somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রেমিকারা - জেনী পর্ব ;)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বঃ
আমার প্রেমিকারা - ইলোরা পর্ব ;)
আমার প্রেমিকারা - হুমায়রা পর্ব ;)

নাহ ... ইলোরা তার প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করিবার পূর্বেই পিতার কর্মস্থল পরিবর্তনের কারনে আমাকে কুমিল্লা চলিয়া যাইতে হয়। ইলোরা হুমায়রা সহ আরও বেশ কিছু বন্ধু বান্ধবীকে চোখের জলে ভাসাইয়া আমি ডিং ডিং করিয়া নাচিতে নাচিতে কুমিল্লার চৌধুরীপাড়াস্থ দোতলা বাড়ীটিতে যাইয়া উপস্থিত হই, এবং মিশনারী স্কুল নামে খ্যাত - আওয়ার লেডী অব ফাতেমা গার্লস স্কুলে (:P) তৃতীয় শ্রেনীতে যোগদান করি।

প্রতিদিন সকালে উঠিয়া চোখ ডলিতে ডলিতে বিদ্যালয়ে গমন করা যখন যন্ত্রনাকর কাজ বলিয়া মনে হইতে লাগিলো, তখন আমাকে উদ্ধার করিলো জেনী আর জেমী দুই জমজ বোন, উহারা আমার পাশের বাসায় থাকিতো, একদা এক শুভক্ষনে উহারাও মিশনারী স্কুলে ভর্তি হইয়া আমাকে আহ্লাদিত করিল। অতঃপর আমরা একসাথে মুরিগীর খাঁচার মত স্কুল ভ্যানে করিয়া নিয়মিত বিদ্যালয়ে গমন করিতে লাগিলাম। দেখিতে হুবহু একই রকম হওয়ায় জেনী জেমীর মা উহাদিগকে সর্বদা আলাদা করিয়া রাখিতে বিশেষ ভাবে সচেষ্ট ছিলেন। জেনী শান্তশিষ্ট হওয়ায় তিনি জেনীর লম্বা চুলে তেল দিয়া বিনুনী বাঁধিয়া দিতেন, আর জেমী একটু দুষ্টু প্রকৃতির হওয়ায় উহার মাথার চুল ছোট করিয়া ছাটিয়া দিয়াছিলেন। উহাতে অবস্য জেমীর তেমন কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নাই, কারন যে সময় অসময়ে জেনীর বিনুনী টানিয়া অতিশয় আমোদিত হইতো। জেনীও কেহ তাহার বিনুনী স্পর্ষ করিলে অগ্নিশর্মা হইয়া তাড়া করিতো, আমি প্রথম দিকে তাহাদিগের এই মজার খেলা বেকুবের ন্যায় অবলোকন করিয়া হাততালি দিয়া আমোদ প্রকাশ করিলেও ক্রমেই জেমীর সহিত মিলিয়া জেনীকে খেপাইতে আরম্ভ করিলাম।:D

