somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধূমপানের সাতকাহন এবং তামাক জাতীয় দ্রব্যে মালী'য় বাজেটে অতিরিক্ত কর আরোপ।।।

০৮ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি সিগারেট খাইনা। হলফ করে বলতে পারি কেউ কখনো খাইতে দেখেনি। কিন্তু আমার পরিচিত লিষ্টে অনেকে আছেন যারা সিগারেট খান। আমাদের দেশে সিগারেট যারা খায় তাদের অনেক আদব, কায়দা নিয়ম-কানুন লপ্ত করতে হয়। বলতে পারেন, এগুলো তাদের শেখা বাধ্যতামূলক। এই যেমন: বড়দের সামনে ছোটরা খায়না। অপর পক্ষে বড়রা কিন্তু ঠিকই ছোটদের সামনে খায়। অর্থাৎ সিগারেট খাওয়ার ব্যাপক স্বাধীনতা অর্জণ করতে হলে বয়স বাড়া বাঞ্ছনীয়। এমনো ফ্যামিলি আছে যারা বাপ-পুত্র দু'জনেই সিগারেট খায় এবং এই বিষয়টা তারা উভয়েই জানে কিন্তু খাওয়ার সময় যে যার পথে থাকেন। স্কুল,কলেজ এবং ভার্সিটি পড়ুয়া অনেক ছেলে মেয়ে আছে যারা সিগারেট খায় কিন্তু তাদের কোন নিজস্ব ইনকাম নেই, তারা বাপের থেকে টাকা এনে সিগারেটে আগুন দেয়। বাবাও বিষয়টি জানেন কিন্তু এই জানার বিষয়টি নিজেরর মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, সন্তানের সিগারেট খাওয়া বাবার কাছে অনিচ্ছাবশত আত্মস্বীকৃত।

ছোটরা প্রথম প্রথম সিগারেট ফুঁকলে আর অভিভাবকরা তা দেখে ফেললে তারা মনে করেরে এটা সন্তান বখে যাওয়ার প্রথম ধাপ!

অনেকের সিগারেটের হাতেখড়ি হয় বাবার পকেট থেকে দু'চারটা চুরি করে খাওয়ার পর। আর সিগারেট যারা খায় তারা খাওয়ার সময় লেভেল মেনটেইন করে চলেন। আপনি নতুন কোন এলাকায় যাবেন এবং সেখানে একটি সার্কেল তৈরি করতে চান তাহলে আপনার জন্য সিগারেট সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

ধূমপান করার প্রথম অবস্হায় বা শিক্ষানবিশককালীন সময়ে সহপাঠীরা সম্পূর্ণ ফ্রিতে খেতে দেন। কিন্তু খাওয়া শেষ হলে তখন এই অফারের টাইম শেষ হয়ে যায়! বলতে পারেন এটা স্মোকার কর্তৃক এক ধরণের মার্কেটিং!


দুজন স্মুকারের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্পর্ক গড়ে উঠে তত তাড়াতাড়ি কিন্তু দু'জন সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেনা। স্মোকারের সম্পর্ক শুরু হয় "ভাই ম্যাচ আছে" এই কথা বলে আর সম্পর্ক গাঢ় হয় আগুণ বিণিময়ের মধ্য দিয়ে। স্মোকারদের মধ্যে কে কত দামি সিগারেট খান তা দিয়ে তাদের মধ্যে স্টাটাস নির্ধারিত হয়।

অনেক মেয়ের ধারণা ছেলেরা প্রেমে ছ্যাকা খাইলে সিগারেট খায়! আসলে এই কথার ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নাই। এটি ছেলে সম্পর্কে মেয়েদের কু-সংস্কার। বর্তমানে অনেক মেয়ে বিশ্বাস করে ছেলেরা সিগারেট খেলে স্মার্টনেস বাড়ে! এগুলো ফালতু কথা, এগুলো সিগারেট কোম্পানির প্রচারণার ফল।

একটি কলা কম্বিকালেও দুই তিন জন ছেলে ভাগ করে খাবেনা না কিন্তু একটি সিগারেট দুই তিন জনে অনায়সে শেয়ার করে টানেন।

ফ্রেন্ডদের মধ্যে অনেকে সিগারেট খায় হয়ত দু'একজন সিগারেট খায়না। তবে সবাই যখন মিলিত হয় তখন স্মোকারা আরাম করে সিগারেট ফুঁকতে থাকেন। আর যে দু' চারিজন খায়না তারা চেয়ে চেয়ে দেখেন। এযেন চরম বৈষম্য! তয় মাঝেমধ্যে নন স্মোকারদের প্রতি স্মোকারদের করুণা করতে দেখা যায় হাতে দু'চারটি চকলেট ধরিয়ে দিয়ে।।

অনেকে বলে থাকেন ছেলেরা দুখ কষ্ট ভুলার জন্য সিগারেট ফুঁকেন এবং তাদের প্রতিটি টানের মাধ্যমে সুখলাভ করেন, কেউ কেউ আত্মভোলাও হন এবং ধূয়া ছাড়ার মাধ্যমে কষ্টকে বিদায় জানাতে চেষ্টা করেন।

একদিন উত্তরায় দিয়াবাড়ি গেছিলাম ঘুরতে। সাথে আমার স্ত্রী আছে। এক পর্যায়ে একটি সুন্দর এবং স্মার্ট মেয়ে এসে বলল, হ্যাভ এনি ম্যাচ? আমি তার কথা কিছুই বুঝেনি। ক্রিকেটের ম্যাচ, নাকি তার সাথে আমার বা অন্য কারো ম্যাচ বা ম্যাচিং এর কথা বলছেনা কিনা কে জানে! আমি শুধু "নো"... বলে দায়িত্ব শেষ করেছি। পরে ফেরার পথে মেয়েটিকে দেখলাম নির্লুপ্ত ভঙ্গিতে সিগারেট টানছে।

