অাজ সেই ভয়াল বিভিষীকাময় ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার প্রাকৃতিক তাণ্ডবে নোয়াখালী ও পার্বত্য উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পরিণত হয়েছিল বিরাণভুমিতে।সেদিন ১২ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ফলে নিমিষেই তলিয়ে যায় নোয়াখালীসহ উপকূলীয় চরাঞ্চলের বাড়িঘর আর মাঠের সোনালী ফসল। স্রোতের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল কয়েক লাখ মানুষ ও গবাদি পশু। নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচর (তৎকালীন চরবাটা, চরজব্বর), কোম্পানীগঞ্জ, হাতিয়া,উরির চর, চর বদুয়া, সন্দ্বীপ,সুধারাম, রামগতি, রায়পুর, সোনাগাজী , পটুয়াখালীর গলাচিপা, দশমিনা, কলাপাড়া; বরগুনার পাথরঘাটা, বেতাগী, তালতলী ও আমতলী; ভোলার চরফ্যাশন, লালমোহন, দৌলতখান, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দীন; এবং চট্টগ্রাম জেলার কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ও দ্বীপ। ক্ষয়ক্ষতি ছিল অবর্ণনীয়। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই মধ্যরাতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘গোরকী’।
মৃত্যু ঘটে প্রায় ১০ লাখ মানুষের। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) বিবেচনায় এ পর্যন্ত রেকর্ড করা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ।এ ঘূর্ণিঝড়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতি হয় দেশের ১৮টি জেলার।
বিভিষীকাময় ওই দিনের কথা বলতে গেলে সুবর্ণচরের স্বজনহারাদের হাহাকার আর্তনাদ এখনো যেনো কানে বাজে। অনেক পরিবারের বংশশূন্য হয়ে যায়, আবার কারো পরিবারের দু-একজন বেঁচে গিয়েছেন ডাল-পালা ও গবাদিপশুর লেজ ধরে।সেদিন কাফন ছাড়াই দাফন হয়েছিল বেশির ভাগ লাশ। অনেকের লাশ জোয়ারে ভেসে যায় দূর-দুরান্তে। হাজার হাজার মানুষ ও মৃত পশুপাখিকে এক গর্তে পুঁতে ফেলা হয়েছিল।বহু লাশ গাছের উপর থেকে পঁচে গলে পড়েছে। মানুষসহ গবাদি পশুপাখি ও জীবজন্তুর পঁচা গন্ধে বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল ওই অঞ্চলের পরিবেশ। কোথাও নিঃশ্বাস নেয়ার উপায় ছিল না।
ভয়াল সেই বন্যার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের আমেনা বেগমের (৬৫) কাছে ওই দিনের ভয়াবহতার কথা জানতে চাইলে ওনার চোখে পানি চলে আসে। তিনি কেঁদে উঠেন। তিনি জানান,‘‘১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে এ ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয় উপকূলীয় অঞ্চলে। ১১ নভেম্বর সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। পরদিন ১২ নভেম্বর সকাল থেকে কালো মেঘের সঙ্গে আবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বাতাসের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাগর রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। রাত ৮টার দিকে হঠাৎ কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বাতাসের তীব্রতা বেড়ে যায়। রাত আনুমানিক ১১টার পর শোঁ শোঁ শব্দ করতে করতে দেখলাম জোয়ারের পানিতে সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।রাত ২টা পর্যন্ত ২৫-৩০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় । কোন রকমে নানা আবুল মিয়াদের ঘরের টিন ধরে, গাছের ডাল ধরে বিভিষীকাময় সেই রাতটি পার করছিলাম আমরা’’।
এই প্রেক্ষাপটে দেশের আপামর জনসাধারণ থেকে দাবী উঠেছে ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস হিসাবে যেন ঘোষনা করা হয়।
ধ্বংসের মাঝেই ফুটে উঠুক সভ্যতার রক্তিম গোলাপ।
[email protected]
facebook.com/mohammad.toriqueullah
01733 594 270
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