somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পর্ণঃ ভয়াবহ একটি স্লো পয়জন যা আপনাকে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে | মাহবুব হাসান

১১ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব টি যারা মিস করেছেন, তারা এই লিঙ্ক থেকে পড়ে আসতে পারেন।

আপডেটঃ
এই পোস্ট টি সরকারের নবনিযুক্ত মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এর দৃষ্টিগোচরে এসেছে। নিযুক্ত হবার পর থেকেই উনি তরুণদের জন্য বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। দেখা যাক এই ব্যাপারে উনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন কিনা। অন্তত আশা করতে ক্ষতির কিছু দেখিনা!



ধর্মীয় এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফির অবস্থান কোথায় সেটা আমরা সবাইই জানি, তাই ওগুলো সম্পর্কে আলোচনা করে সময় নষ্ট করবনা। কারন আমি জানি, কাউকে জ্ঞান বা উপদেশ দিয়ে পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফি থেকে বিরত রাখতে পারবনা।
আমি সাদামাটা ভাবে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্ণ আমাদের ব্রেইন কে কিভাবে ভুল পথে প্রোগ্রাম করে শারীরিক অক্ষমতা সৃষ্টি করছে, কিভাবে আমাদের সোশ্যাল এনগেজমেন্ট কে ব্যহত করছে, আমাদের পারিবারিক জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে...ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
আমি কোনো সিদ্ধান্তে যাবনা। শরীর আপনার, মন ও আপনার। তাই পোস্ট টি পড়ার পরে আপনি নিজে চিন্তা করবেন এবং সিদ্ধান্ত নিবেন আজকের পর থেকে পর্ণ দেখবেন কিনা। পোস্ট টি পড়া শেষ হলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে সরাসরি পরবর্তী পোস্টে চলে যান।

পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

নিউরোসাইন্স বলে, শরীরের মত আমাদের মস্তিস্ক ও যে কোনো অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।
আমরা যা দেখি, শুনি, করি, শিখি এবং আমাদের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান থেকে আমাদের মস্তিস্ক যে ইনপুট গুলো পায় সেগুলোর উপর ডিপেন্ড করে আমাদের মস্তিস্কের এই প্যাটার্ন আবার প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকে।
ছোটবেলার ধর্মীয় শিক্ষা, পিতা-মাতা এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত দর্শন, সামাজিক দায়বদ্ধতা, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় উঠে আসা বিভিন্ন টপিক, সেমিনারের গুরু-গম্ভীর আলোচনা, প্রেমিকার সাথে রোমান্টিক কথোপকথন, এমন কি আপনি মনকে শান্ত করার জন্য অথবা টাইমপাস করার জন্য যে বই পড়ছেন, গান শুনছেন বা টিভিতে যে অনুষ্ঠান দেখছেন... এমন প্রতিটা কাজের মাধ্যমে আপনার ব্রেন সেলে নতুন নতুন ডাটা তৈরি হচ্ছে, পাশাপাশি প্রতিটি ডাটার বিপরীতে প্রতিটি ঘটনা বা অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত ইনপুট সমূহের একটা যোগসূত্র ও তৈরি হয়ে যায় আমাদের মস্তিস্কে। যা পরবর্তী তে একই ধরণের সমস্যা/ঘটনা/অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে আমাদের মস্তিস্ক সেই ডাটা সমূহ এবং ওগুলোর যোগসূত্র এ্যানালাইসিস করে আমাদের চিন্তাশক্তি এবং শরীর কে সে অনুযায়ী কমান্ড দেয় এবং সেভাবেই চালিত করে এবং আমাদের চিন্তাশক্তি এবং শরীর সে অনুযায়ী সাড়া দেয়।
উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে আমরা ব্রেনের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম। এবার আসুন সামান্য আরেকটু গভীরে যাবার চেষ্টা করি।
অনেকের মনেই হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে এগুলোর সাথে পর্ণগ্রাফির সম্পর্ক কি! ওয়েল, রোগীর চিকিৎসা করতে হলে রোগীর সম্পর্কে জানার চেয়ে রোগ এর সম্পর্কে জানা এবং পড়াশোনা টা জরুরী!
পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফি আমাদের ব্রেন কে কিভাবে ড্যামেজ করছে, এটা স্লো পয়জনের মত আমাদের কিভাবে ক্ষতিসাধণ করছে সেটা জানতে হলে আমাদের মস্তিস্কের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে কিছুটা জানতে হবে।
ব্রেইন কিভাবে নতুন নতুন জিনিস শিখবে এবং মনে রাখবে তা মূলত সাইন্যাপ্টিক প্লাস্টিসিটি 'র উপরে নির্ভর করে।
সাইন্যাপ্টিক প্লাস্টিসিটি হল ব্রেইনের এমন একটি এ্যাবিলিটি যা বিভিন্ন স্মৃতি, ঘটনা এবং অভিজ্ঞতার সাথে সংযুক্ত ডাটার সাথে নিউরনের (ব্রেইন সেল) যোগাযোগ রক্ষা করা এবং সাড়া দেওয়ার সময় এর গতি এবং সামর্থ্য পরিবর্তন করে। শুধু তাই নয়, এটি আবার নিউরনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা বা সাড়া দেবার সময় কি পরিমাণ এবং কি ধরণের নিউরোট্রান্সমিটার (কমিউনিকেশন মলিকিউলস) রিলিজ হবে তার সাথেও সম্পৃক্ত থাকে।
আমাদের ব্রেইনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি নিউরোট্রান্সমিটার হল "ডোপামিন "। ডোপামিনের অনেক কাজ। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, এটি মানুষের আনন্দ এবং সুখের অনুভূতি গুলো বহন করে সেগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী আমাদের নিউরন বা ব্রেইন সেলে পাঠিয়ে দেয়। ড্রাগস বা নেশা জাতীয় দ্রব্য এই ডোপামিন কে টার্গেট করেই তৈরি হয়। ড্রাগস আমাদের ডোপামিনার্জিক সিস্টেম কে ফোর্স করে প্রচুর পরিমাণ ডোপামিন রিলিজ করতে ট্রিগার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ফলে যখন আমরা ড্রাগস বা নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করি, আমাদের নিউরণ এ অতিরিক্ত ডোপামিন এর উপস্থিতির ফলে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ভিন্ন, অস্থির এবং চরম এক সুখানুভূতি এসে আমাদের আচ্ছন্ন করে। এ অবস্থার সাথে অনেকে 'হাই' হওয়া হিসাবে পরিচিত। তবে এ অবস্থা সাময়িক। ড্রাগসের ধরণ এবং পরিমাণের উপর নির্ভর করে এটি কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা অথবা কয়েক দিন পর্যন্ত ও স্থায়ী হতে পারে। তারপর এই 'হাই' অবস্থা যখন কেটে যায়, তখন রাজ্যের বিষন্নতা, হতাশা আর অবসাদ এসে শরীর আর মনের উপর ভর করে। আমাদের নার্ভ সিস্টেম শরীর এবং মনের উপর এই অতিরিক্ত স্ট্রেস নিতে না পেরে ডোপামিনার্জিক সিস্টেম কে সুড়সুড়ি দিতে থাকে ডোপামিন রিলিজ করার জন্য। কিন্তু গতবার যেহেতু ফোর্স করে ডোপামিন কে রিলিজ করা হয়েছিল, তাই এবার ডোপামিনার্জিক সিস্টেম প্রেমিকার কপট রাগের মত বেশ ভাব ধরে এবং ডোপামিন রিলিজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে নার্ভ সিস্টেমের উপর প্রেশার টা আরো বেড়ে যায়। এ্যাজ আ রেজাল্ট, ড্রাগ গ্রহণকারীর শরীর এবং মনে প্রচন্ড অস্থিরতা এবং জ্বালাবোধ তৈরি হয়। তাই ইচ্ছে না হলেও আবারো ড্রাগসের শরণাপন্ন হতেই হয়। এভাবেই এ্যাডিকশন শুরু হয় এবং এই চাহিদা দিন দিন বাড়তে বাড়তে অসীমে গিয়ে পৌছায়।
প্রশ্ন করতে পারেন, পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফির সাথে এর কি সম্পর্ক?



