২১৩ নাম্বার পোষ্ট এটা আমার। আর ১৩ কে সব সময় আন লাকি বিবেচনা করা হয়। এখনো অনেক হোটেলে তের নাম্বার ফ্লোর থাকে না। ১২ র ১৪ নাম্বার থাকে লিফটে। বিশ্বাস না হলে দু একটা হোটেলে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন। যেহেতু ২১৩ নাম্বার পোষ্ট আর ১৩ ভৌতিক সংখ্যা তাই চলুন কিছু ভুতের সাথে পরিচিত হই। কে জানে পড়তে পড়তে হয়ত আপনিও তেনাদের দেখা পেতে পারেন।
আমার ছোট বেলায় অনেকটা সময় গ্রামে কেটেছে। বিশাল বিশাল বাগান, বাড়ীর লাগোয়া গোরস্থান, হ্যারিকেনের মিট মিটে আলো সব মিলিয়ে অসাধারন ভৌতিক পরিবেশ। স্পেশালি ঝুম বৃষ্টির রাত বা হিম শীতের সন্ধ্যা থেকেই ভুতের উৎপাত শুরু হয়ে যেত সে কালে। তার সাথে আছে নানা টাইপের গল্প। জানি না কতজন “ঠাকুরমার ঝুলি” নামক ভুতের গল্পের বইটা পড়ছেন? এই আলো ঝলমলে ইট কাঠের শহরে মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সেই সব শৈশবের ভুত দের সাথে একটু আলাপ করার। কিন্তু আফসোস কোথায় যেন তারা সব হারিয়ে গেছে। ভুতের কথা বললেই অনেকেই হয়ত নাক সিটকাবেন যে এগুলো আমাদের গ্রাম্য লোক কথা, কিন্তু জেনে মজা পাবেন ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় শহরের অনেক বাড়ী হোটেল এখনো ভুতের উপদ্রব আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। আইরিশ আর স্কটিশরা তো এ ব্যাপারে এক কাঠি বাড়া।
আমার কেন যেন ধারনা ভুত দিন কানা টাইপের। দিনে কোন অন্ধকার ঘর বাড়ী অথবা গর্তে গিয়ে যে লুকায় খুজে হয়রান হলেও তাদের দেখা মেলে না, কিন্তু যেই না সন্ধ্যা হয় অমনি প্যাচার মত চোখ মেলে অন্ধকারে মিশে গিয়ে কে কোথা দিয়ে যাচ্ছে কিভাবে কাকে ভয় দেখানো যায় সেই চিন্তায় অস্থির থাকে।
ছোটকালে কাউকে যদি ভুতে ধরত তবে শুনতাম ওঝা (যারা ভুত তাড়ায়) ডেকে ভুত ছাড়াত। আবার যাবার সময় সেই ভুতকে ছেড়ে যাবার নিদর্শন স্বরূপ নির্দেশ দিত ওঝা ওমুক গাছের ডাল ভেঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। সেই ডাল যে ভাঙ্গা হয়েছে নিজ চোখে দেখার সে সাক্ষীর ও অভাব হত না। আমাদের সময় গ্রাম দেশে ভুত গুলো বট গাছ, তেতুল গাছ অথবা বাঁশ ঝাড়ে থাকত। আপনি যদি দেখেন পুরা বাঁশ ঝাড় দিয়ে একটা বাঁশ গাছ নুয়ে পরে রাস্তা আটকে দিয়েছে ভুলেও সে গাছ ডিঙ্গিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন না, তাইলে খবর আছে বলে দিলাম। বাড়ী পর্যন্ত যে যেতে পারবেন তার কোন গ্যারান্টি আমি দিতে পারব না।
শ্মশানঘাট বা গোরস্থানের পাশ দিয়ে একা যাবার চেষ্টা করবেন না, সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করুন পরিচিত কোন সহগামী অথবা অন্য কারো জন্য, এখানেও ঝামেলা আছে সেই লোক যে আসলেই মানুষ না মানুষরূপ ধরে অতৃপ্ত আত্মা তার কিন্তু কোন নিশ্চয়তা নেই, এক্ষেত্রে আপনি তার চেহারা দেখার চেষ্টা করুন, কারন আত্মারা চেহারা দেখাতে চায়না সাধারনতঃ কথা বলুন দেখুন চন্দ্রবিন্দু সহযোগে কথা বলছে কিনা যেমন “আঁপনি কিঁ বাঁড়ী যাঁবেন?” এই টাইপের কিছু হলে নির্ধিদ্ধায় যত দ্রুত সঙ্গীকে ত্যাগ করে নিকটস্থ বাড়িতে আশ্রয় নিন।
