মানুষের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে তা নতুন করে বলার নেই। তারপরও বলতে হয়, না হলে আমরা বার বার ভুলে যাই। পুঁজিবাদের এই দুনিয়ায় যতই মূল্যবোধ আর নৈতিকতার কথা বলা হোক না কেন পুরোটাই মাস্টার প্ল্যান। পুরো বিশ্বের মানুষকে বোকা বানিয়ে চলছে সভ্যতা। শত বছরের প্ল্যান নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই সমাজে প্রকৃত অর্থে নীতি যেন সুদূর পরাহত। আমরা নাটকে সিনেমায় মঞ্চে অভিনয় দেখি, বাহবা দেই। অথচ বাস্তবতার মঞ্চে কত জ্ঞানীজনেরা, নেতারা অভিনয় করে যাচ্ছেন যুগের পর যুগ ধরে তা কেউই খেয়াল করছি না।
তারপরও আমরা যারা সত্যিকার অর্থেই একটা সুখকর পৃথিবী চাই তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি পরিস্থিতি মোকাবেলার। হয়তো এই বিজয় অর্জন খুব কঠিন। তারপরও নিজের মনকে কোনভাবে বোঝানো যাবে যে কিছু তো মঙ্গলের চেষ্টায় অবদান রাখতে পেরেছি। নিজের অস্তিত্বকে বিলিয়ে সবার জন্য উদার হয়ে অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন, অথচ দেখবেন চোখের সামনেই কত বড় বড় উদারপন্থীরা সব ভেঙ্গে চুড়ে আপনার মগজে রন্ধনকর্ম করে যাচ্ছে। সহ্য করে আর বিনয় ঝুলিয়ে নিজের জায়গাটাকে অন্যের করে দিতে তাই সারাক্ষণ চেষ্টার এই মঙ্গলময় কৌশল যথাস্থানে প্রয়োগ করেই যেতে হবে।
আশা নিয়ে থাকা ভাল, তবে নিজের সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা ভুলে নয়। মানুষ যেহেতু রক্ত মাংসে গঠিত সেহেতু তার ঐ সীমার কথা মনে রেখে জাগতিক ও পরজাগতিক বিষয়ে সচেতন থাকাই উত্তম। সীমার বাইরে যেয়ে যেমন আইনস্টাইন, ও হালের স্টিফেন হকিংস্ তার বাণীর বাস্তবতা দেখে যেতে পারেননি, তেমনি তার মস্তিষ্ককে অন্যের মধ্যে প্রেরণ করে কপি করেও রেখে দেয়া যায়নি। সভ্যতার পরিক্রমায় অনেক কিছুই উদ্ভাবনে ও আবিষ্কারে মুগ্ধ করবে আমাদের, তেমনি কিছু মৌলিক বিষয়ও সহস্রাব্দ ধরে বিশ্বাস করে ও মেনে যেতেই হবে।
পুরো সৌর জগতে এমন কিছু রহস্য রয়েছে যা অনাবিষ্কৃতই রয়ে যাবে, সাধ্যের বাইরের কিছু হবার কারণে। নেটওয়ার্ক, বায়বীয় গ্যাস, তথ্য বাহন উপাদানের অভাবে এই বিষয়গুলো ঘটতেই থাকবে। আপনি চাইলেই জিন দেখতে পাবেন না। তপস্যা করে যদি সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন আর ভাবতে থাকেন তাদের অন্তত একজনকে পেলেও অনেককিছু জানতে চেষ্টা করবেন। আচ্ছা নিজেকে লুকিয়ে চলাফেরার উপায় তো তারাই ভাল জানে। মুহূর্তেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে কোন বাধা ছাড়াই কোটি মাইল দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে, বা তারও বেশি, যার ধারণাই আমরা করতে পারি না।
মানুষ যদি এই উপায় জানতো তবে কতই না সুখের হতো। তাদের খাবার, থাকা, ঘুম, সংসার, উপার্জন -আরো কত কিছুই না জানতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের খাদটি কতো গভীর? কি আছে ওতে? সবাই ওখানে গেলেই নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যায় কেন? বায়ুতে কি না থাকলে তরঙ্গের অনুপস্থিতি ঘটে? পৃথিবীর তিনভাগ জলের গভীরে কি আছে? কি করে আগুনেও প্রাণি বেঁচে থাকে? অতো ক্ষুদ্র প্রাণির দেহ ব্যবচ্ছেদ করার যন্ত্রপাতিগুলো কেমন হতে পারে? হাজারো সীমার মধ্যে কতটুকুইবা আপনি অতিক্রম করতে পেরেছেন?
মহামহীম আল্লাহ্ তাঁর অপার রহস্য দিয়ে এই সৌরমন্ডলী সৃজন করেছেন। এমনও হতে পারে এইরকম অনেক অনেক সৌরমন্ডলী আছে যার কোন কিছুই আমাদের অবগতির মধ্যে নেই। আমাদের ম্যানুয়েল পবিত্র কোরআন। এর সাথে রয়েছে রাসুল সা. এর পবিত্র হাদিস ও সুন্নাহ্। কে জানে এই ম্যানুয়েলের বাইরেও আরো ম্যানুয়েল আছে যার সম্পর্কে আমাদের জানার বাইরে? অবশ্য এই ভাবনাটুকুও ভাবা ঠিক হবে না, কারণ আমাদের সবকিছুর ম্যানুয়েল তো ঐ পবিত্র কোরআন। যেখানে কি বলা যাবে, যাবে না; করা যাবে, যাবে না –ইত্যাদি লেখা রয়েছে।
সেই ম্যানুয়ের নাজিল হবার মাস, আসছে সাধনার মাস পবিত্র রমজান। এই মাসকে যারা আলাদা গুরুত্বের সাথে না নেয়, তারা সত্যিই অভাগা। তাদেরকে কে বোঝাবে? হাত পায়ের চলৎশক্তি কমে যাবার পরও যারা মুখে সিগারেট ফুঁকে ভূঁড়ি বাগিয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাঁটেন, তারা কোন মানসিক বলে অমনটা করেন বুঝতে কষ্ট হয়। হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম এই মাসে সকল ধরনের কুপ্রবৃত্তি থেকে মুক্ত রেখে নিয়মানুযায়ী রোজা পালন, তারাবিহ্ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, দান ও যাকাত প্রদান করা –ইত্যাদি এবাদতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করা প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য অবশ্য করণীয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫২