somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডঃ জাফর ইকবালের রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ‘মৌলবাদ বিরোধিতা’ এবং জনপ্রিয়তার বায়বীয়তা।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডঃ জাফর ইকবাল একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন বরাবরই। আমি যে স্কুলে পড়েছি সেই স্কুল থেকে উনি মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান নিয়ে এস এস সি পাশ করেছিলেন। তিনি এই মেধার ধারা বজায় রেখেই আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে। কিন্তু এই দেশে তিনি তার অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন প্রথমত তার লেখনি দ্বারা। তার নিজের ভাই ডঃ হুমায়ুন আহমদের লেখক ও কথা সাহিত্যিক হিসেবে দীর্ঘ সুখ্যাতি ও জনপ্রিয়তার কারনে এ দেশের সাহিত্যের বাজারে তার ছোট ভাইয়ের আগমন সহজ হয়েছিলো কিনা সে বিষয়ে তেমন কোন কথা অবশ্য শোনা যায়নি। তবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (কিছু কিছু বিদেশি বই অবলম্বনে বা কোন ইংরেজি মুভি থেকে কপি করা বলেও জনশ্রুতি আছে) কিশোর-কিশোরিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। এবং তাদের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এরপরে তার অবস্থান আরো সুসঙ্ঘত হয় একটি সারা দেশব্যাপি শিশু-কিশোরদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগীতার আয়োজক হিসেবে। এই প্রতিযোগীতা গুলোর পজিটিভ ইমপ্যাক্ট দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের মধ্যে কতখানি পড়েছে সেটার থেকে বড় হলো যে একটি বহূল প্রচারিত মিডিয়ার কল্যানে তিনি অতি দ্রুতই সেলিব্রিটি মানুষে পরিনত হোন। অবশ্য এরই মাঝে তিনি সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটা গুরুত্বপূর্ন আসনেও আসীন হয়ে যান।


এতদপর্যন্ত তার সব কিছুই প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি হঠাত করেই রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠলেন গত বি এন পি জোটের ক্ষমতার সময়। জামাতের ক্ষমতায় থাকাটা তিনি মেনে নিতে না পারার কারনেই হয়তো তার এই পরিবর্তনের কারন। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমেই তিনি এই দেশকে ‘মৌলবাদীর দেশ’ বানিয়ে ফেললেন। এরপরেও তার কর্মকান্ড মেনে নিতে কোন সমস্যা হয়না কারো কারন, যে কোন সরকারের ১/২ বছর পর থেকে সবাই সমালোচনা শুনতেই পছন্দ করে আর গত জোট সরকারের সময় স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার কারনে অভিযুক্ত কিছু লোকের গাড়ীতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়ে ডঃ জাফর ইকবালদের জোট সরকার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার অস্ত্র তুলে দিয়েছে । বি এন পি এর সময়ে বাহিরের কোন এক কোম্পানীর (নাম মনে করতে পারছিনা) সাথে গ্যাস চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়াই শুধু নয়, একটি বইও লিখে ফেললেন যাতে রুপকভাবে দেখানো হলো যে বি এন পি এর সময়ে করা চুক্তির ফলে ২০-৩০ বছর দেশ ভয়ানক জ্বালানী এবং বিদ্যুৎ সংকটে পড়ছে। তারপরও সামাজিকভাবে সুশীল শ্রেনীতে থাকার কারনে আর সমাজে প্রভাব বিস্তারকারী সুশীল মিডিয়ার কল্যানে তার বিরুদ্ধে একটা বিশেষ গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠলেও আপাতভাবেই তার কর্মকান্ডকে পক্ষপাতমূলক বলে বেশিরভাগই মনে হয়নি।


রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ভুমিকা এবং অনলাইন যুদ্ধ

কিন্তু ডঃ জাফর ইকবালের সাম্প্রতিক লেখা, তার এক কালের নিরবচ্ছিন্ন সুনামকে অনেক প্রশ্নেরই সুম্মখীন করছে । সবার আগে প্রশ্ন করতে চাই, কেন তার বিরুদ্ধে লোকজন এখন নিদারুনভাবে লেগেছে, কই ২/৩ বছর আগেও তো তার লেখার বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হতোনা? এখন হয়, কারণ তার বেশির ভাগ মতামত এখন নির্দিষ্ট পক্ষপাতমূলক হয়ে যাচ্ছে এবং সেটা রাজনৈতিকভাবেই। যেমন, তার সাম্প্রতিক লেখায় যে বিভিন্ন ধরনের তারুন্যের জন্যে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন, তাতে শেয়ারবাজারে বিধ্বস্ত তরুনদের কথা আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন খবরের কাগজেই শেয়ারবাজারে ক্রন্দনরত/আন্দোলনরত তরুনদের ছবি খুব কমন কিন্তু কোন কারনে তিনি তাদের নিয়ে আসেননি আলোচনায়। উনি বি এন পি সময়ে গ্যাস-রফতানি নিয়ে বইই লিখে ফেললেন, আর এবার আওয়ামী লীগ সরকার যখন কনোকো ফিলিপসের সাথে গ্যাস নিয়ে চুক্তি করলো তার মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি কোন কথা/প্রতিবাদ করেননি। চুক্তি হবার অনেকদিন পরে একটা লিখলেন কিন্তু সেটাতে কোন শক্ত প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। উনি মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন নিয়ে চিন্তিত হলেও, ছাত্রলীগের ক্রমাগত সন্ত্রাস নিয়ে কোন কথা বলেননি। উপরন্তু তিনি মাদ্রাসা ছাত্রের জন্যে শাবিপ্রবি'র ৭ টা বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করার সাথে শক্তভাবে জড়িত ছিলেন। অথচ, গনদাবীর মুখে এই নিয়ম রহিত হবার পর যে ভর্তি পরীক্ষা হলো তাতে দেখা গেলো হিউম্যানিটিজ বিভাগে জামিল আহমেদ নামে একজন মাদ্রাসা ছাত্রই ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেন। আমি আগেই একটা কথা বলেছি যে কোন সরকারের আমলে ১/২ বছর পরে তার সমালোচনা শুনতেই বেশিরভাগ মানুষ পছন্দ করে, কিন্তু উনি আগের মত এবার সরকারের সমালোচনায় যাচ্ছেন না। হতে পারে যে তিনি চাইছেন কোনভাবেই যে জামাত ভুক্ত কোন জোট যেন ক্ষমতায় যেন না আসে তার জন্যেই আওয়ামী লীগের পক্ষেই কথা বলছেন। কিন্তু ডঃ সাহেবের জানা উচিত, সাধারন মানুষের সামাজিক সমস্যা এতো প্রকট তারা আওয়ামী লীগের পক্ষের কথাকে ওয়েলকাম জানাবে না।



