somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিউনিশিয়া, ইজেপ্ট বিপ্লবঃ হঠাৎ করেই দুই দুইটা বিপ্লব কেন? এবং কি তার উদ্দেশ্য? একটি ভিন্নরকম বিশ্লেষন।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কদিন আগেও মসজিদ গুলো দিন ভর বন্ধ পড়ে থাকতো। নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য মসজিদের দরজা খোলা হতো, নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হতো। যে কেউ যে কোন মসজিদে ঢুকেই নামাজ পড়তে পারতো না। প্রত্যেকের জন্য মসজিদ ছিল নির্দিষ্ট যে মসজিদ ছাড়া অন্য মসজিদে সে নামাজ পড়তে পারতো না। সরকারি অফিসে মেয়েদের জন্য হিজাব পড়ায় ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা সেই ১৯৮১ থেকেই। তখন প্রেসিডেন্ট ছিল হাবিব বরগুইবা (Bourguiba)। এর পর যখন যিনে আল আবেদিন বেন আলী ক্ষমতায় এল তখন সেই নিষেধাজ্ঞা সরকারি অফিসের গন্ডি পেরিয়ে সকল পাবলিক প্লেসের জন্যও প্রযোজ্য হল। এই বেন আলীর দুঃশাসন চল্ল দীর্ঘ ২৩টি বছর। জালিম সরকারের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ক্রমেই জমতে থাকা ঘৃনা ও ক্ষোভ একদিন পর্বতসম হয়ে বাঁধ ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়লো পুরো তিউনিশিয়া জুড়ে।

সত্যিই আল্লাহ সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম পরিকল্পনা কারী। নাফরমান বান্দার সকল পরিকল্পনাকে মুহুর্তেই নিঃশেষ করে দিতে তিনি কিভাবে পরিকল্পনা করেছেন তা জানার সাধ্যি কার আছে? তা না হলে যুগের পর যুগ যেখানে সেকুলার শিক্ষার তোড়ে ইসলামি শিক্ষার ছোয়া উঠেই গিয়েছিল সেখানেই কেন তরুন যুব সমাজের তুমুল প্রতিরোধের সীসাঢালা প্রাচীর গড়ে উঠবে? মাত্র কয়দিনের বিপ্লবে উড়ে গেল কয়েক যুগ ধরে শিকড় গেড়ে মহীরুহ হয়ে উঠা জালিম সরকারে প্রমোদ প্রাসাদ। পালিয়ে গেল স্বৈর শাসক।
তিউনিশ জনগন এখন আকাশ পাতাল পার্থক্য দেখছে, টিভিতে এখন আজান প্রচার হচ্ছে, নামাজের জন্য ডাকা হচ্ছে রাসুল (সঃ) এর হাদীস গুলো বার বার ভেষে উঠছে টিভির পর্দায়। মসজিদের দরজা জোর করে বন্ধকরার স্পর্ধা আর কেউ দেখায় না। যে যখন যেখানে ইচ্ছা সেখানেই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিচ্ছে। এ যেন রাত দিনের তফাত।

এখানেই থেমে থাকেনি। এই যুবকদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লো আরেক স্বৈর শাসকের দেশ ইজেপ্টে। হুসনে মুবারক। ইজেপ্টের জনমানুষের শুধু নয় গোটা মুসলিম উম্মাহর গলার কাঁটা হয়ে থাকা একটি নাম। প্রায় তিরিশ বছর ধরে এই কাঁটা ধারন করে ছটফট করেছে এই জাতি। এখানেও সেই ২১ থেকে ২২ বছর বয়সের যুবকদের মাত্র কয়েক দিনের টানা বিপ্লবের স্রোতে ভেষে যেত হল আরেক প্রকান্ড পাহাড়কে। এই ঘটনা গুলো প্রমান করে জালিমের ঠাই কোথাও নাই।

