বহু দিন আমি আর আমার স্বামী প্রায় শেষ বিকালে হাটতে বের হতাম । আমার স্বামী প্রতিদিন এক জন বৃদ্ধার ওজন মাপার মেশিনে দাড়িয়ে ওজন মেপে তাকে ১০ টাকা বা ২০ টাকা কোন দিন ৫০ টাকাও দিয়ে দিত । প্রতিদিন তাঁর এই ওজন মাপা আমার কাছে খুবেই বিরক্ত লাগত । আমার স্বামী হেসে বলত আজেই শেষ । কিন্তু দেখা গেল তাঁর এই শেষ বলে কোন শেষ নেই ।
লোকটি ছিল খুবেই বৃদ্ধা । মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি , বেশী একটা কথা বলত না। সবাই দুই টাকা দিত তাঁর কাছে ওজন মেপে । আমি শুধু আমার স্বামী ছড়া দুই এক জন দেখেছি তাঁর চেয়ে বেশী টাকা দিতে । আমার স্বামীর কিন্তু প্রতিদিন তাঁর কাছে ওজন মেপে একটা লম্বা হাসি দিয়ে বলত । অঙ্কেল আমি কিন্তু আগের মতোই আছে । ওজন বারে নাই কমে নাই । মেশিন ঠিক আছে তো । এই নেন আজ একশত টাকা দিলাম । আগামী ১০ দিন আমি আসব না। হয়ত ইমরান দুই বা তিন দিনের বাহিরে যাবে ।
আমি বলি তুমি কি ইমরান পাগল । টাকার কি কোন মায়া নাই - এই লোক কে তুমি আজ একশত টাকা দিয়ে আসলে যে খানে দুই টাকা দিলেই হয় । ইমরান বলল সরি প্রিয়া ভুল হয়ে গেছে । আর দিব না।
ঠিক তাআর এক সপ্তাহ পরে আমি আর ইমরান আবার হাটতে বের হই । কিন্তু আজ ঐ লোকটা নাই । ইমরান বলল প্রিয়া দেখ আজ ঐ চাচা নাই । যাই হউক দুই টাকা কিন্তু আজ বেচে গেল । কিন্তু সাত দিনে ভ্রমণে কতটা ওজন কমলো বা বাড়ল বুঝতে পারলাম না। আমি ইম্রাআন কে বললাম , থাক আর মজা করতে হবে না। দুই টাকা তো দিত না , আমি জানি তাকে তুমি আজ ৫০০ টাকা দিতা । আমি যত না করি তুমি দিন দিন তা ডাবল কর ।
ইমরান কি মনে পাশের ঝাল মুড়ি ওয়ালাকে বলল এই যে ভাই ওজন চাচা কোথাই ? লোকটা ইমরান কে বলল ভাআই ঐ চাচা মারা গেছে আজ তিন দিন । ইমরান একটু চুপ হয়ে গেল । আআমি একটু কষ্ট পেলাম ।
ইমারান হাটতে হাটতে আমায় বলল - প্রিয়া আমারা কত টাকা কত ভাবে খরচ করি । ঐ বৃদ্ধা যদি ভিক্ষা করত তাহলে ওজন মাপার চেয়ে অনেক বেশী টাকা পেত । কিন্তু সে ভিক্ষা না করে একটা কাজ করছে । আমি তাঁর কাজ কে সম্মান করি । তোমার কাছে মনে হতে পাড়ে ঐ ছোট ওজন মাপার মেশিন টা কি ? প্রিয়া জানো কি ঐ মেশিনটা হয়ত অনেক গুলো মানুষের রেজিক । তাঁর স্ত্রী কন্যা পুত্র বা তাঁর প্রিয় নাতি নাতনীর জন্য কিছু রোজগার । এই বয়সে সে ভিক্ষা না করে কাজ করছিল । এতাআই আমাকে মুগ্ধ করেছে ।। তাআর হয়ত আমার মতো পুত্র নেই থাকলেও হয়ত তাঁর খবর নেয় না। মানুষের পিছনে গল্প গুলো কেউ দেখে না। ইমরানের কথা শুনে আমারর দুই চোখ দিয়ে মনের অজান্তে পানি চলে আসে । ঠিকেই তো বৃদ্ধা মানুষ ভিক্ষা না করে কাজ করছে ।।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ২:৫৭