গরুর দুধ খেতে অনেক স্বাদ। মানব সন্তান এই স্বাদ যখন জিহ্বায় অনুভব করতে পারে ঠিক ততদিনে তিনে নিজের মায়ের দুধের স্বাদ ভুলে যায়। তারপরও যেহেতু তার মোটাতাগড়া হওয়ার সাধ এজন্য অন্য প্রাণীর ওলানের দুধ নিয়ে পান করে। গরুর দুধ গলধকরণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হয়ে দাড়িয়েছে। টিভিতে বড় বড় বিজ্ঞাপন দেখি বিদেশী গরুর দুধে প্রস্তুতকৃত পন্য। আবার দু’ একটি ধর্মেও গরুর দুধ পান করা নিয়ে দেব-দেবীদের বারতা আছে।
মানুষ নিজেকে দাবী করেন আশরাফুল মাখলুকাত। মানে সৃষ্টির সেরা জীব। কেন? কারন তার বুদ্ধি, বিবেক, সৃজনশীলতা এবং ঐক্য রয়েছে। এত কিছু দাবীদার মানুষ কি কখনো ভেবে দেখেছেন, তিনি যে গরুর দুধ ওলান থেকে নিয়ে পান করছেন সেই দুধ ওই গরুর বাছুরের। একটি শিশু প্রাণীর মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে মানব সম্প্রদায়ের শরীরের পুষ্টি বাড়ানোর অধিকার কি সৃষ্টিকর্তা মানুষকে দিয়েছে?
ঠিক উল্টোটা চিন্তা করুন, কোন মানবজননীর নবজাতকের দুধ যদি পশু, পাখি বা অন্য প্রজাতির প্রাণী কেড়ে নিয়ে খেতো তখন মানুষের কেমন লাগতো। অথচ সেই কাজটি মানুষ করছে বাছুরকে মায়ের সামনে বেধে রেখে।
মানবসভ্যতায় মানবাধিকার কিংবা মানবতা শব্দ নিয়ে মাঝেমাঝেই তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু মানুষ প্রতিদিন এভাবে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে অন্যের অধিকার যেভাবে হরণ করে নিচ্ছে তাতে মানুষকে কতখানি বিবেকবান মনে হতে পারে? এর জুৎসই সংজ্ঞা আমার মত আপনারাও হয়তো সহসাই জোগাড় করতে পারবেন না।
ঠিক তেমনি দুধ চুরি করে খাওয়া এক প্রজাতির শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন, যাদের আমরা বুদ্ধিজীবী বলি সাধারণত। এরা রাষ্ট্রের কোন নিয়োগপ্রাপ্ত চাকুরে নন বা সাংবিধানিকভাবে তাদের অস্তিত্ব খুব গুরুত্ব বহন করে না। তবে বাস্তবতায় একটি রাষ্ট্রের গতি কাঠামো নির্ধারিত হয় এই শ্রেণীর উচ্চ মার্গীয় ব্যক্তিবর্গের চিন্তার উৎকর্ষে। তাদের সুচিন্তিত মতামত, সংকল্প এবং পর্যবেক্ষণ রাষ্ট্রের স্তম্ভ বলে বিবেচ্য।
কিন্তু হতাশার কথা হলো বুদ্ধিজীবীদের আচরণ অনেকটা গরুর ওলান থেকে বাছুরের অধিকার নষ্ট করে দুধ খেয়ে ফেলার মত। রাষ্ট্রের উর্ধ্বমহলের নৈকট্য লাভের আশায় মাঝে মাঝে তারা বুদ্ধি-বিবেকের শার্টার বন্ধ করে দেন। তখন সাধারণ মানুষ হতাশ হন, অধিকার হারান। গরুর অবুজ বাছুরের মত তাকিয়ে থাকেন।
সামনে নির্বাচন আসছে। রাজনীতির যেমন কোন শেষ নেই তেমনি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়েও শেষ ফয়সালা বলতে কিছু দেখছি না। প্রতি মৌসুমে একই আলোচনা তুঙ্গে চলে আসে, কিভাবে নির্বাচন হবে কিভাবে হবে না। অথচ রাষ্ট্রের বয়স পঞ্চাশ পার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন ব্যবস্থার সঠিক ও সহজ সমাধান কেউ দিতে পারেনি। যেহেতু রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্ব বহন করেন এই বুদ্ধিজীবী শ্রেণী। ফলে প্রতি নির্বাচনের আগে নানান ঢংয়ে নানান বিবেচনায় প্রসিদ্ধসব বুদ্ধিবিক্রেতাদের ডাক আসে উর্ধ্বতন মহল থেকে। এরপরই ভোল পাল্টে যায় বুদ্ধিজীবীদের। হয়তো তারা এতে ব্যক্তি সুবিধা পান কিন্তু ক্ষতি হয়ে যায় রাষ্ট্রের।
আবারও নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। দিন দিন কদর বাড়ছে বুদ্ধিজীবীদের। তাদের কথাবার্তার কাটতিও বাড়ছে তুলনামূলক। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে বুদ্ধিজীবীরাও তাদের মতামত দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এভাবেই চলে আসছে বিগত পঞ্চাশ বছর। কিন্তু সমাধান কি হলো? সেইতো একই নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে এখনো অলোচনা। তাহলে বুদ্ধিজীবীদের মতামত কি ভোতা? কোন কাজে আসছে না? যদি কাজেই না আসে তাহলে সেই বুদ্ধিজীবীতার দরকার কি?
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন ‘অতিকায় হস্তি লোপ পাইয়াছে, তেলাপোকা টিকিয়া আছে।’ আবার মহামতি হুমায়ূন আজাদ বলেছিলেন, সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। যদি এমন হয় তাহলে তার দায় বুদ্ধিজীবীরা এড়াতে পারেন না। নির্বাচন এসেছে, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে বুদ্ধীজীবিরা এখন থেকে কাজ শুরু না করলে জনগণতো বেধে রাাখা বাছুরের মত হয়ে যাবে।
মনে রাখতে হবে, জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিন্তু আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন মানুষের অধিকার বাস্তায়নের জন্য। সেই অধিকার কুক্ষিগত করে রাখার অধিকার কিন্তু কারো নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২২ রাত ৩:১৪