somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সৈয়দ মেহেদী হাসান
পেশায় সাংবাদিক। ‘জল পরীর ডানায় ঝাপটা লাগা বাতাস’ (২০১৩), ‘সাদা হাওয়ায় পর্দাপন’ (২০১৫) দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। তার লেখা নাটকের মধ্যে ফেরা, তৎকালীন, আদমের সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির জন্য ২০১৫ সালে হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হন।

বরিশালে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ড্রোন, প্রশাসনের নজরদারী কাম্য

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ড্রোন ও দূরনয়িন্ত্রতি খেলনা উড়োজাহাজ ওড়ানোর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে। আর খেলনা ড্রোন ও উড়োজাহাজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বানিজ্য মন্ত্রনালয়। কয়েকদিন পূর্বে খেলনা ড্রোন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করে। তখন নজরে আসে এসব খেলনা সামগ্রি ব্যবহার করে তারা হামলার পরিকল্পনা করছিল। অথচ এসব খেলনা রুপের রিমোট চালিত ড্রোন যন্ত্র বা উড়োজাহাজ বরিশালের দোকানগুলোতে চাইলেই পাওয়া যায়। এসব বেশিরভাগই চীনে তৈরি, আনা হচ্ছে শিশুদের খেলনা বলে। কিন্তু এসব খেলনা ব্যবহার করে জঙ্গিগোষ্ঠি নাশকতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে পারে কারো নজরের বাইরে থেকে। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির ব্যাপারে কোন ধরনের সচেতনতা নেই বরিশাল প্রশাসনের। নেই নিয়ন্ত্রনের কোন উদ্যোগ। ফলে বরিশালে এসব রিমোট চালিত যন্ত্র ব্যবহার করে মিশন হাসিল করতে পারে জঙ্গিগোষ্ঠি, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেবার মত নয়।


যদিও প্রশাসন থেকে দাবী করা হয়েছে, ড্রোন বরিশালে বিক্রি হয় বলে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই। আর খেলনা উড্ডয়নের অনুমতি সরকারেরই দেয়া বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আওলাদ হোসেন। উল্লেখ্য, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বিনা অনুমতিতে দেশের আকাশে যে কোনো ধরনের মনুষ্যবিহীন যানের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বেবিচক। যেসব স্থানে বিমানবন্দর নেই, সেখানে বেবিচক ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ড্রোন বা খেলনা উড়োজাহাজ ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া শিশুদের খেলনা উড়োজাহাজ আমদানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিরও বিধান রয়েছে। অবশ্য এ নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই দেশে ঢুকে পরছে খেলনা স্বরুপ ড্রোন ও উড়োজাহাজ। বরিশালেও সেসব পাওয়া যায় যত্রতত্র।



সরেজমিন দেখা যায়, বরিশালের চকবাজার, কাকলির মোড়স্থ সোবাহান কমপ্লেক্সের খেলনার দোকান, সদর রোড, কাঠপট্টি রোডসহ খেলনাসামগ্রি বিক্রির প্রায় সব দোকানেই এসব পাওয়া যায়। এসবের কিছুতে ক্যামেরাযুক্ত, যা উপর থেকে ছবি তুলতে সক্ষম। আবার যেগুলোতে ক্যামেরা নেই সেসবে ক্যামেরা সংযুক্ত করা যায়। এসব আকাশজানের দরদামও হাতের নাগালের মধ্যে। দোকানীরা জানিয়েছে, ড্রোন এবং উড়োজাহাজ সরাসরি চীন থেকে আমদানী করা হয়। দেশেও তৈরী হয় কিছু। তবে দেশে তৈরী ড্রোন বা উড়োজাহাজ বরিশালের কোন দোকানেই পাওয়া যায়নি।