পর্ণ, পর্ণগ্রাফিক ছবি, লেখা, অডিও সহ যত ধরণের পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফিক আইটেম আছে, এগুলো ড্রাগের মতই আমাদের ডোপামিনার্জিক সিস্টেম কে ট্রিগার করে ডোপামিন রিলিজ করার জন্য। ফলে যখন ই আমরা পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফিক আইটেমের সংস্পর্শে আসছি, আমাদের ব্রেইনে পর্ণের সাথে ডোপামিনার্জিক সিস্টেমের একটি যোগসূত্র তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পর্ণের সংস্পর্শে আসার কারনে ডোপামিনার্জিক সিস্টেমের উপর ফোর্স তৈরি হয়ে যে ম্যাসিভ এ্যামাউন্ট ডোপামিন রিলিজ হচ্ছে; তা শর্ট টার্ম মেমরি তে না গিয়ে সরাসরি লং টার্ম মেমরি তে গিয়ে স্টোর হচ্ছে। এ কারনে পর্ণ বা পর্ণগ্রাফিক আইটেম চোখের সামনে থেকে দূর করা হলেও লং টার্ম মেমরি তে তা গেঁথে যাবার কারনে তা ব্যক্তির চাহিদা মত কল্পনা করলেই রিপ্লে মোডে ফিরে আসে।
ব্যাপার টি আরো ক্লিয়ার হবে যদি স্কুল লাইফের কথা চিন্তা করেন। আমরা পড়া মুখস্ত না হওয়া পর্যন্ত এক নাগাড়ে গ্যা গো গ্যা গো করে পড়তেই থাকতাম যতক্ষণ না সেটা মেমরি তে গেঁথে যাচ্ছে। বারবার পর্ণ দেখলে ঠিক একই ব্যাপার ঘটে। তাই পর্ণ দেখে অভ্যস্ত কেউ যখন বাস্তবে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নেয়, সামনে সৃষ্টিকর্তার তৈরি অপরুপ দেহবল্লরীর অধিকারী একজন তার সামনে থাকলেও তার আগে থেকেই প্রোগ্রামড করা ব্রেইন সাবকনসাস মাইন্ড কে কমান্ড করে পর্ণে দেখা পুরুষ/নারী এবং তাদের কলাকৌশল গুলো মনের পর্দায় প্লে করতে। চোখে সামনে আর হাতের মুঠোয় অমৃত সুধা থাকার পরও ওদের মন তখনো ফ্যান্টাসির জগতে বিচরণ করতে থাকে এবং পর্ণে দেখা প্রতিটা সিনের সাথে সিনক্রোনাইজ করার চেষ্টা করে, বাস্তবের সাথে সংঘর্ষ টা তাই অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সামনে মেঘনা নদীর টলটলে জল থাকতেও এভাবেই লালন জল পিপাসায় বারবার মরে যায়!
পর্ণগ্রাফি হল রিয়্যাল লাইফ ফ্যান্টাসি। যারা নিয়মিত পর্ণ দেখে, তারা নিশ্চয়ই একই পর্ণ বারবার দেখেনা! প্রথমদিকে সফটকোর পর্ণে চাহিদা মিটলেও কিছুদিন পর চাহিদা এবং রুচি বদলে যায়। তখন প্রয়োজন হয় হার্ডকোর কিছুর। প্রতিদিন মাংস খেলেও এক সময় অরুচি ধরে যায়, তখন কচু শাক আর ডাল ও অমৃত মনে হয়।
শুরুর দিকে নর-নারীর স্বাভাবিক যৌনতা দেখে খায়েশ মিটলেও কিছুদিন পর চাইল্ড পর্ণগ্রাফি, এ্যানিমেটেড পর্ণগ্রাফি, এ্যানিমাল পর্ণগ্রাফি, সিম্যুলেটেড রেপিং সীন, থ্রি-সাম, ফোর-সাম... গে পর্ণ, লেসবিয়ান পর্ণ... এভাবে জ্যামিতিক হারে চাহিদা দিন কে দিন বাড়তেই থাকে এবং সেইসাথে রুচিও অস্বাভাবিকভাবে বদলে যেতে থাকে। কিন্তু সমস্যা হল এই চাহিদা বা রুচি বদলানোর কোনো লিমিট নেই।
