একটা দুঃখের সময়! এটা নিয়ে এত কথা, এত পোস্ট, এত ছবি! যে দুঃখটাকে অলীক কিছু করে তুলেছে।
তাই অন্যকিছু নিয়ে ভুলে থাকতে ভালো লাগবে। সেদিন ড্যান ব্রাউনের অনলাইন ক্লাস করার সময়(একটু শুনালাম) তিনি বললেন "মনে হচ্ছে কোন প্যারালাল ইউনিভার্সে চলে এসেছি।"
অরুন্ধতী রায় লিখেছেন এই মহামারী একটা পোর্টাল। যেটা হয়তো আমাদের কে নিয়ে যাবে অন্য কোন পৃথিবীতে । সেখানে আমরা কি কি নিয়ে যাবো আর কি কি এই পৃথিবীতে রেখে যাব, তা আমাদেরকে এখনই ঠিক করতে হবে।
দুইটি শব্দ প্যারালাল ইউনিভার্স এবং পোর্টাল। এর সাথে আরেকটা শব্দ যোগ করে বিষয়টাকে অন্য কোনো দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। যেখানে মহামারী কোন প্যারালাল ইউনিভার্স নয়, নয় কোন পোর্টাল। যেখানে এই নিয়ে কোন কথা হবেনা। সেই শব্দটা হচ্ছে প্রিকোগনিশন।
প্যারালাল ইউনিভার্স কি? এটা সম্পূর্ণভাবে একটা হাইপোথিসিস। এর জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হল অস্তিত্ব। আত্মা, মন, মস্তিষ্ক, দেহ না। অস্তিত্ব। জীব,জড়, শক্তি এবং আরও কিছু বিশেষ জিনিসের অস্তিত্ব আছে। তাহলে প্যারালাল ইউনিভার্স? প্যারালাল ইউনিভার্স একটি একান্তর বাস্তবতা। এটা যেকোন অস্তিত্বের একটি প্রকল্পিত স্ব-সম-অস্তিত্বের স্বয়ং সম্পূর্ণ সমতল অস্তিত্ব। এটা সমান্তরাল। এখানে যাওয়ার কোন পোর্টাল বা নিজের পুরো প্যাকেজ কে অন্য আরেকটা জীবনে কল্পনা করা চ্যাঙরামো৷ তাই প্যারালাল ইউনিভার্স আর পোর্টাল এর গপ্পো এখানেই শেষ। হ্যাঁ বিষয়টা অবশ্যই কঠিন আর চিন্তার। সহজ করে বোঝানোর কোন উপায় নেই। চিন্তা করতে থাকেন। কিন্তু অস্তিত্ব নিয়ে কোন চ্যাঙরামো চলবেনা।
এবার আসা যাক প্রিকোগনিশনে। প্রি মানে আগে, অনেকেই একে ভবিষ্যতে বলে থাকে। কিন্তু সাধারণত আগে বলতে আমরা অতীত অবস্থাই বুঝে থাকি। যেমন 'এর আগে তো এমন হয়নি', 'আগেকার আমল' ইত্যাদি। আবার একই ভাবে বলা যেতে 'এর আগে কি বা হতে পারে?'। মানে পরে কি হবে। প্রিকোন্ডিশন বলতে যেমন বোঝানো হয় ভবিষ্যতে যা হবে তার আগে কি অবস্থা হতে পারে। যেমন একটা বেলুন ফেটে যাবে তার আগের অবস্থা হবে এর ভেতরের বাতাসের চাপ বেশী হবে অথবা তাপমাত্রা বেশী হবে। এই বর্তমান অবস্থা থেকে আমরা নিশ্চিত হয়ে বলে দিতে পারি ভবিষ্যতে বেলুনটি ফাটতে যাচ্ছে। এরজন্য আমাদের বেলুনের চাপ বা তাপ অনুভব করতে হবে।
আর কোগনিশন অর্থ জানা। অর্থাৎ প্রিকোগনিশন মানে দাঁড়ায় আগের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া।
কিছু কিছু মানুষ আছে, আমাদের চারপাশেই আছে যারা একটু বেশি স্পর্শকাতর। যেকোনো কিছু তাদের ওপর দ্রুত প্রভাব ফেলে। আসলে এদের ইন্দ্রিয় অত্যন্ত বিচক্ষণ। এরা যেকোনো ছোট খাটো বিষয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই ব্যাপারটা জন্মগত। কিন্তু সংজ্ঞাবহতার একটা মাত্রা আছে। মাত্রায় কম যাদের তাদের কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, যেমন অনেকে মুখের মধ্যে ধাতব জিনিসের উপস্থিতি সহ্য করতে পারেনা, অস্বস্তিতে ভোগে। অনেকের রাবারে এলার্জি আছে। এরফলে চর্মরোগ পর্যন্ত হয়। অনেকের বিড়াল, কুকুরের অস্বস্তিতে ভোগে। এখন বলা যেতে পারে এটা অভ্যাস। হতে পারে, এইভাবে এদের সংজ্ঞাবহতার বিকাশ ঘটেছে।
এটা চাকুতে ধার দেয়ার মত। যত ধার তত সুতীক্ষ্ণ।