একদা বৈকালে এইরুপ এক খেলায় মাতিয়া আমি আর জেমী জেনীকে উত্ত্যক্ত করিতে লাগিলাম। জেনীও সেইদিন প্রচন্ড খেপিয়া গিয়া আমাদের দুইজনকেই তাড়া করিয়া বেড়াইতে লাগিলো। কিন্তু এক পর্যায়ে কাহাকেও হাতের নাগালে না পাইয়া আমাকে লক্ষ্য করিয়া সে একখানে আধলা ইষ্টকের আধখানা টুকরা নিক্ষেপ করিল। ক্রম পলায়মান (!) আমার পৃষ্ঠদেশে ইষ্টক খন্ড খানা পতিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে আমি চোখে মুখে অন্ধকার দেখিলাম এবং আছাড় খাইয়া চিৎপটাং দিয়া পড়িয়া গেলাম। আমার এহেন আছাড় খাওয়া দর্শন করিয়া জেমী জেনী দুই জনেই স্তব্ধ হইয়া তাকাইয়া রহিল, কিন্তু সামান্যকাল পরে আমার ক্রন্দনের তীব্রতায় জেনীর কোমল হৃদয় তরল হইয়া উঠিল। সে আস্তে আস্তে আমার নিকট উপস্থিত হইয়া আমার পিঠে হাত বুলাইয়া দিতে গেল, কিন্তু আমি অভিমান হেতু উহাকে আমার পৃষ্ঠদেশ স্পর্ষ করিতে দিলাম না। ততক্ষনাৎ জেনী আমার পার্শে উপবেশন করিল এবং আমি উহার চোখে অশ্রুকণা দেখিয়া নিজের কান্নার কথা ভুলিয়া গেলাম। আমাকে থামিতে দেখিয়া জেনী কান্না মিশ্রিত গলায় আসকাইলো - "বেশী ব্যথা পাইছো?" আমি কহিলাম - হুমম। শুনিয়া জেনী আমাকে জড়াইয়া ধরিয়া কান্না আরম্ভ করিল, আমিও ভ্যবলের মত কিছুই বুঝিতে না পারিয়া পুনরায় কান্না শুরু করিলাম। জেমী এই দৃশ্ব দেখিয়া উহার মাতৃদেবীকে অবহিত করিবার মানষে উল্টা দিকে দৌড় দিলো। :((

সেইদিন হইতে আমার আর জেনীর মধ্যে সখ্যতা গড়িয়া উঠিল। আমি উহার মধ্যে চিরন্তন মমতাময়ী এক নারীকে খুঁজিয়া পাইলাম, যে সদা সর্বদা ক্ষুধার্ত এই চশমা পরিহীত বালকটিকে খাওয়াইয়া বড়ই আহ্লাদ বোধ করে। জেনী নিয়মিত আমাকে ঘরের আলুটা মুলোটা - আই মিন ... বিস্কুট চানাচুর মিষ্টি সন্দেস খাওয়াইতো। আমিও জাহানারা কটেজ হইতে সদ্য তালিম প্রাপ্ত হইয়া উহাকে অমুল্য সব চিত্রকর্ম আঁকিয়া উপহার দিতাম, যাহা ক্রমে জেমীর চক্ষুশুল হইয়া দাড়াইয়াছিল। একদা জেমী তেমনি একটি চিত্রকর্মের উপর ঝাপাইয়া পড়িয়া উহাকে দ্বিক্ষন্ডিত করিয়া ফেলায় জেমী জেনীর যুদ্ধ বাঁধিয়া গেল ও কেহ কাহাকেও পরাস্ত করিতে না পারিয়া আমার স্বরনাপন্য হইল এবং আসকাইলো যে আমি কাহাকে বেশী ভালবাসি। জেমী আমাকে কোনদিন কিছু খাওয়ায় নাই বলিয়ে ভবিষ্যতের ফুলঝুরীর ন্যায় খাদ্যের বর্ষন দিব্য দৃষ্টিতে দেখিতে পাইয়া আমি নিঃসঙ্কোচে বলিয়া দিলাম যে আমি জেনীকেই বেশী ভালবাসি। ইহা শুনিয়া জেমী হতভম্ব হইয়া দাড়াইয়া রহিলেও জেনী লজ্জা পাইয়া বাড়ির উদ্দেশ্যে পলায়ন করিল। এই ঘটনার পর অনেক দিন জেমী আমার সহিত বাৎচিত করে নাই।

[ জেনী এর কিছুদিন পর ওর নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পুকুরে ডুবে মারা যায় ]

উহার কয়েক মাস পর আমার পিতা পুনরায় কর্মস্থল পরিবর্তন করিয়া বগুড়ার উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হইয়া যান।

ক্রমশ ... আমার প্রেমিকারা - কাঁকন পর্ব ;)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:২৭
৫৯টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×