somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচন উত্তর একটা বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাবিনা আহমেদের বিশ্লেষণ জাকসু নির্বাচনের ফলাফলের পরে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের সংস্কৃতির রাজধানী বা ‘সাংস্কৃতিক মক্কা’ বলে অভিহিত করা হয়। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মুক্তচিন্তার পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো দেশের সবচেয়ে জীবন্ত অংশ। এটি শুধু শিক্ষার কেন্দ্র নয়, বরং গান, নাটক, কবিতা এবং সামাজিক আন্দোলনের উৎস। এই পরিচয়ের আলোকে, জাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু বা JUCSU) নির্বাচনের ফলাফল একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।

জাকসু নির্বাচনের ফলাফল আজ বিকেলে ঘোষণা হয়েছে। এটি ৩৩ বছর পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত নির্বাচন, এবং ফলাফলের বার্তা স্পষ্ট: ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল মোট ২৫টি পদের মধ্যে ২১টিতে জিতেছে, যা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চেতনার জয় ঘোষণা করছে।

মূল ফলাফলের সারাংশ:
• সহ-সভাপতি (ভাইস প্রেসিডেন্ট): আব্দুর রশিদ জিতু (স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেল)।
• সাধারণ সম্পাদক (জেনারেল সেক্রেটারি): মাজহারুল ইসলাম (সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট)।
• অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে শিবির প্যানেলের দাবি শক্তিশালী, যেমন দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি সহ মোট ২১টি পদ। শিবিরের বাইরে মাত্র ৪টি পদে অন্য প্যানেল বা স্বতন্ত্ররা জিতেছে।

মোট ভোটার ছিল ১১,৯১৯ জন, এবং ৬৭.৯% (প্রায় ৮,০১৬ ভোট) অংশগ্রহণ করেছে। ফলাফল ঘোষণায় ৪৮ ঘণ্টার দেরি হয়েছে ম্যানুয়াল গণনা, অনিয়মের অভিযোগ এবং একজন শিক্ষকের মৃত্যুর কারণে।

এই ফলাফলের বার্তা স্পষ্ট: জাবির শিক্ষার্থীরা নিপীড়নবিরোধী চেতনা ও সামাজিক সচেতনতার পক্ষে। সংস্কৃতির মক্কায় শুধু গান-নাচ নয়, রাজনৈতিক সচেতনতা রক্ষা তাদের দায়িত্ব আর কর্তব্য।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপির শক্ত ঘাটি, বিশেষ করে ভিসি, প্রভিসি, বিরাট শিক্ষক প্যানেল সবাই বিএনপির। এবং তাদের তত্ত্বাবধানে শিবিরের জয়, নির্বাচনে কারচুপির প্রশ্নকে দুর্বল করে দেয়।

বিএনপি নির্বাচনের দিনে একেবারে শেষ সময়ে নির্বাচন বয়কট তাদের দূর্বলতার পরিচয় দেয়। রাজনীতি করতে হয় হৃদয়টাকে বিরাট করে, জিততে হয় বিজয়ীর মতো, হারতেও হয় বিজয়ীর মত। কারণ এই এক নির্বাচনে দিন শেষ হবে না। সামনে আরও অনেক নির্বাচন হবে। আজকের বর্জন ছাত্ররা পরবর্তী নির্বাচনেও মনে রাখবে। যারা তাদের পক্ষে এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলো, তারা এই বর্জনকে তাদের সাথে বেইমানি হিসাবে নিবে।

ঢাবি-জাবিতে শিবিরের ঐক্য ফ্রন্ট যদি জয়লাভ করতে পারে, চ্যান্সেস আর যে চবি, রাবি, খুবিতেও তার ভালো পারফরমেন্স দেখাবে। আর যদি দেখায় সেটা একটা কঠিন বার্তা দিবে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে, ইনক্লুডিং জামায়াত।

আমার চোখে জামায়াত আর শিবির এক নয়, তাদের ফিলোসফিও এক নয়। শিবির ইনক্লুসিভ, প্রোগ্রেসিভ, অনেক ক্ষেত্রে লিবারেল। কিন্তু জামায়াত শিবিরের মডেল এখনও পুরাপুরি ফলো করে কিনা আমার কাছে তা স্পষ্ট নয়। এই যে স্পষ্ট না তাই তাদের ভোট নেগেটিভ প্রতিফলন ঘটাবে। আর যদি শিবিরের মডেল ফলো করতে পারে তাহলে তারা ভালো কিছু দেখতে পারবে আগামী নির্বাচনে। নাহলে শিবিরের জয়কে জামাতের নিজেদের জয় ভাবার কারণ নাই। শিবিরের পক্ষে সবার মন জয় করা যতটা সহজ, জামায়াতের জন্য ততটা কঠিন।

বাগছাসের পরাজয় নিয়ে এনসিপিকেও তাদের ড্রয়িং বোর্ডে বসতে হবে। জুলাই কাণ্ডারীরা কেন ফেলো শিক্ষার্থীদের দ্বারা প্রত্যাক্ষিত হলো তা অবশ্যই তাদের ভাবনার বিষয়। এটা নিয়ে তাদের সিরিয়াস আলোচনায় বসতে হবে, নিজেদের মধ্যে মুক্ত আলোচনা করতে হবে, অনেক ক্যালকুলেশন করতে হবে। রাজনীতি কখনোই সরল রেখায় চলে না। মাল্টিমিডিয়ার এই যুগে রাজনীতির অনেক ধারা আছে। শিবির ঘষে ঘষে যা পারফেকশনাইজ করেছে। তাদের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

বিএনপিকে অনেক বলেছি, আর বলব না। তাদের ইগো অনেক বেশি, তাই করবে যা এতদিন করেছে, আর করতেই থাকবে। গুড লাক!!

গত ১৭ বছরে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, হলে হলে ছাত্রলীগের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর যে ক্ষোভ আর ভয় আছে তার প্রতিফলন আমরা দেখলাম ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে। যেই পুরাতন পথে রাজনীতি করবে, তাকেই জনগণ ভোটের মাধ্যমে জবাব দিবে। এটাই প্রকৃত ডেমোক্রেসি আর ফ্রী এন্ড ফেয়ার নির্বাচনের সৌন্দর্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×