somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তারেক_মাহমুদ
আমি লেখক নই, মাঝে মাঝে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখতে ভাল লাগে। যা মনে আসে তাই লিখি,নিজের ভাললাগার জন্য লিখি। বর্তমানের এই ভাবনাগুলোর সাথে ভবিষ্যতের আমাকে মেলানোর জন্যই এই টুকটাক লেখালেখি।

এই শহরে

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি রাশেদ। এক বছর হল ঢাকা এসেছি চাকুরির সন্ধানে,উঠেছি ঢাকার উওরার একটি বাসায়। চার কামরার একটি বড় ফ্লাট।এই বাসায় আমরা চাকুরীজীবী,ছাত্র, বেকার এই তিন ক্যাটাগরি মিলেয়ে মোট দশজন মেস করে থাকি। আমার সাথে ভার্সিটি জীবনের বন্ধু রাসেলও থাকে।

ইতিমধ্যেই আমি এবং রাসেল দু-জনেই অল্প বেতনের দুটি চাকুরীও জোগাড় করে ফেলেছি । পাশাপাশি আমি সন্ধ্যার পর আমি একটা টিউশনি করাই। বেশ ভালই শুরু হয়েছিল ঢাকা শহরে আমাদের প্রথম বছর। কিন্তু আমাদের এই সুখ বেশিদিন কপালে সইলো না। একদিন বাড়িওয়ালার হঠাৎ ঘোষণা দিলেন,
তিনি আর ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দেবেন না, সব ব্যাচেলরদের আগামী একমাসের মধ্যেই বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে।
আমাদের মেস ম্যানেজার শাহজাহান ভাই বাড়িওয়ালার সাথে মৌখিক চুক্তিতে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন কোন লিখিত চুক্তি করেননি।তাই আমাদের ঐ মুহুর্তে বাসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না । বাড়িওয়ালা ইতিমধ্যেই বাসাটি একটি বিউটিপার্লারের মালিকের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। অচিরেই আমাদের মেসের এই শ্যাওলাপড়া মেঝেকে ঘষেমেজে চকচকে করা হবে,এসি লাগানো হবে। এখানেই একদিন সুন্দরী মেয়েরা আসবে লিপিস্টিক লাগাবে, সাজুগুজু করবে, যদিও এর কিছুই দেখার সৌভাগ্য আমাদের হবে না।

আমরা দুই বন্ধু হন্যে হয়ে বাসা খুজতে লাগলাম। বাড়িওয়ালার নির্ধারিত সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে কিন্তু আমরা কিছুতেই বাসা খুজে পাচ্ছি না।আবার যেগুলি পাওয়া যায় সেগুলো আমাদের বসবাস উপযোগী নয়। যখন আমাদের প্রায় রাস্তায় নামার জোগাড় তখন দুজনে আলাদাভাবে দুই এলাকায় বাসা খুজতে লাগলাম। হঠাৎ ওয়ালে লাগানো একটা লিফলেটে আমার চোখ আটকে গেল

' সাবলেট'
একটি ফ্যামেলি বাসার একরুম ভাড়া দেওয়া হবে(দুইজন চাকুরীজীবী)। পাশে ফোন নম্বর দেওয়া আছে।
রাসেলকে ফোন করে ডেকে নিলাম। প্রথমে লিফলেটে প্রাপ্ত নম্বরে ফোন দিলাম। ফোন ধরলেন একজন মহিলা। কথাবার্তার ধরনেই বুঝতে বাকী রইলো না তিনি অল্প শিক্ষিত। যদিও আমাদের কাছে ঐ মুহুর্তে ওটা কোন সমস্যা নয়, আমাদের একটা মাথা গোজার ঠাই পাওয়াটাই বড় কথা।

বাসাটি পাচ তলার উপর, মোট তিনরুমের বাসা। বাসার গৃহকর্তা আসাদ ভাই প্রথমেই জানালেন নিজের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণেই তিনি একটি রুম ভাড়া দিতে চান। তিনি বাড়িওয়ালাকে বলবেন আমরা তার দুঃসম্পর্কের ভাই ওরা এখানে থাকবে। ওনার পরিবারে সদস্য সংখ্যা মোট চারজন, স্বামী স্ত্রী এবং তাদের দুটো মেয়ে। একটা মেয়ের বয়স ৪/৫ বছর অন্যটির বয়স ৮/৯ বছর। দেখে মনে হল বেশ সুখের সংসার। মহিলাটিকে আমরা ভাবী ডাকা শুরু করলাম, আসলে একটা মাথা গোজার ঠাই আমাদের বড্ড প্রয়োজন তাই আমরা রুমটি ভাড়া পেতে মরিয়া। ভাবী জানালেন
-একরুমের ভাড়া দিতে হবে ছয় হাজার টাকা, সাথে দুজনের খাওয়ার খরচ ছয় হাজার টাকা। গ্যাস, কারেন্ট বিল আমাদের দিতে হবে না।
আমরা সব শর্ত মেনে আমাদের নতুন বাসায় উঠে পড়লাম।