ফলশ্রুতিতে তার পুরাতন সমালোচকদের সাথে যোগ হচ্ছে নতুন সমালোচকরা। আর উনিও তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন সমালোচনার অস্ত্র, এটা কি উনি তার জনপ্রিয়তা মাপার জন্যে করছেন কিনা সেটা অবশ্য আলাদা বিষয়। কারন ইতিমধ্যে কিছু ব্লগ, ক্ষেত্র বিশেষে কোন নামকরা ব্লগার বলতে গেলে ডঃ জাফর ইকবালের পক্ষ হয়ে যুদ্ধই ঘোষনা করেছেন। তার ঐ লেখার ব্যাখ্যা নিজের মত করে দিয়ে ডঃ জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে লেখা সব লেখককে এক শ্রেনীভুক্ত করে ফেলছে। এসব দেখলে মনে হয়, ডঃ ইকবাল কখনোই কোন ভুল করতে পারেন না। তাদের প্রধান অভিযোগ কেন তার মেয়ের ছবি আনা হলো তার লেখার সমালোচনা করতে গিয়ে এবং এই ধরনের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে টানা হেচরা কোন ভালো মানুষ করতে পারেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ যখন বেগম জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ করার সময় তার বেডরুম থেকে অশ্লীল পত্রিকা এবং মদ পাওয়ার যে ‘মিডিয়া নাটক’ করা হলো, তখন ডঃ ইকবালের পক্ষের এই অনলাইন যোদ্ধাদের কাউকে কিম্বা সেইসব ব্লগের কাউকেই কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। আবার মাঝে ‘নাগরিকব্লগ’ নামে একটা ব্লগ থেকে বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের ছেলে মেয়েদের প্রবাস জীবন নিয়ে একটা পোস্ট খুব হিট করেছিলো। এটা নিয়েও কোন মাতামাতি ছিলোনা। আজ এক বিশিষ্ট ব্লগারের ফেসবুকে দেখলাম, উনি নাকি যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন ডঃ জাফর ইকবালের মেয়েকে নিয়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে। উনাকে অনেকদিন ফলো করি। এই ব্লগারকে উপরে উল্লেখিত ২টা ইস্যুতে আমি কথা বলতে দেখিনি। বস্তুত, ডঃ জাফর ইকবালের এই লেখা এবং ২০০৭ সালে সজীব ওয়াজেদ জয় এর ‘বোরকা-তত্ত্ব’ নিয়ে একটি লেখার টোন প্রায়ই একই।



তার সাম্প্রতিক লেখার বিতর্কিত অংশটুকূ

সাম্প্রতিক ডঃ জাফর ইকবালের ‘ওদের নিয়ে কেন স্বপ্ন দেখবোনা? ’ শীর্ষক প্রবন্ধে (দৈনিক প্রথম আলো, ০৪/১১/২০১১), অনাহুতভাবেই কিছু স্পর্শকাতর বিষয় এনেছেন যার জন্যে তার তার সমালোচক গ্রুপ তার মেয়ের ফেসবুক ছবি পর্যন্ত এনেছে। তবে এটার সুত্রপাতের জন্যে আমি উনাকেই দোষ দিবো। অস্বীকার করার উপায় নাই যে ডঃ জাফর ইকবাল একজন সেলিব্রিটি সুতরাং তার কথা বার্তাও সেলিব্রিটি, অর্থ্যাত অনেকেই হূমড়ী খেয়ে পড়বে। মোদ্দা কথা, উনি উনার লেখা দ্বারা তার শিশু-কিশোর-তরুনদের ভক্তদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন। উনার ঐ লেখার এই অংশটূকূ কয়েকবার করে পড়ুনঃ

“বেশ কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছেলেমেয়েরা ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটা আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেছিল। আমি আর আমার স্ত্রী সেটা দেখতে গিয়েছিলাম। বড় বড় ছবি দেখতে দেখতে আমার স্ত্রী আমাকে বলল, ‘একটা জিনিস লক্ষ করেছ?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী জিনিস? আমার স্ত্রী বলল, ‘ভাষা আন্দোলনে কত মেয়ে! কিন্তু একটি মেয়েও বোরকা পরে নেই, একটি মেয়েও হিজাব পরে নেই।’ আমি তাকিয়ে দেখি, তার কথা সত্যি। ষাট বছর আগে এ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের বোরকা পরতে হতো না, এখন মেয়েদের বোরকা পরতে হয়। ষাট বছর আগে এ দেশের মেয়েরা ধর্মহীন ছিল, এখন মেয়েরা ধর্মভীরু হয়ে গেছে—আমি সেটা বিশ্বাস করি না। যাঁরা জ্ঞানীগুণী গবেষক, তাঁরা প্রকৃত কারণটি খুঁজে বের করবেন। আমি সোজাভাবে বিষয়টি এভাবে দেখি, যে সমাজে পুরুষ আর নারী সমান সমানভাবে পাশাপাশি থেকে কাজ করে, সেই সমাজকে মৌলবাদীদের, ধর্ম ব্যবসায়ীদের খুব ভয়। তাই মেয়েদের ঘরের ভেতর আটকে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো। একান্তই যদি ঘরের ভেতর আটকে রাখা না যায় অন্তত বোরকার ভেতর আটকে রাখা যাক।“

