somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১০ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চার বছর। সংখ্যার হিসাবে কম নয়।১৪৬০ টি দিন।
দাদা তুমি কি জান, এই সুদীর্ঘ সময় জুড়ে আমি তোমাকে ভুলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু প্রায় প্রতিটি দিন তোমার স্মৃতি তোমার ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে ফুটছে আমার কাছে।
তুমি যদি পড়তে পারতে তাহলে হয়ত খুব অবাক হয়ে বলতে, তোর মত পিশাচ কাউকে ভুলতে পারছে না! বলিস কি?
কিন্তু দাদা তুমি কি জান দুনিয়ার সবকিছু আমি সহজে ভুলে যায়,কঠিন এই আমার কাছে মায়া মমতা সব কিছুই বড় বেশী মেয়েলীপনা মনে হলেও একমাত্র তোমার কাছে আমি এখনো অসহায়। তোমাকে ভুলাটা আমার কাছে কখনই সম্ভব নয়। দাদা তুমি কি জান, আমি আমার বড় হওয়ার পর একবারই চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। তোমার মৃত্যুর দিন।সেই তোমার স্মৃতিগুলো মুছা কিভাবে সম্ভব? শুধু আমি নয় তোমার চারপাশের কেউই পারছে না। তোমার কি সেই জেলেগুলোর কথা মনে আছে? যারা তোমার সরলতার সুযোগ নিয়ে তোমাকে পচা মাছ গছিয়ে দিত। জান তাদের সাথে দেখা হলে তারা এখনও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে এমন মানুষ আর হয় না! সত্যিই তো হয় না। নাহলে কি কেউ নিজের চাকরির মায়া ছেড়ে জীবন বাজি রেখে অচেনা কোনও তরুণীকে রায়ট এর সময় উদ্ধার করে কলিকাতা থেকে সুদূর রাজবাড়িতে তার বাড়িতে রেখে আসে?

দাদা আমি তোমাকে কতটা শ্রদ্ধা করি তা কি তুমি বুঝতে? তুমি ব্রিটিশ সৈনিক ছিলে বলে আমি আজও সেনাদের প্রতি দুর্বল। সেনাদের শত আকাম কুকাম ও আমার চোখে বাজে না। তাদের প্রতি আমার আলাদা একটা মায়া সবসময় কাজ করে।

দাদা তুমি সবসময় যা বলতে তা হয়ত এই লেখাটি পড়লে আবার বলতে আমার পাগলা ভাই। কিন্তু দাদা কি করব বল? আমি তো জীবনেও ভুলতে পারব না আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে দেখার জন্য তুমি তিন চিল্লায় গিয়ে ৪০ দিন পরই বাড়িতে চলে আসলে। আমাদের জড়িয়ে ধরে চেঁচিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তোমার বলা সেই কথাগুলো, তোদের তো ভাই ভুলতে পারি না। কি হবে মসজিদে মসজিদে ঘুরে?
দাদা আমার খুব জানতে ইচ্ছা হয় এখন তুমি আমাদের ছেড়ে কিভাবে আছ? এখন কি তোমার কান্না আসে না? দেখ লেখতে গিয়ে আমার চোখ জ্বলছে। ভিজে আসছে।এরপরও আমি পিশাচ, না? তাহলে তুমি কি? দাদা আমার বন্ধুরা প্রায়ই তোমার গল্প করে। তোমার কি মনে আছে আমরা বিকালে যেখানে আড্ডা দিতাম সেখানে চলে আসতে তুমি। প্রথম প্রথম আমি বিব্রত হতাম। তারপর দেখলাম দ্রুত তুমি সবার মন জয় করে নিয়েছ। তুমি আমাদের বলতে তোমার সৈনিক জীবনের কথা। কোথায় ইন্দোনেশিয়া কোথায় লাহোর আর কোথায় বা হায়দারবাদ। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম সেসব কথা।

জান বিকালে আমি আজো পেঁয়াজু খাই না। কারণ এই সময়টাই আমাদের সাথে বসে তুমি পেঁয়াজু খেতে। হ্যাঁ আমি চাই এই সবকিছু ভুলে যেতে।
দাদা আজও বাজারের সব দোকানীরা তোমার কথা বলে। এই আমি এত বড় হয়েছি তবু সবাই আমার নাম জানে না। ডাকে আমায় নিজাম সাহেবের নাতি বলে। গর্বে আমার বুক তখন ফুলে যায়। এত মানুষ তোমাকে চিনত!

দাদা শেষ সময়টা তুমি যখন খুব অসুস্থ তখন তোমায় হাটতে আমি মানা করতাম। পেঁয়াজু খেতে দিতাম না। হাটাহাটি আর চা-পেঁয়াজু এগুলোই তো ছিল তোমার সব। তুমি তখন মুখ অন্ধকার করতে। আমার উপর রাগ করতে।জান এখন আমার অনুশোচনা হয় ভীষণ। এতকিছুর পরও তো থাকই নি আমাদের সাথে।এত সেবা এত ডাক্তার কই কিছুই তো হল না।স্বর্গে থাকা দাদীর ঠান এতটাই ছিল যে আমাদের সব চেষ্টা ভালোবাসা সেখানে ছিল তুচ্ছ। তাহলে এগুলো খেলে আর হাঁটলে কি এমন ক্ষতি হত। তখন বুঝিনি আমি বিশ্বাস কর।
ক্ষমা করো আমায় তুমি।

(৮ই মার্চ আমার দাদার মৃত্যু দিবস। এই মানুষটাকে আমি কতটা ভালোবাসি তা আমি কাউকে কোনোদিন বুঝাতে পারব না। আপনার প্লিজ তার জন্য দোআ করবেন যেন ঈশ্বর তার রহমতের ছায়ায় দাদাকে রাখেন সবসময়।)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৯:৩৮
৫৮টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×