somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকবির নোবেল প্রাপ্তির গল্প

৩০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কবির বয়স তখন পঞ্চাশের গোড়ায়। লেখালেখিতে মধ্যগগনে। তার লেখা কবিতা, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস মানব মনে বেশ আলোড়ন তুলছে। কবি কিছু লেখা ইংরেজিতেও লিখেছেন কিন্তু সেই সব লেখা সম্পর্কে মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র।
ঠিক এমন এক সময় বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ চিত্রশিল্পী উইলিয়াম রোটেনস্টাইন (১৯১০ সালে) কলকাতায় এলেন উদ্দেশ্য ভারতীয় শিল্পের সাথে পরিচিত হওয়া। বাংলা তখন সমগ্র বিশ্বের কাছে ভারতের শিল্প সংস্কৃতির তীর্থক্ষেত্রে।
তিনি এসে খবর পেলে ঠাকুর বাড়ির ছেলেরা এই কাজে অনেক এগিয়ে। নিজে থেকেই পরিচিত হলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে। তাদের আঁকা ছবি দেখতে উপস্থিত হলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হল কবিগুরুর। কেন জানি উইলিয়াম রোটেনস্টাইনের মনে হল রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্বে কিছু একটা আছে এবং তিনি আগ্রহ দেখালেন কবির একটি ছবি আঁকতে। কবিও রাজী হলেন এবং উইলিয়াম রোটেনস্টাইন কবির একটি Pencil Sketch আঁকলেন। শুরু হল এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে বন্ধুত্বের সূত্রপাত।
১৯১২ সালের শুরুতে “মডার্ন রিভিউ” পত্রিকায় প্রকাশিত হল ভগিনী নিবেদিতার ইংরেজিতে অনুবাদ করা রবীন্দ্রনাথের গল্প “কাবুলিওয়ালা”। বিখ্যাত বিজ্ঞানী শ্রী জগদীশ চন্দ্র বসু অসীম আগ্রহে ভগিনী নিবেদিতা অনুবাদ করেছিলেন গল্প খানি। সেই লেখা এবার হাতে এলো উইলিয়াম রোটেনস্টাইনের। সেই লেখা পড়ে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। এর আগে পর্যন্ত তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে তিনি পরিচিত ছিলেন না।
উইলিয়াম রোটেনস্টাইন অনুরোধ করলেন গুরুদেবের কিছু লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করে তার কাছে পাঠাতে। বিখ্যাত শিক্ষক অজিত চক্রবর্তী মহাশয় কবির কিছু লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করে পাঠালেন তার কাছে। আরও অবাক হলেন উইলিয়াম রোটেনস্টাইন। সেই সময় প্রমথলাল সেন ও ব্রজেন্দ্রনাথ শীল দুজনেই লন্ডনে। তারা উইলিয়াম রোটেনস্টাইনকে কবিগুরু সাহিত্য চর্চা সম্পর্কে বিশদে জানালেন।
উইলিয়াম রোটেনস্টাইন তখন রয়েল কলেজ অব ফাইন আর্টস লন্ডনের অধ্যক্ষ। তিনি রবীন্দ্রনাথের লেখা গুলো টাইপ করে পাঠালেন সেই সময়কার লন্ডনের বিশিষ্ট সব সাহিত্যিকদের। এঁদের মধ্যে একজন হলেন আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস। এমনকি তিনি জর্জ বার্নডশকেও চিঠি লিখে কবিগুরুর কবিতা পড়ার অনুরোধ জানালেন। এবং সকলেই কবিগুরুর লেখা পড়ে অভিভূত হলেন।
অচিরেই আমন্ত্রণ এলো কবিগুরুর ইংল্যান্ড যাত্রার। উইলিয়াম রোটেনস্টাইনের আমন্ত্রণে লন্ডন পাড়ি দিলেন কবি। এই যাত্রায় কবির সঙ্গী হলেন পুত্র রবীন্দ্রনাথ এবং পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী
যাওয়ার কথা ছিল মার্চ মাসে। কিন্তু হঠাৎ কবি হয়ে পড়লেন অসুস্থ। এমনকি তার মালপত্র মাদ্রাজ থেকে ফেরত নিয়ে আসা হল।
আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই অসুস্থতা রবীন্দ্রনাথের এবং বাংলা সাহিত্যের জন্য কি পরিমাণ মঙ্গলজনক হয়েছিল তার প্রমাণ আমরা পরে পাব।
