somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক দিকে রোজা, আরেক দিকে হইল পূজা! আসলে কি?

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামায়াত নেতা এডভোকেট শিশির মনিরের গত ০১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সিলেটের একটি পূজা মন্ডপে দেয়া বক্তব্য নিয়ে এখন ফেইসবুকে সক্রিয় কওমী ঘরানার আলেম এবং একটিভিস্টদের প্রোফাইল/পেইজগুলো গরম। তাদের বক্তব্য, শিশির মনির রোজা এবং পূজাকে এক বলেছেন। আসলেই কি তাই?

প্রথমেই বলে নিচ্ছি, শিশির মনির পূজা মন্ডপে উপস্থিত হয়ে অবশ্যই বড় ধরণের গোনাহ করেছেন। তিনি যেন এই গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেতে পারেন, সেজন্য ওলামাগণ তাকে নসীহাহ দিতে পারতেন।

চলুন দেখি শিশির মনির আসলে কি বলেছিলেন। আমি এ ব্যাপারে দেয়া তার ব্যাখ্যার ভিডিওটি লিঙ্ক দিচ্ছিঃ https://www.facebook.com/reel/1304242701381572

মূল বক্তব্যের ভিডিওটির লিঙ্কঃ Click This Link

ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,
“মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম, হিন্দু মুসলমান
মুসলিম তার নয়ন মনি, হিন্দু তাহার প্রাণ”
একটাকে আলাদা করলে আরেকটা বাঁচবে না। আমরা একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। এপিঠে আছে শাপলা, ওপিঠে আছে আনারস। এইটাই হইল, এক দিকে রোজা, আরেক দিকে হইল পূজা! এই রোজা আর পূজা মিলে বাংলাদেশ!

আমার বিবেচনায়, উনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, এই বাংলাদেশে মুসলমান এবং হিন্দুরা এমনভাবে সহাবস্থান করেন যে একদিকে মুসলমানরা যেমন রোজা পালন করে থাকেন একটা বড় ধর্মীয় বিধান হিসেবে উৎসব মূখর পরিবেশে, অন্যদিকে হিন্দুরা তাদের পূজা উৎসব ঘটা করে পালন করে থাকে। ওনার বক্তব্য কখনোই এটা বোঝায় না যে তিনি রোজা এবং পূজা কে একই বলেছেন। অথচ কওমী ঘরানার কিছু আলেম এবং অনলাইন একটিভিস্ট নির্বিচারে তার ওপর এই অপবাদ দিয়ে যাচ্ছেন। এটা সুস্পষ্টভাবে তার ওপর জুলুম। অথচ দ্বীনি ভাই হিসেবে তার ভুল সংশোধন করে দেয়া উচিৎ ছিল। চাইলে তার সাথে সরাসরি কথা বলে শরয়ী বিধানটি জানিয়ে তওবা করতে বলা যেত পূজা মন্ডপে উপস্থিত হওয়ার অপরাধে।

এবার আসি উত্তরা ১২ নং সেক্টর মসজিদের খতিব এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমীর গত ১০ অক্টোবর ২০২৫ এর জুমার খুতবার সম্পর্কে। যতদূর শুনেছি, তিনি অন্যান্য বক্তব্যের সাথে জামায়াতে ইসলামীর নাম উল্লেখ করে তাদের ভোট না দিতে বলেছেন। আমি ওনার পুরো বক্তব্যটি কোথাও পাইনি। সরাসরি জামায়াতের নাম নিয়ে সমালোচনা করাতেই মূলতঃ জামায়াতের পক্ষ থেকে মসজিদ কমিটির সভাপতি/সেক্রেটারি বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। গত ১৭ অক্টোবর ২০২৫ জুমার খুতবায় খতিব সাহেব সেই চিঠি প্রত্যাখ্যান করে মুসল্লিদের সামনে ছিড়ে ফেলেছেন। তার এই ভূমিকাকে অনেকেই সাহসী ভূমিকা হিসেবে দেখে প্রসংশায় ভাসাচ্ছেন। কিন্তু, আদতে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে মসজিদের মিম্বার থেকে কোন রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ করে বৈধ সমালোচনাও কতটা বাস্তব সম্মত? এটা কি হেকমতের পর্যায়ে পড়ে? তিনি কি সমালোচনার করার ক্ষেত্রে রাসূল (সঃ) এর সুন্নাহর অনুসরণ করেছেন? কওমী ওলামাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্পষ্ট বক্তব্য আছে যে “বিএনপি শরীয়াহ আইনে বিশ্বাস করে না”।

এবার আমার কওমী ওলামা এবং খতিবদের কাছে প্রশ্ন, আপনারা কি এই বক্তব্যের জন্য কখনো মসজিদের মিম্বার থেকে সমালোচনা করেছেন বা ভবিষ্যতে জুমা’র খুতবায় এ বিষয়ে কথা বলবেন? আওয়ামী লীগ আমলে জালিমের বিরুদ্ধে জুমার খুতবায় প্রকাশ্যে বলেছিলেন কোন ব্যক্তি বা দলের নাম নিয়ে? বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নাম নিয়ে খুতবায় কথা বলেন? নাস্তিকদের নাম নিয়ে খুতবায় কথা বলেন?

যদি না করে থাকেন, তাহলে বুঝব, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আপনাদের এই বক্তব্য রাজনৈতিক আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। ২৪ এর জুলাইয়ের পরে কোথায় আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা, সেখানে আপনারা ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছেন। আবার শোনা যাচ্ছে, সেক্যুলার দলগুলোর সাথে আসন ভাগাভাগির আলোচনাও চলে মাঝে মাঝে। তখন দ্বীনের কোন ক্ষতি হয় না মোহাতারাম?

আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা এক হোন। একজন সাধারণ মুসলিম হিসেবে সেই আর্জি জানিয়ে গেলাম। অবশ্যই আল্লাহ আপনাদের কার্য কলাপ দেখছেন এবং আপনাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর সামনে আপনাদের জবাবদিহিতা করতে হবে। গত ৫৪ বছরে ইসলামিক দলগুলো রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারেনি, অথচ এই দেশের নাকি ৯০% মুসলমান! একটু চিন্তা করেন, কেন এই অবস্থা…
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১১:৫৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×