somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

সাধনা

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাধনা বা প্রাকটিস, এই ব্যাপারটা ইদানিং প্রায়ই ভাবনার মাঝে এসে উকি দিয়ে যায়। সাধনা বলতে আমরা কি বুজি? সাধনা হল কোন একটা ব্যাপারকে নিয়ে বছরের পর বছর নিরলস পরিশ্রম করে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। সেই প্রাকটিস যে কোন দিকে হতে পারে, ভালো দিকেও হতে পারে আবার খারাপ দিকেও হতে পারে। প্রাকটিস করলে পারফেকশান আসবেই। এনিয়ে বোধ হয় কোন দ্বিমত নেই।

একটা উদাহরন দেই, যারা ক্রিকেট খেলে, ধরুন আমাদের দেশের সাকিব, তামীম বা মুশফিক এরা বছরের পর বছর সাধনা করে নিজেকে এমন একটা পর্যায়ে উত্তীর্ন করে যে আর দশ জন স্বাভাবিক খেলোয়াড়ের থেকে তার পারফেকশান অনেক বেশী চলে আসে বিধায় সে খুব ভালো খেলে। যদি তার থেকেও বেশী সাধনা করে ধরুন এদের থেকেও ভালো যারা খেলে ( বিভিন্ন বিদেশী নাম করা খেলোয়াড়) তারা আরো বেশী এই খেলাটাকে নিয়ে সাধনা করে অসাধারন সব শট বাউন্ডারি মেরে মানুষদের পুলকিত করে।

পড়াশুনার ব্যাপারটা দেখুন, একটা নির্দিষ্ট বয়সে সবাইকে পড়াশুনা করতে হয় অনেকটা বাধ্যতামুলক ভাবে, কারন পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। সবাই পড়াশুনা করে, কিন্তু এই পড়াশুনায়ও ডিফারেন্স আছে, কেউ কেউ কঠোর তপস্যার মত পরিশ্রম করে পড়াশুনা করে যার ফলাফল সে হাতে নাতে পায়, রেজাল্ট আসলে দেখা যায় কেউ বোর্ডে ষ্ট্যান্ড করছে, কেউ ষ্টার মার্কস পেয়েছে, কেউবা ফার্ষ্ট ডিভিশান কেউ বা ফেল। কেন? কারন ওই একটাই পড়াশুনায় সাধনা বা প্রাকটিস। আবার দেখবেন বোর্ডে ষ্ট্যান্ড করা এইসব ছেলেমেয়ের মধ্যেও কিছু পার্থক্য আছে, কেউ কেউ এমন মার্কস পেয়েছে যা শত সাধনায়ও কেউ পারে না, অথচ খুব হাতে গোনা অল্প কয়েকজন কিন্তু সেই অবিশ্বাস্য নাম্বার সহ বোর্ডে রেজাল্ট করছে যা কয়েক বছরের রেকর্ড, এরা ভিন্ন প্রজাতির, এদের জন্মের সময়ই এরা কিছু বিশেষ গুন নিয়ে আসে যাকে আমরা মেধা বলি, যেটা অনেকটা গড গিফটেড।

বিজ্ঞানীদের দিকে তাকান, দুনিয়ায় শত শত বিজ্ঞানী আছে যারা তাদের আবিস্কার দিয়ে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যায়, এদের সংখ্যাও কয়েকশত হবে, আবার এদের মাঝে নিউটন, আইনষ্টাইন বা হালের হকিন্স এরা আবার সেরাদের মাঝে সেরা, চেষ্টা করলে কেউ কেউ বিজ্ঞানী হতে পারে, কিন্তু শত শত চেষ্টা করলেও একজন নিউটন বা আইনষ্টাইন হওয়া সম্ভব না, কেন? কারন এরা জন্মগত ভাবেই অসাধারন মেধার অধিকারী যাকে আমরা গড গিফটেড বলতে পারি, হয়ত ছোট বেলায় এর কোন বিকাশ ঘটে না (এর উদাহরন ভুরি ভুরি আছে) কিন্তু কোন এক প্রেক্ষিতে বা একটা বয়সে এটা বিকাশ লাভ করে।

কবি বা লেখক আছে হাজার হাজার, চেষ্টা করলে অনেকেই লিখতে পারবে বা কবিতা বানাতে পারবে, যদি দিনের পর দিন প্রাকটিস করে তবে হাজার জনের মাঝে নিজেকে আলাদা চেনাতেও পারবে এনিয়ে কারো কোন সন্দেহ আছে নাকি? অবশ্যই নাই। কিন্তু কয়জন রবীন্দ্রনাথ, চসার, মঁপাসা বা টলষ্টয় হতে পারবে? একজনও না, কারন ওই একই। কারন এরা জন্মগতভাবে এই ব্যাপারে প্রতিভার অধিকারী। সেই সাথে আছে এদের নিরলস সাধনা বা পরিশ্রম।

এইবার আমি এর সাথে এমন একটা ব্যাপার তুলে আনব যা আনলেই অনেকে নাক সিটকাবেন, এতক্ষন যারা আমার ওপরের লেখার সাথে এক মত পোষন করছেন তাদের কেউ কেউ এইবার আমাকে বলবেন অযৌক্তিক, গেয়ো, মুর্খ, অথচ আপনিই আমার ওপরের লেখার সাথে এক মত হয়েছেন।