কবিগুরু ছুটি কাটাতে চলে গেলেন শিলাইদহে। এবং সেখানেই শুরু করে দিলেন তার নিজের লেখা কিছু গানের অনুবাদ ইংরেজিতে। তিনি শিলাইদহে ছিলেন ২৪-মার্চ-১৯১২ থেকে ১২-এপ্রিল-১৯১২ পর্যন্ত।
এবার তিনি ০১-জুন-১৯১২ জাহাজে চেপে আবার রওনা হলেন লন্ডনে। এবং জাহাজেও চলল সেই তর্জমার কাজ।
এই কাজটি সম্পর্কে কবি পরে নিজে লিখেছেন – “আমি কোনও একটা অবকাশের মুহূর্তে নিজের কতগুলো কবিতা ও গান ইংরেজি গদ্যে তর্জমা করিবার চেষ্টা করিয়াছিলাম। ইংরেজি লিখিতে পারি এ অভিমান কোনও কালেই নাই; অতএব ইংরেজি রচনায় বাহবা লইবার প্রতি আমার লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু নিজের আবেগকে বিদেশী ভাষার মুখ হইতে একটুখানি নূতন করিয়া গ্রহণ করিবার যে সুখ তাহা আমাকে পাইয়া বসিয়াছিল। আমি আর এক বেশে নিজের হৃদয়ের পরিচয় লইতেছিলাম”।
কবি পুত্র এবং পুত্র বধূ সহ লন্ডনে পৌঁছালেন ১৬-জুন-১৯১২। সেখানে উইলিয়াম রোটেনস্টাইন তাদের জন্য হোটেলের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কিন্তু হোটেলে পৌঁছে আরেক বিপদ। কবি দেখলেন কিছু দরকারি কাগজপত্রের সাথে তার গানের ইংরেজি অনুবাদের পাণ্ডুলিপি সহ অ্যাটাচিটি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জাহাজ থেকে নেমে সেটা দিয়েছিলেন তার ছেলে রথীন্দ্রনাথের হাতে। টিউব রেলে চেপে হোটেলে পৌঁছানোর পথে রথীন্দ্রনাথ সেটি রেলের কামরায় ফেলে রেখে ওপরে উঠে এসেছেন।
প্রায় দুদিনের চেষ্টায় সেটিকে উদ্ধার করা গেল টিউব রেলের লস্ট প্রপার্টি অফিস থেকে।
ভাগ্যিস পাওয়া গিয়েছিল না গেলে সারা বিশ্ব বঞ্চিত হতো এক আশ্চর্য বিস্ময় থেকে। কারণ সেই পাণ্ডুলিপিই সেই বছরেই প্রকাশিত হবে Song Offerings নামে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। বদলে দেবে বিশ্ব সাহিত্যের মানচিত্র।
এদিকে উইলিয়াম রোটেনস্টাইন ৩০-জুন-১৯১২ তারিখে তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে আয়োজন করলেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠের। সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস ও এজরা পাউন্ডের মতো গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও।
এর কয়েক দিন পরেই লন্ডনের ইস্ট ওয়েস্ট ক্লাবে রবীন্দ্রনাথের জন্য একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হল। এবং পরের মাসের ১০ তারিখে (১০-জুলাই-১৯১৩) “ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ লন্ডনের” পক্ষ থেকে কবির জন্য একটি ভোজসভার আয়োজন করা হল যাতে সভাপতিত্ব করলেন কবি ইয়েটস এবং উপস্থিত ছিলেন এইচ জি ওয়েলস; কানিংহাম গ্রাহাম এবং এজরা পাউন্ডের মতো দিকপাল সহ আরও ৭০ জনের মতো অথিতি।
সভাপতির ভাষণে ইয়েটস রবীন্দ্রনাথের কবিতার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বললেন –“একজন শিল্পীর জীবনের সবথেকে বড় প্রাপ্তি হল এমন একজন বিস্ময়কর মানুষের কাজ আবিষ্কার করা যার সম্পর্কে তিনি আগে কিছুই জানতেন না। আমার জীবনে রবীন্দ্রনাথ তেমনই এক আবিষ্কার”।
এই এক দিনেই লন্ডনের সাহিত্য মহলে ছড়িয়ে পড়ল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নাম।
ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ লন্ডনের উদ্যোগে কবির পরিচয় ঘটল ম্যাকমিলানের মতো প্রকাশনা সংস্থার সাথে। তাদের উদ্যোগে লন্ডনেই ০১-নভেম্বর-১৯১২ তারিখে প্রকাশিত হল কবির ভাবানুদিত ১০৩ টি কবিতা নিয়ে ১০৪ পাতার কবিগুরুর প্রথম ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ Gitanjali - Song Offerings.