সিগারেট খাওয়ার মধ্যেও আর্ট বা শিল্প আছে। সবাই একই স্টাইলে টানলেও সিগারেট ধরার মধ্যে কিছুটা বৈচিত্র আছে। অনেকে ধূয়া ছাড়ার সময় বিভিন্ন কসরত দেখান। নাক এবং মুখ দিয়ে ধূয়া ছাড়ার সময়- ধূয়া দিয়ে বিভিন্ন বিমূর্ত ছবি আঁকেন।



ধর্মীয় নেতা ছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক বা ঐতিহাসিক লিডারগণ ধূমপায়ী ছিলেন। এ তালিকায় আমাদের বঙ্গবন্ধুও আছেন! অনেক ঐতিহাসিক লেখক, নাট্যকার এবং গল্পকার সিগারেট ফুঁকতেন। তাদের লেখায় সেগুলোর বিভিন্ন আঙ্গিকে উল্লেখ আছে। তারা আকারে ইঙ্গিতে বুঝাতে চেয়েছেন সিগারেট খাওয়া তেমন ক্ষতিকর কোন বিষয় নয়। পুরুষদের অনেক ক্ষেত্রে সিগারেট খাওয়া জায়েজ!

সিগারেট এমন একটা পন্য যার লেভেলে সরকারী আদেশে কোম্পানি কর্তৃক ক্ষতিকর দিকটা উল্লেখ থাকে। আমরা তা জেনেও খাই! এবং সরকার তা জেনেও লাইসেন্স দেয়!

টিভিতে একই সাথে বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক সিগারেট পন্যের প্রচার এবং একই সাথে বিভিন্ন মানব সম্পদ উন্নয়ন সংস্হা বা দাতব্য সংস্হা কর্তৃক সচেতনতমুলক বিজ্ঞাপন চলতে থাকে অর্থাৎ এক্ষেত্রে নিউটনের তৃতীয় সূত্র মেনে চলে!

এদেশে এরকম অনেক নজির আছে, যেখানে ঘুষ হিসেবে অফিসার কে সিগারেট দিতে হয়েছে।

ফ্রন্ট লাইনে সাধারণ সৈনিকরা সিনিয়র অফিসারদের সামনে সিগারেট টানতে পারেন অর্থাৎ এখানে লেভেল ভাঙ্গা জায়েজ!
জর্দা, গুল, এবং সিগারেট একই সমগোত্রীয় (তামাক জাতীয়) হলেও যারা শুধু পান খায় অথচ সিগারেট খায়না তারা এই ব্যাপারটা মানতে নারাজ। তাদের যুক্তি হলো সিগারেট আগুন দিয়ে খায় আর পান চিবিয়ে। যেহেতু আগুন দিয়ে খায় তাই সেটি শয়তানের কাজ! এবং এটি জাহান্নামিদের প্রতীক! জর্দ্দা খোরদের এই যুক্তি খণ্ডানোর জন্য স্মোকারা নতুন একটি স্লোগান আবিষ্কার করছে, "আমরা খাইলে পাপ, আর হুজুরা খাইলে মাপ!"

প্রতেক বছর বাজেট ঘোষণা হয়, নতুন বছরের বাজেটে তামাক জাতীয় দ্রব্যের উপর অতিরিক্ত সারচার্জ বা কর আরোপ করা হয়! এবিষয়ে পত্র পত্রিকা বা পাব্লিক রি-এ্যাকশন অনেকটা নিরব থাকে। এনিয়ে নন স্মোকারা মনে মনে কিঞ্চিৎ খুশিও হন। এখানে খুশি হওয়ার কিছু নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় কোন পণ্যের দাম বাড়া মানে পরিবারের উপর অতিরিক্ত চাপ বাড়া। সিগারেট দাম বাড়ছে মানে এই নয় যে বাড়ির কর্তার বেতন বাড়বে। আর বেতন না বাড়লে যে টাকা বেতন পায় সে টাকার মধ্যেই ধূম পানের খরচ মেন্টেইন করতে হয়। তামাক জাতীয় পন্যের দাম বাড়ার কারণে কেউ ধূমপান কমিয়ে দিয়েছে বা ছেড়ে দিয়েছে এমন কোন নজির পৃথিবীতে নেই। সব ধূমপায়ী এক হয়ে যদি জোড়ালো দাবি তোলে বা শাহবাগে জমায়েত হয় তাহলে সরকার মহোদয় দাম বাড়াবে তো দূরের কথা, দাম কমাতে বাধ্য। এরকম হলে মাল সাহেব দাম বাড়ানোর জন্য দু' হাত জোড় করে ক্ষমা চাইবেন। ভবিষ্যৎে এমন হবেনা বলেও ওয়াদা করবেন। ধূমপায়ীরা এক হয়ে যদি আন্দোলন করেন তাহলে যেকোনো সময় সরকার পতন ঘটানো সম্ভব!

পরিশেষে, ধূমপান থেকে দূরে থাকুন, ধূমপান স্বাস্হ্যের জন্য ক্ষতিকর, এবং শিশুদের সামনে কখনো ধূমপান করবেন না।
সর্তকতা: মেয়েরা গর্ভাবস্হায় ধূম পান করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:০৮
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×