপস্থাপন করা হল :-

তফসির ১ : আল্লামা ইবনে জারীর আত-তাবারী (রহ) সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতের তাফসির করেছেন নিম্নরূপ—
অনুবাদ : "হে তাওরাত আর ইঞ্জিল কিতাবের অনুসারী! আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট একখানা নূর এসেছে। নূর দ্বারা মুহাম্মদ (সা) উদ্দেশ্য। আল্লাহ তায়ালা তাঁর (সাঃ) দ্বারা সত্যকে আলোকিত করেছেন এবং ইসলামকে করেছেন সুস্পষ্ট। আর শিরিককে করেছেন মূলোৎপাটিত। অতএব তিনি তাদের হিসেবেও নূর যারা তাঁর দ্বারা আলোকিত হয়েছে। আর তিনি নিজেই সে আলোকিত সত্যের অন্যতম।” [ সূত্র—তাফসিরে তিবরী, আল্লামা ইবনে জারীর (রহ) ২/২২০]।

একটু খেয়াল করুন, আয়াতটির তাফসীরে রাসূল (সাঃ)-কে নূরের সৃষ্ট না বলে বরং উনাকে নূর নামে আখ্যায়িত করার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন নূর যদ্দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সত্যকে উজ্জ্বল ও ইসলামকে প্রকাশ করেছেন এবং শিরিককে নিশ্চিহ্ন করেছেন।

তফসির ২ : “তানভীরুল মিক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনে আব্বাস” নামক তাফসির কিতাবের রচিতা আল্লামা মাজদুদ্দিন আবু তাহের মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল-ফীরূজ আবাদী (রহ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন;

অনুবাদঃ 'নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন।'
[সূত্র— তানভীরুল মিক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনে আব্বাস বা সংক্ষেপে তাফসীরে ইবনে আব্বাস : পৃষ্ঠা ৭২]।

লক্ষণীয় যে, এখানে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে নুরের সৃষ্টি বলেননি বরং নূর দ্বারা রসুল (সাঃ) কে বুঝান হয়েছে একথাই বলেছেন।

পবিত্র কোরআনে এই আয়াতে নবী (সাঃ) এর গুণ স্বরূপ তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি। যেমন ধরুন নবী (সাঃ) যখন মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন তখনকার সময়কে বলা হয় আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ বা অন্ধকারের যুগ। সেই অন্ধকার দুর করেছিলেন কে? মক্কাবাসী তথা সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে আলোর দিশা দেখিয়েছিলেন কে? তিনি হলেন আমাদের শেষ নবী মোহাম্মদ (সাঃ)। সে কারনে প্রিয়নবী (সাঃ) কে ঐ দৃষ্টিতে নূর বা জ্যেতি বলা হয় যে আলোয় আলোকিত হয়েছে সমগ্র সৃষ্টিকুল তথা আসমান ও জমীন। আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন । ''যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে, চায় এর সাহায্যে তিনি তাদের শান্তি ও নিরাপত্তার পথে পরিচালিত করেন এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান এবং তাদের সরল পথ প্রদর্শন করেন।'' ( সুরা মায়িদা: ১৬)

এছাড়াও কোরআনের অন্যান্য আয়াতে এসেছে;

‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়ক রূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। (সূরা আল আহযাব: ৪৫-৪৬)। নবী (সাঃ) কে এই আয়াতে (প্রদীপ রূপে) যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট। এছাড়া আবার বলা হয়েছেঃ ‘অতএব তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি ঈমান আনয়ন কর। তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরাহ আত্ তাগাবুন: ৮)। অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ সাঃ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম। (সূরা আল আরাফ: ১৫৭)

উপরের আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন। রসুল (সাঃ) নূরের তৈরি যারা বলে তারা কি বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি! অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল মুসলিমদের বিশ্বাস। অতএব, কুরআনকে নূর বলার পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়, তবে রাসূলকে (সাঃ) নূরের সৃষ্টি কোন যুক্তিতে বলা হবে?

