somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

অবৈধ সন্তান, অবিশ্বস্ত স্বামী এবং আইনষ্টাইনের প্রেমিকা লিনা

১১ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০২ সালে বিশ্বখ্যাত সায়েন্স ম্যাগাজিন “হিলিয়াম” পত্রিকায় আইনষ্টাইন কে নিয়ে লেখা এক নিবন্ধে বলা হয়েছে “When we think of Einstein we think of science, of mathematics, not of his family life” (আইনষ্টাইন কে নিয়ে চিন্তা করলে, তার ব্যাক্তিগত জীবন বাদ দিয়ে চিন্তা করাই উচিত)। কেন এমন তরো লিখছিলো হিলিয়াম পত্রিকা? কারন তো অবশ্যই আছে। সে কারনটাই আজকে তুলে ধরব।

আইনষ্টাইনের বাড়ীতে তার কিছু উদ্ধৃতি বিভিন্ন জায়গায় সাটানো আছে, তার মাঝে একটা হল, “marriage is the unsuccessful attempt to make something lasting out of an incident”। এই পৃথিবীর সকল বস্তু একে অন্যকে টানে নারী পুরুষের সম্পর্কেও বোধ হয় এর ব্যাতিক্রম না। উপর থেকে কিছু ফেলে দিলে নীচে পড়ে মধ্যাকর্ষনের টানে। কিন্তু মানুষ প্রেমে পড়ে কেন? এব্যাপারে আইনষ্টাইন কে একদা প্রশ্ন করা হলে তার তড়িৎ জবাব ছিল, “Gravitation can not held responsible for people falling in love”. (নারী পুরুষের প্রেমের ক্ষেত্রে মহাকর্ষ শক্তির কোন ভুমিকা নেই।) এই ভালোবাসার টানাটানি এক আজব বিষয় যার কোন নিয়ম বা সুত্র আজ পর্যন্ত আবিস্কার হয় নি।


মারি ভিন্টেলার বসা

আইনষ্টাইনের প্রথম স্ত্রীর নাম মিলোভা। মিলোভা ছিলেন নাম করা বিজ্ঞানী আইনষ্টাইনের সহপাঠী, কিন্তু অন্তরে ছিলেন আটপৌড়ে এক নারী। মিলোভার সাথে লেখার আগে আইনষ্টাইনের অন্য প্রেম সম্পর্কে একটু ধারনা নেয়া যাক। আইনষ্টাইন প্রথম প্রেমে পড়েন ১৬ বছর বয়সে, প্রেমিকার নাম মারি ভিন্টেলার। মারী ছিলেন আলবার্টের থেকে দু বছরের বড় এবং সবে মাত্র কলেজে শিক্ষক হবার ট্রেনিং শেষ চাকুরীতে যোগ দেবার অপেক্ষায়। আইনষ্টাইন তখন জুরিখ থেকে ২৫ মাইল দূরে আরাউ গ্রামে ভিন্টেলার পরিবারের সাথে থাকত কারন অত অল্প বয়সে জুরিখ পলিটেকনিকে ভর্তি হওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে আইনষ্টাইন সন্দিহান ছিল।

আলবার্ট আর মারীর প্রেম উভয় পরিবার থেকেই মেনে নিয়েছিল। প্রেমিকা মারির বোন আনা সে-সময়ের আলবার্টকে বর্ণনা করেছেন এ ভাবে ‘‘ওর দারুণ রসবোধ ছিল। আর সময়-সময় আলবার্ট প্রাণভরে হাসত।’’

মারি নতুন বছরে আলবার্টের মা’কে গ্রিটিং কার্ড পাঠালে তিনি উষ্ণতার সঙ্গে জবাব দিলেন: ‘‘তোমার ছোট্ট চিঠি, স্নেহের মারি, আমাকে ভীষণ আনন্দ দিয়েছে।’’

সেই বছরের বসন্তে বাড়ি ফিরে আলবার্ট মারিকে ওর প্রথম প্রেমপত্র লেখে। লিখল:

‘‘প্রিয়তমা,

অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমার ছোট্ট মিষ্টি চিঠির জন্য, যা আমাকে অশেষ আনন্দ দিয়েছে। ওই টুকরো কাগজ বুকে ধরে কী যে একটা অনুভূতি হল! কারণ ওই পাতায় দুটি প্রিয় চোখ তোমার দৃষ্টি ফেলেছে আর ওর ওপর তোমার নরম হাত দুটি চলাফেরা করেছে। অ্যাদ্দিনে টের পাচ্ছি, ছোট্ট দেবদূতী আমার, মন কেমন করা আর মিলনাকাঙ্খা কী বস্তু! তবে বিরহ যত না বেদনা আনে তার চেয়ে ঢের বেশি সুখ আনে প্রেম...

