somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের ঐতিহ্য : হিন্দুত্ব বনাম বহুত্ববাদ

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতের বর্তমান শাসকদল বিজেপি এবং তাদের মতাদর্শগত দিশারী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘর নেতানেত্রীদের মুখ থেকে প্রায়শই আমরা শুনতে পাই ভারতীয় আদর্শ ও ঐতিহ্য সংক্রান্ত নানা জ্ঞানগর্ভ উপদেশ ও নির্দেশিকা। কিন্তু মুখে ভারতীয় আদর্শ ও ঐতিহ্যের কথা বললেও কার্যত তারা এই ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এর এক খণ্ডিত অংশ নিয়েই কেবলমাত্র কথা বলেন। এই খণ্ডিত বেছে নেওয়া অংশটিই তাদের নির্মিত ভারতীয় ঐতিহ্য। এজন্য ইতিহাসকেও তারা ইচ্ছামতো বাঁকিয়ে চুরিয়ে নেন, তাকে বিকৃত করেন। যা তাদের পছন্দসই তার বাইরের বাকী সমস্ত ইতিহাস ঐতিহ্য দার্শনিক সামাজিক পরম্পরাকে তারা বর্জনই শুধু করেন না, সেগুলিকে অভারতীয় বলে বাতিল ও কোতল করতে চান। এভাবেই ভারতের প্রকৃত ঐতিহ্য অবিরত খণ্ডিত ও বিকৃত হয়ে চলে আর তা ব্যবহৃত হয় তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে।
আজকের ভারতে বিজেপি কেন্দ্রীয় ক্ষমতার পাশাপাশি প্রায় দেড় ডজন রাজ্যে ক্ষমতাসীন। এছাড়াও বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক ক্ষমতা নিরপেক্ষ সংস্থাকেও সে তার তাঁবে নিয়ে আসতে সচেষ্ট। আর এ সবের মধ্যে দিয়েই সে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি গণতন্ত্রের ওপর সার্বিক হামলা নামিয়ে আনছে। তার এই সর্বগ্রাসী চেহারা ফ্যাসিবাদের এক ভারতীয় আদলকে গত কয়েক বছরে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তুলেছে।
এই লেখাটি ভারতীয় ফ্যাসিবাদের নির্দিষ্ট দুটি প্রচারকে নিয়ে আলোচনা করে দেখাতে চায় তাদের মিথ্যা, বিকৃত ও রাজনৈতিক অভিসন্ধি মূলক প্রচারকে তারা কীভাবে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে। হিন্দুত্ববাদীদের প্রধান একটি প্রচার বলতে চায় ভারতীয় সংস্কৃতির সার খুঁজতে হবে যা কেবলমাত্র ভারতের মাটি থেকে উদ্ভূত সেখানেই এবং অভারতীয় উপাদানগুলিকে যথাসম্ভব কোতল করতে হবে। এই দর্শনের ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে তাদের “হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থান” এর কেন্দ্রীয় স্লোগানটি। অন্য প্রচারটি মতাদর্শগতভাবে তার প্রধান প্রতিপক্ষ কমিউনিস্ট তথা বামপন্থী শিবিরকে আক্রমণ করার জন্য সে ব্যবহার করে এবং বলতে চায় কমিউনিস্ট তথা বামপন্থীদের সেকুলার বস্তুবাদী ধারাটির কোনও শিকড় এদেশের জল হাওয়ায় নেই, তা সম্পূর্ণতই বিদেশের থেকে ধার নেওয়া দর্শন।
ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ঐক্যের নিজস্ব অনন্যতা
প্রথমে আসা যাক ভারতীয় সভ্যতা সমাজ সংস্কৃতির উৎসগুলির আলোচনায়। যে রাজনৈতিক ভূমিখণ্ডের মধ্যে আমরা থাকি, সেই ভারতবর্ষের মতো বৈচিত্র্যময় দেশ পৃথিবীতে সম্ভবত আর নেই। ভাষা, ধর্ম, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক রীতিনীতি, আঞ্চলিক বৈচিত্র্য – ইত্যাদি যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে তার প্রতিটিরই অনন্ত বৈচিত্র এখানে পাওয়া যাবে। আধুনিক পৃথিবীতে যে ধরনের নেশন স্টেটগুলি গড়ে উঠেছে – সেগুলির অধিকাংশের পেছনেই সক্রিয় কোনও একটি ভাষা বা ধর্মের প্রণোদনা। সেজন্যই অনেকের কাছে ভারত রাষ্ট্রের এই অভিনব নির্মাণটি খুব আশ্চর্য ঠেকে। অনেকে যেমন এর খুব ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যটিকে বুঝতে চেয়েছেন, অনেকেই আবার এর এই বিশেষ নির্মাণ বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করতে চেয়েছেন। এই অস্বীকারের প্রবণতা ভারত রাষ্ট্রের ভেতর থেকেও যেমন উৎসারিত হয়েছে, তেমনি বাইরে থেকেও। বস্তুতপক্ষে ঔপনিবেশিক শাসকদের একাংশ এতদূর পর্যন্তও বলেছিলেন যে ভারত বলে কোনও দেশ নেই এবং কখনো ছিলও না। যা আছে তা হল বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির উপস্থিতি। এই মতের প্রতিনিধিত্বকারী বয়ান হিসেবে আমরা মনে করতে পারি স্যর জন স্ট্রোচির একটি মন্তব্য। স্ট্রোচি বলেছিলেন ,”ভারত বলে কিছু নেই, কখনো ছিল না। এমনকী ভারত বলে কোনও দেশ, যার কথা আমরা এত শুনি – তার কিছুই নেই। পাঞ্জাব, বাংলা, উত্তর পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাজের লোকেরা নিজেদের কখনো এক বিশাল ভারতীয় জাতির অংশ বলে ভাববে, এমন ঘটা অসম্ভব।”
