somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাকার মেশিনের আত্মহত্যা : ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়ুন এক টাকার মেশিনের গল্প। যিনি আত্মহত্যার আগে লিখে গেলেন নিজের জীবনের কাহিনী। যাদের সন্তান বা স্বামী বিদেশে থাকেন তারা অবশ্যই দেখবেন কত কষ্ট করে আপনাদের জন্য। মফিজ ( ছদ্মনাম) , উনি ছিলো আপনাদের সোনার বাংলার রেমিটেন্স যোদ্ধা, একটি পরিবারের টাকার মেশিন। কাতার প্রবাসী হিসাবে প্রবাসীদের সহযোদ্ধা, জীবন যুদ্ধে হার মেনেই ফাঁসিতে ঝুলে আছেন।
মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান কে একটু ভাল ভাবে রাখার জন্য, ফ্যামিলি মানুষ গুলোর একটু সুখের জন্য সব মায়া ত্যাগ করে প্রবাসে আসছিল। জানিনা এবার কার সুখের আসায় দুনিয়ার মায়া ও ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চলে গেছেন।
বাড়ি ছিলো রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জে। উনার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, মানুষ টা অনেক সহজ-সরল টাইপের ছিলেন, সবসময়ই সোজা সাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করতেন। নিজের মনের কথাটা ঠিকমতো প্রকাশ করতেও পারতেন না, সিগারেট কিংবা কোন বাজে অভ্যাসও ছিলোনা। নয় মাস আগেই ছুটিতে দেশে গিয়ে বিয়ে করে এসেছিলেন। বাড়িতে মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন, স্ত্রী নিয়ে ই উনার যৌথ ফ্যামিলি ছিলো।
উনার রুমমেটদের মাধ্যমে জানা গেছে, কিছুদিন থেকেই নাকি উনি বেশ উদাস আর মন খারাপ করে থাকত। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করত না, রাতে সবাই ঘুমাইত ওনি বেডে শুয়ে কেঁদে বালিশ ভিজাইতো।
সুইসাইড করার কারণ টা আর শেষ ইচ্ছে টা মরার আগে চিরকুটে লিখে গেছিলেন.. “মাস দুয়েক আগে উনার ভিসা নিয়ে একটু প্রবলেম হয়েছিল, দুইমাস ধরে বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারেনি। সেলারীর সব টাকাই ভিসার ঝামেলা মিটাইতে শেষ হয়ে গেছিলো।
ফ্যামিলির সবাই ভাবছিল, ওনি টাকা টা বৌয়ের পারসোনাল একাউন্টে পাঠাচ্ছে, বাড়িতে ফোন দিলে সবাই উনার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলত, কল কেঁটে ফোন বন্ধ করে রাখত। শেষ পনেরদিন মা উনার সাথে কথা বলেনি। বৌ ভাবছে টাকা বাজে পথে খরচ করতেছে, বৌও এসব নিয়ে ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে গেছিলো। উনার সমস্যা টা কাউকে বুঝাতে পারেনি, কিংবা কষ্ট টা কেউ বুঝেনি, ঘরের বৌ এমন কি গর্ভধারিনী মা ও না।। ফ্যামিলির কাছ থেকে পাওয়া আঘাত টা সহ্য করতে না পেরেই পৃথিবীর মায়াও ত্যাগ করে নিজ রুমে ফাঁসি দিয়েছেন।
চিরকুটে লেখা শেষ ইচ্ছে টা ছিলো, “লাশ টা যাতে দেশে না পাঠানো হয়, এখানেই দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা হয়।” …শেষ ইচ্ছে টা হয়ত পূরণ করা সম্ভব হবেনা কারণ কোম্পানি থেকে লাশ টা দেশে পাঠিয়ে দিবে। তবে কি পরিমাণ আঘাত আর কতোটুকু কষ্ট পাইলে একটা মানুষ মরার আগে এরকম আবদার করতে পারে ???
ভাই সিরিয়াসলি একটা কথা বলি, প্রবাসীরা ভোগ- বিলাসিতা কিংবা নিজেদের সুখের জন্য বিদেশ আসেনি, ফ্যামিলির কথা চিন্তা করেই এসেছে।
দেশে যারা আছে তারা মনে করে প্রবাসী রা অনেক সুখে আছি, টাকার পাহাড়ে কিংবা টাকার গাছ নিয়ে বসে আছে, ছিঁড়ে ছিঁড়ে শুধু টাকা পাঠাবো। কিন্তু আমরাতো বুঝি মাস শেষে টাকা পাঠানোর জন্যে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয়।
আপনার ভাই, ছেলে, স্বামী, বাবার প্রবাস লাইফের একদিনের কষ্ট যদি কখনো দেখতেন, সাথে সাথে বলতেন বাড়িতে চলে আসতে প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব তবুও প্রবাসে থাকতে হবেনা।
প্রবাসীদের কষ্ট বুঝতে বেশি কিছু করতে হবেনা, “ভোররাত চার টায় ঘুম থেকে উঠে 45° সেলসিয়াস তাপমাত্রার সারাদিন রৌদে পুঁড়ে 15/16 ঘন্টা ডিউটি করে রাত নয় টায় রুমে গিয়ে কিচেনে গরম পাতিলের ছ্যাঁকা খেয়ে রান্না করার কষ্ট টা একটু আন্দাজ করুন।
অবশ্যই, দেশে থেকে আপনারা কি করে বুঝবেন/ দেখবেন আর বলবেন। আপনারা তো প্রবাসীদের রক্তশুষে ভালোই মৌজে আছেন। আমরা যারাই প্রবাসে আছি, আমরা তো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী, হাজারো কষ্ট বুকে নিয়েও বলি অনেক ভাল আছি। কোন দিন বুঝতে দেইনি আপনার সুখের জন্য আমাদের জীবনের মূল্যবান দিন গুলোকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছি।
দেশের মানুষ গুলোর কাছে একটাই অনুরোধ, বিদেশে আপনার ফ্যামিলির যেই থাকুক বাবা, ভাই, স্বামী, বন্ধু, অন্যকোন সম্পর্কের আত্মীয় হোক তাদের সাথে একটু ভাল ব্যবহার করেন, তাদেরকে একটু ফোনে সময় দেন, একটু ভালো ভাবে কথা বলুন। তারা আপনাদের কাছে এরচেয়ে বেশি কিছু আশাও করেনা।কোনরকম মেন্টালি পেইন দিবেন না, কাছের মানুষের ছোট একটা কথাও ধনুকের তীরের মতো বুকে বিঁধে। সেসব ব্যথায় মেন্টালি সার্পোট কিংবা সান্ত্বনা দেওয়ার মতো এখানে ওনাদের কেউ নাই, সবরকম পেইন একাই নিতে হয়।
প্রবাসী ভাই-বন্ধু, দেশ থেকে যে যাই
বলুক না কেন, মনে কিছু নিবেন না। সামর্থ্য যতটুকু আছে ফ্যামিলির জন্য ততটুকুই করবেন।কোন রকম আঘাতে ভেঙ্গে পড়বেন না। আর কোন রেমিটেন্স যোদ্ধা / সহযোদ্ধা কে এভাবে আমরা হারাতে চাই না।

Mahidur Rahman Biltu এর টাইমলাইন থেকে নেওয়া৷
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×