Years after the DeFeo murders, the Amityville house still intrigues
গ্রামে অল্প বিস্তর এখনো ভুতের বাড়ীর খোজ পাওয়া গেলেও ঢাকা শহর এখন ভৌতিক বাড়ী শুন্য। অথচ দেখুন আমেরিকার লং আইল্যান্ডের অ্যামিটিভিলের তিন তলা বাড়ীটি এখনো মানুষ কে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে। লুটস ফ্যামিলির কাহিনী তো ভুতের সিনেমাগুলোর মাঝে বেশ নাম কামিয়ে দু পয়সা আয়ও করে ফেলছে। আবার যারা লন্ডন আছেন তারা লণ্ডন টাওয়ারে এক রাত কাটিয়ে আসতে পারেন দেখতে না পেলেও অন্তত তেনাদের আওয়াজ টাওয়াজ চিৎকার মিৎকার শুনতে পাবেন।
Ghosts And Paranormal Activity In Emily Morgan Hotel
টেক্সাসের এমিলি মরগ্যান হোটেলে এক রাত কাটিয়ে আসতে পারেন। এটা এক সময় হাসপাতাল ছিল, আপনার যদি খুব ভুত দেখার শখ হয় তবে এর সপ্তম, নবম, তের এবং বেসমেন্ট এ থাকতে পারেন, হাসপাতাল থাকা অবস্থায় এগুলো ছিল যথাক্রমে মানসিক বিভাগ, সার্জারি বিভাগ, ওয়েটিং এরিয়া আর মর্গ।
Old Presque Isle lighthouse, Lake Huron, Michigan
মিশিগানের আলপেনার কাছে লেক হুরানের তীরে অবস্থিত একশত দশ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট প্রেস্ক আইল্যান্ড বাতিঘরে গেলে এখনো কান্নার শব্দ পাবেন। ১৮৮০ সময় এর কেয়ারটেকার মিঃ এবং মিসেস প্যাট্রিক গ্যারিটি এর দেখা শুনার দায়িত্ব পান, এক পর্যায়ে মিসেস গ্যারিটি পাগল হয়ে গেলে মিঃ গ্যারিটি তাকে বেসমেন্টে আটকে রাখেন সেখানেই হতভাগ্য মিসেস গ্যারিটি মারা যান। আজো সন্ধ্যার পর ওখানে গেলে মিসেস গ্যারিটির কান্নার শব্দ পাবেন।
Bachelor’s Grove Cemetery is the most haunted graveyard in America
আমেরিকায় মনে হয় এই সব ভুত টুত নিয়ে বেশি মাতামাতি হয়, অবশ্য কুসংস্কার বেশি থাকলে যা হয় শিকাগোর কুক কাউন্টির ব্রেমেন শহরতলীতে “ব্যাচেলর গোরস্থান” অবস্থিত। ২০০৬ সালের এক রাতে শিকাগো ট্রিবিউনের এক সাংবাদিক এবং স্পিরিচ্যূয়াল রহস্যভেদী কেন মেলভয়েন বার্গ এর মাঝে ঢুকে এক বাচ্চা ছেলের মুখোমুখি হন যে কাদছিলো আর তার কয়েন বের করে দিতে বলছিলো, এরপর সাইকিক বার্গ উলটাপালটা আচরন শুরু করে, সে এক বিরাট কাহিনী। এখানেই মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে এক বিল্ডিং এর ছবি তারপর ই গায়েব হয়ে যায়।
50 BERKELEY SQUARE The Most Haunted House in London.
লন্ডনে আছেন? যান তো ৫০, বার্কলে স্কোয়ারের বাড়ীটিতে? নিজ দায়িত্বে যাবেন। উনিশ শতকের ঘটনা দুই ভবঘুরে ঘুরতে ঘুরতে বার্কলে স্কয়ারের ৫০ নাম্বার বাড়ীর সামনে এসে পড়ল, দেখল টু লেট ঝুলানো একটু অবৈধ হলেও রাতের আশ্রয়ের জন্য তারা বাড়ীতে ঢুকে পড়ল। মাঝ রাতে এমন কিছু ঘটল যে একজন ভয়ে আধ পাগল হয়ে রাস্তায় নেমে আসল আর একজন জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পরে বাগানের চারিদিকে নিরাপত্তা শিকের মাঝে গেথে সেখানেই মারা গেল।
আপাতত বিদেশি ভুতের কথা বাদ দেই, ছোট কালে আমাদের সময় বিভিন্ন টাইপের ভুতের দেখা পাওয়া যেত, তার মাঝে যে কয়টার নাম মনে আছে দিয়ে দেই দেখুন আপনার পরিচিত কোনটা বাজে কিনা?