ভারতবর্ষের ইতিহাস অবশ্যই স্ট্রোচির মতকে স্বীকৃতি দেয় না। খ্রীষ্ট জন্মের তিনশো বছরেরও আগে মৌর্যদের সময়ে তো বটেই এমনকী তারও আগে মগধের নন্দ বংশের আমলেই আমরা রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ এক ভারত ভূখণ্ডকে পেয়ে যাই। এই ভূখণ্ড পরে গুপ্ত সম্রাটদের আমলে, মধ্যযুগে সুলতানী শাসনে বা আকবরের সময় থেকে বিভিন্ন মুঘল সম্রাটদের আমলে বা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্যের সময়ে রাজনৈতিকভাবে বারবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যবর্তী পর্বগুলিতেও কয়েকটি বড় শাসকবংশের মধ্যেই এই বিরাট রাজনৈতিক সীমা বিভক্ত থেকেছে এবং তাদের বৈশিষ্ট্য কখনোই পরস্পরের থেকে খুব বেশি আলাদা হয়ে যায় নি। যেমন আদি মধ্যযুগের ভারত গুর্জর পাল প্রতিহারদের মতো তিনটি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে বন্টিত থেকেছে কিন্তু সামাজিক অর্থনৈতিক দিক থেকে একই রকম প্রবণতা সেগুলিতে দেখা গেছে, যাকে রামশরণ শর্মার মত ঐতিহাসিকেরা ভারতীয় সামন্ততন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন।শুধু যে সম্রাট বা সুলতানদের শাসনের নিরিখেই এই ঐক্য তৈরি হয়েছে তা নয়। ধর্ম, ভাষা সাহিত্যের প্রবণতা ও সামাজিক আন্দোলনগুলি প্রাক আধুনিক যুগেই জনগণের ঐক্যের দিকটি নির্মাণ করেছে। বৌদ্ধ,জৈন,বৈষ্ণব,শাক্ত – প্রভৃতি ধর্ম প্রাচীন ও মধ্যযুগের ভারতে জনগণের মধ্যে ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি করে। ইসলামের প্রবেশের পর তাও ভারতের মুসলিমদের মধ্যে এক ঐক্যের বোধ সঞ্চার করে। আদি মধ্যযুগ ও মধ্যযুগের ভক্তি ও সুফীর মতো সংস্কার আন্দোলনগুলি সামাজিক প্রবণতার নিরিখে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে ঐক্যের বনিয়াদ নির্মাণ করে। প্রায় একই সময়ে প্রাকৃতের নিগড় থেকে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন আধুনিক ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু হয় এবং সেই সাহিত্যে প্রায়শই বেশ কিছু সাধারন মিল লক্ষ্য করা যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে যে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয়, তা জাতিয়তাবাদী চেতনার সূত্রে ভারতের জনগণকে এক অভূতপূর্ব ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করে।
অন্যদিকে এই ঐক্যের ধারণাটির একাধিপত্য বিপরীত এক সমস্যা তৈরি করে যখন ঐক্যর নিরিখটিকে সর্বাত্মক করে তুলে তার বহুত্ব ও নানাত্বকে অস্বীকার বা খাটো করা হয়। বস্তুতপক্ষে স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটা অনেক সময়েই লক্ষ্য করা গেছে।
স্বাধীনতা ও দেশভাগের কিছুদিন পর যখন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন প্রশ্নকে কেন্দ্র করে এমনকী বিচ্ছিন্নতার দাবি পর্যন্ত প্রবল হয়ে ওঠে এবং অনেক সময়েই সেনাবাহিনী দিয়ে তার মোকাবিলা করতে হয় – তখন এই বৈচিত্র্য ও নানাত্বকে উপেক্ষা করা আধিপত্যবাদী ঐক্য বয়ানের সমস্যাটি স্পষ্টভাবে ধরা পরে। সেই সূত্রে উঠে আসে একটি মৌলিক চেতাবনী, যার বীজ নিহিত রয়েছে আমাদের সংবিধানেও। ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের যে বয়ানটি বহুকথিত তার কোনও একদিকে বিশেষ জোর পড়াটাই সমস্যার, সেটি ক্রমশই স্পষ্ট হতে থাকে। বোঝা যায় বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে একঢালা ঐক্যের চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ভারতের বিশিষ্টতা এবং প্রাণময়তাকেই ধ্বংস করবে। বস্তুত এই সূত্রেই ভাষা, ধর্মের স্বতন্ত্রতা ও নিজস্বতাগুলিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার প্রশ্নটি চলে এসেছিল সংবিধান প্রণেতাদের কাছে। এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের দিকটি। মনে রাখতে হবে ভারতের মতো বহুভাষিক রাষ্ট্রের ভাষানীতি, তার ধর্ম অধিকারগত বিভিন্ন দিক, কেন্দ্র রাজ্য অধিকারের পাল্লা – ইত্যাদি প্রশ্নগুলি নিয়ে সংবিধান রচনাপর্বে বহু চিত্তাকর্ষক বিতর্ক হয়েছিল। সেই বিতর্কগুলিও সামগ্রিকভাবে ভারতীয় চিন্তার বহুত্ববাদকে ধারণ করে আছে। আমাদের খুঁজে দেখতে হবে ভারতীয় সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্যের কারণ কী?
