somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অাজ ভয়াল ১২ নভেম্বর

১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অাজ সেই ভয়াল বিভিষীকাময় ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার প্রাকৃতিক তাণ্ডবে নোয়াখালী ও পার্বত্য উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পরিণত হয়েছিল বিরাণভুমিতে।সেদিন ১২ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ফলে নিমিষেই তলিয়ে যায় নোয়াখালীসহ উপকূলীয় চরাঞ্চলের বাড়িঘর আর মাঠের সোনালী ফসল। স্রোতের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল কয়েক লাখ মানুষ ও গবাদি পশু। নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচর (তৎকালীন চরবাটা, চরজব্বর), কোম্পানীগঞ্জ, হাতিয়া,উরির চর, চর বদুয়া, সন্দ্বীপ,সুধারাম, রামগতি, রায়পুর, সোনাগাজী , পটুয়াখালীর গলাচিপা, দশমিনা, কলাপাড়া; বরগুনার পাথরঘাটা, বেতাগী, তালতলী ও আমতলী; ভোলার চরফ্যাশন, লালমোহন, দৌলতখান, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দীন; এবং চট্টগ্রাম জেলার কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ও দ্বীপ। ক্ষয়ক্ষতি ছিল অবর্ণনীয়। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই মধ্যরাতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘গোরকী’।
মৃত্যু ঘটে প্রায় ১০ লাখ মানুষের। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) বিবেচনায় এ পর্যন্ত রেকর্ড করা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ।এ ঘূর্ণিঝড়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতি হয় দেশের ১৮টি জেলার।

বিভিষীকাময় ওই দিনের কথা বলতে গেলে সুবর্ণচরের স্বজনহারাদের হাহাকার আর্তনাদ এখনো যেনো কানে বাজে। অনেক পরিবারের বংশশূন্য হয়ে যায়, আবার কারো পরিবারের দু-একজন বেঁচে গিয়েছেন ডাল-পালা ও গবাদিপশুর লেজ ধরে।সেদিন কাফন ছাড়াই দাফন হয়েছিল বেশির ভাগ লাশ। অনেকের লাশ জোয়ারে ভেসে যায় দূর-দুরান্তে। হাজার হাজার মানুষ ও মৃত পশুপাখিকে এক গর্তে পুঁতে ফেলা হয়েছিল।বহু লাশ গাছের উপর থেকে পঁচে গলে পড়েছে। মানুষসহ গবাদি পশুপাখি ও জীবজন্তুর পঁচা গন্ধে বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল ওই অঞ্চলের পরিবেশ। কোথাও নিঃশ্বাস নেয়ার উপায় ছিল না।

ভয়াল সেই বন্যার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের আমেনা বেগমের (৬৫) কাছে ওই দিনের ভয়াবহতার কথা জানতে চাইলে ওনার চোখে পানি চলে আসে। তিনি কেঁদে উঠেন। তিনি জানান,‘‘১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে এ ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয় উপকূলীয় অঞ্চলে। ১১ নভেম্বর সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। পরদিন ১২ নভেম্বর সকাল থেকে কালো মেঘের সঙ্গে আবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বাতাসের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাগর রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। রাত ৮টার দিকে হঠাৎ কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বাতাসের তীব্রতা বেড়ে যায়। রাত আনুমানিক ১১টার পর শোঁ শোঁ শব্দ করতে করতে দেখলাম জোয়ারের পানিতে সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।রাত ২টা পর্যন্ত ২৫-৩০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় । কোন রকমে নানা আবুল মিয়াদের ঘরের টিন ধরে, গাছের ডাল ধরে বিভিষীকাময় সেই রাতটি পার করছিলাম আমরা’’।

এই প্রেক্ষাপটে দেশের আপামর জনসাধারণ থেকে দাবী উঠেছে ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস হিসাবে যেন ঘোষনা করা হয়।

ধ্বংসের মাঝেই ফুটে উঠুক সভ্যতার রক্তিম গোলাপ।


[email protected]
facebook.com/mohammad.toriqueullah
01733 594 270
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×