somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুশ সাহিত্যিক আন্তন চেখভ ও তার কিছু বিখ্যাত উক্তি;

১২ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুশ সাহিত্যের দিকপাল বলতে আমরা যাদের জানি;এর মধ্যে গোর্কি, ক্রিলভ আর তলস্তয় বাদে প্রায় সবাই ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ!
পুশকিন বেচেছিলেন মাত্র ৩৮ বছর!লেমন্তরভ বেঁচেছিলেন ২৭ বছর, গোগল ৪৩ বছর, দস্তয়েফস্কি তবু ৬০ বছর বেঁচেছিলেন কিতু আন্তন চেখভ মারা যান মাত্র ৪৪ বছর বয়সে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে(যক্ষা)!
চেখভ তার সাহিত্যিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, যদিও এ থেকে তিনি সামান্যই উপার্জন করতেন। তিনি অধিকাংশ রোগীর চিকিৎসা করতেন বিনামূল্যে। তাই জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান আসতো তার লেখালেখি থেকে। তিনি লেখালেখি মুলত শুরু করেছিলেন টাকা উপার্জনের জন্য কিন্তু লেখা লেখির শুরুর দিক থেকে তার আত্ম বিশ্বাসের ব্যাপক ঘাটতি ছিল। নিজেকে নিয়ে নিজে মজা করতেন; বলতেন, তার কোন সাহিত্য প্রতিভা নেই-নিজের লেখাকে কখনো ‘গাভনো’( ময়লা আবর্জনা) , কখনো ‘ চিপুখা’ ( অতি তুচ্ছ) বলে ব্যঙ্গ করতেন! যদিও স্বয়ং লিয়েভ তলস্তয় তার কয়েকটা লেখাকে রুশ সাহিত্যের সেরার মর্যাদা দিয়েছেন।
ডাক্তারি করার জন্য তার পোশাকি নাম ছিল; ডা. আ. প. চেখভ আর লেখালেখিতে ব্যবহার করতেন ছদ্মনাম ‘ আন্তোশা চেখন্তে’। ‘আন্তন চেখভ’ নামটা তিনি রেখে দিতে চেয়েছিলেন ভবিষ্যতের জন্য যখন তিনি ডাক্তারি বিদ্যা নিয়ে কোন বই লিখবেন তার লেখকের জন্য।
১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে তিনি সর্বমোট ৬০০টি সাহিত্যকর্ম রচনা ও প্রকাশ করেন যদিও লেখালেখির শুরুতে তিনি গল্পের কাহিনি যোগার করতে বন্ধু বান্ধব ও পরিবার লোকজনের কাছ থেকে থিম কিনতেন! শুধু ধারনা দেবার জন্য ১০ কোপেক আর কাহিনীর জন্য ২০ কোপেক দিতেন!
তার সেরা ছোট গল্প গুলোর মধ্যে, জনৈক আমলার মৃত্যু, চুকলি, গুজবেরি, ভালবাসার কথা, ৬ নং ওয়ার্ড,মেয়েলি পুরুষ, বহুরুপী, প্রজাপতি,কুকুরসঙ্গী মহিলা, ইয়োনিচ, খোলসের লোক,চুম্বন,সে বুঝতে পেরেছিল, বিরস কাহিনী, সুন্দরিরা, ঘুম পাচ্ছে অন্যতম। এ ছাড়াও আরো শতাধিক ছোট গল্প, নাটক, গল্প গ্রন্থ বিশ্ব সাহিত্যে উপরের দিকে স্থান পেয়েছে! বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এমন নাট্যকারদের মাঝে শেকসপিয়ার ও ইবসেনের পাশাপাশি চেখভের নামও উল্লেখ করা হয়।
চেখভ মারা যান ১৯০৪ সালে জার্মানিতে!
১৯০৮ সালে ওলগা তার স্বামীর শেষ মুহূর্তগুলো নিয়ে লিখেছেনঃ
খুব অদ্ভুতভাবে আন্তন শায়িত অবস্থা থেকে একেবারে সোজা হয়ে উঠে বসলেন এবং জার্মান ভাষায় (অথচ তিনি জার্মান ভাষা বলতে গেলে জানতেনই না) স্পষ্ট ও জোরগলায় বলে উঠলেন, “আমি মারা যাচ্ছি।” ডাক্তার তাঁকে শান্ত করলেন। একটি সিরিঞ্জের সাহায্যে তাঁকে কর্পূরের ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করলেন এবং আদেশ দিলেন শ্যাম্পেন আনার জন্য। চেখভ একটি পুরো গ্লাস ভর্তি শ্যাম্পেন নিয়ে তা পরীক্ষা করলেন কিছুক্ষণ, মৃদু হেসে আমাকে বললেন, “বহুদিন হলো আমি শ্যাম্পেন পান করিনা।” শ্যাম্পেন শেষ করে তিনি নীরবে শুয়ে পড়লেন এবং আমি শুধুমাত্র বিছানায় ঝুঁকে পড়ে তাঁর নাম ধরে ডাকার সময়টুকু পেলাম। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। একটি শিশুর মতো শান্ত হয়ে তিনি ঘুমাচ্ছেন.. আঃ কি দারুন মৃত্যু!!

