somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামায়াতে ইসলামী নয়, জামায়াতে মোনাফেক!

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বন্য কুকুর, শেয়াল, হায়েনা শ্রেণীর প্রাণী নাকি যখন দলবদ্ধভাবে থাকা নিরীহ প্রাণীদের শিকার করার সাহস পায় না তখন ওরা ওদের চেয়ে নৃশংস প্রাণীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে নিরীহ প্রাণী শিকারে। তারপর ঐ শিকারের উচ্ছিষ্টাংশ খেয়ে জীবনধারণ করে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে জামায়াতে ইসলামী নামক রাজনৈতিক দলটির ভূমিকা সেই কুকুর, শেয়াল, হায়েনাদের মত যারা রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্‌ বেশে একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীকে পথ দেখিয়ে এনেছিল মুক্তিবাহিনী ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে। একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী পরাজিত হয় ঠিকই, কিন্তু কুচক্রী, মেরুদন্ডহীন রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্‌রা আগাছা হিসেবে থেকে যায় এই মাটির বুকেই। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবর রহমান দেশের লাখো নারী-পুরুষ, মেধাবী সন্তানদের মৃত্যুর জন্য দায়ী রাজাকারদের তাৎক্ষণিক ও উপযুক্ত বিচারে ব্যর্থ হন। আর এই লুন্ঠন ও হত্যাকারীরা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামক রাজনৈতিক দল গঠন করে বাংলাদেশের মাটিতে পুর্নবাসিত হয়।
জামায়াতের শীর্ষ নেতারা আজ পর্যন্ত তাদের কৃতকর্মের জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত হয়নি, ক্ষমা প্রার্থনা তো দূরের কথা। এমনকি তারা স্বীকারই করে না যে একাত্তরে তারা কোন ভুল করেছে। বরং প্রায়ই তারা দম্ভোক্তি করে, যা করেছে ঠিকই করেছে, পাকিস্তান ভাঙ্গা উচিত হয়নি ইত্যাদি। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে নাবালক কর্মী পর্যন্ত একাত্তর সম্পর্কে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এমন একটি গোষ্ঠী এখনও স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বিচরণ করে একটাই কারণে- সেটা হল এরা এদেশের অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত কিন্তু ধর্মপ্রাণ বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে ইসলামের রক্ষকের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়ে আছে। অথচ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যদি যথেষ্ঠ শিক্ষিত হত, একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখত- তাহলে দেখতে পেত এই জামায়াতে ইসলামী আসলে কোন ইসলামী দল নয়, বরং মোনাফেকের দল। এদের একটাই উদ্দেশ্য- দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে একাত্তরে হারের প্রতিশোধ নেয়া।
জামায়াতে ইসলামী কেন মোনাফিকের দল তার অজস্র উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। তবে এদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডগুলো খেয়াল করলে আমার মত অনেকেই ক্রোধে জ্বলে উঠবেন কিভাবে এরা ইসলামের নামে ধর্মবিরোধী কাজে লিপ্ত-
• যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির গত ৫ দিন ধরে হরতাল তান্ডব চালাচ্ছে। গাড়ী ভাঙছে, ককটেল ফাটাচ্ছে, রাস্তায় আগুন ধরাচ্ছে, পুলিশের উপর হামলা করছে। অন্য সময় হলে এটা রাজনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে তারা জায়েজ করতে পারত- কিন্তু আশ্চর্য হই তখনি যখন চিন্তা করি এটা রমযান মাস। এই মাসটি মুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণই ইবাদত-বন্দিগীর মাস। আমাদের ইসলাম ধর্মে এই মাসে সমস্ত অনৈসলামিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থেকে শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের চেষ্টা করার কথা। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী এমনই এক বর্বর, মোনাফেকের দল যারা এই মাসে তাদের কুলাঙ্গার নেতাদের বাঁচাতে সহিংসতার জন্ম দিয়ে অনেক তাজা প্রাণের মৃত্যুর উপলক্ষ তৈরি করেছে, সারা দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এদেশে লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ আছেন যারা প্রতিদিনের রোজগারে সংসার চলে। লাখো রোজাদার আছেন যাদের প্রতিদিনের আয় থেকে সেহরী, ইফতার ও সংসারের অন্যান্য খরচ বহন করতে হয়। টানা ৪ দিন হরতালের কারণে বিশেষ করে শহরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো কিভাবে রোযা রাখছে সেটা ঐ মোনাফেকের দল কখনও চিন্তা করে দেখেছে?
