somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিচিত সব মসলা গাছের অপরিচিত সব ফুল

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি: - পেঁয়াজ গাছ ও ফুল

ফুল ভালোবাসেন না এমন মানুষ সম্ভবত বিরল।
কোথাও পড়েছিলাম - যে ফুল ভালোবাসতে জানেনা সে মানুষ হত্যা করতে পারে। এই কথার সত্যতা কতোটুকু জানিনা কারণ খুনী হত্যাকারিদেরও ফুল পছন্দ করতে দেখেছি। তারা আর দশটা মানুষের মতোই দেখতে শুনতে সাধারণ মানুষ এবং যথারিতি ফুল পছন্দ করেন। যাইহোক ভিন্ন প্রসঙ্গে না গিয়ে মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক। দৈনন্দিন রান্নায় যে মসলাগুলো একদম না হলেই না তার মধ্য অন্যতম “পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, আদা, ধনিয়া ও জিরা। এই মসলাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে দুঃখী মসলার নাম পেঁয়াজ। না, পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চোখে জল আসার কারণে নয়, চোখে জল আসার মতো ঝাঁঝালো যে পেঁয়াজ নিকট দেশ ভারতে আছে তা বাংলাদেশ আমদানি করে না। তাছাড়া লাইবেরিয়া, ঘানা, মোজাম্বিক, কঙ্গো, সুদান সহ আফ্রিকান দেশগুলোতে যে ধরনের ঝাঁঝালো পেঁয়াজ আছে তা কাটার জন্য রিতিমতো ওয়েল্ডিংয়ের কালো চশমা পরতে হয়! বাংলাদেশে পেঁয়াজের দুঃখী মসলা হওয়ার অন্যতম কারণ - খাদ্য বিলাসিতা, অবমূল্যায়ন, অপচয় ও অবচয়!

গত বছর ২০১৯ বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য এতোটাই উর্দ্ধগামী ছিলো যে বড়জোড় আর একমাস এই উর্দ্ধগতি মূল্য ধরে রাখতে পারলে সম্ভবত বাংলাদেশ পেঁয়াজ ৫০০ টাকা/কিলোগ্রাম মূল্য ছোঁয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তো। যখন বাংলাদেশকে ভারত পেঁয়াজ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে (বিনামূল্যে নয়, অবস্যই সিডি এলসি ও প্রিমিয়াম দরে) তখন নিরুপায় বাংলাদেশ প্রায় অন্ধ হয়ে বার্মা, মিশর, তুরস্ক সহ আরো নানান দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে থাকেন আর বাংলাদেশের শৌখিন গৃহিণীরা যথারিতি নিজ নিজ বাসাবাড়ি-ঘর পেঁয়াজ স্টোর করে করে পেঁয়াজের বাজার ঘাটতি অব্যহত রাখলেন। বাংলাদেশের পেঁয়াজ চাষীরা যখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তাদের আবাদি জমির পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করে ভালো একটি মূল্য পাবেন - এবার বাড়ি ঘর মেরামত করবেন, হয়তো একটি গাভী কিনবেন! বাংলাদেশের চিরোদুঃখী চাষীদের পেঁয়াজ বাজারে যেতে না যেতেই কালবৈশাখী ঝড়ের মতো বন্ধু দেশ ভারত তাদের পেঁয়াজের বাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত করে বাংলাদেশের পেঁয়াজ চাষীদের আবারও মেরুদন্ড ভেঙ্গে প্রমাণ করলেন ভারত আমাদের অতিব প্রিয় বন্ধু দেশ! বাংলার দুঃখী চাষীদের বুকের পাঁজর ভাঙ্গা কান্না দেখার না কখনো কেউ ছিলেন - আর না কখনো কেউ হবেন। এটিই বাংলার গত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস।

বাংলাদেশের চিরোদুঃখী চাষী রোদ্রে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় মসলার চাষ করেন। আজ সেই সব মসলা গাছের পরিচিত ও অপরিচিত ফুলের সাথে কিছুটা পরিচিত হই। হয়তো এই মসলাগুলো সবার পরিচিত তবে মসলা গাছের ফুলগুলো সবার চেনা জানা নাও হতে পারে, আর তাই আজকের এই সামান্য চেষ্টা।

ছবি: - রসুন গাছ ও ফুল

রসুন একটি নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যতম মসলা, তবে রসুনের গুনাগুন লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। ভাত/রুটির সাথে এক কোয়া করে কাঁচা রসুন খেলে হৃদরোগ হবার সম্ভবনা ৩০% - ৫০% কমিয়ে দেবে মাত্র একটি করে রসুন কোয়া প্রতি বেলা!

