পদার্থ বিজ্ঞানে এখনও সমাধান করা যায় নি এরকম অনেক প্রশ্ন আছে। তার মধ্যে একটা প্রশ্ন হোল, এই মহাবিশ্বে ম্যাটারের তুলনায় এন্টিম্যাটার এত কম কেন। বিজ্ঞান বলছে বিগ ব্যাং এর সময় একই পরিমান ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বজগতে এন্টিম্যাটারের পরিমান অনেক কম। এই এন্টিম্যাটার তবে গেলো কোথায়?
আগে ব্যাখ্যা করছি এন্টিম্যাটার কাকে বলে। একটা পরমানুর মধ্যে অনেক ধরণের কণা থাকে। কোন কোনটাকে ভাংলে আরও ছোট কণা পাওয়া যায়। তবে সাধারনভাবে আমরা জানি যে পরমাণুতে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন থাকে। ইলেকট্রন ঋণাত্মক চার্জযুক্ত, প্রোটন ধনাত্মক চার্জ যুক্ত এবং নিউট্রন চার্জ নিরপেক্ষ। ষ্ট্যাণ্ডার্ড মডেলে ১৭ রকমের মৌলিক কণার উল্লেখ আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে প্রত্যেক প্রকার কণার একটা বিপরীত কণা আছে (জমজ ভাই/ বোনের মত)। তবে কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে মুল কণা এবং বিপরীত-কণা ( Anti-particle) একই। যেমন ফোটন কণা। ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেক কণার বিপরীতে এন্টি-পারটিকেল আছে। এন্টি-পারটিকেলগুলির বৈশিষ্ট্য হোল যে এগুলি তার মুল কণার সমান ভর বিশিষ্ট হলেও এদের চার্জ এবং চৌম্বকীয় মোমেন্ট মুল কণার বিপরীত। তবে এদের কোয়ান্টাম নাম্বার ভিন্ন হয়। যেমন ইলেকট্রনের এন্টি-পারটিকেলের নাম পজিট্রন। মুল কণাগুলি যেমন ম্যাটার তৈরি করে একইভাবে মুল কণার বিপরীত কণাগুলি দ্বারাও ম্যাটার তৈরি করা যায়। এইভাবে তৈরি ম্যাটারকে এন্টিম্যাটার বলে।
পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে প্রতি নিয়ত এন্টি-পারটিকেল তৈরি হচ্ছে আবার রুপান্তর ঘটছে। এন্টি-পারটিকেলের বৈশিষ্ট্য হোল যে এরা নিজের মুল কণার সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে উভয়ে অস্তিত্ব হারায় এবং নতুন কোন শক্তি বা কণা তৈরি করে। যেমন প্রাকৃতিকভাবে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম ইত্যাদি পদার্থ থেকে নির্গত পজিট্রন (ইলেকট্রনের এন্টি-পারটিকেল) ইলেকট্রনের সংস্পর্শে এসে একধরণের ফোটন তৈরি করে যাকে গামা রশ্মি বলে। এছাড়া মহাকাশ থেকে আগত কসমিক রশ্মির ভিতর পজিট্রন এবং এন্টি-প্রোটন কণার অস্তিত্ব সনাক্ত করা গেছে। আবার প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা থেকে এন্টি-নিউট্রিনো তৈরি হয়। ২০১১ সালে বিজ্ঞানীরা ঝড়ের সময় আকাশে যে মেঘ থাকে তার উপরিভাগে পজিট্রন সনাক্ত করেছেন। পৃথিবীর চারপাশে যে দুটি ভ্যান এলেন বিকিরন বলয় আছে সেখানে বিজ্ঞানীরা এন্টি-প্রোটন সনাক্ত করেছেন।
বিজ্ঞানীরা যে প্রশ্নের উত্তর এখনও খুজছেন সেটা হোল যে বিগ ব্যাং এর সময় যদি ম্যাটারের সমপরিমাণ এন্টিম্যাটার তৈরি হয়ে থাকে তাহলে এখন এন্টিম্যাটার এত দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেল কেন। ঐ সময় ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটারের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে উভয়ে বিলীন হয়ে শুধু ফোটন কণার অস্তিত্ব থাকার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে পৃথিবীতে এন্টিম্যাটার অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য অথচ চারিদিকে ম্যাটারের ছড়াছড়ি। তবে এই বিষয়ে গবেষণা অনেক দূর এগিয়েছে এবং আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন। ব্লগারদের কারো এই প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে জানাতে পারেন।
সুত্র-
List_of_particles
Elementary_particle
newscientist.com
Annihilation
Gamma_ray
arpansa.gov.au
ছবি- sciencenote.org
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:০৮