বোল্ড করা অংশগুলা পড়ুনঃ দেখুন কিভাবে তার ভাবনাটা তার ফ্যানদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেনঃ

১। তিনি ভাষা- আন্দোলনের মত একটা মহৎ উদ্যোগ এর সাথে সম্পৃক্ত করেছেন যে এই কাজ বোরকা/হিজাব না পড়ে করা হয়েছে। এখন এই অংশটুকু থেকে ডঃ ইকবাল বিরোধী এবং পক্ষের লোক ২ দল ২ ধরনের ব্যাখ্যা খুজবেন। কিন্তু সহজভাবে তার কথা থেকে এইটুকু মেসেজ সবার কাছে যায় যে তিনি এই ব্যাপার নিয়ে কনসার্নড। সুতরাং তার ভক্তরাও এটা নিয়ে কনসার্নড হবে এখন। এখানে একটা মিসিং ব্যাপার থেকে যায় উনার লেখায়; সেটা হলো ভাষা আন্দোলনের যেগুলা ছবি আমরা দেখতে পারি বিভিন্ন জায়গায় তা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের এবং বেশিরভাগই ঢাকা কেন্দ্রিক ছবি। সুতরাং এ থেকে মফস্বলের তরূনীদের ছবি পাওয়া যায়না।

২। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের বোরকা পরতে হয়- এর দ্বারা উনি কি কোন পজিটিভ মেসেজ দিয়েছেন? নাকি নেগেটিভ মেসেজ? দ্বিতীয় বোল্ড অংশ থেকে তা বোঝা যায়না। কিন্তু;

৩। তার শেষ বাক্যে তিনি সোজাভাবে তার বিশ্বাস জানিয়ে দিলেন যে মৌলবাদী/ধর্ম ব্যবসায়ীদের জন্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের বোরকা পরতে হয়। উনার মত বুদ্ধিজীবীদের কাছে থেকে কি হাস্যকর যুক্তি!! তাই মেয়েদের ঘরের ভেতর আটকে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো। তাহলে উনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা পড়া মেয়ে দেখলেন কিভাবে?? নাকি তিনি বোরকা/হিজাবকেই ‘ঘর’ বলে তুলনা করছেন? আমি এখানে আমার নিজের পরিবার থেকে উদাহরন দেইঃ আমার মা ১৯৯০ সাল থেকে বোরকা পড়ে (অথচ আমার নানী বোরকা পড়েননা) ৮/১০ মাইল লোকাল বাসে করে গিয়ে স্কুলে শিক্ষকতা করেন, আমার বোন ক্লাস এইটে উঠে নিজে থেকে বোরকা পছন্দ করে এনে পড়া শুরু করেছে এবং এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডী পার করে ফেলছে প্রায় একইভাবে। আমার একদম ছোট বোন যে তূলনামূলক আধুনিক জীবনের ছোয়া বেশি পেয়েছে সেও বোরকা পড়ে স্বেচ্ছায়। আমার আশেপাশে এইরকম শ’খানেক পরিবার অন্তত আমি জানি। কোন মৌলবাদী বা ধর্ম-ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তো তারা এটা করছেনা।

