ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
জানেন কি কার লেখা কবিতা?
আজ টেলিভিশন আর পত্রিকার পাতায় পাতায়, ফেইসবুকের ইনবক্সে লক্ষ লক্ষ বার খেলেছে এই লাইন দুটি। বড় বড় শহরে বসন্তের এই দিনে রিকশা ভাড়াও বাড়ে। বলতেই পারেন। বসন্তের উৎসবকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যেতে এই লাইন দুটির সরস ভূমিকা আছে।
এক বসন্তে আমি কলকাতায় কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রেল স্টেশন দেখব বলে গিয়েছিলাম । হ্যাঁ যার লেখা এই লাইন সেই কবি।
কি আছে এই স্টেশনে?
কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন হল কলকাতা মেট্রোর লাইন ১-এর দক্ষিণ টার্মিনাল মেট্রো স্টেশন। আগে নাম ছিল নিউ গড়িয়া মেট্রো স্টেশন। ২০১০ সালে কবির নামে স্টেশনটি চালু হয়।
না তেমন কিছুই নেই। শুধু বলি একজন কবি যে ভনিতা ছাড়াই কবিতা লিখতে পারেন। অপ্রয়োজনীয় আবেগ আর মিথ্যে কল্পনার ছড়াছড়ি ছাড়াই যখন কবিতা হয়ে উঠে । তখন পাঠক কবিতাকে নিজের জীবনের অংশই ভাবে।
মিথ্যে কল্পনায় বিভোর না হয়ে। পাঠক সে কবিতা পড়ে সমাজ বদলানোর হাতিয়ার হিসেবে।
আমি বলতে শুনেছিলাম সুভাষ মুখোপাধ্যায় পচে যাওয়া এক বাম কবি। জীবনের শেষ বয়সে রাজনৈতিক চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে।সমাজতন্ত্রের আর্দশে বিশ্বাসী কবি। কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেন। পরিচিত অপরিচিত মহলে ছি: ছি: ছি: রব উঠে।
কবি গন্ডিটা হুট করেই ছোট হয়ে এসেছিল বোধ হয়। তবে আশার কথা হাজার সমালোচনাকারীরাও কবির কবিতা পড়েন। বসন্তের লক্ষ লক্ষ যুবক যুবতী এই কথিত পচে যাওয়া বাম কবির কবিতার লাইন দুটিকে আড়কে ধরে উৎসবে মাতে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
এই লাইন দুটিকে আকড়ে ধরে দুই বাংলায় করপোরেট দুনিয়ায় শত কোটি বাণিজ্যের ফাঁদ পেতেছে।
আজ নগরে নগরে লক্ষ কন্ঠে উচ্চারিত “ ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত” কবিতার কবির পুরো কবিতাটা পড়ে নিতে পারেন একবার ।দেখুন কবিতায় কোথাও বাণিজ্যের ছোঁয়া নেই। কিন্তু কি নিষ্ঠুর, কি নিষ্ঠুর এমন একটা কবিতাই করপোরেট দুনিয়ার শত কোটি টাকার বাণিজ্যিক শ্লোগান।
ফুল ফুটুক না ফুটুক – সুভাষ মুখোপাধ্যায়
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
শান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে –
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে –
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।
গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত
– তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।
লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত
আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধ’রে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল –
ঠিক সেই সময়
চোখের মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল
আ মরণ ! পোড়ারমুখ লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি !
তারপর দড়াম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।
আমি গাড়িতে বসে এই বাংলার আর এক পচে যাওয়া বামের কবিতা পড়ছি।
জেলগেটে দেখা – আল মাহমুদ
..........
......
দেখো , সবাই প্রথমে খাবারের কথা ভাবে ।
আমি জানি বাইরে এখন আকাল চলছে । ক্ষুধার্ত মানুষ
হন্যে হয়ে শহরের দিকে ছুটে আসছে । সংবাদপত্রগুলোও
না বলে পারছে না যে এ অকল্পনীয় ।
রাস্তায় রাস্তায় অনাহারী শিশুদের মৃতদেহের ছবি দেখে
আমি কতদিন আমার কারাকক্ষের লোহার জালি
চেপে ধরেছি ।
হায় স্বাধীনতা , অভুক্তদের রাজত্ব কায়েম করতেই কি আমরা
সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলাম ।
...................................
.................................................................................
আমাদের শহর নিশ্চয়ই এখন ভিখিরিতে ভরে গেছে ।
সারাদিন ভিক্ষুকের স্রোত সামাল দিতে হয় ।
আমি কতবার তোমাকে বলেছি , দেখো
মুষ্টি ভিক্ষায় দারিদ্র্য দূর হয় না ।
এর অন্য ব্যবস্হা দরকার , দরকার সামাজিক ন্যায়ের ।
দুঃখের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে ।
আ , যদি আমার কথা বুঝতে ।
কিরে তোর তো দেখি পচে যাওয়া বাম দিয়ে মগজ ভর্তি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৬