ভারতের ইতিহাস ও মিশ্র সংস্কৃতির নির্মাণ
ভারতবর্ষের ইতিহাস যে তাকে বহু জাতির মিলনক্ষেত্র করে তুলেছে তার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্বীকৃতি সম্ভবত রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ভারততীর্থ কবিতার সেই বিখ্যাত স্তবকটির মধ্যে –
কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে
কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে
সমুদ্রে হল হারা।
হেথায় আর্য, হেথা অনার্য
হেথায় দ্রাবিড়, চীন--
শক-হুন-দল পাঠান মোগল
এক দেহে হল লীন।
পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার,
সেথা হতে সবে আনে উপহার,
দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে
যাবে না ফিরে,
এই ভারতের মহামানবের
সাগরতীরে।
ভারতবর্ষের আদি বাসিন্দা কারা এই নিয়ে স্বীকৃত মতকে আক্রমণ করে হিন্দুত্ববাদিরা ভারতীয় ইতিহাসের প্রথম পর্বটিকে বিতর্কিত করে তুলতে চেয়েছেন সচেতনভাবে। তাঁরা যে হিন্দুত্বের কথা বলেন, সেই হিন্দুত্বের আদি গ্রন্থগুলির নির্মাতারা বাইরে থেকে ভারতে এসেছিলেন, এটা মেনে নিলে তাদের পিতৃভূমি পুণ্যভূমির তত্ত্বটি প্রথমেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই বেদ ব্রাহ্মণ আরণ্যক উপনিষদ রামায়ণ মহাভারত গীতা প্রমুখ গ্রন্থের রচয়িতা জনগোষ্ঠীটি, যারা আর্য ভাষায় কথা বলত,তারা যে বাইরে থেকে এসে এদেশের প্রাক অদিবাসী অস্ট্রিক ও দ্রাবিড়দের হটিয়ে দিয়ে নিজেদের বসতি গড়ে তুলেছিল এবং ক্রমশ এদেশের কোণে কোণে ছড়িয়ে পড়েছিল তা তারা মানতে চান না। তারা মনে করেন এই আর্যভাষী মানুষেরা বাইরে থেকে আসেন নি, তারা বরাবরই এদেশের বাসিন্দা ছিলেন। ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতা এদেরই গড়ে তোলা সভ্যতা। আসলে আর্যদের বহিরাগত হিসেবে মেনে নিয়েই তাদের ভারতের নিজস্ব নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিলে আর এস এসকে এ দেশের অন্যান্য আগমনকারীদের, বিশেষত আরব, আফগানিস্থান, তুরষ্ক থেকে আসা মুসলিমদেরও দেশের স্বাভাবিক নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হয়, যা করতে তারা নাচার। ( এ প্রসঙ্গে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এ দেশের সিংহভাগ মুসলিম আরব, তুরষ্ক বা আফগানিস্থানের মানুষদের উত্তরাধিকারী নন, মূলত এ দেশেরই দলিত ও নিম্নবর্গের মানুষ, যারা বিভিন্ন কারণে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন।) আর্যভাষীদের বাইরে থেকে ভারতে আসার স্বপক্ষে যে পুরাতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাতত্ত্বগত প্রমাণগুলি রয়েছে, ভারত ইতিহাস যে বহু জাতের বহু মানুষের মিলনস্থল এখানে সেই সর্বজনজ্ঞাত ইতিহাসের বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে ভারতে কোন কোন জাতি কবে নাগাদ বাইরে থেকে এসেছে তার একটি সারণী শুধু সামনে রাখতে পারি
• ১৫০০ খ্রীষ্ট পূর্ব থেকে ১০০০ খ্রীষ্টপূর্ব – আর্যদের বিভিন্ন শাখা বিভিন্ন পথে ভারতে প্রবেশ করে। এদের একটি শাখাই বেদের রচয়িতা
• ২০০ খ্রীষ্ট পূর্ব থেকে – উত্তর পশ্চিম ভারতে ব্যাকট্রিয় গ্রীক বা ইন্দো গ্রীকদের রাজ্যজয়
• ১৫০ খ্রীষ্ট পূর্ব থেকে – শকেরা ভারতের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করে
• ১০ খ্রীষ্টপূর্ব নাগাদ পার্থিয়রা উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে মূল ভারত ভূখন্ডে আসতে শুরু করে
• ৪০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ উত্তর পশ্চিম ভারত হয়ে কুষাণরা ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করে। প্রায় ২০০ খ্রীষ্টাব্দকাল পর্যন্ত উত্তর পশ্চিম এবং মধ্য ভারতের এক বড় অংশ কুষাণ অধিকারে ছিল। ব্যাকট্রিয় গ্রীক, শক, পার্থিয় এবং কুষাণদের মতো বহিরাগতরা প্রায় চারশো বছর ধরে ভারতের এক বড় অংশ শাসনকালে ভারতের শিল্প স্থাপত্য শাসননীতি খাদ্যাভ্যাস সংস্কৃতিতে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখে গেছেন।
• ৩৫০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে হুণরা ভারতে প্রবেশ করতে শুরু করে। গুপ্ত সাম্রাজ্য যখন সারা ভারতে বিস্তার লাভ করেছে, তখনো তারা উত্তর পূর্ব ভারতে টিঁকে ছিল।