সুতরাং, বোরকা বা হিজাব পড়া পুরোটাই একজনের ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার। উনার মত জনপ্রিয় লেখক যখন এই ব্যাক্তিগত পছন্দের ব্যাপার কে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্ঠা করেন তাহলে একজনের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়েই কথা বলা হয় না কি? পশ্চাতপদসরতা’র সাথে ‘পর্দা’ করার কোন সমপর্ক যেখানে কোন গবেষনালব্ধ ফলাফল নাই, সেখানে উনার কাছে কেন বোরকা/হিজাব সংখ্যা বাড়ার দিক নেগেটিভ হিসেবে উপস্থাপন করলেন তা একটা বড় প্রশ্ন। ইরানে মেয়েরা কিভাবে হিজাব পড়ে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে আর ইরানের উন্নয়নের ব্যাপারে নিশ্চয় নতুন করে বলার কিছু নাই।




অনেকেই উনার লেখার যারা নিখাদ বিষারদ, তারা কি এই কথা অস্বীকার করবেন যে তার এই লেখায় উনি বলতে গেলে সরাসরি মুসলিম মেয়েদের 'পর্দার-বিরোধিতা' করেননি?? উনি উনার স্ত্রী, এবং ছাত্রী ২টা প্রসঙ্গ টেনে একজন মেয়েকে পর্দার ব্যাপারে যে নিরুতসাহিত করেছেন সে ব্যাপারে আমার মনে হয় উনার পক্ষের যোদ্ধারা অস্বীকার করলেও তিনি করবেন না। তিনি এখন আমার যে পর্দানশীন ছোট বোন তার লেখার ভক্ত, তাকে ইনফ্লুয়েন্স করার মত অস্ত্র তিনি ইউজ করেছেন প্রকারন্তরে একটা মুসলমান মেয়ের ব্যক্তিগত প্রেফারেন্সকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছেন। বস্তুত উনার লেখায় তিনি ইচ্ছে করেই এই বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন এবং অনলাইনে ২টা স্পষ্ট বিভাগ তৈরিতে সাহায্য করেছেন। তিনি একদিকে সমাজে ‘বোরকা/হিজাব’ বাড়ার চিত্র দিয়ে যে নেগেটিভ মেসেজ দিয়েছেন তার বিপরীতে সমাজে ক্রমবর্ধমান সামাজিক অধঃপতনের কোন কিছু নিয়েই যে তিনি চিন্তিত নন সেটাও স্পষ্ঠ হয়ে উঠে। পাশ্চাত্য অনুকরনে বিবাহ-পূর্ববর্তী যৌনতার লাগামহীন সম্পর্ক এবং ইন্টারনেটে তার অবৈধ ব্যবহার, ঢাকা’র অভিজাত এলাকায় সীসা/ইয়াবা, অর্ধ-নগ্ন তারুন্যের ফ্যাশন শো ইত্যাদির মত ঘটনা যে কতটা সমাজকে গ্রাস করে ফেলছে সেটা নিয়ে উনার যখন কনসার্ন থাকেনা সেটাও তরুন সমাজকে হতাশ করে। সাম্প্রতিক পারসোনাতে যে কেলেংকারী ঘটনা ঘটে গেলো, সেই তরুনীদের স্বার্থ রক্ষায় তাকে উদ্বেগিত হতে দেখা গেলো না। তাহলে কি উনি চান বাংলাদেশের তরূন-তরুনী বোরকা-হিজাবের বাহিরে চলে আসুক? উনি কি চাননা আজকের তারুন্য কোন সামাজিক অধঃপতনের দিকে না যাক?


(সম্প্রতি ঢাকার হোটেল রেডিসন এ হ্যালোউইন পার্টিতে এভাবেই আসে শ্বাসত বাংগালী রমনী, আমাদের জানা নেই হ্যালোউইন পার্টি কবে থেকে বাঙ্গালী সংস্কৃতিভুক্ত হয়েছে)

