প্রকৃতিগতভাবে মানুষ নিজের মতের সমর্থনে কথা শুনতে পছন্দ করে । প্রশংসা শুনতে অনেক পছন্দ করে থাকে । অথচ এ প্রশংসা ও শুধু নিজ পছন্দের কথা শুনতে থাকায় নিজের ক্ষতির মুল কারন । আয়না আপনার মুখের সমালোচনা করে দেখিয়ে দেয় কোথায় দাগ আছে । আপনার মুখের দাগ দেখানোর জন্য আপনি আয়না ভাঙ্গতে উদ্যত হলে আপনি যে কেমন বুদ্ধিমান মানুষ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।
একজন হিন্দু তার ধর্মের অসারতা জীবনেও দেখতে পারবে না যতদিন না সে তার নিজ ধর্মের সমালোচনা কে সহ্য করতে পারবে । সে জন্ম থেকে নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব শুনে আসছে আর যে বা যারা এর শ্রেষ্ঠত্ব বলে তাদেরকে পরম শ্রদ্ধা করে এবং তাদের কথায় শুনতে পছন্দ করে এবং সমালোচনাকে শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে থাকে ।
কিছু লোক সন্নাসীর জীবন অবলম্বন করে তার পুরো জীবন বহু ত্যগ তিতিক্ষায় বিলিয়ে দেয় । আফসো ! যদি সে তার সমালোচকের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনতো তাহলে হয়ত সে তার জীবনের ভূল সিদ্ধান্তগুলো খুজে পেত।
কোন মুসলমান মাজারে গিয়ে ব্যপক অর্থকড়ি নষ্ট করে, কেউ পীরের পিছনে জীবন কাটায়, কেউ আত্মঘাতি বোমা মেরে ধর্মের জন্য নিজের জীবনটা বিলিয়ে দিয়ে তার পিতা-মাতাকে অসহায় করে দিয়ে এ ধরা থেকে চলে যায়, কেউ ইসলামী রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে নিজের জীবনটা উক্ত দলের পিছনে নিজ জীবন বিলিয়ে দিয়ে শ্রষ্ঠার সন্তুষ্টি খুজে ফেরে, কেউ তাবলিগিতে যোগ দিয়ে মাসের পর মাস পরিবার ছেড়ে মসজীদে মসজীদে কাটিয়ে দিয়ে নিজ জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে, বার্ধক্য বয়সে ইজতেমায় গিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে । কেউ তার নিজ বিশ্বাস ও চিন্তা চেতনার সমালোচনা শুনতে পছন্দ করে না ।
আর যদি সমালোচনাটি হয় আস্তিকতা-নাস্তিকতা বিষয়ে তাহলে তো কথায় নেই । নাস্তিকের সাথে আবার কিসের কথা । আপনি যদি কোন মতবাদের সমালোচনা আপনের পক্ষের মতের লোক থেকে শুনে মনে ঘৃনা আগে থেকেই জমে থাকে, তাহলে যার সমালোচনা শুনেছেন তা যদি ভূলও শুনে থাকেন তাহলে তা ঠিক করার সুযোগ আপনি হারাবেন । কারন প্রথম থেকেই আপনি মন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছে । আপনি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় তাহলে তার সঠিক দিকগুলো আপনি কখনও দেখতে পাবেন না ।
যিনি সমালোচনা করে তিনি যদি শত্রুতামি করেও আপনার সমালোচনা করে তথাপিও আপনি তার কথাকে গুরুত্ব দিন । কারন সে আপনার ত্রুটিগুলো অনেক কষ্ট করে খুজে বের করে দিবে যা আপনি হয়ত দেখতে পেতেন না । তার সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করে আপনি আপনার চিন্তা, দর্শন ও জীবন পদ্ধতিতে সংশোধন এনে আলোকিত জীবন গড়ুন ।
আপনি যদি সমালোচনাকে নেতিবাচকভাবে ব্যখ্যা করে তবে মনে রাখবেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ধারনারও নেতিবাচক কিছু ব্যখ্যা বের করা সম্ভব । আপনি তো আপনার নিজের ক্ষতি চান না, চান কি? তাহলে সমালোচনাকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে নিজের ভূলকে সংশোধন করে নিন।
সুতরাং তর্ক বিতর্কই আপনার নিজ মতাদর্শের ভূল খুজে পাওয়ার সবচেয়ে সহজতম ও শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি । তর্ক বিতর্কের ক্ষেত্রে যারা বাজে ভাষা ব্যবহার করে পরিবেশ নষ্ট করে তারা সেটা করে তাদের মুর্খতাহেতু । সবাই তো এরুপ মুর্খ নয় । কয়েকজন মুর্খ বিতার্কিকের কারনে আপনি তর্ক বিতর্ককে খারাপ বলতে পারেন না । যারা পরিবেশ নষ্ট করে তাদেরকে এড়িয়ে চলুন ।