মা তোমাকে না চিনেই ভালবেসে ফেলেছেন। শুধু তোমার দুটো মিষ্টি চিঠি তিনি পড়েছেন। মা খুব হাসাহাসি করেন আমাকে নিয়ে, কারণ আমি আর আগের মতো অন্য মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট হই না। আমার কাছে সারা জগতের থেকেও তোমার মূল্য অনেক বেশি এখন।’’


ছেলের চিঠিতে মা একটা ছোট্ট পুনশ্চ যোগ করে দিয়েছিলেন, ‘‘এ চিঠি না পড়েই এতে আন্তরিক শুভেচ্ছা যোগ করছি।’’

কিন্তু এ প্রেম টিকল না বেশী দিন কারন আইনষ্টাইন তখন হঠাৎ করে জুরিখ পলিটেকনিকে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়ে যায়। “আউট অভ সাইট আউট অভ মাইন্ড” আইনষ্টাইন উপেক্ষা করতে থাকল মারিকে, মারির সাথে তার বিচ্ছেদে মারি প্রচন্ড মানসিক আঘাত পায় তার স্নায়ু বৈকাল্য দেখা দেয়। কয়েক বছর পর মারি অবশ্য এক ঘড়ির কারখানার ম্যানেজার কে বিয়ে করে।


মিলোভা এবং আইনষ্টাইন

জুরিখ পলিটেকনিকে ভর্তি হবার পরই আইনষ্টাইনের দেখা মেলে মিলোভা মারিচের সাথে। আইনস্টাইনের ক্লাসে একমাত্র মেয়ে তিনি। বয়সে তিন বছরেরও বড়। তখনকার এক বান্ধবীর বর্ণনায় মিলেভা ছিলেন ‘‘খুবই সিরিয়াস এবং স্মার্ট। ছোট্টখাট্ট, নরমসরম, কালো চুলের, বেশ বাজে দেখতে।’’ কোমরের হাড়ের একটা সমস্য ছিল মিলেভার। শরীরে একটা যক্ষ্মাভাবও ছিল।

তা হলে কীসে মজেছিলেন আইনস্টাইন? বলা যেতে পারে অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যায় ওঁর ঘোর প্যাশনে। ওঁর স্বভাব চিন্তামগ্নতায়। আত্মিক সৌন্দর্যে। ওঁর গভীর দুই চোখ ও বেদনাহত মুখাবয়বে। বন্ধুরা অবাকই হতেন আইনস্টাইনের মতো এত সুঠাম, সুদর্শন পুরুষ এত বেঁটেখাটো, পা টেনে হাঁটা, রুগ্ণ মহিলায় আকর্ষিত হল কেন? আইনস্টাইন জবাবে বলেছিলেন, ‘‘কিন্তু কী সুন্দর কণ্ঠস্বর ওর!’’


উপরে আইনষ্টাইনের বাবা, নীচে বামে আইনষ্টাইন ও তার বোন মাযা, ডানে আইনষ্টাইনের মা

তবে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মা পাউলিনে আইনস্টাইন। যিনি মারি ভিন্টেলারের দু’খানি চিঠি পড়ে পুত্রের প্রেমিকায় মজেছিলেন, তিনি মিলেভার ফটো দেখেই সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। আইনস্টাইন লিখেওছিলেন মিলেভাকে: ‘‘তোমার ছবি দেখে বুড়ি বেশ দমেই গেলেন। তখন সহাভূনুতির সুরে আমাকে বলতেই হল— হ্যাঁ হ্যাঁ, ওর বুদ্ধিসুদ্ধি খুব।’’ আইনষ্টাইন আদর করে মিলোভাকে ডাকতেন “ডলি” নামে। আইনষ্টাইনের মার ঘোর অমত ছিল মিলোভা কে পুত্র বধু করার।