কারন মানুষের মন এক অদ্ভুত বস্তু। ব্রেইন মাঝেমাঝে হ্যাং করলেও বা লোড নিতে অস্বীকৃতি জানালেও মনের চাপ নেওয়ার ক্ষমতা অসীম এবং এর চাহিদাও অপূরণীয়।
বারবার পর্ণ দেখার কারনে নতুন নতুন নারীর সাথে নতুন ভঙ্গিমা আর কলাকৌশলের সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স দেখতে দেখতে আমাদের ব্রেইন টাও সেভাবে প্রোগ্রামড হয়ে যায়। কিন্তু রিয়েল লাইফে স্বামী/স্ত্রীর কাছে যখন সে পর্ণে দেখা পুরুষ/নারীর মত আকর্ষণীয় ফিগার, সেক্স এ্যাপিল পায়না এবং পর্ণে দেখা নানাপ্রকার কলাকৌশল জীবন সঙ্গী বা সঙ্গীনীর উপর প্রয়োগ করতে পারেনা, তখন ই শুরু হয় বিপত্তি। নিয়মিত পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফিক আইটেমের সংস্পর্শে থাকতে থাকতে পুরুষ এবং মেয়ে উভয়ের ই রূচিবোধের অধঃপতন হয়। পর্ণে দেখা এবং পড়া অনৈতিক ও যৌনতা নির্ভর বিকৃত সম্পর্ক গুলোকেই তখন ভালো লাগতে শুরু করে। ফলে যারা নিয়মিত পর্ণের সংস্পর্শে থাকে, তাদের রুচি বিকৃত হয়ে যায়। জীবনের স্বাভাবিক সম্পর্ক গুলোতেও নিজের অজান্তে অবচেতন মনেই বিকৃতি খোঁজে তাদের চোখ। অর্থাৎ রিয়েল লাইফেও তাঁরা পর্ণে দেখা আকর্ষণীয় নায়ক/নায়িকার মত সঙ্গী আশা করে এবং তাঁরা স্বপ্ন দেখে তাদের যৌন জীবনটাও ওদের মতই হবে। তাই ফ্যান্টাসিতে বিভোর হয়ে তাঁরা বাস্তব জীবনের সুখ শান্তি হারায়। তখন রিয়েল লাইফের সাধারণ পুরুষ/নারীদের সংস্পর্শে এসেও তাদের যৌনতা পরিপূর্ণতা পায়না এবং উপভোগ করতে পারেনা। অনেকে সঙ্গী/সঙ্গীনীর কাছে চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়ে বিপথে পা বাড়ায়।
মানুষের মন ফ্যান্টাসি এবং রিয়্যালিটির মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারেনা। আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন, আপনার মন সেটা বাস্তব হিসাবেই বিশ্বাস করবে। আপনি যখন স্বপ্নে কোনো মেয়ের সাথে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নিচ্ছেন, আপনার মন তখন ও সেটাকে বাস্তব হিসাবে বিশ্বাস করছে। এই বিশ্বাসের ফলাফল টা কি হয় সেটা আপনারা সবাই জানেন! ;)
তবে আশার কথা হল, ড্রাগ এ্যাডিক্টদের তুলনায় পর্ণ এ্যাডিক্টদের ফেরার পথ টা বেশ সহজ এবং রিকভার করতে সময়টা তুলনামূলকভাবে অনেক কম লাগে।
ড্রাগ এ্যাডিক্টদের মত শরীর এবং মনের উপর কোনো সাইড ইফেক্ট ব্যতীত পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফি যেকোনো সময় পরিত্যাগ করা যায়। যদিও এটার জন্য অনেক ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন, পাশাপাশি নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখা টাও জরুরী।



পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফির সাইড ইফেক্টসঃ

--> নিয়মিত পর্ণ দেখার ফলে পুরুষের সেক্সুয়াল অর্গান এক সময় শুধুমাত্র পর্ণ দেখার সময়ই পুরোপুরি ইরেক্ট হয়, কিন্তু বাস্তবে যখন কোনো নারীর সাথে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নেয় তখন সেটা আর সেভাবে সাড়া দেয়না। কারন তার সেক্সুয়াল অর্গান পর্ণের মোহনীয় নারী শরীর, তাদের নানা কলা-কৌশল, আর্টিফিশল সাউন্ড এবং বিহেভিয়ার দেখে দেখে ব্রেইনের সাথে ওগুলোর যোগসূত্র তৈরি হয়ে গেছে। ফলে বাস্তবে এসেও তার এক্সপেক্টেশন যখন পর্ণে দেখা সেই মোহনীয় শরীর, ছলা-কলা, আর্টিফিশল শীৎকার এবং বিহেভিয়ার কে পায়না, তখন তার অনুভূতিতে সেই আনন্দ টা আর জাগেনা। এটাকে বলে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (ED) । তবে এটা যে শুধুমাত্র পুরুষদের ক্ষেত্রেই ঘটে তা নয়, মেয়েদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

--> অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুজনের একজন হয়ত পর্ণে আসক্ত বা পর্ণ পছন্দ করে কিন্তু আরেকজন পর্ণ মোটেও পছন্দ করেনা বা আগ্রহ পায়না। সেক্ষেত্রে পর্ণ আসক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয় জনের কাছে রুচিহীন, হীনমন্য এবং চরিত্রহীন একজন মানুষ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।

-->মাত্রাতিরিক্ত পর্ণ দেখার ফলে পুরুষদের সাধারণ নারীদের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে। ফলে তারা পর্ণে দেখা নায়িকাদের মত আকর্ষনীয় দেহ এবং চেহারা কে বাস্তবের নারীদের সাথে মেলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পর্ণ এ ব্যবহৃত নারীদের সৌন্দর্য্য মূলত প্লাস্টিক সার্জারী, কড়া মেকাপ এবং এডিটিং এর অবদান। তাছাড়া পর্ণে তারা যে শীৎকার ধ্বনি দেয় এবং যে আচরণ গুলো করে সেগুলোও মূলত কৃত্তিম এবং ভিউয়ার কে স্টিম্যুলেট করার উদ্দেশ্যেই ওটা করে তারা। বাস্তবে জীবনে সেগুলোর সাথে মিল না পেয়ে পর্ণ আসক্তরা হতাশ হয়ে পড়ে। ওরা হয়ে পড়ে নিঃসঙ্গ এবং অসুখী।

--> নানা ধরণের পর্ণ দেখতে দেখতে এক সময় পুরুষ এবং নারী উভয়ের সেক্সুয়াল ইন্টারেস্ট এবং টেস্ট দুটোই চেঞ্জ হয়ে যায়। দেখা গেল পর্ণ দেখার আগে বা পর্ণ দেখার শুরুর দিকে একটা পুরুষ আকর্ষণীয় সৌষ্ঠবের কোনো মেয়েকে দেখলে সেক্সুয়ালি এ্যারাউজড হত, কিন্তু এখন সুপার সেক্সি কোনো মেয়েকে দেখেও তার মধ্যে কোনো ইন্টারেস্ট তৈরি হয়না। কারন তার রুচি এবং স্বাদ বদলে গেছে। সে এখন হয় গে পর্ণের দিকে ঝুকেছে, নয়ত চাইল্ড পর্ণ অথবা এ্যানিমাল পর্ণ...