• খ্রীষ্টীয় দশম একাদশ শতাব্দী থেকেই আর্য, ইন্দো গ্রীক, শক, পার্থিয়, কুষাণ, হুণরা যে পথ দিয়ে ভারতে এসেছিল সেই একই পথ ধরে ভারতে আসে গজনীর মুসলিম শাসকেরা। দিল্লি সুলতানি প্রতিষ্ঠা হয় ত্রয়োদশ শতকে। তার আগেই অবিভক্ত ভারতীয় মানচিত্রের উত্তর পশ্চিমের একটি বড় অংশে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ত্রয়োদশ শতকের প্রথম থেকে ষোড়শ শতকের প্রথম আড়াই দশক পর্যন্ত তিনশো বছর সুলতানী শাসকেরা ভারত শাসন করেন।
• ষোড়শ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে মধ্য এশিয়া থেকে মুঘলরা ভারতে আসে একইসঙ্গে তৈমুরলঙ এবং চেঙ্গিজ খানের মতো দুই দিগ্বিজয়ী বীর বংশের উত্তরাধিকার নিয়ে। পরবর্তী প্রায় আড়াইশো বছর গোটা ভারত তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
• সুলতানী যুগে ভারতীয় ও ইসলামিক সংস্কৃতির মেলবন্ধন শুরু হয় এবং মুঘল যুগে তা আরো প্রসারিত হয়। ইন্দো ইসলামিক মিশ্র সংস্কৃতি ভারত তথা পৃথিবীর ইতিহাসে বেশ কিছু চিরায়ত সম্পদের জন্ম দিয়েছে, যার মধ্যে আছে স্থাপত্য, ভাষ্কর্য, চিত্রকলা, সাহিত্য, সঙ্গীত, খাদ্যাভ্যাস, সমন্বয়ী ধর্মীয় সামাজিক দার্শনিক আন্দোলন (ভক্তিবাদ ও সুফীবাদ) ইত্যাদি।
• ষোড়শ শতকের প্রথম থেকেই বিভিন্ন ইউরোপীয় বণিক শক্তি ভারতে আসতে আরম্ভ করে। ইংরেজরা ছাড়াও ভারতের ছোট ছোট কয়েকটি অঞ্চলে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, দিনেমার ও ফরাসীরা তাদের উপনিবেশ তৈরি করেছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ইংরেজরা ভারতে রাজনৈতিক শাসন শুরু করে ও ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতির বিভিন্ন দিককে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্রভাবিত করে। ইংরেজ শাসনের প্রভাবে বিশেষত ভারতের শহর ও শহরতলিগুলির পূর্বতন চরিত্র অনেকাংশে বদলে যায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পরেও শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতিতে সেই প্রভাবের চিহ্ন সবচেয়ে স্পষ্ট।
ইতিহাসের সূত্রে ভারতে যে বহুবৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক সত্তাটি তৈরি হয়েছে তাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকেই একে মোজাইক পাথরের তৈরি মেঝের সাথে তুলনা করেছেন। সেই মেঝেতে যেমন আলাদা করে পাথরের আকার রং আর প্রধান থাকে না, সবটা মিলে এক নতুন দৃশ্যমানতা তৈরি করে, ভারতীয় সংস্কৃতি তেমনি বহু উপাদানে সমৃদ্ধ হয়ে এক মিশ্র বৈশিষ্ট্য পেয়েছে। আজকে ভারতীয় সংস্কৃতির বিশুদ্ধতার নামে অভারতীয় উৎসকে কোতল করার সঙ্ঘী প্রচার বস্তুত ভারত ইতিহাসের মর্মবস্তুর মূলেই কুঠারাঘাত। আমাদের খাদ্যাভ্যাস, স্তাপত্য, ভাষ্কর্য, চিত্রকলা, সঙ্গীত, পোষাক পরিচ্ছদ, গৃহনির্মাণ প্রণালী, চিন্তা চেতনা – সমস্ত কিছুর মধ্যেই এক মিশ্র সংস্কৃতির রেশ অতি স্পষ্ট।
দর্শন তথা চিন্তা চেতনার বহুত্ববাদ
এবার আসা যাক আমাদের আলোচনার দ্বিতীয় পর্বটিতে। যারা কমিউনিস্ট তথা বামপন্থী মতাদর্শের বিরোধী তাঁরা প্রায়শই একটি অভিযোগ আনেন বস্তুবাদী দর্শন ভারতের মাটির ব্যাপার নয়। ভারতের জলহাওয়াতেই নাকী আছে আধ্যাত্মিকতা, আছে মোক্ষলাভের পরম বাসনা। তাই বস্তুবাদের দর্শন ও রাজনীতি যেমন কমিউনিজম ও বামপন্থা ভারতের জন্য প্রযোজ্য নয়। কথাটির মধ্যে পরিকল্পিত মিথ্যাচার, দর্শনের ইতিহাসগত বিকৃতি কতটা, সেটাই আমরা এখানে দেখানোর চেষ্টা করব।
ভারতীয় দর্শনের ইতিহাস যাঁরা জানেন, তারা সকলেই এইসব কথার হাস্যকর মিথ্যাচারকে ধরে ফেলতে পারবেন। কিন্তু ক্রমাগত প্রচারের কায়দায় মিথ্যাচারকেই তাঁরা ব্যাপক জনমনে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে পারেন। এই কাজে তারা এমনকী ব্যবহার করে নেন স্বামী বিবেকানন্দের “প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য”র মতো বই বা বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠ” এর মতো আখ্যানকেও। সন্দেহ নেই আমাদের নবজাগরণের এই সমস্ত বিশিষ্ট প্রতিভারাও পাশ্চাত্যের বিপ্রতীপে এক ভারতীয় জাতিয়তাবাদী বয়ান নির্মাণে সচেষ্ট হতে গিয়ে সেই ঐতিহাসিক সময়পর্বে সমসত্ততার আবর্তে পড়েছিলেন। ইউরোপের বিপ্রতীপতার তাগিদে প্রাচীন ভারতকে খানিকটা একরৈখিকভাবে তাঁরাও দেখতে এবং দেখাতে চেয়েছিলেন। এই কাজ ইংরেজ এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় ভারততত্ত্ববিদ ও প্রাচ্যবিদেরাও করে গিয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদের সেই পর্বের নির্মাণগুলির প্রয়োজনীয় বিনির্মাণও অনেকদিন আগে থাকতেই শুরু হয়েছে। এডওয়ার্ড সঈদ এর বিখ্যাত গ্রন্থ “ওরিয়েন্টালিজম” বা প্রাচ্যবাদ প্রকাশিত হবার পর এই ধারায় অনেক লেখা গবেষণা হয়েছে। কীভাবে একরৈখিকভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের আদলকে ছকে ফেলা হয়েছিল তা বুঝতে আমরা উনিশ শতকের দুজন মণীষীর লেখার সহায়তা নেব। একজন বঙ্কিমচন্দ্র, অন্যজন বিবেকানন্দ।
বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর আনন্দমঠে সত্যানন্দকে সামনে রেখে মহাপুরুষকে দিয়ে আমাদের বলিয়েছেন,- প্রকৃত হিন্দুধর্ম জ্ঞানাত্মক, কর্মাত্মক নহে। সেই জ্ঞান দুই প্রকার বহির্বিষয়ক ও অন্তর্বিষয়ক। অন্তর্বিষয়ক যে জ্ঞান, সে-ই সনাতনধর্মের প্রধান ভাগ। কিন্তু বহির্বিষয়ক জ্ঞান আগে না জন্মিলে অন্তর্বিষয়ক জ্ঞান জন্মিবার সম্ভাবনা নাই। স্থূল কি, তাহা না জানিলে, সূক্ষ্ম কি, তাহা জানা যায় না। এখন এ দেশে অনেকদিন হইতে বহির্বিষয়ক জ্ঞান বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে - কাজেই প্রকৃত সনাতনধর্মও লোপ পাইয়াছে। সনাতনধর্মের পুনরুদ্ধার করিতে গেলে, আগে বহির্বিষয়ক জ্ঞানের প্রচার করা আবশ্যক। এখন এদেশে বহির্বিষয়ক জ্ঞান নাই – শিখায় এমন লোক নাই; আমরা লোকশিক্ষায় পটু নহি। অতএব ভিন্ন দেশ হইতে বহির্বিষয়ক জ্ঞান আনিতে হইবে। ইংরেজ বহির্বিষয়ক জ্ঞানে অতি সুপণ্ডিত, লোকশিক্ষায় বড় সুপটু। সুতরাং ইংরেজকে রাজা করিব। ইংরেজী শিক্ষায় এদেশীয় লোক বহিস্তত্ত্বে সুশিক্ষিত হইয়া অন্তস্তত্ত্ব বুঝিতে সক্ষম হইবে। তখন সনাতনধর্ম প্রচারের আর বিঘ্ন থাকিবে না। তখন প্রকৃত ধর্ম আপনা আপনি পুনরুদ্দীপ্ত হইবে।”
বহির্বিষয়ক জ্ঞানের চর্চা অর্থাৎ বস্তুবাদ ইউরোপের ব্যাপার এবং অন্তর্বিষয়ক জ্ঞানের চর্চা অর্থাৎ ভাববাদ ভারতীয় ঐতিহ্য – এটা ভারতীয় এবং পশ্চিমী দর্শনের ইতিহাসের নিরিখে সত্যের বড় ধরনের অপলাপ। শুধু বঙ্কিমে নয়, বিবেকানন্দেও এই ধরনের কথা পাই। আমরা দেখে নিতে পারি বিবেকানন্দের “প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য” বইয়ের কয়েকটি লাইন।
“আমাদের দেশে 'মোক্ষলাভেচ্ছার' প্রাধান্য, পাশ্চাত্যে 'ধর্মের'। আমরা চাই কি?—'মুক্তি'। ওরা চায় কি? —'ধর্ম'। ধর্ম-কথাটা মীমাংসকদের মতে ব্যবহার হচ্ছে।
ধর্ম কি?—যা ইহলোক বা পরলোকে সুখভোগের প্রবৃত্তি দেয়। ধর্ম হচ্ছে ক্রিয়ামূলক। ধর্ম মানুষকে দিনরাত সুখ খোঁজাচ্ছে, সুখের জন্য খাটাচ্ছে।
মোক্ষ কি?—যা শেখায় যে, ইহলোকের সুখও গোলামি, পরলোকেরও তাই। এই প্রকৃতির নিয়মের বাইরে তো এ লোকও নয়, পরলোকেও নয়, তবে সে দাসত্ব—লোহার শিকল আর সোনার শিকল। তারপর প্রকৃতির মধ্যে ব'লে বিনাশশীল সে-সুখ থাকবে না। অতএব মুক্ত হ'তে হবে, প্রকৃতির বন্ধনের বাইরে যেতে হবে, শরীর-বন্ধনের বাইরে যেতে হবে, দাসত্ব হ'লে চলবে না। এই মোক্ষমার্গ কেবল ভারতে আছে, অন্যত্র নাই। এইজন্য ঐ যে কথা শুনছে, মুক্তপুরুষ ভারতেই আছে, অন্যত্র নেই তা ঠিক।”
প্রাচীন ভারত সম্পর্কে ইউরোপের বিপরীতে এই ধরনের কল্পিত এক সমসত্ত্ব জগতের যে ধারণা বঙ্কিম বা বিবেকানন্দ তৈরি করছিলেন – আর এস এস এর তাত্ত্বিকেরা তাকেই গ্রহণ ও প্রচার করেন। অবশ্যই প্রেক্ষাপট আলাদা থেকেছে, উদ্দেশ্য আলাদা থেকেছে। কিন্তু ভারতের বহুত্ববাদী দার্শনিক ও শাসননীতির ঐতিহ্য এই একরৈখিকতায় নিশ্চিতভাবে বিকৃত হয়েছে।
ইতিহাসের সত্য এটাই যে ভারতের দর্শনের ইতিবৃত্তে বস্তুবাদ ও ভাববাদ – দু ধরনের চিন্তাই জায়গা পেয়েছে এবং তারা পরস্পরের সাথে বিতর্কেও লিপ্ত হয়েছে। ভাববাদের প্রধান ধারাগুলির মধ্যেও রয়েছে অনেক ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা স্রোত, যারা প্রায়শই একে অন্যের সঙ্গেও তর্ক বিতর্কে রত হয়েছে। এইসব বিতর্কের মধ্যে দিয়েই ভারতীয় দর্শনের সমৃদ্ধ বহুমার্গী আদলটি বিকশিত হয়েছে।
সিন্ধু সভ্যতার যুগের লিপি আমরা এখনো পড়তে পারি নি, ফলে সে যুগের দার্শনিক অবস্থান সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন। তবে সেখানে যে উন্নত নগর পরিকল্পনা, সৌধ নির্মাণশৈলি ও ধাতু শিল্পের পরিচয় মিলেছে – তা নিশ্চিতভাবে জাগতিক জীবনে তাঁদের সুতীক্ষ্ণ নজরকে প্রমাণ করে।
