গত বৃহস্পতিবার রাত এগারটার দিকে নীলক্ষেত মোড় থেকে আমার ফোন, এক ছিনতাইকারী বাস থেকে ছিনিয়ে নিল, আমার ঠিক মুহূর্তের আঠালো নজরদারিতে ফেরতও পেলাম। কিন্তু লিখছি অন্য কারণে - আমার পর্যবেক্ষণ থেকে কিছু বিষয় মাথায় এলো, সেটা শেয়ার করতে চাই। কিছু ব্যাক্তিগত সতর্কতামূলক টিপস শেয়ার করছি, আপনার কাজে লাগবে ভেবে -
১। ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের নিরাপত্তায় নেওয়া ব্যবস্থা এক মুহূর্তের জন্যে ভুলেও শিথিল করবেন না, কারণ ঠিক ঐ মুহূর্তে ঐ সামান্যই আপনার কাল হবে।
২। চলন্ত যানবাহনে, বাস-রিকশা-গাড়ি যাই হোক, বিশেষত জ্যাম বা সিগনালে থাকাকালীন মোবাইল না দামী জিনিস সাবধানে রাখুন। হ্যাঁ, আপনার হাত থেকেই গায়েব হয়ে যাবে জিনিসটা, ঠিক আমার ফোনের মতো।
৩। অতিরিক্ত ভিড়ে বাসে ওঠা যতটা সম্ভব পরিহার করুন। একবারেই সম্ভব না হলে, ফোন, মানিব্যাগ, হাতে রাখা ব্যাগের ভেতরে রাখুন। ব্যাগ না থাকলে, দামী জিনিস এক পকেটে রেখে, সবসময় পকেটে হাত রাখুন, কিংবা নিয়মিত স্বল্প বিরতিতে খেয়াল রাখুন।
৪। কোন অবস্থাতেই ভিড়ের মধ্যে, বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে ভ্রমন করবেন না। করলে, আপনার, ফোন আর মানিব্যাগের বাজেট হিসেব করে উঠুন। অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা বাসের দরজায়, পকেট খেয়াল রাখাটা, যেমন কঠিন, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। ছিনতাইকারীরাও খুব সহজে কাজ সেরে নেমে যায়, আপনি বুঝতেও পারবেন না।
৫। ফোনে কথা বলার সময় কখনোই জানালার দিকে/রাস্তার দিকে ফোন রেখে কথা বলবেন না, স্থির কিংবা চলন্ত অবস্থায় যেভাবেই হোক। ফোন বা কিছু ছিনতাই হলে, প্রথম যা করতে হবে - কে নিয়েছে তাকে আগে চেনার চেষ্টা করুন (গায়ের পোশাক হতে পারে), তারপর তার উপর আঠাঁর মতো নজর রাখুন। আর তার উপর ভিত্তি করে রাস্তায় অন্যদের সহযোগিতা নিন।
৬। চিৎকার করার সময় “চোর”, “আমার মোবাইল নিয়েছে”, “ঐ যে চোর, ধরেন” এসব বলতে পারেন। এতে আশেপাশের মানুষ সচেতন হবে, আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। মানুষের সহযোগিতা ছাড়া চোর/ছিনতাইকারী ধরা কঠিন। আপনি তক্ষনি চোরকে অনুসরণ করার অবস্থায় না থাকলে, সেটা আপনার জন্যে আরও বেশী প্রযোজ্য। বিশেষত, আপনি বাসে বা কোথাও আটকে থাকলে, ভুলেও আগে দৌড় দেওয়ার চিন্তা করবেন না। আগে ছিনতাইকারির গতিবিধি ও পোশাক দেখুন, আশেপাশের মানুষকে চিনিয়ে দিন, তারপর আপনার দৌড়ের পালা। আগে না চিনে, কোথায় যাচ্ছে না দেখে রাখলে, গাড়ি/বাস থেকে নেমে আপনি তার টিকিরও দেখা পাবেন না।
৭। কিছু হারালে, সাহায্যের জন্যে চীৎকার দেওয়ার সময়, নিশ্চিত ভাবেই আপনি আশেপাশের মানুষদের কাছ থেকে কিছু উল্টো কথা শুনবেন। কিছু নমুনা, “ফোন নিছে? ওহ, গেছে ভাই, আর পাইবেন না।”, “ভাই, আপনি বাশে/গাড়িতে বইসা থাইকা চিল্লাইলে হইবো? দৌড় দ্যান।” ইত্যাদি। এসব বাজে কথা কানে আসলে আপনার মেজাজ চড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক - মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। এদের কাছ থেকে নিশ্চিত ভাবেই আপনি কোন সাহায্য পাবেন না, আর এসব কথার উত্তর দেয়া তো দূরের কথা, কানেও নেবেন না।
৮। হারানো জিনিস পেলে, যার কাছেই থাকুক, আগে নিজের হাতে সেটা নিয়ে নিন – মনে রাখবেন, যারা তাকে মারছে, তাদের মধ্যে একাধিক জন ছিনতাইকারীর লোক হতে পারে। ভিড়ের মধ্যে চোর পেটাতে গিয়ে বাড়তি সতর্কতা নিন, এখানে হয়ত চোরের সংখ্যা আরও বেশী।
চোর হাতেনাতে ধরার পর বেশীরভাগ সময় যে ৫ টা ঘটনা ঘটে, আমার ক্ষেত্রেও তার বাতিক্রম হয়নি।
১। চোর পাওয়া গেলো, হালকা কিছু মার।
২। দেখা গেলো সে হেরোইনসেবী, এজন্যে তাকে জনতার পক্ষ থেকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা।
৩। কোনদিনও জানা যাবে না, কারা তাকে দিয়ে এটা করাচ্ছে, বা চ্যানেলের অন্য লোক কারা।
৪ পুলিশের হাতে তাকে সোপর্দ করলে উল্টো নিজের জন্যে আইনি ঝামেলা, অতএব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষটা নিজেই ইস্তফা দেন। জিনিস পাওয়া গেছে (আরেকদিন সে বা আর কেউ একই জিনিস ছিনতাই করবে), এই সান্তনা নিয়ে নিজের পথ ধরা।
৫। কে বা কারা আপনার ধরা ছিনতাইকারীকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে, আপনি যাদের চেনেন না, বা জানেন না কেন, কোথায় তাকে নেয়া হচ্ছে। এটা যদিও সবসময় ঘটে না।
সরকার, সমাজসেবী ও এই খাতে কাজের মানুষদের কাছে আমার অনুরোধ, অপরাধ্মুলক কাজে জড়িত হেরোইনসেবি/মাদকাসক্ত লোকগুলোকে সুস্থ করে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, আর মাদকের ব্যাবহার রোধে আরো কঠোর হওয়া।
পরিশেষে, আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আশেপাশের মানুষদেরও ধন্যবাদ, সহযোগিতা না পেলে হয়তো ফোনটা হারাতাম। যাকে ধরেছি, তার বোকামিতেই সে ধরা পড়েছে - নীলক্ষেতের বাঁকে দৌড়ে হারিয়ে গেলে হয়তো আর পেতাম না। তার জন্যে আল্লাহর কাছে দো’আ করি যাতে সে সুস্থ হয়ে ওঠে, আর এসব কাজ ছেড়ে দেয়।
সাবধানে থাকুন, দেখে চলুন।