somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞানের যে সব আবিষ্কার পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হয়েছে

২৫ শে জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানব সভ্যতার কল্যাণে বিজ্ঞানের ভুমিকা অপরিসীম। প্রাচীনকাল থেকেই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়েছে। তবে বিজ্ঞানের এই অগ্রযাত্রার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে অনেক আবিষ্কারের ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান প্রথমেই সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেনি। দেখা গেছে যে বহু বছর পর্যন্ত বিজ্ঞান ভুল থিউরিকে সঠিক মনে করেছে। পরবর্তীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিজ্ঞানীরা এই থিউরিগুলিকে ভুল প্রমাণিত করেছেন এবং নতুন থিউরি আবিষ্কার করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে পুরনো থিউরিকে আংশিক সংশোধন করা হয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে বিজ্ঞানের অনেক বিষয় যুক্তি, তর্ক ও গাণিতিক হিসাব দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত মনে হলেও পরবর্তীতে সেগুলি বাতিল হয়েছে বা সংশোধিত হয়েছে। অতীতে এই ধরণের ঘটনার বহু উদাহরণ আছে। কাজেই বর্তমানে যে আবিষ্কার বা থিউরিগুলি আছে সেগুলির মধ্যে কিছু কিছু যে ভবিষ্যতে বাতিল হবে না বা সংশোধিত হবে না এটা হলফ করে বলা ঠিক হবে না।

এই ধরণের কিছু বৈজ্ঞানিক থিউরি ও আবিষ্কার সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হোল।

বস্তুর দহনের কারণ সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যাঃ

১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে জোহান জোয়াচিম বেচার নামক একজন জার্মান বিজ্ঞানী বস্তুর দহনের কারণ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন যে পদার্থের মধ্যে ‘টেরা পিঙ্গুইস’ নামক একটা উপাদানের উপস্থিতির কারণে যে কোন পদার্থ আগুনে পোড়ে। পরবর্তীতে ১৭০৩ সালে জর্জ এরন্সত স্টাহল নামক আরেকজন জার্মান বিজ্ঞানী এই থিউরিকে আরেকটু পরিবর্তন করে বলেন যে ‘ফ্লোগিসটন’ নামক একটা উপাদানের উপস্থিতির কারণে যে কোন পদার্থ আগুনে পোড়ে। আগুনে দহনের সময় পদার্থ থেকে এই ‘ফ্লোগিসটন’ নিঃসৃত হতে থাকে এবং নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুন জ্বলতে থাকে। পদার্থ থেকে নির্গত হওয়া ‘ফ্লোগিসটন’ বাতাসের সাথে মিশ্রিত হয়। উদ্ভিদ বাতাস থেকে এই ‘ফ্লোগিসটন’ শোষণ করে নেয়, যে কারণে বাতাস আগুনে পোড়ে না। এই থিউরি অনুযায়ী বদ্ধ জায়গায় কোন পদার্থকে আগুনে পোড়ানোর সময় কিছুক্ষন পর আগুন নিভে যায় কারণ বাতাসের ‘ফ্লোগিসটন’ গ্রহণের একটা সীমা আছে। পদার্থ থেকে নিঃসৃত ‘ফ্লোগিসটন’ যখন এই সীমার চেয়ে বেশী হয় তখন বাতাস বাড়তি ‘ফ্লোগিসটন’ গ্রহণ করতে পারে না ফলে আগুন নিভে যায়।

১৭৭৪ সালে যখন জোসেফ প্রিসটলি অক্সিজেন আবিষ্কার করেন তখন তিনি অক্সিজেনকে ‘ফ্লোগিসটন’ শুন্য বাতাস মনে করেন। কারণ ঐ সময় বিজ্ঞান বলতো যে বাতাসে ‘ফ্লোগিসটন’ কম থাকলে দহন বেশী হবে এবং বাতাস ‘ফ্লোগিসটন’ দ্বারা পূর্ণ হয়ে গেলে দহন বন্ধ হয়ে যাবে। ১৭৭৫ সালে ফরাসী বিজ্ঞানী এন্টোনি লরেনট ল্যাভইসিয়ার অক্সিজেন সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে সমর্থ হন এবং তারপর থেকে ‘ফ্লোগিসটন’ নামক এই কাল্পনিক বস্তুর ধারণা বিলুপ্ত হয়।