প্রথম যে ভারতীয় গ্রন্থটির সাথে আমরা পরিচিত সেই বেদ এর পাতায় পাতায় এই জাগতিক জীবনে সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষাই ব্যক্ত হয়েছে প্রবলভাবে। প্রার্থণা করা হয়েছে, কিন্তু তা বিবেকানন্দ যেমন লিখেছেন, সেরকম কোনও মোক্ষলাভের বাসনায় নয়, ভালো গাভীর জন্য, ভালো ফসলের জন্য। যে আর্যভাষীরা বেদ রচনা করে তাদের মন্দির বা দেবমূর্তিও ছিল না। তারা ছিল পশুপালক ও যাযাবর। যাযাবর বৃত্তির সূত্র ধরেই তাদের ভারত ভূমিতে আসা, যদিও কোথা থেকে এবং কোন পথ ধরে তা খুব স্পষ্ট নয়। তবে একটি দলে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে নয়, বেশ কয়েকটি দলে কয়েকশো বছর ধরে আর্যভাষীরা ভারতে এসেছিল। সুকুমারী ভট্টাচার্য লিখেছেন, “যাযাবর ছিল বলে এদের কোনও মন্দির ছিল না, বেদী ছিল পরিস্কার করা একটুকরো জমি, যাযাবর বলে কোনও দেবমূর্তিও এদের ছিল না। ঐ বেদীর ওপর দেবতাদের উদ্দেশ্যে স্তব করে নিজেদের অভ্যস্ত খাদ্য পশুমাংস, মধু, দুধ, ঘি ইত্যাদি নিবেদন করত এবং যা তাদের প্রয়োজন তার জন্য প্রার্থণা করত। কী সেই স্তবস্তুতি? দেবতাদের বর্ণনা আর পূর্বে তাঁরা ভক্তদের যা যা দিয়েছেন তার উল্লেখ করে প্রশংসা। আর প্রার্থণা হল – শত্রুজয়, দীর্ঘজীবন, আরোগ্য, স্বাস্থ্য, পুত্রসন্তান, ধনসম্পত্তি (মূলত গোধন) এবং সর্বোপরি খাদ্য।” এটা ছিল মূলত গোষ্ঠীগত জীবনযাপনের যুগ এবং এযুগে বঙ্কিমের অন্তর্জগৎ বিষয়ক কথাবার্তা বা বিবেকানন্দের বলা মোক্ষলাভ ইচ্ছা বা স্যালভেশনের কোনও কামনা আমরা বৈদিক স্তোত্রগুলিতে পাই না। স্যালভেশন বা মোক্ষের ধারণা ও কথাবার্তা এসেছে অনেক পরে এবং ইতিহাসের নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে।
ভারতীয় দর্শনের ভাববাদী ধারাগুলির বস্তুতপক্ষে প্রথম উদ্ভব হচ্ছিল লোহা আবিস্কার পরবর্তী জটিলতর কৃষিসমাজের বিকাশের যুগে, বড় বড় জনপদ গঠনের প্রথম পর্বটিতে। সংহিতা পরবর্তী রচনাসমূহ - ব্রাহ্মণ আরণ্যক ও উপনিষদগুলির মধ্য দিয়ে ভাববাদী দার্শনিক প্রস্থানগুলি বিকশিত হতে শুরু করে। যারা বেদকে জ্ঞানের অভ্রান্ত উৎস বলে মানে, তারা আস্তিক্য দর্শন বলে পরিচিত হয়। এই আস্তিক্য দর্শনগুলি আবার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সূত্র ধরে মোট ছটি আলাদা দার্শনিক শাখা হিসেবে বিকশিত হয়ে ওঠে। এগুলি হল ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, যোগ, পূর্ব মীমাংসা ও উত্তর মীমাংসা বা বেদান্ত। এই আস্তিক্য দর্শনগুলিকেই হিন্দু ধর্ম দর্শনের মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনে রাখার ইহুদী খ্রিষ্টান বা ইসলামের মতো সেমেটিক ধর্মের যেমন একটিই নির্দিষ্ট ধর্মগ্রন্থ আছে, ওল্ড টেস্টামেন্ট নিউ টেস্টামেন্ট এবং কোরান – সেভাবে হিন্দু ধর্মের কোনও একটি মূল গ্রন্থ পাওয়া যাবে না। ভারতীয় দর্শনের অনেকগুলি ধারা আছে তো বটেই, এমনকী হিন্দু ধর্ম দর্শনও সূচনাকাল থেকেই নানাত্বধর্মী, তার অনেকগুলি চিন্তাধারা। এইজন্যেই এমনকী আধুনিক যুগেও বিভিন্ন সময়ে হিন্দু কে এই প্রশ্ন উঠেছে এবং তার ভাষ্যকাররা নানারকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হাজির করেছেন।
আস্তিক্য দর্শনের বাইরেও রয়েছে ভারতীয় দর্শনের অনেকগুলি ধারা। বৌদ্ধ দর্শন, জৈন দর্শন, অজ্ঞান দর্শন, আজীবক দর্শন, চার্বাক দর্শন প্রভৃতি। এর অনেকগুলির মধ্যেই প্রাচীন ভারতীয়দের বস্তুবাদী চেতনা আত্মপ্রকাশ করেছে।
ভারতে বস্তুবাদের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার :
প্রাচীন ভারতের বস্তুবাদী দর্শন প্রসঙ্গে যে দুটি শব্দ আমরা খুব বেশি করে পাই, তা হল লোকায়ত ও চার্বাক। খ্রীষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত সাধারণভাবে লোকায়ত নামেই এই মতটি প্রচলিত ছিল, পরে চার্বাক নামটিই বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে। দার্শনিক আলোচনায় চার্বাক বা লোকায়ত কথাটি বহু ব্যবহৃত। তবে বিভিন্ন দার্শনিক সূত্র বা ভাষ্যে লোকায়ত ও চার্বাক মতের কথা থাকলেও সে সবই মূলত এই মতের বিরুদ্ধবাদীদের লেখা। ভারতীয় দর্শনের আলোচনায় একটি প্রথা ছিল। কোনও দার্শনিক মতের উপস্থাপনা বা আলোচনার আগে অন্য মতগুলির পরিচয় দিয়ে তাকে খণ্ডন করা হত। এই সূত্রেই সেকালের সমস্ত দার্শনিকরা তাদের আলোচনায় লোকায়ত বা চার্বাকপন্থীদের কথা এনেছেন। কিন্তু লোকায়ত বা চার্বাকপন্থীদের নিজস্ব কোনও লেখা আমরা পাই না। এর ফলে লোকায়ত বা চার্বাক দর্শনের আলোচনায় একটি সমস্যাও তৈরি হয়েছে। আমরা যেহেতু বিরুদ্ধবাদীদের ভাষ্যেই মূলত এই দর্শনের কথাগুলি জানতে বাধ্য হয়েছি, এবং সেই উল্লেখের সময়ে প্রায়শই এই মতকে হেয় করা হয়েছে – তাই সেখানে এই মতের জোরের জায়গাগুলির কিছু বিকৃতি এবং কিছু অনুল্লেখ খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। চার্বাকপন্থীদের সাথে অন্যান্যদের দ্বন্দ্ব শুধু দার্শনিক মতের দ্বন্দ্বেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এর একটি রাজনৈতিক দিকও ছিল। কেউ কেউ সে প্রসঙ্গও তুলেছিলেন। আমরা আধুনিককালে আত্মা পরজন্ম ইত্যাদি ধারণা সমন্বিত ভাববাদী দর্শন সমূহকে সমাজতত্ত্বের নিরিখ থেকে যেভাবে ব্যাখ্যা করি, তাতে শাসকশ্রেণির স্বার্থের দিকটি যেভাবে তুলে ধরি, সেই প্রাচীন ভারতেও তেমন বিশ্লেষণ কোথাও কোথাও আমাদের চোখে পড়ে।
