somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বুদ্ধিজীবী আমি

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কার্নিশে তাকিয়ে দেখি এসেছে সে। চোখে তার ভূবন জয়ের হাসি । একটু দূরে, আমাদের সীমানার পাশে,দাঁড়িয়ে ছিল যে কদম গাছ পাখিটির বাসা ছিল তাতে। আমার জরাজীর্ণ বাড়িতে আমি একলা হলেও পাখির ছিল দুটো ছানা। কিচির মিচিরে বুঝা যায় কতটা আনন্দিত তারা। একটা ত আনন্দে চিটকে পড় নিচে। মা পাখিটি পরম যতনে ঠোঁট দিয়ে চেপে তুলে আনে তাকে। তাই দেখে বাকি ডালে বসা পাখি জয়ধ্বনি করে জয় মা তোমার, জয় মা তোমার। তুমি আমাদের রাজা বিহীন রাণী।

একদিন গ্রীষ্মের দুপুরে, ভাতঘুম থেকে উঠে পা দুটো চেগিয়ে চেগিয়ে বের হলুম সবে । বাসাটায় নজরে পড়তেই আঁতকে উঠি, দুই পা দু'দিকে চেগিয়ে পড়ে আছে মা পাখিটি। আমি ত কেঁদে কেঁদে খুন , এবার তবে ছানা দুটোর কি হবে? ভেতরে ভেতরে আনন্দিত কচি মাংসের লোভে? কতদিন পাইনি স্বাদ, কি তুলতুলে শরীর বটে। আমার চিৎকারে ছানা দুটো জেগে উঠে আশপাশের পাখিরা জড়ো হয়ে কিচির মিচির করে, এমন সময়ে দেখি, কি আশ্চার্য্য মা পাখি ডানা চাপটি মেরে, ডালে গিয়ে বসে। রাগান্বিত চোখে চ্যাঁ চ্যাঁ করে কি যেন বলে আমারে? "শালা, সারা দিনরাত ঘুমাস চেগিয়ে, আমি ঘুমালে দোষ কি তাতে?" আশপাশ থেকে তখনি, জয়ধ্বনি উঠে, হে মৃতুঞ্জয়ী মা, তুমিই আমাদের রাজাবিহীন অমর রাণী।

প্রড়ন্ত বিকেল, সুনশান নিরবতা। একলা মানুষ আমি চা পান করি সাথে বারান্দায় হাঁটি। সুখি সুখি ভাব নিয়ে মিটমিটিয়ে হাসি। একগাধা বইয়ের বোঝা মাথার ভেতর নিয়ে চলি। আমি যে বুদ্ধিজীবী। ভেবে ভেবে পার করি রাত, সকাল হতেই হাগু করে, তবেই নিস্তার। ছানা দুটোর পাখা গজাল, সাথে চোখ,ঠোঁট ফুটিল। গাছের এ ডাল ও ডাল করে কাটে সকাল বিকাল। একদিন দেখি দু'জনে করে মারামারি আমি বলি,আরে করো কি, করো কি? ঝুঁটিতে ঝুঁটিতে চলে টোকাটুকি, ডানাডানায় ঝাপাঝাপি নখের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত, ফুলেরা করে কান্নাকাটি বাঁচাও বাঁচও বলি। আমি নিরুপায় হয়ে চেয়ে থাকি, ভেতরে ভেতরে কচি মাংসের লোভে পড়ি ! তারা মগডালে লড়াই করে, যে দুটো ফুল পড়ে ঝরে আমি কুঁড়িয়ে রাখি যতনে প্রিয়সীকে দিব বলে। এমন সময়ে দেখি চারদিকে ডানার ঝাপটানি। তাকিয়ে দেখি ডালে ডালে জয়ধ্বনি হে মাতার যোগ্য পুত্ররা তোমরাই আমাদের মাতাবিহীন দিশারী। তোমাদের শক্তিই আমাদের বল। তোমরাই আমাদের চেতনার জল।

বর্ষাকালের ঝড়ে দেখি কার্নিশে জোড়া পাখি , চিনিতে আর বাকি নাই। চুপিচুপি হাতের মুঠে একটাকে নিই বাকিটা চলে যায় উড়ে। খাঁচায় বন্দি করে রাখি কিছুকাল চুপিচুপি বলে কি চাও কি চাও? দিবো সবি তোমায় হিরে মুক্ত নীল আকাশের রঙের তুলি, যাহা লিখিতে চাইবে তুলি , অমনই লিখে ফেলবে তোমার কষ্ট যাবে কমে। পাবে সম্মান, দিবো আমি পাখিদের হয়ে। আমি নিরহ প্রাণী, কভু পাইনি কিছুই, না পারি স্লোগান, না পারি গান কিছুকাল আগে আবিষ্কার করি, আমি আমড়া গাছের ঢেঁকি। বুক ফুলিয়ে বলি তবে হোক সন্ধিচুক্তি । অন্যটাকে আটকিয়ে এইটাকে ছাড়ি। খানিকপর দেখি, পাখিদের মাঝে ডাল, পাতা ফুলের ভাগাভাগি ছোঁ মেরে শক্তি দেখানি অতিষ্ঠ আমি, চারদিকে চলে চিৎকার চেঁচামেচি। এরই মধ্যে বেজে উঠে স্লোগান "জয় বু্দ্ধীজীবির জয়, জয় বুদ্ধীজীবির জয়"টুকরো টুকরো ফুল ভেসে আসে আমার জরাজীর্ণ বাসায়, বিশ্রীগন্ধও আসে ভেসে। একি! কপাল বেয়ে যে পড়ে পটি তাতে কি পেয়েছি ত ফুলের ঝুড়ি।

একদা ঠক ঠক শব্দে ঘুম ভাঙ্গে, দেখি সব পাখি জড়ো হয়েছে কার্নিশে আড়ষ্ট ভাঙ্গে, এগুতেই কিছু যায় উড়ে বাকিরা করছে পায়চারি, যেন হয়েছে গুরুতর ক্ষতি। আবার ভেজে উঠে ঠক ঠক চশমা চোখে দিয়ে দেখি,একি সর্বনাশ করাত চালাচ্ছে ভীনগায়ের লোকে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাখিদের বাসা। ভেতরে ভেতরে আমি বেজায় খুশি এই বুঝি এলো, আমার কাছে সবপাখি। পিটিয়ে এবার বের করবো যে শালা করছিল পটি। মনে মনে ফন্দি আটি ভীনলোকের সেবা কেমনে করি? সারাঘর তন্নতন্ন করে অবশেষ পেয়েছি একটুকরো রুটি। নিজে না খেয়ে দিই তুলে তাঁহাদের পাতে। তাঁহাদের মুচকি হাসিতে ঝিলিক খেলে যায় আমার খুনে। মনের ভেতর বেজে উঠল,"জয়,জয় ভীনলোকের জয়। তোঁমাদের প্রতি এই মন সদাখুশি রয়।" কটমট কটমট শব্দে জীর্ণগৃহ মুখে ফিরে দেখি আমার গৃহ কই? হেতায় পড়ে আছে মস্তবড় কদম গাছে ডালি। পাখিরা করে উড়াউড়ি, দিগন্ত ছাড়ি আমি হই সাক্ষী, আমি যে নিরহ বুদ্ধীজীবি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×