প্রায় ১০৮ বছর ধরে (১৬৬৭ থেকে ১৭৭৫ সাল পর্যন্ত) বিজ্ঞান এইভাবে আমাদেরকে জানিয়েছে, যে কোন বস্তুর মধ্যে থেকে ‘ফ্লোগিসটন’ নামক একটি পদার্থ নিঃসরণের কারণে আগুন জ্বলে। আসলে পরবর্তীতে জানা গেছে যে এই আবিষ্কার সম্পূর্ণ ভুল। আসলে ‘ফ্লোগিসটন’ নামে কোন পদার্থ নাই। প্রকৃতপক্ষে বাতাসে বিদ্যমান অক্সিজেন নামক গ্যাসের সহায়তায় আগুন জ্বলে। অথচ ঐ যুগে এই ভুল ধারণার উপর নির্ভর করে আরও অনেক গবেষণা কর্ম পরিচালিত হয়েছে।

বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাসের কারণ সম্পর্কে ভুল ধারণাঃ

উপরে বলেছি যে ১৬৬৭ সালে থেকে ১৭৭৪ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বলতো যে পদার্থ থেকে ‘ফ্লোগিসটন’ নামক বস্তুর নিঃসরণের কারণে আগুন জ্বলে। তখন এই কথাও বিজ্ঞানীরা বলতো যে বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাসের কারণও হোল এই ‘ফ্লোগিসটন’ নামক পদার্থ। কিন্তু আমরা জানি যে পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে ‘ফ্লোগিসটন’ নামে কোন বস্তু বা উপাদানের অস্তিত্ব আসলে নেই।

ফরাসী বিজ্ঞানী এন্টোনি লরেনট ল্যাভইসিয়ার ১৭৮৩ সালে তাপের কারণ সম্পর্কে একটি নতুন ধারণা নিয়ে আসেন। তিনি বলেন যে ‘ক্যালরিক’ নামক একটি সূক্ষ্ম তরল পদার্থের কারণে বস্তুর তাপমাত্রা বাড়ে বা কমে। তিনি আরও বলেন যে এই বিশ্বজগতে ক্যালরিকের পরিমান নির্দিষ্ট, অর্থাৎ এটার বৃদ্ধি বা হ্রাস হয় না এবং এই ক্যালরিক গরম বস্তু থেকে ঠাণ্ডা বস্তুতে প্রবাহিত হয়। ১৮৪৩ সালের দিকে নতুন আবিষ্কৃত থারমোডাইনামিক্স থিউরির ভিত্তি যখন মজবুত হয় তখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে আসলে ক্যালরিক বলে কোন পদার্থের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নাই। বরং তাপ প্রকৃতপক্ষে একটি শক্তি। তাপ হলো পদার্থের অণুগুলোর গতির সাথে সম্পর্কযুক্ত এমন এক প্রকার শক্তি, যা কোনো বস্তু ঠান্ডা না গরম তার অনুভূতি জন্মায়। কোন মাধ্যম ছাড়াও বিকিরণের মাধ্যমেও তাপ প্রবাহিত হতে পারে। সূর্যের তাপ মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে পৌঁছে। তাপ সম্পর্কে এই নতুন আবিষ্কারের পিছনে যেসব বিজ্ঞানীর অবদান আছে তারা হলেন রামফোরড, লাভইসিয়ার এবং জেমস প্রেসকট জুল।

উপরের আলোচনা থেকে এটা বলা যায় যে ১৬৬৭ সাল থেকে ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত তাপ ও বস্তুর দহন সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা দুইবার ভুল আবিষ্কার করার পর ১৮৪৩ সালে তাপ সম্পর্কে তাদের আধুনিক থিউরিতে পৌছাতে সমর্থ হন। এই সময়ে দুইটা কাল্পনিক বস্তুকে তারা তাপের কারণ বলে উল্লেখ করেন।

সূত্র - Phlogiston theory
oxygen
তাপ
History of thermodynamics
Caloric theory
Superseded theories in science

ছবি- vox.com
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৫৭
৪৮টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×