somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিরেক্টর

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল ববির 'দেহরক্ষী' ছবিটা দেখলাম। বেশ দূর্দান্ত। প্রচুর নাচ-গান আছে, একশন আছে, তবে গভীরতা কম। বাণিজ্যিক ছবিরও একটা গভীরতা থাকে। এটার গভীরতা হাটু পানি। এর বেশি ডুবাইতে হইলে হাটু ভাঁজ করা লাগবে। নায়ক নায়িকার কখন কোলাকুলি হবে সেইটা দেখার জন্য দর্শকের একটা আগ্রহ জন্মাইতে হবে। কিন্তু ছবির শুরু থিকাই এমন অবস্থা দাঁড় করাইছেন পরিচালক যে ভিলেনের সাথেই বিয়া দিতে চাইবো দর্শক। তবে আশার কথা, ববি একেবারে আন্তর্জাতিক মানের ফিগারের নায়িকা। ভিলেন চরিত্রে মিলন জব্বর অভিনয় করছেন। আর মাঠে মাইরা দিছে নায়ক তীব্র হাসান। শানদার গরম নাম দিতে গিয়া হাসানের নামের সামনে 'তীব্র' দিলেও তার অভিনয় হইছে মাইল্ড, গলার স্বর কোচিং এর ভাইয়াদের মতো নরম। বিদেশি ছবি থিকা কপি করতে গেলে বা কাহিনী অবলম্বন করতে গেলে বা হালের 'ইন্সপায়ারড' হইতে গেলে কিছু কৌশল লইতে পারেন উনারা। এতে দর্শক মনে করবে আসলেই কাহিনীটা নতুন-

১. নায়ক-নায়িকার রোল চেঞ্জ কইরা দেন। ধরেন 'দেহরক্ষী' ছবিতে বডিগার্ড নায়কের সাথে নায়িকার প্রেম একটা ভেড়ামারা পুরান কাহিনী। এইটারে উল্টায়ে দিলে মহিলা বডিগার্ড ববির সাথে নায়ক লুতুপুতু হাসানের প্রেম দিতেন- একদম মাইন্ড ব্লোয়িং হইতো। মাইরপিট সব ববি করবে আর নায়ক হাসান 'আহা, উহু' করবে।

২. একশন দৃশ্যে অভিনব অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেন। গ্রেনেড, বন্দুক, রাইফেল- এইসব পুরান হইয়া গেছে। বেইসবল ব্যাট, (গোল্ড প্লেট) দা, (স্পাইকওয়ালা)লগি, (মাথায় ছুরি ওয়ালা)বৈঠা, রকেট লাঞ্চার, ড্রোন এইসব নিয়া আসেন। হয় হাতাহাতি একশন, নাইলে দূরপাল্লার ডিস্কাও। মাঝামাঝি কিছু নাই।

৩. নায়করে আরো ভালনারেবল করতে হবে। নায়কের শরীর হবে টানটান। কিন্তু হৃদয় হবে লুজ, নরম, ভালোবাসার জন্য ব্যাকুল মরুভূমি। নায়কের বাপ-মারে মাইরা ফেলেন, তারে এতিম বানায়া দেন। ধরেন নায়কের বাবা মা চিকিৎসা করাইতে ঢাকায় আসছেন। উনাদের বাসে আগুন ধরায়া দিল। উনারা ৯৫%বার্ন। স্পট ডেড।পাবলিকের দিল সফট সোডিয়াম হইয়া যাবে। নায়করে কোন ইনজাস্টিসের ভুক্তভোগী দেখান। ধরেন ভালো রেজাল্ট স্বত্ত্বেও বিসিএস পরীক্ষায় কোটাসুবিধা বঞ্চিত কইরা বেকার বানাইলেন, অথবা বড়লোক দেখাইতে চাইলে (আজকাল কেন জানি কেউ গরীব নায়ক পছন্দ করে না, সবার পছন্দ বুক শেভ করা অনন্ত জলীল মার্কা বড়লোক, প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পাইলে আরো ভালো) তারে প্রথমে বড়লোক দেখায়া এরপরে শেয়ার মার্কেটে ফতুর কইরা দেন। বাস্তবের সাথে অবাস্তবের একটা মিলমিশ কইরা দেন।