ডঃ জাফর ইকবাল কন্যার ছবি প্রচারের বিতর্কঃ

ডঃ জাফর ইকবাল যখন একজন ধর্মভীরু মুসলিম মেয়ের ব্যক্তিগত পর্দা কে প্রশ্নবিদ্ধ করার মত কথা বলেন এবং এর সাথে যখন তার মেয়ের পাশ্চাত্যের এই লাগামহীনতার পাবলিকলি ওপেন ছবি পাওয়া যায় (এখন অবশ্য আর ঐ লিঙ্ক কাজ করছেনা) তখন নিন্দুকেরা তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। কারন তাদের দরকার দুয়ে দুয়ে ‘চার’ মেলানো। যেমনঃ বাংলাদেশে পাশ্চাত্যের ধারায় সামাজিক অধঃপতনের ব্যাপারে ডঃ ইকবালের নির্লিপ্ততা, বরং পরোক্ষভাবে ভাবে তাতে উতসাহিত করা (২) এবং তার মেয়ের আমেরিকায় ঐরকম জীবন যাপন (২) মিলে চার (৪) হয়ে যায়। এটা সত্যি যে ডঃ ইকবালকে সমালোচনা করার জন্যে হয়তো মেয়েকে টানা ঠিক নয়। কিন্তু ডঃ ইকবালের ধর্মীয় একটা আচার নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ কথার ফলশ্রুতিতেই এমনটা হয়েছে বললে ভূল হবেনা। ডঃ জাফর ইকবাল সাহেবেরা একদিকে ধর্মীয় আচার নিয়ে কথা বলবেন, অন্যদিকে সামাজিক অনাচার নিয়ে নির্লিপ্ত থাকবেন আবার তার মেয়ে (যার সাথে তিনি বিচ্ছিন্ন নন) আমেরিকায় থেকে সেই অনাচার (বাংলাদেশের সাথে ‘আনফিট’ কালচার) নিজেও ধারন করে সবার দেখার জন্যে উন্মুক্ত রাখবেন আর নিন্দুকেরা তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেনা সেটা কোন বাস্তব সম্মত চিন্তা না।

আর আমি মনে করি, এই ছবির প্রচারে অন্তত সাধারন মানুষ অনেকেই জানবে যে আসলে তার পরিবারে কোন সংস্কৃতি লালন করা হচ্ছে এবং তা থেকে তার ধর্মীয় স্পর্শকাতর কথাগুলো থেকে সাবধানে থাকবে। ধর্মান্ধতা যেমন কাম্য নয়, ধর্মশূন্যতাও অবশ্যই নয়। জাফর ইকবালের মেয়ের বিদেশী সাদা-কালো বন্ধুদের নিয়ে স্বল্প বসনা হয়ে মদ নিয়ে ঘোরাঘুরি'র তা কি কোন বাংলাদেশি মুসলিম পরিবার তাদের মেয়ের জন্যে কল্পনা করে?? আমার মনে হয় ্মডারেট কোন মুসলমানও তার বাড়ীর কোন মেয়ে এগুলা করে বেড়াক চাইবেনা। সুতরাং তার পিতা থেকে ইসলামের কোন অংশ বেশী প্রচার পাবে তা উনার ভক্তকূল ওভারলুক করার চেষ্টা করলেও প্রশ্ন এসে যাবেই।

এখন যারা এই ছবি’র ইস্যুকে অস্ত্র বানিয়ে ডঃ ইকবালের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন, তারা জানেন এটা দূর্বল অস্ত্র। ঐ ছবিগুলা সেই মেয়ের সজ্ঞানেই ছড়িয়েছে। আমেরিকায় থাকা একটা মেয়ে ভালোভাবেই জানে কিভাবে ছবির প্রাইভেসি মেইন্টেইন করতে হয়। আর ডঃ ইকবালের পক্ষের যোদ্ধারা যতই এই ইস্যু নিয়ে কথা বলুক, ঘটনা যে সত্য তা তো মানতেই হবে।