আইনষ্টাইন এবং তার বোন মাযা আইনষ্টাইন

১৯০২ সালে আইনষ্টাইন মিলোভার ঘরে আসল এক কন্যা সন্তান যার নাম লিজেল। তখনো তাদের বিয়ে হয়ে ওঠে নি। মানে অবৈধ সন্তান। ওদিকে আইনষ্টাইনের বাবা, মা, বোন মাযা আইনষ্টাইন কেউই আইনষ্টাইনের সাথে মিলোভার বিয়ে মেনে নিতে চাচ্ছিলেন না, যদিও ১৯০২ সালের অক্টোবরে বাবা হেরম্যান আইনষ্টাইন মৃত্যু শয্যায় আইনষ্টাইনকে বিয়ের অনুমতি দেন। এইটুকুরই হয়তো অপেক্ষায় ছিলেন আইনস্টাইন। আর তিন মাসের মধ্যেই— ৬ জানুয়ারি ১৯০৩— বের্ন-এর রেজিস্ট্রি অফিসে হাতে গোনা কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে এক অতি নিভৃত আইনি-বিয়ে সারলেন বিজ্ঞানী। বর-কনে কারও বাড়িরই কেউ সেখানে নেই। সই শেষে বন্ধুদের খাওয়াতে নিয়ে গেলেন এক রেস্তোরাঁয়। তার পর অধিক রাতে বৌ নিয়ে বাড়ি ফিরে প্রফেসর আবিষ্কার করলেন যে, বাড়ির চাবি নেই পকেটে।


এক দম পেছনে ঘোমটা পড়া মহিলার কোলে লিজের্ল (যদিও ছবিটা নিয়ে বিতর্ক আছে)

কন্যা লিজের্ল-এর কথা আলবার্ট মা, বাবা, বোন বা বন্ধুবান্ধবদের কখনও জানতে দেয়নি, ফলে বিজ্ঞানীর জীবনে ও এক অচেনা, অজানা মানুষই থেকে গেছেন চিরকাল। জন্মের মাত্র এক বছরের মাথায় স্কারলেট ফিভারে আক্রান্ত হয়ে কন্যা লিজের্ল মারা যায়। তবে এনিয়েও বিতর্ক আছে সে সময়ের রক্ষনশীল ইউরোপ বিবাহ বর্হিভুত সন্তান গর্হিত অপরাধ হিসাবেই গন্য হত, অনেকে বলেন লিজের্ল কে কোন পরিবারে দত্তক দেয়া হয়, সেক্ষেত্রেও লিজের্ল যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে কোন খোজ আর পাওয়া যায় না। আইনস্টাইনের কোনও কথায় বা চিঠিপত্রেও ওর কোনও উল্লেখ নেই। বস্তুত, ও যে আদৌ ছিল এই তথ্যটাই পণ্ডিতরা বিস্ময়ের সঙ্গে আবিষ্কার করেন নানা কাগজপত্র ঘেঁটে ১৯৮৬-তে!


দুই সন্তান সহ আইনষ্টাইন

এত ঝামেলা করে যে বিয়ে করলেন, সে বিয়ের শুরুতেই অশনি সংকেত। আইনষ্টাইন তার কাজের মধ্যে ঢুকে গেলেন, এক পর্যায়ে ১৯০৫ সালে “থিওরী অভ রিলেটিভিটি” আবিস্কার করে বসলেন। আইনষ্টাইন তখন বিজ্ঞান জগতের নক্ষত্র। চারিদিকে মানুষের ভীড়। সুন্দরী ললনাদের হাতছানি। এর মাঝেই আইনষ্টাইন মিলোভা দম্পতি দুই সন্তানের জনক হলেন।


বড় ছেলের নাম এডোয়ার্ড আইনষ্টাইন

বড় ছেলের নাম এডোয়ার্ড আইনষ্টাইন


ছোট ছেলের নাম হ্যান্স আলবার্ট আইনষ্টাইন

ছোট ছেলের নাম হ্যান্স আলবার্ট আইনষ্টাইন


আইনষ্টাইনের বামে দাঁড়ানো এভেলিন

এক পর্যায়ে আইনষ্টাইন একজন মেয়েকে দত্তক গ্রহন করে তার নাম এভেলিন আইনষ্টাইন

আইনষ্টাইন আর মিলোভার মাঝে তিক্ততা এমন পর্যায়ে চলে গেল যে নীচের কয়েকটি লাইন পড়লেই বোজা যাবে। আইনষ্টাইনের অবহেলায় স্ত্রী মিলোভা তাদের দুই সন্তান নিয়ে পারিবারিক বন্ধু রাসায়নবিদ ফ্রিৎজ হাবের বাড়ীতে উঠলেন। তার মধ্যস্থতায় মিলোভা আবার আইনষ্টাইনের বাসায় ফিরে আসলেন কিন্তু আইনষ্টাইন দিলেন ভয়ংকর কিছু শর্ত।

সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ রচনার শেষ মুহূর্তগুলোয় নিজের নির্জনতা ও প্রশান্তি বজায় রাখার জন্য অসাধারণ সেই শর্ত মিলেভাও মেনে নিলেন।

শর্তাবলি এ রকম—

ক. তোমায় নিশ্চিত করতে হবে যে,

১. আমার কাপড়চোপড় কাচা, পরিচ্ছন্ন ও গোছানো থাকবে

২. আমার ঘরে দিনে তিন বার খাওয়া পরিবেশন হবে

৩. আমার শোবার ঘর ও পড়ার ঘর পরিচ্ছন্ন থাকবে, বিশেষ করে আমার কাজের টেবল শুধু আমার কাজের জন্যই তৈরি থাকবে

খ. আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তুমি পরিহার করবে, কেবল সামাজিক ভাবে যেটুকু যা দরকার তা বাদে। বিশেষ করে তোমায় ছাড়তে হবে—

১. বাড়িতে আমার পাশে বসে সময় কাটানো

২. আমার সঙ্গে তোমার বেড়াতে বেরনো

গ. আমাদের সম্পর্কে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে—

১. আমার থেকে কোনও অন্তরঙ্গ ব্যবহার আশা করবে না, কোনও বকাঝকা, শাসানি চলবে না

২. আমি অনুরোধ করলে আমার সঙ্গে কথা বন্ধ রাখবে

৩. আমি চাইলে আমার পড়ার বা শোবার ঘর ত্যাগ করবে

ঘ. কথা দেবে যে আমাদের সন্তানদের সামনে আমায় কথায় বা ব্যবহারে ছোট করবে না

সম্পর্কহানির এর চেয়ে জোরালো ছবি আর কী হতে পারে!

সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে—কথাটা বোধ হয় ঐতিহাসিক ভুল। শুধু নারী চাইলেই একটা সংসার ধরে রাখা সম্ভব নয়, যদি না তার পুরুষ জীবনসঙ্গী সেটি চায়। মিলেভা সাধ্যমতো সংসার সামলে রাখলে কী হবে, আইনস্টাইনের বুকে তখন বাজছে নতুন প্রেমের সুর।

প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হতেই আইনস্টাইন ও মিলেভা মারিচের বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা কোর্টে উঠল।


এলসা এবং আইনষ্টাইন

২৩ ডিসেম্বর, ১৯১৮, বার্লিনের আদালতে দাঁড়িয়ে জগতের সেরা বিজ্ঞানী কবুল করলেন, ‘‘আমি গত সাড়ে চার বছর আমার ডিভোর্সী খালাতো বোন এলসা আইনস্টাইনের সঙ্গে সহবাস করেছি।’’ এর চার মাস পর বিয়ে করেন এলসাকে।

১৯১২ সালে মিলোভা আর আইনষ্টাইনের অশান্তি যখন চরমে তখন আইনষ্টাইনের সাথে দেখা হল তার থেকে তিন বছরের বড় খালাতো বোন এলসার সাথে। এলসা তখন দুই সন্তান নিয়ে ডিভোর্সী। বয়স ছত্রিশ। শুরুতেই এলসার সাথে যে প্রেম হল ব্যাপারটা কিন্তু এমন ছিল না, প্রথমে এলসার ছোট বোন পউলার সাথে মেলামেশা শুরু করেন কিন্তু এক পর্যায়ে বিজ্ঞানী বুজতে পারলেন পউলা তার উপযুক্ত না। তিনি এলসার দিকে ঝুকে পড়েন।


আইলস লোয়েনথার্ল

এ পর্যন্ত হলেও অসুবিধা ছিল না, শোনা যায় এলসার বড় মেয়ে আইলসের সাথেও তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠছিলো।এলসার বড় মেয়ে আইলস তখন আইনস্টাইনের সেক্রেটারি। গোপনে তাঁর সঙ্গেও অভিসার চলে আইনস্টাইনের। এ বিষয়টা জানতেন স্বয়ং এলসাও। তিনি মেয়েকে বাধা দেন। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জন্মের আগমুহূর্তে মা-মেয়ে-আইনস্টাইন-মিলেভা চতুষ্টয়ে মানব প্রবৃত্তির জটিলতম খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল পৃথিবীতে।