--> মেয়েদের ক্ষেত্রেও সেইম ব্যাপার টি ঘটে। যে মেয়ে পর্ণ দেখার আগে বা পর্ণ দেখার শুরুর দিকে আকর্ষনীয় কোনো পুরুষ দেখলে সেক্স এ্যাপিল অনুভব করত, এখন সেটা আর হয়না। কারন তার স্বাদ এবং রুচিও বদলে গেছে। স্বাভাবিক সেক্সে এখন তার আগ্রহ তৈরি হয়না। তার এখন লাগবে নতুন স্বাদ, নতুন অভিজ্ঞতা। এভাবেই অনেক লেসবিয়ানের উত্থান শুরু হয়। অনেকে জন্ম থেকেই লেসবিয়ান থাকে, কিন্তু বিকৃত পর্ণ দেখা ও লেসবিয়ান এবং গে রেশিও বাড়ানোর পেছনে বেশি দায়ী।

-->নিয়মিত পর্ণ দেখলে মাস্টারবেশন ও অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। অতিরিক্ত মাস্টারবেশনের ফলে অনেকের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং পরবর্তীতে যৌন জীবনে নানা ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। মাস্টারবেশনের সময় মূলত তাড়াহুড়ো করা হয় বাই চান্স যদি কেউ দেখে ফেলে বা বুঝে ফেলে। এভাবে দ্রুত অর্গাজম প্রাপ্তি থেকে ব্রেইনের মধ্যে প্রোগ্রাম তৈরি হয়ে যায়। ব্রেইন ধরে নেয় এরপর থেকে যখন ই সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নেবে, দ্রুত অর্গাজম দিতে হবে।
তাই যারা মাত্রাতিরিক্ত মাস্টারবেশনে অভ্যস্ত, পরবর্তীতে কোনো নারীর সাথে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশ নেবার সময় ব্রেইন তখন তার সেক্সুয়াল অর্গান এবং ফিলিং সে কমান্ড দেয় দ্রুত অর্গাজম প্রাপ্তির জন্য। এর মূল কারন হল আমাদের মাসল মেমরি বা বডি মেমরি। এই বডি মেমরি বা মাসল মেমরি যদি না থাকত তাহলে কেউ ড্রাইভ করতে পারতোনা, গিটার বাজাতে পারতোনা, মার্শাল আর্ট-জুডো-কারাতে এগুলোতে দক্ষতা অর্জন করতে পারতোনা। মাসল মেমরির কারনেই মানুষ চিন্তা করার আগেই দৈহিক অভ্যস্ততার কারনে এগুলো করতে পারে। এটি রিফ্লেক্স এ্যাকশন হিসাবেও পরিচিত। মাস্টারবেশন করতে করতে আমাদের মাসলগুলোও দ্রুত নিঃশেষ হতে হবে এমন একটা টেনশন নিজের ভেতরে অটোম্যাটিক্যালি তৈরি করে নেয় এবং সেই একই প্রেশার স্ত্রীর সাথে মিলনের সময় ও কাজ করে। তবে দ্রুত নিঃশেষ হওয়ার মূল কারন শুধু এই রিফ্লেক্স এ্যাকশন বা বডি মেমরি নয়, আরো একটি বড় সড় কারন আছে। সেটি হল ম্যাডোনা/হোর কমপ্লেক্স ইস্যু। এই ম্যাডোনা/হোর কমপ্লেক্স ইস্যু নিয়ে লিখতে গেলে আরো একটি নোট লেখা যাবে।

--> পর্ণ এবং পর্ণগ্রাফি ড্রাগসের মতই ভয়ঙ্কর। ড্রাগ এ্যাডিকশন থেকে মুক্তি পাওয়া যেমন কঠিন, পর্ণ আসক্ত থেকে মুক্তি পাওয়াও তেমনি কঠিন এবং দুরূহ ব্যাপার। পর্ণ আসক্তির কারনে ফ্যামিলির সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়, পড়াশোনায় মনোযোগ বসেনা, নিজের প্রতি হীনমন্যতা তৈরি হয়। তাছাড়া রুচিশীল বন্ধু-বান্ধবদের কাছেও এটার কারনে হেয় হতে হয়। পর্ণ যারা দেখে, এদের মোবাইলের মেমরি কার্ড, ল্যাপটপ/কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে পর্ণ থাকে। অনেক সময় এগুলো পরিবারের/কাছের মানুষ/বন্ধুদের চোখে পড়ে যায়, ফলে এদের সামনে ব্যক্তি নিজেকে ছোট মনে করে।
পর্ণের কারনে আরো অনেক অনেক সামাজিক, মানসিক, শারীরিক এবং ব্যক্তিগত সমস্যা তৈরি হয় যা লিখতে গেলে আরো অনেক বড় পরিসর প্রয়োজন হবে।

