somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহ সাহেবের ডায়রী ।। শিল্পি এম এফ হুসেনের জাদুঘর ।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






ভারতীয় শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের জীবনের শেষ কয়েক বছরের চিত্রকর্ম নিয়ে কাতারের দোহায় একটি জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়েছে। গত রোববার উদ্বোধন করা এ জাদুঘরের নাম ‘লাওহ ওয়া কলম: এম. এফ. হুসেন মিউজিয়াম’। ‘লাওহ ওয়া কলম’-এর অর্থ হচ্ছে ‘ক্যানভাস ও কলম’।

কাতার ফাউন্ডেশনের এডুকেশন সিটিতে তিন হাজার বর্গমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ জাদুঘরে মকবুল ফিদা হুসেনের জীবনের শেষ কয়েক বছরের ১৫০টির বেশি মূল চিত্রকর্ম ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ রয়েছে। আধুনিক চিত্রকলার মহান এ শিল্পীকে নিয়ে বিশ্বে এটিই প্রথম জাদুঘর। সারা জীবনে তিনি ৪০ হাজারের বেশি শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন।

কাতার ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খা মোজা বিনতে নাসের ‘লাওহ ওয়া কলম: এম. এফ. হুসেন’ মিউজিয়ামের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে শায়খা মোজা বলেন, ‘মকবুল ফিদা হুসেন একজন অনন্য শিল্পী। একজন সত্যিকারের ওস্তাদ, যাঁর কাজ দেশকালের সীমানা পেরিয়ে নানা সংস্কৃতি, ইতিহাস ও পরিচয়ের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করেছে। তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি আনন্দিত।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাতার ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন শায়খা হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানিসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিক, শিল্প-সংগ্রাহক ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা মকবুল ফিদার শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন।

বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিক, শিল্প-সংগ্রাহক ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা মকবুল ফিদার শিল্পকর্ম ঘুরে দেখেন।






গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলেও জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় গত শুক্রবার (২৮ নভেম্বর)। মকবুল ফিদার একটি স্কেচের নকশা অনুযায়ী জাদুঘরটি তৈরি করা হয়েছে। এই স্কেচ ধরে স্থপতি মারতান্দ খোসলা জাদুঘরটির চূড়ান্ত নকশা করেছেন। জাদুঘরের কিউরেটর (সংগ্রহশালার তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নুফ মোহাম্মদ।

স্থপতি খোসলা আল-জাজিরাকে বলেন, নিজের কাজ সংরক্ষণ করার জন্য মকবুল ফিদা নিজেই একটি জাদুঘরের একটি স্কেচ করে গিয়েছিলেন। স্কেচের চারপাশে কিছু নির্দেশনাও তিনি লিখে রেখেছিলেন। ‘লাওহ ওয়া কলম’ শব্দগুচ্ছটি সেখানেই লেখা ছিল। সেই সব মাথায় রেখে জাদুঘরের নকশা করা হয়েছে।

জাদুঘরে মকবুল ফিদার চিত্রকর্ম, ছোট ছোট ভিডিও, তাঁতে তৈরি শিল্পকর্ম (ট্যাপিস্ট্রি) এবং আলোকচিত্রের মধ্য দিয়ে তাঁর শিল্পযাত্রার বিবর্তন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে এমন কাজও রয়েছে, যা আগে কখনো প্রদর্শিত হয়নি। পাশাপাশি শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের নানা স্মারকও রাখা হয়েছে। এসব স্মারকের মধ্যে তাঁর সাক্ষাৎকারের বাছাই করা অংশ ও উক্তি অন্যতম, যা মানুষ মকবুল ফিদাকে অন্তরঙ্গভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।এম. এফ. হুসেন মিউজিয়ামে শিল্পীর যেসব চিত্রকর্ম রাখা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আরব সভ্যতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আঁকা প্রায় ৩৫টি শিল্পকর্ম রয়েছে। নিজের ইয়েমেনি বংশধারা নিয়ে আঁকা কিছু চিত্রকর্মও এতে স্থান পেয়েছে। ২০১১ সালে মৃত্যুর আগে তিনি এসব চিত্রকর্মের কাজ শেষ করেছিলেন।

‘সিরু ফি আল আরধ’ বা ‘পৃথিবীতে মানবজাতির অগ্রযাত্রা’ নামের তাঁর সর্বশেষ মহাকাব্যিক চিত্রকর্মটিও নতুন জাদুঘরে রয়েছে। ২০১৯ সালে কাতার ফাউন্ডেশনে এ চিত্রকর্মের উদ্বোধন করা হয়েছিল।

জাদুঘরটি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার নিয়মিত অফিস সময়ে খোলা থাকবে। শুক্রবার খোলা থাকবে বেলা দেড়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। সোমবার ও সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকবে। জাদুঘরের প্রবেশমূল্য সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি।মকবুল ফিদা হুসেন নিজেকে এম. এফ. হুসেন নামে পরিচয় দিতে বেশি ভালোবাসতেন। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, তাঁর জন্ম অবিভক্ত ভারতের বোম্বে প্রেসিডেন্সির (বর্তমান মহারাষ্ট্র রাজ্য) পান্ধারপুর শহরে, ১৯১৫ সালে। কিন্তু কাতার ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে তাঁর জন্ম ১৯১৩ সালে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নিজের কিছু শিল্পকর্ম নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর ২০০৬ সালে মকবুল ফিদা হুসেন ভারত ছেড়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে চলে যান। শুরুর দিকে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ভাগাভাগি করে থাকতেন। পরে কাতারে স্থায়ী হন। তবে ২০১১ সালে তিনি লন্ডনে মারা যান এবং সেখানেই তাকে কবর দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগের বছর ২০১০ সালে কাতার সরকার তাঁকে নাগরিকত্ব দিয়েছিল।মকবুল ফিদা আধুনিক চিত্রকলাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছেন। চলচ্চিত্রের বিলবোর্ডের চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে শিল্পীজীবন শুরু করলেও নিরন্তর সাধনায় তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সমকালীন শিল্পীর কাতারে ওঠে এসেছিলেন। চিত্রকর্মের পাশাপাশি তিনি ভাস্কর্য ও চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। আসবাবের নকশা করেছেন। মনের খোরাক মেটাতে যত্ন নিয়ে কিছু কবিতাও লিখেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×