'পাকিস্তান-বিরোধী' ঝান্ডা ডঃ জাফর ইকবাল এবং আবারো মিথ্যা ভাষন

ডঃ ইকবালের ভক্তকূলের কেউ কেউ মনে করেন তিনি কথা না বললে দেশ পাকিস্তান অথবা তালেবানী মৌলবাদীদের দেশ হয়ে যাবে। এইরকম একজনের সাথে অনলাইনে বিতর্ক হবার সময় এই কথা শুনে আমি আসলেই নির্মল বিনোদন পেয়েছি। যে ডঃ সাহেব বাংলাদেশের একমাত্র 'পাকিস্তান-বিরোধী' ঝান্ডা তুলে নিয়ে আছেন। তার মানে উনার লেখায় উনি মেয়েদের ব্যক্তিগত পর্দা করার মানসিকতার সাথে মৌলবাদিতাকে সম্পর্কিত করে বোরকা/হিজাব পড়ার জন্যে নিরুতসাহিত করবেন আর সেটার বিরোধিতা করলে নাকি আমি পাকিস্তান/তালেবান-পন্থীকে সমর্থন দিলাম?

পরিশেষে তার আরেকটা রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক এবং মিথ্যা তথ্য এখানে উপস্থাপন করছিঃ

“জোট সরকার তাদের উৎসাহ দিয়ে খাল কেটে কুমির ডেকে এনেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার খাল কাটা বন্ধ করেছে। আর আওয়ামী লীগ সরকার খাল বুজিয়ে কুমিরগুলোকে বংশবৃদ্ধি করতে দিচ্ছে না।“

কি চমৎকার ভাবেই না উনি এখানে আওয়ামী লীগের পক্ষের কাজ এখানে করে দিলেন। উনি বোধ হয় ভুলে গেছেন, জোট সরকারের আমলেই জংগীসঙ্গঠনগুলোর প্রধানগুলোকে ধরা হয়েছিলো এবং বিচারে আনা হয়েছিলো। কে জানে এই জংগী নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দেবার কারনেই হয়তো জীবন দিতে হয়েছে কর্নেল গুলজারকে। হ্যা, জোট সরকারের ২/১ জনের ভুল পরিক্লপনার কারনে তারা আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিল কিন্ত সেইজন্যে পুরো জোট সরকার দায়ী হতে পারেনা। উনি কি পেরেছেন সড়ক দূর্ঘটনার জন্যে দায়ী মন্ত্রীদের কারনে পুরা আওয়ামী লীগ সরকারকে দোষারোপ করতে। উনার মত দায়িত্বশীল লেখক যখন এইরকম ‘জেনারালাইজ’ সুরে কথা বলেন, তখন পরিষ্কার হয়ে যায় যে উনি কাদের হয়ে কাজ করছেন। আমরা অনেকেই জানি, বাংলাদেশকে গত সরকারের আমলে বাহিরে ‘জংগী রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিত করার অগ্রভাগেও ডঃ জাফর ইকবাল ছিলেন। তার এই সুক্ষ্ম রাজনৈতিক অবস্থানই এখন ক্রমবর্ধমান ডঃ জাফর ইকবাল বিরোধিতার প্রধান কারন। লক্ষ্য করুন পাঠক, প্রায়ই একইরকম সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত ডঃ কায়কোবাদ কে নিয়ে কোন বিতর্ক এখনো শোনা যায়নি। সেটা উনি যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে হতাশা ছাড়া কিছুই করার নাই। এই যেমন আমি, ছোটবেলায় যখনি কোন বন্ধুর জন্মদিনে যেতাম উনার বই নিয়ে যেতাম উপহার হিসেবে; ‘নিঃসংগ গ্রহচারী’ নামের এই বই মনে হয় উপহার দিয়েছি বেশ কয়েকজনকে। অথচ সেই আমি আজ তার সমালোচনা করে ব্লগ লিখলাম। জনপ্রিয় এক ব্লগার হেলাল এম রহমানের ভাষায়
‘জনপ্রিয়তা একটা বায়বীয় বস্তু’।

মূল লেখাঃ
১৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×