• জামায়াত-শিবির নিজেরা আন্দোলন করে এই সরকারের অবস্থান বিন্দুমাত্র টলাতে না পেরে এখন নানা ভয়াবহ কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। শিশুদের ভিটামিন খাওয়ানো নিয়ে গুজব সৃষ্টি করছে, চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা গেছে বলে সহজ, সরল মানুষদের প্রতারিত করছে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের উপর আক্রমণের জন্য মসজিদের মাইকে মিথ্যা কথা বলে সাধারণ জনগণকে উত্তেজিত করে তুলছে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হল যে হেফাজতে ইসলাম অর্থাৎ কওমীদের সাথে জামায়াতের দা-কুমড়া সম্পর্ক ছিল সেই রাজনীতিকে অনভিজ্ঞ কওমী আলেম ও ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে রাজনীতির মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। যার ফলে অনেক তরুণ প্রাণ অকালে ঝরে গেছে, সারাদেশে একটা ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংস কর্মকান্ড করেছে জামায়াত-শিবির ও আওয়ামীলীগ কর্মীরা, অথচ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে নিরীহ কওমী আলেম ও ছাত্ররা। ৫ মে গভীর রাতে পুলিশী অভিযানে দুই থেকে আড়াই হাজার হেফাজতে ইসলামীর কর্মীর মৃত্যু উদ্ভট গুজব ছড়িয়ে মানুষকে যেমন ভয়াবহ আতঙ্কিত করেছে, তেমনি পরবতীর্তে সেটা প্রমাণ করতে না পেরে বিএনপির শীর্ষ নেতারাও জাতির কাছে অপদস্ত হয়েছেন।
• জামায়াত-শিবির তাদের শীর্ষ নেতাদের বাঁচাতে এমন কোন কাজ নেই যেটা করতে পারে না। শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পরও যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় আটকানো যাচ্ছে না, তখন জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করবে সেটা অবিশ্বাস করার কারণ নেই। যার ফলে সরকারের এক উপদেষ্টার সাথে জামায়াতের আইনজীবীর বৈঠকের খবর ইতিমধ্যেই মিডিয়ায় এসেছে। আগামী নির্বাচনের আগে জামায়াত আরও কত খেলা দেখাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। এমনকি বিএনপিকে ছাড়াই জামায়াত আওয়ামীলীগের সাথে আতাঁতের নির্বাচনে অংশ নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
• এদেশে জামায়াত-শিবির বিষবৃক্ষ। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নামে প্রকাশ্য দুর্নীতির অভিযোগ নেই ঠিকই, কিন্তু ব্যাংক, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে ইসলামের দোহাই দিয়ে অর্জিত অর্থে জামায়াত নেতারা প্রায় প্রত্যেকেই বিলাসী জীবন যাপন করেন। এদের সন্তানরা পড়াশোন করে ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন উন্নত দেশে। দেশের এই সহিংসতা, হানাহানি কিছুই তাদের স্পর্শ করে না। অথচ ডেসটিনির মত এদেশের হাজারো তরুণ, যুবকদের সামান্য আর্থিক সুবিধা দিয়ে শিবিরের ছত্রছায়ায় জামায়াত নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণ করছেন। শিবিরের ব্রেইনওয়াশড তরুণরা বুঝতেও পারে না- কিভাবে তাদের রক্তের বিনিময়ে জামায়াত নেতারা আখের গুছিয়ে নিচ্ছে।
পবিত্র রমযান মাসে গত কয়েকদিনে যত রক্তপাত, প্রাণহানি ঘটেছে তার মূল কারণ হল জামায়াত-শিবিরের হরতাল। বিএনপি যদি জামায়াতের ঘৃণ্য কৌশলকে অবলম্বন করে সামনে এগোতে চায়, তবে সেটা হবে চরম ভুল। মানুষ অচিরেই জামায়াতে থুথু দিবে, সেই থুথু থেকে বিএনপিও বাঁচতে পারবে না, মাঝখান থেকে লাভবান হবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×