সরেজমিনে এমনটাই দৃশ্যমান হয়। ক্যামেরাছাড়া ড্রোন বরিশাল নগরীতে বিক্রি হচ্ছে ২২শ’ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকায়। অন্যদিকে ক্যামেরাসহ ড্রোনগুলোর দাম সাড়ে চার হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। চালকবিহীন ক্ষুদ্রাকৃতির এ আকাশযান প্রায় ৪০ থেকে ৪০০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে উড়তে পারে। কাকলির মোড়স্থ ‘মমস্ এন্ড কিডস’ এর এক বিক্রেতা জানায়, প্রায় এককেজি ওজনের দ্রব্য বহন করে ১০তলা বিল্ডিং’র উচ্চতায় উড়তে পারে এবং অনেক দূর থেকে নিয়ন্ত্রন করা যায়। নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় ৫ মাইল দূর থেকেও। এ ছাড়া কিছু ক্ষুদ্রাকৃতির ড্রোনও পাওয়া যায়। যেগুলো ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত উড়তে পারে। এগুলোর দাম ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। চিন্তার বিষয় হলো, শিশু খেলনার নামে নগরীতে দেদারছে বিক্রি হওয়া দূরনিয়ন্ত্রিত এসব ড্রোন কোথায়, কারা ব্যবহার করছে-সে সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট থানার কাছে। এমনকি এ সংক্রান্ত তথ্যে অকিবহাল থাকার প্রয়োজনও মনে করছেন না।


এতে যে কোনো সময় বরিশালের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ অনেক শক্তিশালী খেলনা ড্রোন বোমা বহনেও সক্ষম। এতে করে সন্ত্রাসীরা ড্রোনের মাধ্যমে যে কোনো সময় বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। ওদিকে সম্প্রতি ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ড্রোন আটক করা হচ্ছে। ড্রোনের ব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি একটি নীতিমালাও করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বরিশালে তার কিছুই মানা হচ্ছে না।


জানা গেছে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক আটক আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে খেলনা ড্রোন ব্যবহার করে নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া যায়। গত ২১ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৪ কেজি ওজনের ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম একটি ড্রোন জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ‘ডিজেআই ফ্যান্টম-৪’ মডেলের ওই ড্রোনে উন্নতমানের ক্যামেরা বসানোর সুযোগ ও সেন্সর রয়েছে। ড্রোনটি দুই কেজি ওজনের বোমা বহনেও সক্ষম। এর আগে ২৭ জুলাই শুল্ক গোয়েন্দারা শাহজালালের ফ্রেইট ইউনিটে আরেকটি ড্রোন আটক করেন। সেটি খেলনা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা হয়েছিল।
তবে দেশে ড্রোন তৈরী বা ব্যবহারে একেবারে নিষেধাজ্ঞা নেই। প্রযুক্তিবিদরা মনে করেন ড্রোন নি:সন্দেহে একটি ভালো যন্ত্র। কিন্তু সুযোগসন্ধানীরা এটিকে ব্যবহার করে বরিশাল বা দেশের ক্ষতি করতে পারে। এ কারনে প্রশাসনের সর্বোত নজর থাকা জরুরী এবং আইন অনুসারে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

গত ২৭ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তিতে বেবিচক জানায়, বাংলাদেশের আকাশসীমায় ড্রোন ওড়াতে হলে দেড় মাস অর্থাৎ ৪৫ দিন আগে বেবিচক থেকে অনুমতি নিতে হবে। কেউ এ নির্দেশনা না মানলে তার বিরুদ্ধে কর্তৃৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এমন বিধানের কথা জানেই না বরিশালের প্রশাসন বলে জানা গেছে। দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯-এর সেকশন ১৬ অনুযায়ী এটিকে (ড্রোন/খেলনা ড্রোন) নিষিদ্ধ পণ্য হিসেবে গণ্য করা হবে বলে জানানো হয়েছে।


কোতয়ালী থানার ওসি আওলাদ হোসেন বলেন, বরিশালে ড্রোন পাওয়া যায় বলে আমার জানা নেই। যা পাওয়া যায় তা খেলনা। আর খেলনা চালানোর অনুমতিতো রাষ্ট্রই দিয়েছে।


এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) ফরহাদ সরদার বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত স্পর্শকাতর। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে সক্রিয় রয়েছে। তারপরও বরিশালে বিষয়টিকে আরো কঠোর নজরদারীতে আনা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×