কেউ কেউ তাদের দাবির পক্ষে এই হাদিসটা বলার চেষ্টা করেনঃ “হে জাবের! সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।“ ( মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক ১/৯৯, হাদীস ১৮)
একই অর্থে এবং বিভিন্ন শব্দে সুফীদের কিতাবসমূহে সনদ বিহীন এই বানোয়াট হাদীছটি উল্লেখিত হয়েছে। মুসান্নাফে আব্দুরাজ্জাকে হাদীছটি থাকলেও লেখক কোন নির্ভরযোগ্য সনদ উল্লেখ করেননি। এই মর্মে যত হাদীছ বর্ণিত হাদীছ তার সবই বাতিল। মুহাদ্দিছগণ এই হাদীছকে মাওযু (জাল) বলেছেন। ইমাম সুয়ুতী (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীছের কোন নির্ভরযোগ্য সনদ নেই। সুতরাং হাদীছটি মুনকার ও বানোয়াট। হাদীছের কোন কিতাবে এর ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। (দেখুনঃ হাভী ১/৩২৫) ইমাম সাগানীও হাদীছটিকে মাওযু বলেছেন। (দেখুনঃ الموضوعات للصغاني ) ইমাম আলবানী (রঃ) বলেন, এটি মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধ একটি বাতিল হাদীছ। (দেখুনঃ সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৪৫৮)। (সূত্র: islamqa)।

এছাড়া রসুল (সাঃ) যে একজন মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারেও কোরআনে বিভিন্ন আয়াত আছে। যেমন;

হে রাসূল ! আঁপনি বলুন আঁমি তোমাদের মত একজন বাশার (মানুষ),তবে আঁমার প্রতি ওহী নাযিল হয় !” (কাহাফ-আয়াত ১১০)

তুমি বল, " আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই , ওহীর মাধ্যমে আমাকে প্রত্যাদেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য এক আল্লাহ্। সুতরাং তাঁর দিকে সত্য পথে চল; এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর”। -সূরা হামীম সিজদাহঃ ০৬

(শুধু তুমিই মানুষ যে তা নয়) তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম তারাও ছিলো মানুষ, যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম। যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহর] বাণীকে ধারণ করে থাকে ।” - সূরা আম্বিয়াঃ০৭

আল্লাহ আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, ফেরেস্তাদের আলো থেকে আর জীনদের আগুন থেকে। রসুল (সাঃ) হজরত আদম (আঃ) এর বংশধর। তাই উনিও (সাঃ) আমাদের মত রক্ত মাংশের মানুষ। কোনও মানুষ আলো (নূর) থেকে সৃষ্টি হয় নাই। রসুল (সাঃ) আর দশজন মানুষের মতই বাবা মার মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছেন। তিনি নারীদের বিবাহ করেছেন, সন্তানের পিতা হয়েছেন, খাদ্য খেয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। কাজেই উনি নূরের তৈরি ছিলেন না। এরকম দাবীও তিনি (সাঃ) কখনও করেন নি।

আরেকটি ভ্রান্ত বিশ্বাস হোল যে অনেকে মনে করেন রাসূল (সাঃ)-কে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ কিছুই সৃষ্টি করতেন না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি না করতেন, তাহলে এই সৃষ্টিজগৎ বা মাখলুকাত কিছুই সৃষ্টি করতেন না, এটি একেবারেই মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। এ কথার সত্যিকার অর্থে কোনো ভিত্তিই নেই। এটি শুধু আবেগের কথা, যা মানুষের কাছে প্রচারিত হয়েছে। এরকম একটা জাল হাদিস হোল;
আল্লাহ বলেন; শুধুমাত্র আপনার (রসুল সাঃ) কারনেই আমি এই বিশ্ব সৃষ্টি করেছি।
আল-শওকানি তার ‘আল-ফাউয়াইদ আল-মাজমুআহ ফিল-আহাদিদ আল- মাউদুয়া’ কিতাবে (পৃষ্ঠা- ৩২৬) এই হাদিস উল্লেখ করে বলেছেন; আল- সানানি এই হাদিসকে মউদু (জাল/ ভিত্তিহীন) বলেছেন।

আল- আলবানি তার আল- সিলসিলা আল- দাইফা (পৃষ্ঠা -২৮২) কিতাবে এই হাদিসকে মউদু (জাল/ ভিত্তিহীন) বলেছেন।
এ ধরনের আরও কিছু জাল/ ভিত্তিহীন হাদিস আছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে রাসূল (সাঃ)-কে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ কিছুই সৃষ্টি করতেন না।
শেষ কথা হোল যে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে রসুল (সাঃ) নূরের তৈরি ছিলেন না। তিনি (সাঃ) আমাদের মতই মানুষ ছিলেন। আর ওনার কারণে আল্লাহ আসমান, জমিন, বেহেশত, দোজখ সৃষ্টি করেছেন এই ধারনা সম্পূর্ণ ভুল।
প্রয়োজনীয় লিঙ্ক;
islamqa1
islamqa 2
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৮
৩৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×