ছবি: - হলুদ গাছ ও ফুল (হলুদ - মসলা, ঔষধ, গায়ে মাখার হাজার বছরের পুরোনো প্রসাধনী)

এক গ্লাস গরম দুধ/পানির সাথে এক চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা প্রতিদিন সকালে খাওয়াতে যেমন তেমন আর্থাইটিস রোগী হাড় ব্যথা থেকে উপশম পাবেন।

ছবি: - মরিচ গাছ ও ফুল

আমাদের দেশে এক সময়ে - মাত্র ত্রিশ বছর আগেও ভয়ঙ্কর ঝাল মরিচ ছিলো, যেমন ঝাল তেমন রঙ! এখন সেইসব ঝাল মরিচ কোথায় হারিয়ে গেছে তা কেউ জানেন না। আমার ব্যক্তিগত ধারনা মরিচের ঝাল এখন মানুষের মুখে চলে গেছে! মানুষের মুখের কথা এখন এতোই ঝাল হয়েছে যে গ্যালন গ্যালন মধু পান করালেও তাদের মুখের কথার ঝাল আর কমবে না।

ছবি: - আদা গাছ ও ফুল (দেশী)

বানিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে মাটির রকম ভেদে আমি যতোটুকু জানি দু রকমের আদা চাষ হয়। ১। দেশী আদা ২। পাহাড়ি আদা। দেশী আদা আমাদের দেশে নানান জেলাতে স্বল্প পরিসরে চাষ হয়ে থাকে। বাজারে - কম ঝাঁঝ, রসালো, ভারী ও হালকা খয়েরি রঙের আদাগুলোকে আমরা দেশী আদা বলে চিনি ও জানি।

ছবি: - আদা গাছ ও ফুল (পাহাড়ি)

পাহাড়ি আদা অধিক ঝাঁঝালো, ওজনে হালকা চিকন ও গাঢ় খয়েরি রঙের হয়ে থাকে। পাহাড়ি আদা বাংলাদেশে একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। যদিও ময়মনসিংহ ও সিলেটে পাহাড় ও টিলা আছে কিন্তু বিচিত্র মাটির কারণে পাহাড়ি আদা একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলেই চাষযোগ্য।

ছবি: - ধনিয়া গাছ ও ফুল

ধনিয়া একটি মসলা তবে নিত্য প্রয়োজনীয় মসলাতে আমার জানামতে বেশ কিছু মসলা শুধু যে রান্নায় ব্যবাহর করি তা নয়, সেই মসলা গাছের পাতাও আমাদের মসলা ও সালাদের অন্যতম একটি। তার মধ্য প্রধান - ধনিয়া পাতা, পেঁয়াজ পাতা সহ মাংসের তরকারির অতুলনীয় স্বাদ ও সুঘ্রাণের জন্য ব্যবহার হয় আদা গাছের পাতা ও হলুদ গাছের পাতা।

ছবি: - জিরা গাছ ও ফুল

আবারও মাটির প্রসঙ্গ। বাংলাদেশে জিরা খুবই কম চাষ হয়, যা চাষ হয় তা দেশের সিমান্ত এলাকার দোঁ-আশ মাটিতে কিছু কিছু চাষ করার উদ্যেগ দেখা গেছে। মাংসের তরকারিতে জিরার প্রয়োজন খুব কমই, তবে জিরা ছাড়া মাংসের তরকারি রান্না করাও এক অসম্ভব বিষয়। তাই বলা যায়, জিরা একটি অতি জরুরী মসলা।

উপসংহার: - নিত্য প্রয়োজনীয় মসলা যে পরিমান বাংলাদেশে আবাদ হয় তাতে দেশের জনগণের রান্নায় এক বছর নিঃসন্দেহে চলার কথা। তারপরও মসলা আমদানি করতে হয় যার অন্যতম কারণ অতি বিলাসিতা ও অপচয়। আর মসলার সিজনে বিদেশ থেকে মসলা আমদানিতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হোন বাংলাদেশের দুঃখি চাষী - যাদের ভাষা বোঝার মতো ভাষাজ্ঞান আজও বাংলার মাটিতে কারো হয়নি - হবেও না। - আফসোস।



কৃতজ্ঞতা স্বীকার: - সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত পোষ্টে “উক্ত লেখাটি” স্থান দেওয়াতে সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।।
ছবি: গুগল সার্চ ইঞ্জিন।




সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২০ রাত ৩:৩৯
৪৩টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×