অতিরিক্ত সংজ্ঞাবহ উপলব্ধি যাদের থাকে তাদের বেশিরভাগই এটা সহ্য করতে পারেনা। এদের ইন্দ্রিয় জনিত সংজ্ঞাবহতার জন্মগতভাবে অথবা পরিস্থিতির কারনে অত্যন্ত সুতীক্ষ্ম হয়। যারা সহ্য করতে পারে না তাদেরকে আমরা পাগল বলি। কারণ তারা বিষয়টি বুঝে উঠতে পারে না। তারা কোন জিনিস স্পর্শ করলে নানান রকম দৃশ্য দেখতে পায়, যার কোন ব্যাখ্যা তার মস্তিষ্ক তাকে করতে পারেনা। তারা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে একেবারে বাস্তবের মত। তারা চোখের সামনে অনেক কিছুর অস্তিত্ব দেখে, ভয় পায়। অনেক সময় তারা দিবাস্বপ্নের মাঝে আটকে থাকে, বের হতে পারেনা।দীর্ঘ হতাশা বা অবসাদে ভোগে অথবা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে। এদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে alprazolam,sertraline,citalopram,fluoxetine,lorazepam,trazodone , escitalopram এর মত কিছু ঔষধ দিয়ে মস্তিষ্কের ভেতরের কিছু হরমোন এবং কেমিক্যালের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে ইন্দ্রিয় জনিত সকল সংজ্ঞাবহতা কে পঙ্গু করে রাখে৷ একজন মনোরোগ চিকিৎসক বলেছিলেন, তারা এতকিছু চিন্তা করেনা। তাদের কাছে ব্যাপারটা থলের ভিতরের বিড়ালের মত। এর রং কি, কত বড়, কয়টা পা, লেজ আছে কিনা, কানা কিনা? এইসব দেখার কোন দরকার হয়, তাদের মূল উদ্দেশ্য হল বিড়ালটাকে অচেতন করে রাখা। অসুখের লক্ষন তাদের কাছে আলুর মত। আলুর যেমন ভাজি হয়, তেমনি ভর্তা হয় আবার কেটে যেকোনো তরকারি সাথে রান্নাও করা যায়। তাদের কাজ হল আলুটাকে ফ্রীজে রেখে দেয়া। এখন অতিরিক্ত সংজ্ঞাবহ উপলব্ধি যারা করতে পারে, তারা হয় ঐ সব ভয়াবহ ঔষধের ভয়ে অতিরিক্ত সংজ্ঞাবহ উপলব্ধি জনিত ভয় বা আবেগ কে গোপন করে চলে। অনেকে বিভিন্ন বিকল্প অসুস্থ পদ্ধতিতে এটাকে ব্যবহার করে স্রেফ সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর জন্য। এতে তারা ভয় যত না পায়, মজা তত বেশি পায়।
যীগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, আমরা মানে আমাদের অস্তিত্ব একটা বড় বাড়ি। আমাদের চেতনা প্রজ্জ্বলিত মোমবাতি। যে মোমবাতি একটি সময় একটি ঘরের পুরোটা দেখায়। কিন্তু এই বাড়িতে আরও অনেক ঘর আছে যেগুলো অন্ধকার। আমাদের অবচেতনা হল একটা নিভু নিভু মোমবাতি যা মাঝেমধ্যে অন্য ঘরগুলো এক ঝলকানিতে দেখায় একবার অথবা বারবার।
অতিরিক্ত সংজ্ঞাবহ উপলব্ধি ব্যাপারটাকে আপনি পুরোটা ঢপের কের্তন বলতেই পারেন। এইজন্য এটা কোন বিজ্ঞান না। হয়তো অতিরিক্ত সংজ্ঞাবহ উপলব্ধি করার ক্ষমতা যাদের আছে তাদেরকে আপনি পরীক্ষা করতে পারেন। কিন্তু কীভাবে? আপনি বালি না বাতাস পরীক্ষা করতে যাচ্ছেন তাইতো জানেন না। ধরে নিলাম এমন একজনকে আপনি বেছে নিলেন যে যেকোনো অস্তিত্ব স্পর্শ করে এর আগের ঘটনা উপলব্ধি করতে পারে। এবার আপনি একটা কাঠের বাক্স বাজার থেকে কিনে এনে তাকে ওটা স্পর্শ করে বলতে বললেন এই বাক্স কোন দোকান থেকে কেনা? দোকানদারের নাম কি? বাক্সের দাম কত? এবার সে হয়তো বাক্স স্পর্শ করে এইসব কিছুই উপলব্ধি করতে পারলো না। সে উপলব্ধি করলো সেই গাছ যার কাঠ দিয়ে এই বাক্স বানানো হয়েছে, সেই এলাকার মাটির গন্ধ, বাতাসে গাছের শাখার দোলা। যেগুলো যাচাই করা আপনার কেন, ওই বাক্সের দোকানদারের পক্ষেও সম্ভাব না।
আমার এই কথাগুলো আপনাদের অনেকেরই কাছে গুলতানি মনে হবে। কিন্তু যে একটা সাধারণ দেয়ালে হাত রেখে উপলব্ধি করেছে ঐ দেয়ালের মধ্যে কতখানি জমাট বাধা শীতল অন্ধকার! সে আমার কথা বুঝবে, অবশ্যই বুঝবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৬