এখানে উল্লেখযোগ্য হল ম্যাকমিলান প্রথম বার Gitanjali - Song Offerings এর মোট ৭৫০ কপি ছাপিয়ে ছিল। এবং মুল গীতাজ্ঞলি বইটি ছাপা হয়েছিল কলকাতাতেই ১৯১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সেই বইতে কবিতা ও গান ছিল সর্বমোট ১৫৭ টি কিন্তু কবির সদ্য প্রকাশিত Gitanjali - Song Offerings এর কবিতা সংখ্যা ১০৩ টি।
রবীন্দ্রনাথ ইংরেজিতে Gitanjali - Song offering লিখবার সময় সব কয়টি কবিতাই তার বাংলা থেকে হুবহু ইংরেজিতে অনুবাদ করেননি। তিনি করেছেন ভাবানুবাদ আর সেখানেই বইটি হয়ে গেছে সকলের থেকে আলাদা।
তিনি Gitanjali - Song offering এর সংকলনে ১০৩ টি কবিতার সবকয়টি গীতাজ্ঞলি থেকে নেননি। তিনি “গীতাঞ্জলী” থেকে নিয়েছিলেন মাত্র ৫৩টি গান। বাকি গানের মধ্যে “গীতিমাল্য” থেকে ১৬টি, “নৈবেদ্য” থেকে ১৬টি, “খেয়া” থেকে ১১টি, “শিশু” থেকে ৩টি এবং “কল্পনা”, “স্মরণ”, “চৈতালি” ও নাটক “অচলায়তন” থেকে একটি করে কবিতা নিয়ে Gitanjali - Song offering এ সংযুক্ত করেন।
বইটিতে ভূমিকা লিখেছিলেন আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস। অল্পসময়েই খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করল বইটি। আগ্রহ ভরে বইটির সমালোচনা ছাপা হল বিলেতের “টাইমস”, “নেশন” এবং “ম্যানচেস্টারের” মত তিনটি প্রথম শ্রেণির দৈনিকে। এজরা পাউন্ড “Poetry” পত্রিকায় লিখলেন বইটিকে নিয়ে একটি নিবন্ধ।
এদিকে ম্যাকমিলান প্রকাশনী ১৯১৩ সালের মার্চ মাসেই বইটির আরও দুইটি সংস্করণ প্রকাশ করল। এবং প্রকাশিত হল একযোগে লন্ডন এবং নিউইয়র্ক থেকে। সেই বছরের নভেম্বর মাসে কবিগুরু নোবেল প্রাপ্তি ঘোষণার আগেই বইটির ১০ টি সংস্করণ বের করেছিল ম্যাকমিলান।
নোবেল পুরস্কার তখন সবে মাত্র কিছু বছর চালু হয়েছে। নোবেল কমিটির নিয়ম অনুসারে নোবেল পুরস্কারের জন্য নাম সুপারিশ করতে পারেন বিভিন্ন দেশের স্বীকৃত সংস্থার সভ্যরা অথবা কোন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি।
ততদিনে কবিগুরুর কবিতা পড়ে মুগ্ধ হওয়া মানুষদের মধ্যে আরও একটা নাম যুক্ত হয়েছে টমাস স্টার্জমুর। তিনি তখন রয়েল সোসাইটি অব লিটারেচার অব ইউ কে-এর সদস্য। তিনি আবার সেই বছরের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমীর নোবেল কমিটির সদস্যও বটে। তিনি নোবেল পুরস্কারের জন্য কবিগুরুর নাম সুপারিশ করলেন। কিন্তু এ কথা তিনি কবিগুরুকে জানাননি। কবি যদিও তখন লন্ডনে। সম্পূর্ণ গোপনে কবির নাম সুপারিশ করেন স্টার্জমুর।
কবি আমেরিকা (১৫-জানুয়ারি ১৯১৩ সালে কবির সাথে ম্যাকমিলানের নতুন করে চুক্তি সম্পাদিত হয় নিউইয়র্কে) এবং জাপান হয়ে আবার ফিরলেন লন্ডনে এবং রওনা দিলেন ভারতের উদ্দেশ্যে। বোম্বে পৌঁছালেন ২৭-সেপ্টেম্বর-১৯১৩ তখনও পর্যন্ত কবির অজানা তার নাম সেই বছরের নোবেলের জন্য মনোনয়ন করা হয়েছে। এবং তৈরি হতে চলেছে এক নতুন ইতিহাস।
সেই বার বিভিন্ন দেশ থেকে আরও ২৮ জনের নামে সুপারিশ এসেছিল সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য। তার মধ্যে ফরাসী সাহিত্যিক Emile Faguet (১৮৪৭-১৯১৬) ও ছিলেন।
সুইডিশ একাডেমীর সদস্য হলেও স্টার্জমুর (T. Sturge Moore) এর হাতে ছিল একমাত্র গীতাঞ্জলী-এর অনুবাদ করা বইটি।
সেই বছরের নোবেল কমিটির সভাপতি হোয়ানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধিতা করে বলেন, একটি মাত্র বই দেখে নোবেলের মত পুরস্কারের জন্য বিচার করা সম্ভব নয়।