নিশিডাকা — ছোটবেলায় নিশি শুনলেই ভয়ে লোম খাড়া হয়ে যেত, লিখতে বসে এখনও হচ্ছে। নিশি রাতে চেনা লোকের গলায় ঘুমন্ত মানুষকে ডাকে। সাড়া দিলেই সে নিশির কবলে পড়ে গেল, তাকে আর কেউ কখনো দেখতে পায় না। তিনবার ডাকলে তখন নিশ্চিন্ত হওয়া যায় সেটা নিশি না।
পেত্নী — সব মেয়ে ভুত যে পেত্নী তা নয়। পেত্নী মাত্রই তবে মেয়েদের ভুত। এরা সাধারণত মেয়েদের রূপ ধারণ করে থাকে শেষ মুহূর্ত অবধি। মানুষদের ঘাড় মটকে মেরে ফেলাই এদের লক্ষ্য। পেত্নীদের পা উল্টোদিকে ঘোরানো থাকে যা দেখে এদের চেনা যায়, আর সেইজন্য তারা শাড়ী দিয়ে পায়ের পাতা ঢেকে রাখে । হিন্দীতে এদের চুড়েল বলা হয়। বিখ্যাত শিকারী কেনেথ এ্যান্ডারসন শিকার করতে গিয়ে একবার এই পেত্নীর হাতে পড়ছিলো যা তার এক স্মৃতি কথায় পড়ছিলাম।
কবন্ধ — খুব সম্ভব স্কন্ধকাটার আর এক নাম। স্কন্ধকাটা-মাথা কাটা গিয়ে ভুত হলে তারা স্কন্ধকাটা হয়। এরা লোককে তাদের মাথা খুঁজে দেবার জন্য ধরে।
শাঁকচুন্নী — এদের গলা খুব খোনা হয়, মহিলা ভুত সধবা অবস্থায় মারা গেলে অন্য মহিলাদের ওপর ভর করে। খুব সম্ভব শ্যাওড়া গাছে থাকে।
আলেয়া – জলাভুমিতে থাকে, মানুষকে আলো দেখিয়ে দেখিয়ে জলাভুমিতে টেনে নিয়ে চুবিয়ে মেরে ফেলাই এদের কাজ। আমাদের ছোট বেলায় অনেককেই আলেয়া দেখছে।
বোবা ভুত – রাতের বেলা ঘুমের মাঝে অনেক কেই এই ভুতে ধরে। তখন মানুষ গো গো করতে থাকে। আশেপাশে কেউ থাকলে আস্তে করে ঠেলা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতে হয় না হলে ওটাই হতে পারে মরন ঘুম।
মেছোভুত - গ্রামের ভূতেদের ভেতর সবচাইতে লোভী ভূত। তার মাছ এতই পছন্দ যে খালে-বিলে-পুকুরে নদীতে সে শুধু মাছ খেয়ে বেড়ায়। রান্নাঘরে এনে রাখা মাছকেও ছাড় দেয় না। তার সবচেয়ে বেশি পছন্দ ইলিশ মাছ। কেউ যদি রাত করে ইলিশ মাছ হাতে বাড়ি ফেরে, রাস্তাতে অনুনয় করে মাছ চাইতে থাকে মেছোভূত। অনুনয়ে কাজ না হলে ভয় দেখিয়ে মাছ কেড়ে নেয়।
যাক আজকে এই পর্যন্ত থাক। শিঘ্রী আবারো কিছু ভুত নিয়ে হাজির হব, চেষ্টা থাকবে আপনাকে ভুতের ভয় দেখানো যদিও জানি সেটা খুব কঠিন ব্যাপার হবে কিন্তু নাছোড়বান্দা ভুতের মত আমিও আপনার পিছে লেগে ভয় দেখিয়েই যাব। যারা এখনো ভয় পান নি তারা পারলে রাতে এই লিঙ্কে ক্লিক করে দ্যা একসরসিষ্ট সিনেমাটি দেখে আমাকে জানান এখনো ভয় পেয়েছেন কিনা?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২২