somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাইনি শিকার - ইউরোপের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়

০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৪৮২ থেকে ১৭৮২ সালের মাঝে ইউরোপ জুড়ে হাজার হাজার মানুষকে- যাদের বেশিরভাগই ছিল নারী- ডাইনিবিদ্যা চর্চার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এত নিরপরাধ মানুষকে স্রেফ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কঠোর শাস্তি দেয়া হয়েছিল?
চলুন জেনে নিই ডাইনি-শিকার সম্পর্কে।

ডাইনিদের সম্পর্কে আমরা অনেক জায়গাতেই পড়েছি-জেনেছি। রূপকথা, গল্প-গাথা, রম্যরচনা- সবখানেই সদর্পে উপস্থিত কূট চরত্রের ডাইনিরা। ডাইনিদের ধরা হয় অশুভ আর পাপের প্রতিমূর্তি হিসেবে। কিন্তু বিগত ষোল ও সতেরোশ শতাব্দীর শেষ ভাগে, সম্ভ্রান্ত ও নিচু- দুই সমাজের নারী-পুরুষ উভয়ই ডাইনিদের সম্পর্কে আরও ভয়াবহ ধারণা পোষণ করতো। ১৬০২ সালে লর্ড চীফ জাস্টিস অ্যান্ডারসন লিখেছিলেন- “চারপাশ ডাইনি দিয়ে ভরে গেছে…সব জায়গায়তেই তাদের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়।” কথাটা কিন্তু তিনি রসিকতা করে বলেননি; বলেননি প্রতীকীস্বরূপও। বলেছেন ডাইনিদের জীবন-জীবিকার প্রতি হুমকি মনে করে, স্বর্গের পবিত্রতার প্রতি অবমাননা হিসেবে বিবেচনা করে।

ঠিক কতজনকে ডাইনি অপবাদে হত্যা করা হয়েছিল?


উল্লিখিত শতাব্দীতে নারীদের ডাইনি- অভিযোগে অভিযুক্ত করা, ফাঁসিতে ঝোলানো ছিল তৎকালীন সংস্কৃতির একটা অংশ। ইউরোপের ইতিহাসের এই সময়কে ঘিরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গল্প, মুখে মুখে ছড়িয়েছে ভুলে ভরা গুজব। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ড্যান ব্রাউনের ডা ভিঞ্চি কোড বইতে বলা হয়েছেঃ “ডাইনি অভিযোগে চার্চ কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন নারীকে পুড়িয়ে মেরেছে।” এ কথা সত্যি হলেই বরং বিস্ময় জাগাতো। প্রকৃত সংখ্যাটা আরও অনেক কম, তবে সেটাও নেহাত কম না। ১৪৮২ থেকে ১৭৮২ পর্যন্ত গোটা ইউরোপে ১০০,০০০ এর মতো মানুষকে ডাইনি বিদ্যা চর্চার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। যাদের মাঝে ৪০-৫০ হাজার মানুষকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
অবশ্য এক্সোডাস (যাত্রাপুস্তক) ২২.১৮ এর বাণী অনুযায়ী (কোনো জাদুকারিণীকে বেঁচে থাকতে দেবে না - Thou shalt not suffer a witch to live) ডাইনিতে বিশ্বাস ছিল অর্থোডক্স মতবাদের অংশ। ১৬শ আর ১৭শ শতাব্দীতে আইন অনুযায়ী ডাকিনী বিদ্যা চর্চার বিচার করা হতো। ১৫৪২ সাল নাগাদ ইংল্যান্ডে ডাকিনীবিদ্যা আইনগত অপরাধে পরিণত হয়। ১৫৬২ আর ১৬০২ সালে মোট দু’বার এই আইন সংস্কার করা হয়। ইউরোপে ডাইনিদের আর খুনিদের একই শাস্তি দেয়া হতো- ফাঁসি (তবে স্কটল্যান্ড আর স্প্যানিশ ইনকুইজিশনের অধীনে ডাইনিদের পুড়িয়ে হত্যা করা হতো)।
আগের যুগে পুরুষদের তুলনায় নারীদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ভাবে দুর্বল ভাবা হতো, যার ফলে শয়তানের প্রভাবের কাছে কাবু বেশি তারাই হবে- এমনটাই মনে করতো সমাজ। যাদের ডাইনি বলে অপবাদ দেয়া হতো সেসব নারীদের বেশির ভাগই ছিল বিধবা, গরীব ও বয়স্ক।

যাদুকরদের উপস্থিতি
তবে সব ডাইনিই নারীরা ছিল না- পুরুষরাও ডাইনি বা যাদুকর হতে পারতো। ইউরোপে যতজনকে ডাইনি বলে অপবাদ দেয়া হয়েছিল তার ৭০-৮০ ভাগই ছিল নারী। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে নারীদের এই শতকরা হারটা বেশি ছিল। এই অঞ্চলগুলোর মাঝে রয়েছে- বিশোপ্রিক অফ বাসেল, কাউন্টি অফ নামুর (আধুনিক বেলজিয়াম), হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের এসেক্স। ইউরোপে প্রতি পাঁচ জন ডাইনির মাঝে একজন পুরুষ যাদুকর থাকতোই। তবে অল্প কিছু জায়গায় যাদুকরদের উপস্থিতি তুলনামূলক ভাবে বেশি ছিল- যেমন মস্কোতে নারী ডাইনিদের বিপরীতে পুরুষ যাদুকরদের অনুপাত ছিল ৭:৩, নরম্যান্ডিতে ৩:১।

আধুনিক যুগ
আধুনিক যুগেও বিশেষ করে আফ্রিকাতে মানুষ ডাইনিদের উপস্থিতি সম্পর্কে বিশ্বাস করে। ১৯৯৯ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়- কঙ্গোতে শিশুদের ডাইনি সন্দেহ করা হচ্ছে ও তাঞ্জানিয়াতে ডাইনি সন্দেহে বয়স্ক মহিলাদের মারা হচ্ছে যদি তাদের চোখ লাল হয়। আফ্রিকাতে অনেক সময় দেখা যায় যে, খোদ আত্নীয়-স্বজনরাই সম্পত্তির লোভে আপনজনকে ডাইনি বলে অপবাদ দেয়, এতে সেই নারীর সম্পত্তি গ্রাস করতে তাদের সুবিধা হয়। আমেরিকাতেও ডাকিনীবিদ্যা সম্পর্কীত ঘটনা শোনা যায়। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে ওকলাহোমাতে এক ছাত্রীকে ১৫ দিনের জন্য স্কুল থেকে বহিঃষ্কার করা হয় যাদুমন্ত্র করার অভিযোগে। ২০০৬ সালে সৌদি আরবে ফাওজা ফালিহ নামের এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয় ও অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয় ডাইনি সন্দেহে।

যুগে যুগে মানুষ কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে নানা ধরণের অনৈতিক কাজ করে আসছে, যার ফলে প্রাণহানি ঘটছে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৪২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×