somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিসিএস-এ কোটা পদ্ধতি বাতিলের আড়ালে মুক্তিযোদ্ধাদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার!

১১ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৩ মে ২০০৯ আমি এই সামহোয়ার ইন ব্লগে প্রথম পোস্ট লিখি আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে নিয়ে। ঐ পোস্টের শেষ অংশে মন্তব্য করেছিলাম-
''একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, মুক্তিযোদ্ধারা ভাড়াটে সৈনিক ছিলেন না যে যুদ্ধ শেষে তাদের প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে হবে। এ যুদ্ধ ছিল মায়ের মত দেশকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য। মাকে বাচাঁনোর বিনিময়ে কোন সন্তান কি কিছু চাইতে পারে? একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে স্বাধীন দেশের চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে?
সত্যিকারের দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা আসলেই তখনও কিছু পাওয়ার আশা করেননি, এখনও করেন না। তাঁরা আমৃত্যু মাথা উচুঁ করে বলতে চান, এই দেশটাকে আমি স্বাধীনতা এনে দিয়েছি।
এখন পত্রিকার পাতা খুললে (বিশেষ করে নভেম্বর-মার্চ) দেখা যায়, অমুক মুক্তিযোদ্ধা একজন রিকশাচালক, অমুক দিনমজুর, অমুক মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না টাকার জন্য।
আমার বাবার মতে, মুক্তিযুদ্ধে যেসব রিকশাচালক বা দিনমজুর অংশ নিয়েছেন যুদ্ধ শেষে তাঁরা কী সবাই সরকারী চাকরি আশা করেছিলেন, নাকি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে তাদের কে কোন শর্ত দেয়া হয়েছিল?
আসলে গত বিশ বছর ধরে আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ব্যবহার করে আসছে, এক দল ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অমুক অমুক দেয়া হবে প্রতিশ্রুতি দেয়, আবার অন্য দল এসে শুরু করে তার চেয়ে বেশি। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে চলছে টানাহেঁচড়া। এর ফলে সত্যিই কি মুক্তিযোদ্ধাদের কোন লাভ হচ্ছে, নাকি নিজেদের সম্মান তাঁরা নিজেরাই ভুলুন্ঠিত করছেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে 'মাছের মায়ের পুত্রশোক' এর শেষ কোথায়?''

আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারী চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা তিন বছর বাড়িয়ে নিতে পেরেছেন। এই বছর শেষে অবসরে যাবেন। কিন্তু আমরা তিন ভাইবোন কেউই বাবার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ব্যবহার করে কোথাও কোন সুযোগ গ্রহণ করিনি। বিনীতভাবে বলতে চাই, সত্যিকারের মেধা থাকলে কোন সুপারিশ প্রয়োজন হয় না। আর বাংলাদেশে সত্যিকারের মেধাবীদের খুব কম অংশই বিসিএস-সহ যে কোন সরকারী চাকরির অপেক্ষায় থাকে।
আমার প্রথম পোস্টে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার নামে তাদের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম। গতকাল তারই একটা নমুনা দেখতে পেলাম। পত্রিকায় ও ব্লগে দেখলাম, শাহবাগে বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবী যারা করছে, তারা কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করে বক্তব্য ও শ্লোগান দিচ্ছে। ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে সেটা অবশ্যই চরম ধৃষ্টতার। এর পিছনে জামায়াত শিবিরের ইন্ধন থাকলেও অবাক হব না, কারণ জামায়াত শিবিরের লোকজন মুখে যতই ধর্মের দোহাই দিক, যতই ভাল মানুষের ভান করুক না কেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তারা তাদের শীর্ষনেতাদের মতই অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা। ঠিক যেমন ঘুষখোরের ছেলেকে হারামখোর বললে তার তিতা লাগে।
গতকালই প্রথম শুনলাম বিসিএস-এ মুক্তিযোদ্ধা কোটা নাকি ৩০ ভাগ। আবার মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতি কোটাও নাকি আছে। তখনই মনে হল, কাজটা ঠিক হয়নি। ৫ ভাগের বেশি কোন কোটা থাকা ব্যক্তিগতভাবে উচিত মনে করি না। কিন্তু এর জন্য তো মুক্তিযোদ্ধারা দায়ী নয়। সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য এই অপকর্মটি করেছে। কিন্তু তারপরও কথা হল, যখন বিসিএস পরীক্ষার এই নতুন কোটা পদ্ধতির ঘোষণা দেয়া হল তখনই কেন প্রার্থীরা আন্দোলন শুরু করল না?
শেষকথা হল, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটুক্তি করার ধৃষ্টতা দেখানো এবং কথায় কথায় শাহবাগ তথা রাজধানী শহর ঢাকা অচল করে দেয়ার সমস্ত দায়ভার আওয়ামীলীগ সরকারকেই নিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×