এই প্রসঙ্গে জৈন দার্শনিক হরিভদ্র এবং তার ব্যাখ্যাকার মণিভদ্রকৃত আলোচনার প্রসঙ্গ আমরা তুলতে পারি। জৈন দার্শনিক হরিভদ্র বলেছিলেন – যেটুকু নেহাৎ ইন্দ্রিয়গোচর শুধু সেটুকুই হল লোক এবং এই লোকই যাদের কাছে একমাত্র সত্য তারাই লোকায়তিক। অর্থাৎ লোকায়ত মতে প্রত্যক্ষগোচর পদার্থই একমাত্র সত্য। কিন্তু শুধুমাত্র প্রত্যক্ষগোচর পদার্থকে সত্য বলে স্বীকার করার কারণ কী ? ভাষ্যকার মণিদত্ত এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দিয়েছেন এবং সেখানে এর সমাজতাত্ত্বিক রাজনৈতিক দিকটি বেশ স্পষ্টভাবেই চলে এসেছে। মণিদত্ত বলেছেন – লোকায়তিকদের মতে প্রত্যক্ষ পরায়ণতা ধর্মপ্রবঞ্চনার প্রতিষেধক, কেননা অনুমান, শাস্ত্র প্রভৃতির নজির দেখিয়ে প্রবঞ্চক ধর্মের ছদ্মবেশ পড়া ধূর্তেরা সাধারণ মানুষের মনে স্বর্গ প্রাপ্তি ইত্যাদির অন্ধমোহ সঞ্চার করে, এই কারণেই প্রত্যক্ষ ছাড়া অন্য প্রমাণ স্বীকার করা সাধারণ মানুষের পক্ষে নিরাপদ নয়।
[এবম্ অমী অপি ধর্মছদ্মধূর্তা পরবঞ্চনপ্রবণাঃ যৎকিংচিৎ অনুমানাদিদার্ঢ্যম্ আদর্শ্য ব্যর্থং মুগ্ধজনান্ স্বর্গাদিপ্রাপ্তিলভ্য ভোগাভোগপ্রলোভনয়া ভক্ষ্যাভক্ষ্যগম্যাগম্যহেয়োপাদেয়াদি সংকটে পাতয়ন্তি, মুগ্ধধার্মিককান্ধ্যম্ চ উৎপাদয়ন্তি।]
লোকায়ত চার্বাক দর্শন
ভারতীয় দর্শনে বহু পরস্পর বিরুদ্ধ মত সব সময়েই উপস্থিত থেকেছে এবং তাদের মধ্যে নিরন্তর বিতর্ক চলেছে। দার্শনিকেরা নিজেদের মত উত্থাপণের সময়ে সব সময়েই রীতি অনুযায়ী অন্যান্য মতগুলিকে উপস্থাপিত করেছেন এবং তাদের খণ্ডন করেছেন। লোকায়ত মতটি খণ্ডন করার সময়ে বিভিন্ন বিরুদ্ধবাদী দার্শনিক এই ধারা সম্পর্কে সাধারণত নানা বিদ্রূপ করেছেন, কিন্তু সেরকম কিছু উল্লেখও পাওয়া যায় যেখানে এই মত বিদ্রূপ ব্যতীত উল্লিখিত হয়েছে। বিশেষত প্রাক গুপ্তযুগের বিভিন্ন উল্লেখে সাধারণভাবেই অন্যান্য দার্শনিক মতের পাশে লোকায়ত মতের উল্লেখ আমরা দেখতে পাই। ভারতের বহুত্ববাদী দার্শনিক ঐতিহ্যে অন্যান্য ধারার পাশাপাশিই যে চার্বাক লোকায়তপন্থীরা ছিলেন তার একটি প্রমাণ রয়েছে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে, যা আনুমানিক ৩০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে রচিত। কৌটিল্য বলেছিলেন বিদ্যা হচ্ছে চার রকম। ১) অনুমান মূলক দর্শন [আন্বীক্ষিকী] ২) তিন বেদ [ত্রয়ী]৩) কৃষি পশুপালন বাণিজ্য সংক্রান্ত অর্থাৎ অর্থনীতি [বার্তা] ৪) রাজ্যশাসন [দণ্ডনীতি]। অনুমান মূলক দর্শনের মধ্যে কৌটিল্য উল্লেখ করেছেন তিনটি দার্শনিক ধারার কথা, যা সে সময়ে প্রচলিত ছিল। সেগুলি হল – সাংখ্য,যোগ ও লোকায়ত।
চার্বাকদের মত
লোকায়ত বা চার্বাকদের মত কী ছিল তা জানার জন্য এর বিরুদ্ধবাদীদের রচনার দারস্থ হওয়া ছাড়া আমাদের সামনে অন্য পথ খোলা নেই। বিখ্যাত ভারতীয় দার্শনিকদের অনেকেই - কমলশীল, জয়ন্তভট্ট, গুণরন্ত, মাধবাচার্য প্রমুখ – সবিস্তারে পূর্বপক্ষ খন্ডন সূত্রে লোকায়ত চার্বাক মতকে উদ্ধৃত করেছেন, তাই নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা চার্বাক লোকায়ত মতের পরিচয়ের জন্য চতুর্দশ শতাব্দীর বিখ্যাত দার্শনিক মাধবাচার্যের সাহায্য নিচ্ছি। মনে রাখতে হবে মাধবাচার্যের ছিল এক দ্বৈত সত্তা। তিনি ছিলেন প্রতাপশালী বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী। রাজনীতির পাশাপাশি দর্শনের বিশিষ্ট পণ্ডিত ও লেখক।
মাধবাচার্য সর্বদর্শনসংগ্রহ বইতে লোকায়ত বা চার্বাকপন্থীদের মত যেভাবে উদ্ধৃত করেছেন তার পরিচয় -
• স্বর্গ বলে কিছু নেই। মুক্তি বলেও না। পরলোকগামী আত্মা বলেও না। বর্ণাশ্রম বিহিত ক্রিয়াকর্ম নেহাৎ ই নিস্ফল।
• যাদের না আছে বুদ্ধি, না আছে খেটে খাবার মুরোদ, তাদের জীবিকা হিসেবেই বিধাতা যেন সৃষ্টি করেছেন অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, তিন বেদ, সন্যাসীদের ত্রিদণ্ড, গায়ে ভষ্মলেপন প্রভৃতি ব্যবস্থা।
• যজ্ঞে নিহত পশু যদি সরাসরি স্বর্গেই যায়, তাহলে যজমান কেন নিজের পিতাকে হত্যা করে না ? (অর্থাৎ স্বর্গে যাবার এমন সিধে সড়ক থাকতে যজমান নিজের পিতাকে তা থেকে বঞ্চিত করে কেন?)
