পুরুষদের খৎনা করা হয় এটা আমরা জানি। পুরুষদের খৎনা মানে হল পুরুষদের দেহের সামনের অংশের মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত ঝুলন্ত এবং লম্বাকৃতির একটি অঙ্গের অগ্রভাগের ত্বক কেটে কমিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যেখানে ব্যাপক হারে মেয়েদের অঙ্গের খৎনা করা হয়। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলিতে এই হার বেশী। এই ধরণের খৎনায় মেয়েদের ক্লাইটরিস কিংবা ইনার ল্যাবিয়া অথবা আউটার ল্যাবিয়া আংশিক বা পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়।
ঐতিহাসিকদের মতানুসারে খৃস্টপূর্ব ৮০০ অব্দে নীল নদের তীরবর্তী এবং সুদানের নিকটবর্তী মেরো (Meroite) সভ্যতায় মেয়েদের খৎনার প্রচলন ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া খৃস্টপূর্ব ১৯৯১ অব্দে প্রাচীন মিসরের কফিনের মধ্যে হায়েরোগ্লিফস লেখায় মেয়েদের খৎনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এখনও উত্তর আফ্রিকার প্রায় ২৭ টা দেশে (সোমালিয়া, সেনেগাল, মিশর, তাঞ্জানিয়া, গিনি, জিবুতি, সিয়েরালিয়ন, মালি, সুদান, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, ইথিওপিয়া, মউরিতানিয়া, লাইবেরিয়া, চাদ, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, কেনিয়া, ইয়েমেন, বেনিন, তোগো, ঘানা, নাইজার, উগান্ডা, ক্যামেরুন) ব্যাপকভাবে ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের খৎনা করা হয়। এছাড়া ইয়েমেন, ইরাকি কুরদিস্তান, জর্ডান, ইরাক, সিরিয়া, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারে এই প্রথা বেশ ভালো ভাবেই চালু আছে। এশিয়া মহাদেশে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াতে এই প্রথা আছে।
উপরে উল্লেখিত দেশগুলিতে ব্যাপকভাবে মেয়েদের খৎনা করার প্রথা আছে। অনেক দেশে এটার হার ৯৫%। আবার অনেক দেশে ২০%। এই দেশগুলি ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে মেয়েদের খৎনা করা হয়। যদিও এই ধরণের খৎনার হার এই সব দেশে খুব কম। এই দেশগুলির মধ্যে আছে মধ্যপ্রাচ্চের অন্য দেশগুলি, লিবিয়া, কঙ্গো, উগান্ডা, আফগানিস্তান, ইসরাইল ইত্যাদি।
মেয়েদের এই খৎনার কারণে অনেক সময় মেয়েদের অঙ্গে জখম হয় এমন কি অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত হয়। এছাড়া মেয়েদের জীবনে এটার কারণে অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী ভিতি, উৎকণ্ঠা এবং বিষণ্ণতা সৃষ্টি হয়। সাধারণত বাড়িতে ছুরি, কাচি দিয়ে এই খৎনা করা হয়। ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই খৎনার বিরুদ্ধে তাদের মতামত দিয়ে থাকে। পশ্চিমের অনেক দেশে এই ধরণের খৎনা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ইসলাম ধর্মে এই ধরণের খৎনা ঐচ্ছিক ব্যাপার। পক্ষে বা বিপক্ষে কোন কিছুই বলা নাই। খৎনা করতে হবে এমন কোন আদেশ, নিষেধ বা উপদেশ নেই। যে সব দেশে এই ধরণের খৎনার প্রবণতা বেশী তাদের বড় অংশই অমুসলিম।
মজার ব্যাপার হচ্ছে যে এই ধরণের খৎনা অনেক নারী সমর্থন করছে। পরিবারের নানী, দাদীরা এই খৎনা করাকে জরুরী মনে করছে। ১৯৮৩ সালে সুদানের মাত্র ১৭% মেয়ে এই খৎনার বিরোধী ছিল। বিভিন্ন জরীপ থেকে দেখা যায় যে এই দেশগুলিতে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক নারী এটার পক্ষে এবং অর্ধেক বিপক্ষে। এই ধরণের খৎনার পক্ষে সামাজিক চাপ আছে।
আফ্রিকার অনেক প্রখ্যাত নারী নৃতত্ত্ববিদ এই খৎনার পক্ষে বলছেন। তাদের দৃষ্টিতে এই খৎনার বিরোধিতাকারী পশ্চিমারা আফ্রিকার পারিবারিক চর্চা ও যৌনতার সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে।
আনন্দের কথা হল বাংলাদেশে এই চর্চা নাই।
সুত্র -
https://en.wikipedia.org/wiki/Female_genital_mutilation#Prevalence
https://www.guttmacher.org/journals/ipsrh/1997/09/female-circumcision-rite-passage-or-violation-rights
https://bmcpublichealth.biomedcentral.com/articles/10.1186/s12889-015-2203-6
https://en.wikipedia.org/wiki/Prevalence_of_female_genital_mutilation#Saudi_Arabia
https://en.wikipedia.org/wiki/Female_genital_mutilation
https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/female-genital-mutilation
ছবি- ghrd.org
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১৪