somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যপথিক শাইয়্যান
অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

২০,০০০ নারী এবং ১ লক্ষ খোজা পুরুষ নিয়ে চীনের রাজকীয় হারেম

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চীনে যখন রাজকীয় সরকার ব্যবস্থা ছিলো, তখন সম্রাটকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হতো সেগুলোর মাঝে একজন 'পুরুষ উত্তরাধীকারী'-এর জন্ম দেওয়া অন্যতম ছিলো। আর, এটা করতে পারলেই নিজের বংশ রক্ষা হতো। ফলে, রাজ্যও বেঁচে যেতো পতনের হাত থেকে। সেজন্যেই, রাজকীয় চীনের সম্রাটেরা নিজেদের হারেম ভরিয়ে রাখতেন পত্নী এবং উপপত্নী দিয়ে।

সম্রাটের হারেমের মহিলাদের আবার র‍্যাংকিং বা শ্রেণী-বিভাগ ছিলো। এই শ্রেণী বিভাগে ক্ষেত্র-বিশেষে তারতম্য হলেও, মূলতঃ এই মহিলাদের তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হতো- (১) সম্রাজ্ঞী, (২) সঙ্গীনী এবং (৩) রক্ষিতা। এই রাজকীয় মহিলাদের সেবায় নিয়োজিত ছিলো নপুংসক বা খোজারা যারা এই হারেমের অংশ ছিলো।


হারেমে মহিলাদের শ্রেণী-বিভাগঃ

হারেমে যেসব মহিলারা স্থান পেতেন, তাদের মাঝে একদম উপরের শ্রেণীকে 'সম্রাজ্ঞী' বলা হতো যিনি পদাধীকারবলে সম্রাটের একমাত্র স্ত্রী হতেন। সম্রাজ্ঞী ছিল চীনের মহিলাদের জন্য সর্বাধিক শ্রদ্ধাশীল ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, কারণ তাঁকে 'সমগ্র পৃথিবী'র মাতা হিসেবে মানা হতো। হারেমের মধ্যে একমাত্র সম্রাট আর তাঁর মাতা'র সম্রাজ্ঞী'র উপরে স্থান ছিলো, বাকি সবাইকেই সম্রাজ্ঞী'র সামনে মাথা নত করার বিধান ছিলো। সম্রাজ্ঞী ছাড়াও হারেমে আরেক শ্রেণী'র মহিলা ছিলেন যাদেরকে 'সম্ভ্রান্ত বয়স্কা মহিলা' বলে ডাকা হতো। যাদের স্বামী সম্রাজ্ঞী'র জীবিতবস্থাতেই মারা যেতেন, তাঁরা এই শ্রেণীভুক্ত ছিলেন। এইসব সম্ভ্রান্ত বয়স্কা মহিলাদের মাঝে অন্যতম ছিলেন ট্যাং রাজবংশের উ জেটিয়ান যিনি পরে চীনের প্রথম মহিলা সম্রাট হয়েছিলেন। এমন আরেকজন হলেন কিং রাজবংশের সিকশি।

রাজকীয় চীনের হারেমের সঙ্গীগণঃ

সম্রাজ্ঞী'র নিচের শ্রেণীকেই 'সঙ্গিনী' নামে অভিহিত করা হতো। রাজবংশ ভেদে সঙ্গিনীদের সংখ্যা এবং শ্রেণীর মাঝে পার্থক্য ছিলো। যেমন- কিং রাজবংশের সময় একটি রাজকীয় হারেমে ১-জন রাজকীয় অভিজাত সঙ্গীনী, ২-জন অভিজাত সঙ্গীনী এবং ৪-জন সঙ্গীনী থাকতেন। কংকুবাইন বা রক্ষিতারা ছিলো সঙ্গিনীদের নিচের শ্রেণীর আর তাদের সংখ্যা হতো সম্রাটের ইচ্ছে অনুযায়ী। 'রাইটস অফ ঝু' অনুযায়ী, একজন সম্রাটের ৯-জন উচ্চ শ্রেণী'র, ২৭-জন মধ্যম শ্রেণী'র এবং ৮১-জন নিম্ন শ্রেণী'র রক্ষিতা থাকতে পারে। তবে, হ্যান রাজবংশের সময়ে সম্রাটের 'সঙ্গিনী' রাখার ব্যাপারে কোন বাধ্য-বাধকতা ছিলো না। একজন সম্রাট যত ইচ্ছে তত সঙ্গিনী রাখতে পারতেন। সম্রাট হুয়ান এবং সম্রাট লিং-এর সময়ে ২০,০০০-এরও বেশি নারী চীনের নিষিদ্ধ নগরীতে থাকতেন।