• কেউ মারা যাবার পর শ্রাদ্ধকর্ম করে যদি তার তৃপ্তি বিধান করা যায়, তবে তো প্রদীপ নিভে যাবার পর তেল ঢেলেও তার শিখা প্রদীপ্ত করা যেত।
• যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তার পাথেয় পিণ্ড কল্পনা করা বৃথা, কেননা তাহলে ঘর ছেড়ে কেউ গ্রামান্তরে গমন করলে তার সাথে পাথেয় না দিয়ে ঘরে বসে তার উদ্দেশ্যে পিণ্ড দিলেই তো হত।
• যিনি স্বর্গে গেছেন তার উদ্দেশ্যে দান নেহাৎ ই বৃথা, কেননা তাহলে যিনি প্রাসাদের ওপর উঠে গেছেন তাঁর উদ্দেশ্যে মাটিতে বসে দান করলেও তো তাঁর তৃপ্তি হবার কথা।
• যতদিন বেঁচে আছ সুখে বাঁচার চেষ্টা কর, ধার করেও ঘি খাবার ব্যবস্থা কর। লাশ পুড়ে যাবার পর আবার কেমন করে ফিরে আসবে ?
• জীব যদি এই দেহ ছেড়ে পরলোকে যায়, তাহলে বন্ধুবান্ধবদের টানে সে আবার ফিরে আসে না কেন ?
• ব্রাহ্মণদের জীবিকা হিসেবেই মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধকর্ম ইত্যাদির বিধান এসেছে। এছাড়া এসবের তো আর কোনও উপযোগিতা নেই।
• মাংস খাবার লোভেই এসেছে পশুবলীর বিধান।
• যারা তিন বেদ রচনা করেছিলেন তাঁরা নেহাৎ ই ভণ্ড, ধূর্ত ও চোর। অর্থহীন মন্ত্র ধূর্ত পণ্ডিতদের বাক্যমাত্র।
লোকায়ত মতের বিরুদ্ধতা যারা করেছেন তারা দার্শনিক আলোচনার দিক থেকে এই অভিযোগ এনেছেন যে লোকায়ত দার্শনিকেরা কেবল প্রত্যক্ষ প্রমাণের ওপর নির্ভর করেন, কিন্তু দর্শন আলোচনার যে অন্যতম ভিত্তি সেই অনুমানকে তারা কোথাও গুরূত্ব দেন নি। ধোঁয়া যে আগুনকে চিহ্নিত করে এই অনুমান না মানলে বস্তুজগৎ সম্পর্কেই সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু লোকায়ত বা চার্বাকপন্থী দার্শনিকেরা কোনও প্রকার অনুমানকেই মানেন নি, এই অভিযোগ ঠিক নয়। বৌদ্ধ দার্শনিক শান্তরক্ষিত এবং তাঁর ব্যাখ্যাকার কমলশীল বিস্তৃত পরিসরে লোকায়তমত খণ্ডনের চেষ্টা করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি পুরন্দর নামে এক চার্বাকপন্থী দার্শনিকের মত উদ্ধৃত করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে পুরন্দর বলছেন – চার্বাকরাও লোকপ্রসিদ্ধ অনুমান স্বীকার করেন, তবে কেউ যদি লৌকিক পথ অতিক্রম করে কোনওকিছু অনুমান করতে চান তবে চার্বাকরা তা স্বীকার করবেন না। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বা পার্থিব বিষয়ে অনুমানের উপযোগিতা চার্বাকপন্থীরা স্বীকার করেন, কিন্তু লোকোত্তর বিষয়ে অর্থাৎ পরকাল কর্মফল ইত্যাদি বিষয়ে কোনও মত অনুমানের ভিত্তিতে প্রমাণ করা যায় না। পুরন্দর প্রমুখ লোকায়ত দার্শনিকেরা এভাবে আধুনিক বস্তুবাদী চিন্তার কাছাকাছি চলে আসেন।
নাজী জমানায় হিটলারের প্রচারসচিব গোয়েবলস এর নাম প্রবাদে পরিণত হয়েছিল নির্জলা মিথ্যাকে প্রচার মাধ্যমে সর্বক্ষণ আউড়ে যাবার মধ্যে দিয়ে এক বানিয়ে তোলা সত্য নির্মাণের কারিগর হিসেবে। বিজেপি আর এস এস এর কমিউনাল প্রচারে একদিকে তার নিজের প্রচার যন্ত্রগুলি যেমন সামিল, তেমনি সামিল তার কর্পোরেট বন্ধুদের হাতে থাকা মিডিয়াগুলি। এই সমস্ত প্রচারযন্ত্র থেকে দর্শন ইতিহাস বা রাজনীতি অর্থনীতির সত্যগুলিকে বারবার ঘুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট রাজনঈতিক স্বার্থে। প্রচারের ঢক্কানিনাদে জনগণকে বিভ্রান্ত করার বিরাট আয়োজন তারা সংগঠিত করে ফেলেছে। ভারতীয় ফ্যাসিবাদের এই জমানাকে প্রতিহত করতে লড়াই চালাতে হবে বিভিন্ন ফ্রন্টে। একদিকে যেমন আন্দোলন সংগ্রামের ময়দানে তার মোকাবিলা করতে হবে, তেমনি তার বিভিন্ন মিথ্যা প্রচারকে লাগাতার উন্মচিত করে যেতে হবে ইতিহাসের তথ্য ও সত্যকে সামনে এনে। এজন্য বিকল্প গণমাধ্যম তৈরির কাজ ও নিজেদের জ্ঞানচর্চাকে প্রসারিত করার কাজ জোরকদমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আসুন সে কাজে দৃঢ়তার সাথে সামিল হই।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×