আমি জানি অনেক সময় নষ্ট করে এবং কষ্ট করে এই পোস্ট লেখার পরও অনেকে এই লেখা গোপনে পড়বে, কিন্তু কমেন্ট বা শেয়ার করবেনা। কারন আমাদের সমাজে ঢাক ঢাক গুড় গুড় স্বভাবের মানুষের সংখ্যা টাই বেশি। উনারা গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে পর্ণ দেখবেন, সানি লিওন এবং নাইলা নাইমের শরীর নিয়ে দিনভর নানা ধরণের মামদোবাজি আলাপ চালাবেন, রাস্তা-ঘাটে-স্কুল-কলেজ-শপিং মলে লুকিয়ে মেয়েদের বুক আর পাছার মাপ নিবেন, সেইটা নিয়ে বন্ধুদের সাথে রসিয়ে রসিয়ে গল্পও জুড়বেন... ওগুলো প্রকাশ্যে করতে কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু যত সমস্যা হবে দিনের আলোতে জরায়ু ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, এসটিডি, এইডস তথা পর্ণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আলোচনা চললে।
ব্যাপার নাহ। কমেন্ট বা শেয়ার না করলেও সমস্যা নেই। এই লেখাটি পড়ে যদি কিছু মানুষের মধ্যেও বোধোদয় আসে, কিছু মানুষের মধ্যেও যদি চিন্তা-ভাবনার খোরাক যোগায়-ওটুকুই আমার জন্য যথেষ্ঠ।

এই ব্লগে যদি সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কেউ থেকে থাকেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিঃ
আপত্তিকর কন্টেন্ট থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে বছরখানেক আগে সরকারের পক্ষ থেকে ইউটিউব বন্ধ করা হয়েছিল। উদ্যোগ টা ভাল কি মন্দ ছিল সে প্রসঙ্গে যাবনা, আমি শুধু বলতে চাইছি সরকার চাইলে তরুণ সমাজের জন্য কিছু উদ্যোগ নিতে পারে। তারা চাইলে পর্ণ এবং দেশি চটি সাইট গুলো বন্ধ/ব্লক করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন, নিম্নমানের সিনেমা হল গুলোতে পর্ণ ছবি দেখানো বন্ধ করতে পারেন... সামাজিক অবক্ষয় এবং নৈতিক মুল্যবোধ হ্রাস রোধের লক্ষ্যে সরকার এবং প্রশাসন চাইলে আরো অনেক কিছুই করতে পারেন। শুধু সদিচ্ছা টা দরকার। কেউ কি এই কথাগুলো সরকারের উপরি মহলের কাছে পৌছে দিবেন? আপনারা নিজ উদ্যোগে সরকারের উপরিমহল এবং বিটিআরসি'র কাছে মেইল করে এই লেখাটির লিঙ্ক দিতে পারেন। বিটিআরসি কে মেইল করতেঃ btrc@ btrc.gov.bd
কাজ না হোক, এ্যাট লিস্ট চেষ্টা করতে ক্ষতি কি!

পরিশেষে, সামহোয়্যার ইন কর্তৃপক্ষ কে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্ট টিকে স্টিকি করার জন্য।

কিভাবে পর্ণ দেখা থেকে বিরত থাকবেন বা পর্ণ এর সংস্পর্শ থেকে মুক্ত হবেন জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে সরাসরি পোস্টে চলে যান।

পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১
২২৩টি মন্তব্য ২০১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×