ধর্মও হল একটা প্র্যাকটিস বা সাধনার ব্যাপার, নিত্য ধর্ম পালন সেতো প্রায় সবাই ই করেন (অল্প কিছু অবিশ্বাসী বাদে)। নামায, পুজা, প্রার্থনা বা যার যে বিধান তা কিন্তু পালন করে যাচ্ছেন ওই পরীক্ষার পড়া, পড়ার মত করে। কেউ কেউ সম্পুর্ন, কেউ কেউ আংশিক। কিন্তু করছেন অনেকেই। কিন্তু খুব সামান্য সংখ্যক মানুষ আছেন যারা ধর্মটাকে নেন সাকিব, মুশফিকদের মত নিরলস বছরের পর বছর একটা নির্দিষ্ট সাধনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্তরে নিতে যার ফলশ্রুতিতে তাদের বিভিন্ন কাজ আমাদের চোখে ধাঁধা বা বিভ্রমের সৃষ্টি করে। যারা নিতে পারেন তারা যে আর দশ জন স্বাভাবিক ধার্মিকের থেকে আলাদা হবেন এতে অবাক হবার কিছু নেই।

আবার এই সব ধার্মিকের মাঝে কিছু কিছু আছেন যারা জন্মের সময়ই শচীন, লারা বা নিউটন, আইনষ্টাইনের মত গড গিফটেড কিছু একটা নিয়ে জন্ম গ্রহন করেন, যারা তাদের সেই গড গিফটেড ব্যাপারটা নির্দিষ্ট সাধনা বা প্রাকটিসের মাধ্যমে এমন একটা অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যায়, যার বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে হয় অলৌকিক। এই অলৌকিকত্বে মাঝে আমার কাছে অবাক হবার মত কিছু নাই যদি না আমি লারা, শচীন বা নিউটনকে নিয়ে অবাক না হই।

রবীন্দ্রনাথ, নিউটন বা শচীনের কাজ দেখে যদি আপনি বিস্ময়াভুত হন তবে একজন জন্মগত ধার্মিক প্রতিভার অধিকারী যে কিনা নির্দিষ্ট সাধনার মাধ্যমে কিছু অদ্ভুত কাজ আপনাকে দেখায় (যদিও এই জাতের বিরল মানুষ গুলো সজ্ঞানে এই গুলা দেখায় না) তবে কেন অবাক হবেন? আপনি গান, খেলা, বিজ্ঞানে বিরল প্রতিভার স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠা বোধ করেন না, কিন্তু বিরল ধর্ম জ্ঞানের অধিকারী (যারা অতী্তে ছিলেন এখন আছেন কিনা জানি না) তাদের প্রতিভার স্বীকৃতি দিতে নিজেকে গুটিয়ে নেন, কত বড় হিপোক্রেসী এক বারো কি ভেবেছেন? আপনি কি বক ধার্মিকদের দেখে ধর্মকে বিচার করেন? তবে আপনাকে ক্রিকেটের রহিম, গানের রাম বা বিজ্ঞানের যদুকে কে দিয়ে সেগুলো বিচার করার নামান্তর মাত্র।

অনেকেই বার্তা বা ওহী পাওয়াকে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখা বা আনকনসাসে কিছু একটা পাওয়াকে মনে করেন, আসলে ব্যাপারটা এক না কারন বার্তা বা ওহীর ব্যাপারটা ভিন্ন, এখানে তারা যা লাভ করত সেখানে সে সম্পূর্ন সজ্ঞানে থাকত। (অবশ্য কিছু কিছু ভন্ড আছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করে, বর্তমান সমাজে এদের প্রচুর দেখা পাবেন সব ধর্মেই)। ওহীর ব্যাপার বাদ দিন, ধর্মের ব্যাপারটা একটা গভীর উপলদ্ধির ব্যাপার। এর মাঝে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এটাকে সাধনা হিসাবে নেন। আসি মুল ব্যাপারে, ধর্মেও বছরের পর বছর সাধনা করলে এমন কোন পর্যায়ে উত্তীর্ন হওয়া যায় যা সাধারনের কাছে অলৌকিক বা অবোধ্য মনে হবে।

আমি নিজে কোন ধার্মিক কেউ না, পাপ, ক্ষুদ্রতা, ভুল আমার মাঝে অনেক পাবেন, কিন্তু যার যা প্রাপ্য যৌক্তিক তাকে তা দিতে বা বলতে আমার কেন দ্বিধা হবে? যদি হয়ই তবে কিসের যৌক্তিক ভাবনা যা নিয়ে আমি গর্ব করি? ধর্ম নিয়ে নাক সিটকানোর কিছু নেই, কেউ পালন না করে, না করুক কিন্তু যে করে তাকে খাটো করে দেখার মাঝে কোন বিশেষত্ব নেই।

পৃথিবীতে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ ধর্ম পালন করে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করে সেখানে গুটি কয়েক খারাপের জন্য পুরা ধর্মকে দোষারোপ করতে হলে আমি বলব বিজ্ঞান ও ঘৃনিত কারন বিজ্ঞানের কারনেই এ্যাটম বোমা আবিস্কার হয়েছে, ক্রিকেট খুব খারাপ কারন অল্প কিছু ক্রিকেটার স্লেজিং এর নাম করে বিপরীত দলের খেলোয়াড়ের মা বউকে গালি দেয়, আর গান সে তো অতি জঘন্য একটা ব্যাপার কারন গানের কলি কিভাবে হয় “যৌবন আমার লাল টমেটো”, আর পড়শুনা ছিঃ ছিঃ কোন ভদ্র মানুষ কিভাবে পড়াশুনা করে যেখানে রসময় গুপ্ত গল্প লেখে!!!

ভালো থাকুন। ভালো দিকটা দেখুন। মানুষের অন্ধকার দিকটা না, মানুষের আলোকিত দিক দিয়ে বিচার করুন সে কতটা ভালো বা খারাপ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×