#বই_আলোচনা
বইঃআজ কোথাও বৃষ্টি হবে না
লেখকঃইফতেখার হোছাইন নূর
প্রকাশনীঃবায়ান্ন
প্রকাশকালঃফেব্রুয়ারী,২০২০
রেটিংঃ৪/৫
.
পাঠ-সংক্ষেপঃ মধ্যবিত্ত পরিবারের নিত্যদিনের ঘটনা। জমিলা ভবনের মোট সদস্যের বাস পাঁচজন। আগে ছয়জন ছিলো। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। বড় ভাই বিএ পাশ করা বেকার, অন্যদিকে ছোটটাও। ছোট ভাই মনা টিউশনি করে কোনোরকম দিনযাপন করলেও বড় ভাই সাজু আয়ের চেয়ে ব্যয়ের কাজ বেশি করেন। অন্যদিকে ছোটবোন তরু মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। যার বাসার খবরাখবর দেয়ার চমৎকার কিছু কৌশল আছে। যে কারণে তাকে সুন্দর একটা নামও দেয়া হয়। বাবা শরীর চর্চার শিক্ষক থাকলেও আজকাল অভাবে মুখ আর হাত দুটোই জনসম্মুখে চর্চা করতে হয় অন্যভাবে। যা নিয়ে তার পরিবারের লোকেরাই মাঝেমধ্যে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েন। বড় ছেলের বিয়ের জন্য যে কথা উঠে সেই কথা মোড় নেয় ছোট ছেলের দিকে। বড় ছেলেকে পছন্দ না, পছন্দ ছোট ছেলেকে? তাও মেয়ে দেশের বাহিরে থাকে! সম্বন্ধ নিয়ে আসা লোকটি সম্পর্কে মনাদের মামা হোন। দুলাভাইয়ের উপর সে কৃতজ্ঞ বলে নিজের সবটুকু উজার করে তাদের ভালোর জন্যেই ভাবেন। মনাকে পছন্দ হওয়া মেয়ে যখন মনাকে হোয়াটসএ্যাপে মেসেজ দেয় মনা সেই মেসেজের উত্তর দেয় না,দিতে পারেনা। একসময় জীবনের সব আশা ভরসা হাওয়ায় ভাসতে থাকে মনার। শুধু মনা না, জামিলা ভবনের প্রতিটা মানুষের জীবনই ধীরে ধীরে পালটে যায়।
.
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ বইটা আমার কেনার প্রতি টেনেছিল বইয়ের নাম আর প্রচ্ছদটা বেশিই।সামাজিক ঘরানার উপন্যাসের প্রতি আমার ঝোঁক ছোট থেকেই একটু বেশি। বইয়ের প্রথমে আমি কিছুটা ধীরে আগালেও ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছিলাম গল্পে। আমি বইটা এক ধরাতে শেষ করিনি। আমি জানিনা লেখক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান কিনা! নাহলে এত সুন্দর নিপুণভাবে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের চিন্তাচেতনা তুলে আনা অসম্ভব। আমি বারবার গল্পের বিভিন্ন অংশে থেমে যাচ্ছিলাম। কারণ আমার মনে হয়েছে আমি এই পরিস্থিতিতে কোনো একটা সময়ে ছিলাম।
বইয়ে প্রতিটা লাইন মুগ্ধকর ছিলো আমার কাছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল বইয়ের শেষটা। আমি গল্পের চারভাগের তিনভাগে এসেও ভাবতে পারিনি শেষটা এরকম হবে! লেখক তার হাতের জাদু বা মস্তিষ্কের প্রয়োগ এই জায়গায় খুব দারুণভাবে দেখিয়েছেন। আরেকটা দিক না বললেই নয়, লেখক শুধু উপন্যাসকে জীবনের গল্প দিয়েই সীমাবদ্ধ রাখেনি। লেখক তার জ্ঞানের কিছু অংশও এখানে দিয়েছেন। যা বইটাকে আরো উপভোগ্য করেছেন।
যারা বইমেলায় মানসম্মত বইয়ের সন্ধান করছেন তারা নিঃসন্দেহে মেলার ৩৬৩নাম্বার স্টল থেকে নিয়ে নিতে পারবেন। অনেকদিনের বই পড়া বন্ধ থাকার পরে এরকম বই পড়ে আবার শুরু করতে পারাটা আনন্দের। লেখকের পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:০৩