যেভাবে রক্ষিতাদের বাছাই করা হতোঃ

মিং রাজবংশের সময়ে (১৩৬৮ - ১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ), রাজকীয় হারেমে রক্ষিতাদের নেওয়ার সময় একটি অফিসিয়াল নিয়ম ছিলো। এই বাছাই পদ্ধতিটি প্রত্যেক তিন বছরে একবার নিষিদ্ধ নগরীতে অনুসরণ করা হতো। ১৪-১৬ বছর বয়সী যেসব নারী রক্ষিতা বা কংকুবাইন হতে চাইতো তাদেরকে তাদের পটভূমি, গুণাবলী, আচরণ, চরিত্র, চেহারা এবং শারীরিক গঠন অনুযায়ী বেছে নেওয়ার নিয়ম করা হয়েছিলো।

খোজারাই একমাত্র পুরুষ যাদের হারেমে প্রবেশের অনুমতি ছিলোঃ

হারেমের মধ্যে একমাত্র সম্রাটের ওউরসেই যাতে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করার জন্যে কোন বীর্যবান পুরুষকে হারেমের নারীদের সেবা করতে দেওয়া হতো না। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলো খোজারা যাদেরকে অস্ত্রোপচার করে নপুংসক বানিয়ে হারেমে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হতো। রাজকীয় চীনের সব রাজবংশেই খোজারা রাজকীয় পরিবারগুলো দেখা-শোনা করতো। যদিও, এই খোজারা রাজকীয় ভৃত্য ছাড়া কিছুই ছিলো না, তবুও, চীনের লোক-সমাজে এদের প্রতিপত্তি ছিলো দেখার মতো। মিং রাজবংশের সময়ে (১৩৬৮ - ১৬৪৪), ১ লক্ষ খোজা রাজকীয় হারেমের অধিবাসীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলো।

ছবিঃ সম্রাজ্ঞী উ জেটিয়ান

হারেমের ভিতর প্রতিদ্বন্দ্বিতাঃ

রাজকীয় হারেমের ভিতর এতো সংখ্যক নারী ছিলেন বৃথায় তাদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরী হয়েছিলো। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিলো কিভাবে সম্রাটের দৃষ্টি আকর্ষন করা যায় সে নিয়ে। হারেমে অবস্থিত সকল নারীরই অভিষ্ট লক্ষ্য ছিলো কিভাবে সম্রাজ্ঞী হয়ে সম্রাটের একজন উত্তরাধীকারী'র মা হওয়া যায়। অনেক সময় এমনও হতো, নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধরাশায়ী করতে হারেমের অনেক নারী খোজাদের সাথে মিত্রতা করতেন। যদি সেই ষড়যন্ত্র সফল হতো, হারেমের সেই নারী নিজেকে উচ্চ শ্রেণীতে নিয়ে যেতে পারতেন। এর বিনিময়ে সেই নারী নিজের মিত্র খোজাদের পুরস্কৃত করতেন।

চীনের ইতিহাসে হারেমের এরকম অনেক চক্রান্ত আছে। যেমন- ট্যাং রাজবংশের সময়ে, সম্রাট গাওঝং-এর অনেক সঙ্গিনী'র একজন ছিলেন উ জেটিয়ান। অনেকের মতে, উ জেটিয়ান তাঁর শিশুকে হত্যা করে সম্রাজ্ঞী ওয়েং-এর উপর দোষ চাপান। এরফলে, সম্রাজ্ঞীকে তাঁর স্থান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন সম্রাজ্ঞী হোন উ জেটিয়ান।

যদিও, সব রাজকীয় হারেমেই ষড়যন্ত্র হতো না। যেমন- পৌরাণিক কাহিনী'র হুয়াংডি'র চারজন কংকুবাইন ছিলো যাদেরকে তাদের চেহারার জন্যে বাছাই না করে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনোভাবের জন্যে হারেমের সদস্য করা হয়েছিলো। তাঁর একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর কংকুবাইন বা রক্ষিতাই রান্না এবং চপস্টিকের আবিস্কারক। এই কংকুবাইনদেরই আরেকজন চিরুনী আবিস্কার করেন বলে ধরে নেওয়া হয়। এই চার কংকুবাইন মিলিত ভাবে হুয়াংডিকে রাজ্য শাসন করতে সাহায্য করতেন।

সম্রাটদের মৃত্যুর পরে অনেক কংকুবাইনকে অবশ্য মন্দ ভাগ্যের শিকার হতে হয়েছিলো। তাদেরকে হয় জবাই করে হত্যা করা হতো কিংবা মাটিতে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হতো যাতে তারা মৃত সম্রাটদের সাথে পরজীবনেও থাকতে পারে।


আরো পড়তেঃ

Anderson, M. M., 1990. Hidden Power: The Palace Eunuchs of Imperial China. [Online]
Available at: Click This Link

Hays, J., 2013. Eunuchs in China. [Online]
Available at: Click This Link

Jiang, Y. F., 2013. Concubines and life in the Forbidden City. [Online]
Available at: Click This Link

Lim, S. K., 2008. Chinese Imperial Women. Singapore: Asiapac Books.

Snowybeagle, 2017. The Most Damaging Institutions in Chinese History: Eunuchs and Official Harem. [Online]
Available at: Click This Link

Wang, K. H., 2015. Behind the veil of the imperial harem. [Online]
Available at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×