somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক বছর আগে কেউ অপেক্ষা করে বসেছিল না... এক বছর পরে ও নেই।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ যখন এই লেখা লিখছি কিংবা কেউ পড়ছে, তার মাত্র এক শতাব্দী পরেই বর্তমান পৃথিবীর কয়েকশ' কোটি মানুষের মাঝে হাতে গোনা দু'চারজনই বেঁচে থাকবে। কতটা নির্মম, কতটা নিদারুন এই সত্যকথন। অথচ, মহাকালের গর্ভে একটা কেন দু'চারটা শতক কত অনায়াসেই না হারিয়ে যায়!

মনে পড়েছে,

শোনা গেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ ।
বধু শূয়েছিল পাশে, শিশুটিও ছিল;
প্রেম ছিল, আশা ছিল - জোছনায় - তবু সে দেখিল
কোন ভূত? ঘুম কেন ভেংগে গেল তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশ কাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার....

-জীবনানন্দ দাশ


একটা বছর চলে যাচ্ছে, আসছে একটা নতুন বছর….......

সবাই উৎসবে মেতে উঠবে। অথচ, আমার দ্বারা কখনোই এসব হলো না! পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে এক প্রকার পাথর ছোঁড়া (at a stone’s throw) দুরত্বে আমার নিবাস। প্রায় সময়ই সেখানে যাই, মধ্যরাতেও অনেক অনেকবার যাওয়া হয়েছে। কিন্তু, ডিসেম্বরের শেষ রাত্রিতে (Thirty First Night)কখনোই যাওয়া হয় নি; আগ্রহই জাগে না যাবার। মনে হয়েছে, সমুদ্রের মত বিশাল কিছুর সামনে একাকী নিশ্চুপ বসে থাকাই মানায়; ভীড় করে নাচানাচি করা সমুদ্রেরই অপমান।

এছাড়া ও মানুষ বাসায় বাসায় পার্টি করে, আমি যাই না। কলোনীর রাস্তায় ছেলেপেলেরা কার্টুন আঁকে, দেয়ালে রঙ করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানায়- মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে সেটাই দেখি। এ নির্দোষ স্বতস্ফুর্ততা ভাল লাগে।

যাই হোক, ইংরেজী নববর্ষ পালন আর এ জীবনে হলো না বোধ হয়। অবশ্য বাঙলা- আরবী কোন নববর্ষই আমি এ জীবনে সে অর্থে পালন করি নি। নিরামিষ জীবন।

তারপরেও একটু স্মৃতিকাতর হতে বাধ্য হচ্ছি। ১৯৯৯ সালে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। সেবার এই দিনে সহস্রাব্দের বিদায় অনুষ্ঠান দেখেছিলাম। আক্ষরিক অর্থে যৌবনের শুরু হয়েছে তখনি। এরপর বিগত এক দশকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনীতি, চাকরি- আরো কত কী! আগের দুই দশকের চাইতে বর্ণীল, ব্যস্ত আর স্বপ্নময় দশক। আমার কাছে তাই ২০১০ সালের আগমন এক স্মৃতিময় দশকের মহাপ্রয়ানের নাম।

আচ্ছা, একটা বছর চলে যাওয়া মানে তো জীবন থেকে একটা বছর কমে যাওয়া। মানুষের তো দুঃখিত হবার কথা! উলটো সবাই কেমন আনন্দে মেতে উঠে!

কান্না চাপা দিতেই কি মানুষ বেশী করে হাসে? জীবনের আনন্দযজ্ঞে মেতে উঠে কষ্টকে ভুলে যেতে চায়?


একটা বছর চলে গেল। কত কিছু করবার কথা ছিল; কিছুই করা হয় নি। কত প্রিয়জন ছিল পাশে; কেউ কেউ চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে (প্রয়াত ব্লগার মাহবুব মাতিনকে স্মরণ করছি)। এক বছর পরে, হয়তো এমন অনেকেই চলে যাবে, এমন করেই স্মৃতির পালক পড়ে থাকবে রোমন্থনের অপেক্ষায়।

এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবার শখ ছিল; অফিস আর বাসার বাইরে তেমন কোথাও যাওয়া হয় নি।

কিছুক্ষন পরেই, আরো একটা বছর আসছে। অনেকগুলো কাজ পড়ে আছে; স্বপ্নগুলো জমা হয়ে আছে পূরণ হবার প্রতীক্ষায়; জানি ৩৬৫ সৌরদিন শেষে আবার এ কথাগুলোই ফিরে ফিরে বলে যেতে হবে। কিছু আক্ষেপ থাকবে, হতাশা থাকবে। তারপরেও ভালবাসা থাকে।

নতুন বছরে অনেকের অনেক প্রত্যাশা থাকে। সুন্দর দেশের জন্য, নির্ভার আগামীর জন্য, শান্তিময় বিশ্বের জন্য, সুখী পরিবারের জন্য।

স্বার্থপর এই আমার এত কিছু ভাল লাগে না। শুধু মনের ভেতরে খুঁচিয়ে ওঠে, এক বছর আগে কেউ অপেক্ষা করে বসেছিল না... এক বছর পরে ও নেই.... আগামীতেও কোন লক্ষন নেই।

আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেছি। পুরানো কিছু হারিয়ে গেলেই আমার মাথায় কয়েকটা পংক্তি ঘুরেফিরে আসতে থাকে....

“একদিন এই দেখা হয়ে যাবে শেষ,
পড়িবে নয়ন- 'পরে অন্তিম নিমেষ।
পরদিনে এই মতো পোহাইবে রাত,
জাগিবে জগত- 'পরে জাগ্রত প্রভাত।
........................................
যা পাই নি তাও থাক, যা পেয়েছি তাও
তুচ্ছ বলে যা চাই নি তাই মোরে দাও।।”

-রবীন্দ্রনাথ


শুভ নববর্ষ ২০১০।

আবোল-তাবোল বকে মাথা ধরিয়ে দিলাম।
একটু পরেই অনেক অনেক পোষ্ট আসবে নববর্ষ নিয়ে। তার আগেই সবাইকে উইশ করে গেলাম।
সবাই ভাল থাকুন।


বিঃদ্রঃ একটু পরেই অনেকেই আনন্দে মেতে উঠবেন। আর আমি অফিসে যাবার জন্য তৈরী হবো। আজ নাইট শিফট পড়েছে। অন্যভাবেই কাটুক না আজকের রাতটা!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:০০
৫৪টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×