এবার ভিন্ন আঙ্গিকে ঘটনা গুলোকে বিশ্লেষন করার প্রয়াস চালাবো। তিউনিশিয়ার বিপ্লবের রেশ না কাটতেই বিবিসির একটি টক শোতে ধারনা করা হয়েছিল এই বিপ্লবের শেষ এখানেই নয়। এটি ছড়িয়ে পড়বে ইজেপ্টে। ঠিক পরদিন তাই হলো। বিপ্লব শুরু হয়ে গেল সেখানে। বিশ্বের মানুষ কিছু বুঝে উঠার আগেই হুসনে মুবারক তার কেবিনেট ভেঙ্গে দিল। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন এত সহজেই সব হয়ে যাচ্ছে কেন? যে আমেরিকা হুসনে মুবারক কে এতদিন কোলে করে ফিরলো সেই আমেরিকা এই বিপ্লব সংশ্লিষ্ট যে ধীরে চলার নীতির ঘোষনা দিল এবং তার পরবর্তিতে হুসনে মুবারকের মত চরম বেয়াড়া শাসক যেভাবে নুয়ে পড়লো তাতে অনেকেই অন্য কিছুর গন্ধ পাচ্ছেন।

দুটি দেশের সরকার বিরোধি আন্দোলনের বৈচিত্র ও কারন গুলোতে কিছু সামঞ্জস্যের কারনে তারা এমন ধারনা করছেন। বেকারত্ব, দুর্নীতির কারনেই মুলত ফুসে উঠেছিল জনতা। এবং উভয় দেশেই যুবকরা দিয়েছে নেতৃত্ব। আরেকটি মিল হল পুরো বিপ্লব দুটোই পরিচালিত হয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এবং সামনের সারির যারাই ছিল তারা সকলেই অপরিচিত মুখ। কোন সঙ্গবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া এমন আন্দোলন কিভাবে সম্ভব তাতেও রয়েছে প্রশ্ন।

একটি সরকারের পতন মানেই সমাধান নয়, পতনের পর সমাধানে পৌছুতে আরও কিছু সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। যেমন কে বা কারা সরকার গঠন করবে, নিভাবে নতুন নির্বাচন হবে, সেনাবাহীনি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিবে কিনা এরকম হাজারো প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় সামনে। তার উপর প্রত্যেকটি বিষয়ের পেছনে রয়েছে আরও কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয় যা এত সহজে সমাধানে আনা সম্ভব নয় যত সহজে সরকারের পতন করা হয়েছে। তার মানে হল একটি লম্বা সময়ের জন্য এই দেশ গুলোতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জারি থাকবে।

মনে করা হচ্ছে এভাবে বিভিন্ন উপায়ে দেশ গুলোতে অস্থতিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। ইয়ামেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, জর্ডান, সিরিয়া, আলজেরিয়া সহ বিভিন্ন দেশে কোন না কোন ভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এগুলোকে পুজি করেই তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারন বর্তমান বিশ্ব অর্থনোইতিক কাঠামো সম্পুর্ন অকেজো হয়ে গেছে এবং এটি সম্পুর্ন রুপে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। যার কারনে পশ্চিমা বিশ্ব অর্থণৈতিক মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে পারছেনা কোন ভাবেই। এই অর্থনৈতিক মন্দাভাবের অন্যতম কারন হলো বিশ্বব্যাপি (বিশেষত আমেরিকায়) ব্যাংক গুলোর মাল্টিপল ক্রেডিট ক্রিয়েশনের মাধ্যমে আন ফিজিক্যাল মানি প্রোডাকশন। এই আন ফিজিক্যাল মানি প্রোডাকশনের ফলে তৈরী হয়েছে মুল্যস্ফিতি, সেখান থেকে বেকারত্ব ও দুর্নিতি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মুল্য বৃদ্ধি এবং যাকে এক সাথে বলা হচ্ছে “অর্থনৈতিক মন্দা”। এরই ফলস্রুতিতে অদুর ভবিষ্যতে ডলার ওয়ার্ল্ড কারেন্সি হিসেবে তার মান সম্পুর্ন রুপে হারাবে, সেখান থেকে শুরু হবে কারেন্সি ওয়ার। এই কারন্সি ওয়ার যে ঘটবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই কারেন্সি ওয়ারের ফলাফল যদি নিজেদের পকেটে পুরতে হয় তাহলে জায়নিষ্টদের দরকার একটি বিশ্ব যুদ্ধের। আর পৃথীবিকে এমন একটি বিশ্ব যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতেই এভাবে দেশে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

এভাবে ৩য় বিশ্ব যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে ইসরাইল “পাওয়ার শিফটিং” এর কাজ পাকাপোক্ত করতে চাচ্ছে যা তাদের জিয়ন প্রটোকলের চুড়ান্ত লক্ষ্যগুলোর একটি।
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×