somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু কি খবর বল, কতো দিন দেখা হয়নি?

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তখন সম্ভবত ক্লাশ ৮ এ পড়ি । গ্রামের বাড়ি যেহেতু পাহাড়ের কাছেই তাই পাহাড়, অরন্য, গাছপালা, পাহাড়ি নদি এসবের প্রতি আলাদা একটা টান ছিলো/ আছে । আমার একটা শখের মধ্যে ছিলো গ্রামের ছেলে/মেয়েদের সাথে পাহাড়ে যাওয়া। যদিও বড় ভাই আমার এই পাহাড় প্রীতি ব্যাপারটা নিয়ে বাসায় বেশ রাগারাগি করতো। কিন্তু "মা" সারা জীবন আমার পক্ষেই ছিলেন। তো, ওরা যেত কাঠ আনতে আমি যেতাম পাহাড় দেখতে। একদিন ঠিক রোজার সময়, ওরা একটার পর একটা পাহাড় পার হয়ে এগিয়ে চলছে, সাথে আমিও। উঠতে উঠতে অনেক উঁচুতে উঠে গেলাম।

সবাই যে যার মতো পাহাড়ের খাদে নেমে শুকনো কাঠ, বাঁশ এসব নিয়ে এসে বাঁধছে, আমিও কম যাইনা। ওদেরকে দেখিয়ে ওদের চেয়ে প্রায় দুই গুন বড় আঁটি বেধে নিলাম! কয়েকজন আমাকে নিষেধ করলো। আমি শুনলাম না। সবাই কেন জানি মিটমিট করে হাসছিলো তখন। সন্দেহ হতেই আমি আঁটিটা আলগে দেখলাম, বেশ হালকা, এক হাত দিয়েই উঠানো যায়। এ আর এমন কি ভারি! কিন্তু বিপত্তি বাঁধতে শুরু করলো তখনই যখন পাহাড় থেকে নামতে শুরু করলাম।

এক একটা পাহাড় নামছি, আর মাথার উপর আঁটিটার ওজন মনে হচ্ছে এক এক মন ভারি হচ্ছে! দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে আসলো, সবাই আমাকে ছেড়ে কোথায় কোথায় চলে গেল... এমনিতে রোজার কারনে মাথা ঝিমঝিম করছে, তার উপর মাথার উপর এতো ভাড়ি একটা বস্তু... মনে হলো ফেলে দেই এই জিনিস। নাহলে পথ ভুলে গেলে পাহাড়ে রাত কাটাতে হবে! তারপর আবার জেদ চেপে গেল... সর্বোচ্চ চেষ্টায় এক পা এক পা করে এগিয়ে চলছি, কোথাও কেউ নেই, আমাকে ফেলে সবাই চলে গেছে! অভিমানে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে আর কি!

ঠিক তখনই পেছন থেকে "ভুট্টো" নামের ছেলেটি আমাকে বললো আমার বোঝাটা নামিয়ে রাখতে! আমি খুবই অবাক হলাম ওকে চলে না যেতে দেখে। সেই কখন থেকে ও আমার পেছন পেছন আসছে... পাশেই পাহাড়ি নদি। নদির পাশে নানান সবজির ক্ষেত । ক্ষেত থেকে চুরি করে দুজন দুইটা বিশাল সাইজের মূলা এনে ছোট নদির ধারে বসে ইফতার করলাম... গ্রামে ভুট্টোর সাথেই আমার সবচেয়ে বেশি ঝগড়া হতো, মারপিট হতো। একদিন ওর মা আমাকে ইয়া বড় একটা লাঠি নিয়েও দোঁড়ানি দিছিলো। সেই ছেলেটা এই সন্ধ্যার পরও আমাকে ছেড়ে যায়নি... এবং এক পর্যায়ে আমি যখন আর কিছুতেই পেরে উঠছিলাম না সে নিজের বোঝাটা কিছু দূর গিয়ে রেখে, আমারটাও নিয়ে আরো কিছুদূর রেখে রেখে এভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো... আজকের বন্ধু দিবসে সেই গ্রাম্য বন্ধুটাকে যেমন ভিষন মনে পড়ে, তেমনি শহুরের বন্ধুদের ভালোবাসাটাও ভিষন মনে পড়ে। আর শহুরে বন্ধুদের গল্পতো বলে শেষ করা যাবে না।

আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে সোভাগ্যবান মানুষ যার কিনা একটা ছোট অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা বন্ধু সার্কেল রয়েছে। বন্ধুত্বে কখনো স্বার্থ থাকে না। অনেকেই দেখি নিত্য নতুন, নামিদামি, ক্ষমতাবান বন্ধু বাছাই করে তাকে জীবনের সবচেয়ে সেরা বন্ধু বানিয়ে ছাড়ে, তারপর কিছুদিন পর বন্ধুত্ব শেষে স্ট্যাটাস দেয়, "বন্ধু তোকে ভিষন মনে পড়ে!"। বন্ধুত্ব হতে হবে স্বার্থহীন। থাকতে হবে একে অপরের প্রতি অদৃশ্য ভালোবাসায় বন্ধন! বিপদে চটজলদি এগিয়ে আসার মানসিকতা। শত চক্রান্তে দূরে সরে না যাওয়া... এবং অবশ্যই নারীর শরীরের গন্ধে বদলে না যাওয়া... :D

আজকের দিনে বন্ধু তোদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ভালোবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×