বাসায় উঠার পর পরিবারটির সাথে অল্প দিনেই আমাদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হল। ভাবী বেশ আন্তরিক।এই পরিবারে যে কর্তার তেমন কোন ভুমিকা নেই সেটাও বুঝতে খুববেশি বেগ পেতে হল না।আসলে ভাবীর স্বামী আসাদ ভাইয়ের বর্তমানে কোন জব নেই। তাই বউয়ের সাথে এ নিয়ে প্রায় ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। একদিন জিজ্ঞেস করলাম
-তাহলে আপনাদের সংসার চলে কিভাবে?
ভাবী জানালেন
-বিশ লাখ টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা আছে সেই টাকার ইন্টারেস্ট থেকে আমাদের সংসার চলে।

ভাবীর হাতের রান্নাও বেশ ভাল।
দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে থাকায় এবং মেসের অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে পচে যাওয়া মুখটা যেন বাড়ির রান্নার স্বাধ পেল। সকালের নাস্তায় রুটি খাওয়ার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্তু সেটা পুনরায় আবার চালু হল।
সবচেয়ে বড় কথা বাজার করার বাড়তি ঝামেলা থেকে আমরা মুক্ত।
প্রথম প্রথম ডাইনিং টেবিলে খেতে আমাদের কিছুটা ইততস্ত লাগছিল, ভাবী বললেন
-আপনারা আমার ভাইয়ের মতই,আপনারা আমাদের সাথে ডাইনিং টেবিলে বসে খেতে পারেন।
ভাবীর ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ হলাম।
শুধু তাই নয়, আমাদের অফিসের লাঞ্চ রেডি করে হটপটে ভরে দিতেন তাই দুপুরে হোটেলের অখাদ্য গিলতে হতো না । এজন্য ওনার মেয়েদের মাঝেমধ্যে ছোটখাটো জিনিস যেমন খাতা, কলম,পানির পট, টিফিনবক্স,খেলনা গিফট করতাম। ঈদের সময় বাচ্চাদের গিফট হিসাবে ভাবীর হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিতাম যাতে বাচ্চাদের জন্য কিছু কাপড় চোপড় কিনতে পারেন। ভাবীর দুইমেয়ে মাঝেমধ্যেই আমাদের কম্পিউটারে কার্টুনছবি দেখার আবদার করতো আমরা হাসিমুখে ওদের আবদার পূরণ করতাম ওদেরকে নিজেদের ছোটবোনের মতই ওদের আদর করতাম। মোটকথা অচেনা ঢাকা শহরে ওরাই ছিল আমাদের পরিবার।

বেশ ভালোই সময় কেটে যাচ্ছিল আমাদের নতুন বাসায়। আমরা দুজনেই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে অফিসে চলে যেতাম, ফিরতাম রাত আটটা নয়টার দিকে সারাদিন বাসার কোন খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন হতো না।

একদিন শরীর ভাল লাগছিল না তাই লাঞ্চ টাইমে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম। ভাবী দরজা খুলে দিলেন। মনে হল আমার এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসা দেখে তিনি কিছুটা অশ্বস্তিতে পড়েছেন। ড্রইংরুমে কিছু দুইতিনজন পুরুষ মহিলাকে দেখলাম যাদেরকে আমার ঠিক পছন্দ হল না। রাসেল ফেরার পর তাকে কথাটা জানালাম।
রাসেল আমার কথায় পাত্তা দিল না, ওর কথা
-ভাবী অনেক ভাল মানুষ। তাছাড়া ওরা যে-ধরনের ওদের আত্মীয়স্বজনরাও তেমনি হবে। পরে খাবার টেবিলে ভাবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম কারা এসেছিল?
তিনি জানালেন
-আমার দুঃসম্পর্কের বোন, বোনের জামাই এসেছিল।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামালাম না।

এই বাসায় প্রায় এক বছর ছিলাম এসময়ে ভাবীর সাথে ওনার স্বামী আসাদ ভাইয়ের ঝগড়া মাঝে মধ্যে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌছাতো। দুইএকবার আমরা হস্তক্ষেপ করে মিমাংসা করে দিয়েছি।উনাদের বুঝাতাম আপনাদের দুটিমেয়ে বড় হচ্ছে এখন এসব ঝগড়াঝাটি করলে ওরা মানুষের মত মানুষ হতে পারবে না। আমি জব পরিবর্তন করায় বাসা ছেড়ে দিলাম রাসেলও বাসা ছেড়ে ওর অফিসের কাছাকাছি জায়গায় বাসা নিলো। রাসেলের সাথে আমার আড়াই বছরের মেস জীবনের অবসান হল।

এরপর পেরিয়ে গেছে আরও ছয়মাস, একদিন পত্রিকার মাঝের পাতায় একটা ছবিতে আমার চোখ আটকে গেল। খবরটি ছিল এমন
'রাজধানীর আবাসিক এলাকায় অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়ে গৃহবধূ ও তার স্বামী গ্রেফতার'
এই গৃহবধূ আর কেউ নন আমাদের সেই প্রিয় ভাবী এবং তার স্বামী আসাদ ভাই।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:২২
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×