ডিরেক্টরদের জন্য আমার সামান্য টিপস কাজে লাগতে পারে ভাইবা এতকথা লেখলাম। কবি কামরুজ্জামান কামুর 'দ্য ডিরেক্টর' ছবিটা সেন্সরবোর্ড আটক করছে। পরিচালকের সাথে চ্যাট হইলো। আমি উনারে জিগাইলাম, ছবি আটকাইছে কেন? উনি বললেন 'উনাদের পছন্দ হয় নাই'। আমি আরো কিউরিয়াস হইলাম। আবার জিগাইলাম 'খারাপ সিন আছে?' কয় 'না'। তারপরে কইলাম 'মুক্তিযুদ্ধ নিয়া কোন এক্সপেরিমেন্ট আছে', কয় 'না'। বড়ই মুসিবত। আবার জিগাইলাম 'তাইলে কি খারাপ ডায়ালগ আছে?'। এরপরে উনি খোলাসা করলেন। মনে হয় এই এক কথা বলতে বলতে উনি ত্যক্ত।
সেন্সরবোর্ড বলতেছে ছবিতে ডিরেক্টরদের চরিত্র খারাপ দেখানো হইছে। পুলিশ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ডাক্তার, হুজুর সবার চরিত্র খারাপ দেখানো যাবে, কিন্তু বিশেষ সাংস্কৃতিক পেশার গোষ্ঠীকে(ডিরেক্টরদের) দেখাইতে হবে সিরাতুল মুস্তাকিম। অভিযোগনামা এইরকম-
'চলচ্চিত্রটিতে মূল কাহিনী অপর্যাপ্ত, অশ্লীল সংলাপের ব্যবহার, বিশেষ সাংস্কৃতিক পেশার গোষ্ঠীকে হেয়ভাবে উপস্থাপন, চলচ্চিত্রশিল্পের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা জন্মায় এমনভাবে কাহিনীর চিত্রায়ণসহ আগ্নেয়াস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার আছে। এছাড়া আছে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, আইনহীনতা ও লাম্পট্য।'

কামরুজ্জামান সাহেব বলতেছেন ছবি কাহিনীতে ঠাসাঠাসি অবস্থা। তারচেয়ে বড় প্রশ্ন জাগলো, কাহিনী কম বা বেশির ইউনিট কি? ধরেন, এক 'টাইটানিক' পরিমান কাহিনী থাকতে হবে এইরকম কোন বিধান আছে? অশ্লীল ডায়ালগ কমবেশি সব ছবিতেই আছে। সাধুভাষায় মাঝে মাঝেই কিছু ডায়ালগ লেখা হয় যেগুলা শুনলে মনে হয় বঙ্গিম পাঠের আসর বসছে। এরপরের অভিযোগ আগ্নেয়াস্ত্র। আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া ভিলেনের সাথে মারামারি করবো ক্যামনে? দেহরক্ষীতে দেখলাম গ্রেনেড মারতেছে। আমিতো কই রকেট প্রপেল্ড গ্রেনেড মার। নির্বিচারে মানুষ হত্যার কথা যদি বলেন তাইলে কিলবিল, র‍্যাম্বো মুভিগুলা দেখতে পারেন। যে হারে মানুষ মারে তারা, তাতে মনে হয় আজকেই দুনিয়ার জনসংখ্যা ডাবল ডিজিটে নিয়া আসবে। প্রশ্ন হইতেছে এমন সংবেদনশীল সেন্সরবোর্ড দিয়া আমরা কি করবো?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×