এলসা এবং আইনষ্টাইন

শেষ পর্যন্ত আইলস তাঁর আরেক প্রেমিককে বিয়ে করে ফেলেন। এলসার পথ তখন পরিষ্কার। আইনস্টাইন তখন মিলেভাকে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু তিনি রাজি নন। কারণ, তাঁর ধারণা, বিচ্ছেদ হয়ে গেলেই আইনস্টাইন তাঁর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেবেন। আইনস্টাইন তখন ফেললেন নোবেলের টোপ। আইনস্টাইন জানতেন, আজ হোক, কাল হোক, নোবেল তিনি পাবেনই। নোবেল থেকে পাওয়া সমস্ত অর্থ তিনি দিয়ে দেবেন মিলেভা আর দুই ছেলেকে। নোবেলের বিষয়ে মিলেভা নিশ্চিত ছিলেন। তিনি রাজি হয়ে যান, বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। আইনস্টাইন এলসাকে বিয়ে করেন এবং ১৯৩৬ সালে এলসার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গেই ছিলেন তাঁরা।

আইনষ্টাইনের আর এক প্রেম লিনা



আপেক্ষিক তত্ত্ব কিংবা বিখ্যাত সমীকরণ E=mc2 এর জন্য যিনি দুনিয়া জুড়ে বিখ্যাত, তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন। যারা এই মানুষটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন, তারা বলতে পারবেন নানা গাণিতিক জটিল তত্ত্ব ছাড়াও যে বিষয়টির প্রতি তিনি দুর্বল ছিলেন তা হল বেহালা। বেহালা ছিল তার প্রেমিকার মতো। এর নাম ছিল লিনা। মা পলিন আইনস্টাইনের কল্যাণেই মাত্র ৬ বছর বয়সে হাতে বেহালা তুলে নিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে মোৎসার্ট’এর রচিত সুর শোনার পর আবারো তিনি বেহালা হাতে তোলেন। বলতে গেলে সেদিন থেকেই আইনস্টাইনের জীবনের অংশ যায় বেহালা। একটি টেবিল, একটি চেয়ার, এক পাত্র ফল আর একটি বেহালা—একজন মানুষকে সুখী হতে আর কী চাই?’ - তার বিখ্যাত উক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

১৯২৯-এ আইনস্টাইন যখন বেলজিয়াম সফরে এলেন, রানি এলিজাবেথ তাঁর সঙ্গে বেহালা বাজানোর জন্য বিজ্ঞানীকে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। রানির নিজেরও বেহালাবাদনের সুখ্যাতি ছিল। সেই অনুরোধ ফেরাননি আইনস্টাইন। তিনি নেদারল্যান্ডসে অক্সফোর্ডে বেহালা বাজিয়েছেন। এমনকি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শরণার্থী সহায়তা তহবিল গড়তে গ্যাবি ক্যাসাডেসাসের সঙ্গে যুগলবন্দীও বাজিয়েছেন।

জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে একসময় দেখলেন সহজভাবে বাঁ হাত আর তুলতে পারছেন না। ফলে বেহালা রেখে দেন। আর হাতে তুলে নেননি। ১৯৫৫-এর ১৮ এপ্রিল আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়।

কারো ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাটাঘাটি করার পক্ষপাতি আমি না, কিন্তু সেটা যদি হয় আইনষ্টাইনের মত কোন পাব্লিক ফিগারের সেটা জানতে উৎসুক বোধ করি, এই আঙ্গিক থেকেই এই লেখাটা।।

সংশ্লিষ্ট পোষ্টঃ আইনষ্টাইন এবং নিউটনের স্পেসটাইমের রোমাঞ্চকর দ্বন্দ্ব

"বোস আইনষ্টাইন কনডেনসেট থিওরী" এবং সৈয়দ মুজতবা আলীর "পন্ডিত মশাই"

সূত্রঃ পথিক গুহ পাক্ষিক দেশ ফেব্রুয়ারী ২০১৫, আইনষ্টাইন হিজ লাইফ এ্যান্ড ইউনিভার্স,

Einstein: His Life and Universe Summary

‘Einstein: His Life and Universe’

The Forgotten Life of Einstein's First Wife

Einstein’s personal life

আইনস্টাইনের নারী

আইনস্টাইনের আরেক প্রেম লিনা!

সহ আরো অনেক অন্তর্জাল ফিচার।।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১১
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×