somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অসম্পুর্ণ গল্প ... (১)

২৩ শে জুলাই, ২০০৯ ভোর ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বাধীনতার কয়েক বছর পরের কথা। সঠিক করে বললে সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখের একটি ভোর। দুরের মসজিদে আজান দেবে বলে সবে জেগে উঠেছে মুয়াজ্জিন। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে দিয়ে ঠিক এমন সময় শোনা যায় একটি আর্ত চিৎকার, সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটি জন্মের প্রায় পাঁচ মিনিট পর চিৎকার করে জানায় দেয় জীবনের আগমনী বার্তা। হাফ ছেড়ে বাঁচেন বুড়ী দাইমা, তারপর অভ্যস্ত হাতে কুসুম গরম পানি থেকে তুলে নেন সময়ের আগেই জন্ম নেয়া বাচ্চাটিকে। জন্মের পর নিঃশ্বাস না নেয়া বাচ্চাটাকে বাঁচানোর এটাই ছিলো তার শেষ চেষ্টা। হাসি ফুটে ওঠে রাত জাগা মানুষ গুলোর মুখে। আতুরঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে সবাইকে জন্মের সুসংবাদ দেন বাচ্চার নানী "ছেলে হয়েছে, রোজীর ছেলে হয়েছে"।

সাড়ে সাতমাসে জন্ম নেয়া বাচ্চাটার গায়ের চামড়া এতই পাতলা ছিলো যে চামড়া ভেদ করে তার রক্তবাহী শিরা গুলো দেখা যেত জন্মের পরপরই। এই বাচ্চাকে কাঁথায় মুড়িয়ে কোলে নিয়েও শান্তি পেলেননা জাহানারা বেগম, বাচ্চার নানী। বাচ্চার জন্যে বানানো নতুন বালিশ ছিঁড়ে বের করলেন একগাদা তুলো। তারপর তুলোতে জড়িয়ে বুকের মাঝে তুলে নিলেন তার পনেরো বছর বয়সী আত্মজার প্রথম সন্তানকে। যেন পণ করলেন পৃথিবীর সব আঘাত থেকে এই মানব সন্তানটিকে রক্ষা করার। দাইমা অভিজ্ঞ চোখে বাচ্চাটিকে কিছুক্ষন দেখে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন "এই বাচ্চা বাঁচবেনা, খামাখা মায়া বাড়াইয়েননা আর"। জাহানারা বেগমের চোখ জ্বলে ওঠে ভাটার মত, বুকের মাঝে আরও শক্ত করে চেঁপে ধরেন বাচ্চাটিকে, যেন চোখের সামনে দেখতে পারছেন মৃত্যুর ফেরেশতাকে, কিন্তু এযাত্রা তিনি হেরে যেতে নারাজ। মা'র কোলে থাকা শিশুর জান না কি কবচ করতে পারেননা মৃত্যুদ্যুত, সে কথা মিথ্যে প্রমাণ করে তার কোল খালি করে চলে গেছে তার নিজের সন্তান। কিন্তু আত্মজার নাড়ি ছেড়া ধণকে তিনি কিছুতেই চলে যেতে দেবেননা, কিছুতেই না। তূলোয় মোড়ানো বাচ্চাটাকে নিয়ে জায়নামাজের পেতে বসলেন মমতাময়ী, এক হাতে বাচ্চাকে জড়িয়ে অন্য হাতে কোরআন শরীফ দিয়ে ঢেকে রাখলেন বাচ্চাটাকে, মনে মনে আউড়াতে থাকলেন জানা সব সূরা। সকাল বেলা সদর হাসপাতাল থেকে ডাক্তার না আসা পর্যন্ত বসে রইলেন ঠিক সেভাবেই।

ডাক্তার এসে ভাল করে পরীক্ষা করলেন বাচ্চাটিকে। শারীরিক কোন সমস্যার লক্ষন দেখা গেলোনা বাচ্চাটার মধ্যে। তাই ওর মুখে তখনই দেয়া হলো এক চামচ দুধ। জীবনের প্রথম মুখে খাবারের স্বাদ পেল বাচ্চাটা। চেটে চেটে খেয়ে ফেললো দুধটুকু, তারপর আরও দু চামচ। তারপর ঘুমিয়ে পড়লো পরম নির্ভরতায় মমতাময়ীর বুকের উষ্ণতায়। ডাক্তার মিষ্টিমুখ করে যাবার সময় বলে গেলেন কোন সমস্যা দেখা দিলেই যেন দ্রুত ঢাকায় নেয়া হয় বাচ্চাকে, এখানে এই প্রিম্যাচিওর বেবীর কোন চিকিৎসা সম্ভব নয়। অন্তত সাতদিন না গেলে বলা যাবে না যে এই বাচ্চা বাঁচবে কি না।

ততক্ষনে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে দু'রাত কষ্ট পাওয়া বাচ্চার মা। মা'র কোলে দেয়া হলো তার সাতরাজার ধণকে। তার কোলে উঠেই চিৎকার করে উঠলো ছোট্ট বাচ্চাটা, ঠোট চাটতে লাগলো ঘন ঘন, সবাই বুঝলো এটা ক্ষিধের কান্না। অপটু হাতে মা তার সন্তানকে চেঁপে ধরলেন বুকের সাথে, সন্তানের মুখে তুলে দিলেন স্তনের বোঁটা। বুকের শ্বাস টেনে নেয়া অনুভুতিতে বুঝতে পারলেন দুধ খেতে শুরু করেছে তার ছেলে। পরম মমতায় ছেলেকে বুকের মাঝে শক্ত করে চেঁপে ধরলেন মা। দু মিনিট খাবার পরেই ঘুমিয়ে পড়লো ছোট্ট বাচ্চাটা। দ্রুত গোসল সেরে আবার বাচ্চাটাকে তুলোতে জড়িয়ে কোলে করে জায়নামাজে বসলেন জাহানারা বেগম, কোরআন শরীফের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখলেন ছেলেটাকে, প্রতিজ্ঞা করলেন বিপদ না কাটা পর্যন্ত রোজা রাখবেন তিনি, যত দিন লাগে লাগুক, কিন্তু যেমন করেই হোক, এ বাচ্চাকে বাঁচাবেনই তিনি।

ক্রমশ ...
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১:৫৬
৪৭টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×