‘সত্যি যে সুখী বা শোকার্ত, বিশুদ্ধ কথায় প্রায়ই সে তৃপ্তি পায় না। সেজন্যই নীরবতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুখ বা দুঃখের চরম প্রকাশ! প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরকে তখনই ভাল করে হৃদয়াঙ্গম করতে পারে যখন তারা নির্বাক! সমাধিক্ষেত্রে আবেগপূর্ণ আন্তরিক ভাষন যাদের স্পর্শ করে তারা অনাত্মীয়। মৃতের স্ত্রী বা সন্তান সন্তদির কাছে তা নিষ্প্রাণ ও অবান্তর!’
‘যখন আপন জনকে হারাবার ভয় থাকে , তখন তাকে যতটা ভালবাসি, সাধারন অবস্থায় তার কিছুই বাসি না।‘
‘দুঃখীমাত্রেরই অহংবোধ প্রবল, তারা রাগী নিষ্ঠুর, ন্যায় বিচারে অক্ষম, বোকাদের চেয়েও তারা পরস্পরকে কম বোঝে! দুর্ভাগ্য মানুষকে কাছেত আনেই না, বরং দূরে সরিয়ে দেয়। আমরা ভাবি, একই প্রকার দুর্ভাগ্যের ফলে মানুষে মানুষে ঐক্যবোধ বেড়ে যায়!’- শত্রু
‘টাকা ভোদকার মতই মানুষকে খামখেয়ালী করে তোলে। আমাদের শহরে ছিল এক বনিক, মৃত্যু শয্যায় সে একবাটি মধু চেয়েছিল! সেই মধু দিয়ে তার সমস্ত ব্যাঙ্কনোট ও লটারির টিকেট খেয়ে ফেলেছিল, যাতে আর কেঊ সেসব না পায়।
আমি একদিন রেলস্টেশনে কাজ করছিলাম, এমন সময় এক ভদ্রলোক পড়ে গেল ইঞ্জিনের তলায়- পা-টা তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল! রক্তে মাখা লোকটিকে আমরা ধরাধরি করে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে, সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য!লোকটা ব্যাথার যন্ত্রনায় চিৎকার করতে করতে তার কেটে যাওয়া পা-টার খোজ করছিল, কেটে যাওয়া পায়ের বুটের মধ্যে বিশটা রুবল নাকি ছিল তার। ভয় পাচ্ছিল সে-টাকাটা বেহাত না হয়ে যায়!!!’
-গুজবেরি
...চলবে
* কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ মশিউল আলম, রাদুগা প্রকাশনী ও নেট দুনিয়া

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:২২
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×