somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বনবিবি বা বনদূর্গা - কল্পনা না সত্য?

১৪ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বনবিবি/বনদূর্গা এবং তাঁর ভাই শাহ জঙ্গলি কি কোন কাল্পনিক চরিত্র নাকি কিংবদন্তী'র কোন মহান ব্যক্তিবিশেষ? কিংবদন্তী'র হয়ে থাকলে, আসলেই কি তাঁরা এখনো বেঁচে আছেন? তাঁরা কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন- ইসলাম নাকি সনাতন? তাঁরা মুসলমান হয়ে থাকলে, অন্য ধর্মাবলম্বীরা কেন তাঁদেরকে পূজা করেন? আর যদি হিন্দুই হয়ে থাকেন, কেন মুসলমানরা তাঁদের কাছে দোয়া চান? বনবিবি আর দূর্গা একই মানুষ? সুন্দরবনের বনবিবি নামে একটি গল্প লিখতে গিয়ে এমন অনেক প্রশ্ন এসেছে। আমি এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করবো আজ।

বনবিবি সুন্দরবনের মানুষদের কাছে অতি পরিচিত এক নাম। নৌকার মাঝিরা যেমন নৌকা ছাড়ার আগে 'বদর, বদর' ডেকে উঠে নিজেদের যাত্রাকে শুভ করতে চান, তেমনি সুন্দরবনের মধু ও মোম আহরণকারী, কাঠুরে এবং মৎসজীবীরা বনে ঢোকার আগে বনবিবি'র নামে দোয়া চেয়ে নেন নিজেদের জন্যে। বনবিবি এই শ্রেণীর মানুষদের বাঘের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেন। এমন অনেক কাহিনী চালু আছে সুন্দরবনে যাতে বলা হয়- বনবিবি এই শ্রেনী'র মানুষদের সামনে আবির্ভূত হয়ে বাঘের কবল থেকে রক্ষা করেছেন।

কথিত আছে যে, বনবিবি ও তাঁর ভাই আকাশ থেকে নেমে এসেছিলেন। তখন তাঁদের পরনে ছিলো এক বিশেষ টুপি যা দিয়ে তাঁরা উড়তে পারতেন। মুসলমানরা বিশ্বাস করে বনবিবি আর তাঁর ভাই আরব দেশ থেকে বিশেষ প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে আঠারো ভাটির দেশ ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তারপর, সুন্দরবনে এসে অত্যাচারী রাজা দক্ষিণ রায়কে পরাভূত করে সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন। ঐ অঞ্চলের মানুষ বিশ্বাস করে তাঁরা এখনো বেঁচে আছেন। এই হলো ছোট করে বনবিবি'র ইতিহাস।

প্রথমেই আসি, বনবিবি এবং দূর্গা এক কি না এই প্রশ্নে। এই পোস্টের প্রথমে যে টেবিলটি দেওয়া হয়েছে, সেটি থেকে পরিস্কার যে বনবিবি এবং দূর্গা সম্পূর্ণ ভিন্ন দু'টি চরিত্র। বনবিবি বা বনদূর্গা কাল্পনিক কোন চরিত্র কি না এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় তাহলে এখনো সুন্দরবনের মানুষেরা তাঁকে দেখতে পায় কিভাবে? অনেকেই হয়তো বলবেন, এরা তো আসলে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত নয়, শহরের স্কুল-কল্বেজ--ভার্সিটিতে পড়ালেখা করেনি। তাই, তাঁদেরকে রেফারেন্স হিসেবে টেনে আনা উচিৎ নয়। এ নিয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, এ নিয়ে যতদিন কোন গবেষনা না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত সঠিক কোন সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। নাহলে অহেতুক তর্কা-তর্কি হবে। তাই, বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়াই ভালো।

তবে, একথা অবশ্যই বলতে হবে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিজেদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পৌঁছে দেওয়ার জন্যে এক এক জায়গায় একেক রকম চল রয়েছে। যেমন- আরবে এক সময় মুখস্থ করে বা গল্প বা কবিতাকারে জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া হতো। আমাদের গ্রামগুলোতে এখনো জ্ঞান এক জেনারেশন থেকে আরেক জেনারেশনের কাছে এই ভাবেই পৌঁছে দেওয়া হয়।

যদি ধরে নেওয়া যায় যে, তাঁদের অস্তিত্ব আসলেই ছিলো, তাহলে প্রশ্ন আসে তাঁরা কোন ধর্মের অনুসারী? সিলেটের মানুষ হিসেবে আমি জানি, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক মুসলিম সাধুদের প্রনাম করেন। যেমন- হযরত শাহ জালাল (রাঃ)-এর মাজারে হিন্দুদের প্রনাম করতে দে্খা যায়। তাই, বনবিবিকে পূজা করায় কোন বাধা নেই হিন্দুদের। কারণ, তাঁদের ধর্মের উৎস তিনটি- শ্রুতি, স্মৃতি আর প্রথা। প্রথা থেকে অনেক ধর্মাদেশ আসে উনাদের। এরকমই একটি প্রথা হতে পারে বনবিবি বা বনদূর্গাকে পূজা করা।

তাঁরা কি এখনো বেঁচে আছেন? প্রশ্নটা এভাবে করা যেতে পারে- বনবিবি এখনো বেঁচে থাকতে পারেন কি না? এ নিয়ে ইসলামী ধর্মমতে কোন বাঁধা নেই। কোরআনে বর্ণিত হযরত খোয়াজ খিজির (আঃ) এখনো বেঁচে আছেন বলেই মুসলমানরা বিশ্বাস করে থাকেন। এভাবে ইসলামে আরো অনেক চরিত্র আছে যারা দীর্ঘকালব্যাপী জীবিত আছেন। তাই, বনবিবি-ও বেঁচে আছেন তা মুসলমানদের মানতে বাঁধা নেই।

পরিশেষে বলতে চাই, এই মহান দু'টি চরিত্র দু'টি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের একই সূত্রে বেঁধেছে যা আমাদের গ্রামাঞ্চলে ধর্মীয় একতার প্রতীক।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১০:৫৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×