এমনকি সুইডিশ একাডেমীর অন্য সদস্যরাও রবীন্দ্রনাথকে “নোবেল” পুরস্কার দেবার ব্যাপারে একমত হতে পারছিলেন না। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে দিলেন সুইডিশ লেখক Peir Heidenstam এবং এসাইস টেঙ্গার (Esais Tegner)। সুইডিশ একাডেমীর সদস্য এসাইস টেঙ্গার (Esais Tegner) বাংলা পড়তে পারতেন তিনি রবীন্দ্রনাথের অন্য লেখা সম্পর্কের অবগত ছিলেন। তিনি জোরের সাথে বললেন রবীন্দ্রনাথই যোগ্য দাবিদার। এমনকি Heidenstam (1859-1940)- র লিখিত বিবৃতি পাঠ করলেন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে। উল্লেখ্য এই Heidenstam পরবর্তীতে গীতাঞ্জলী সুইডিশ ভাষায় অনুবাদ করবেন। এবং তার ভাষণের পরেই সকলে এক মত হয়ে ঘোষণা করেন ১৩-নভেম্বর-১৯১৩ সালের বিশ্ব সাহিত্যে নোবেল প্রাপক হিসাবে রবীন্দ্রনাথের নাম।
ইউরোপের বাইরে সেই প্রথম গেল নোবেল পুরস্কার।
পরদিন খবর ছাপা হল সমগ্র ইউরোপের খবরের কাগজে। রয়টার মারফত খবর কলকাতায় এসে পৌঁছল সেদিন বিকেল বেলা অর্থাৎ ১৪-নভেম্বর-১৯১৩ সেদিনের কলকাতার সান্ধ্য ইংরেজি কাগজ “The Empire” লিখল “GREAT HONOUR FOR / TAGORE. NOBEL PRIZE CONFERRED./” LARGEST CONTRIBUTION TO / THE COMMON GOOD./” (REUTER’S)/ LONDON/ THURSDAY.
কবির ঠিকানা ছিল না রয়্যাল সুইডিশ একাডেমীর কাছে। কিন্তু তাকে খুঁজে বের করাও খুব কঠিন কিছু নয়। কবির ঠিকানা জোগাড় করে লন্ডন থেকে টেলিগ্রাম করে খবরটি সরকারিভাবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে পাঠালেন। সেই টেলিগ্রামে লেখা ছিল: “SWEDISH ACADEMY AWARDED YOU NOBEL PRIZE LITERATURE PLEASE WIRE ACCEPTATION SWEDISH MINISTER”.
কবি তখন ছিলেন শান্তিনিকেতনে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পরদিন অর্থাৎ ১৫-নভেম্বর কলিকাতা থেকে টেলিগ্রাম করে খবর পাঠালেন। টেলিগ্রামটি পৌঁছল জামাতা নগেন্দ্রনাথের কাছে। তিনি তখন রান্নাঘরে। সকলে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। উপস্থিত সকলকেই জানালো হল আনন্দ সংবাদটি। আশ্রমের শিক্ষক এবং ছাত্র সকলেই এ সংবাদ শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। এদিকে আবার কবি তখন রথীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দ্রনাথকে নিয়ে চৌপাহাড়ি শালবনে বেড়াতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তিনি যাত্রা বাতিল করে সেই আনন্দে সামিল হলেন।
এদিকে কবি কিছু দিন আগেই বিদেশ সফর করে ফিরেছেন তার পক্ষে সেই বছরের ১০-ডিসেম্বর-১৯১৩ তারিখের আগে স্টকহোমে পৌঁছে নোবেল পুরস্কার নেওয়া সম্ভব ছিল না। সেই কারণে রবীন্দ্রনাথের হয়ে পুরস্কার গ্রহণের জন্য সুইডিশ একাডেমী আমন্ত্রণ জানালেন সুইডেনে অবস্থিত ব্রিটিশ রাজদূতকে এবং রবীন্দ্রনাথের হয়ে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করলেন গ্রেট ব্রিটেনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার মি. ক্লাইভ।
পরের বছর ২৯-জানুয়ারি-১৯১৪ কলকাতার গভর্নর হাউসের এক বিশেষ অনুষ্ঠানে লর্ড কার মাইকেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে নোবেল পুরস্কারের মেডেল ও ডিপ্লোমার সাথে তুলে দিলেন সাথে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৬৯ টাকার একটি ব্যাঙ্ক চেক।সেই বছর ভারতীয় মুদ্রায় সেটিই ছিল নোবেলের মান।
তথ্যসূত্র:
১) রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার লাভ, ০৯-মে-২০১৯, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
২) রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি ও দেশে-বিদেশে প্রতিক্রিয়া... Rabindranath Tagore ফেসবুক পেজ।
৩) রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কালি ও কলম।
৪) প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র জীবনী।
৫) Wikipedia

#বইয়েরহাট
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:১১
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×