somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিদ্বন্দ্বী

১৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভীষণ হাপাচ্ছে জাহিদ। দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে মন চাইছে। কিন্তু অদৃশ্য কিছু একটা যেন তার গলা চেপে ধরেছে। প্রানের ভয়ে পালাচ্ছে সে। আর বেশি সময় নেই।

প্রান পনে ছুটছে জাহিদ। কিন্তু পা দুটো আর নির্দেশ মানতে চাইছে না। হাটুর নিচ থেকে কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে। ঘার ঘুরিয়ে পিছনে দেখল, ছেলেটা প্রায় ধরে ফেলেছে তাকে। তার হাতে একটা ভয়ঙ্কর দর্শন ছুরি। সমস্ত শক্তি এক করে দৌড়ের গতি বাড়াতে চেষ্টা করল। কিন্তু কোনও লাভ হচ্ছে না। প্রতি মুহূর্তে কমছে দুজনের ব্যাবধান। ঘাড়ের ওপর ছেলেটির তপ্ত নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারছে সে। তবে কি এই শেষ?

হঠাৎ কিছু একটার সাথে পা বেঁধে পড়ে গেল জাহিদ। প্রানপনে চেষ্টা করল আবার উঠার। কিন্তু শরীরের সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে। ছেলেটা একহাতে উদ্যত ছুরি নিয়ে তার পাশে এসে হাঁটু গেড়ে বসল। আতঙ্কের চুরান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে জাহিদ। ছেলেটির মুখে পৈশাচিক হাসি। প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে জাহিদের বুকে নামিয়ে আনল ছুরিটা।

লোমহর্ষক চিৎকারে ভাঙল রাতের নিস্তব্ধতা।


***

মাহেলা বেগম চোখে কম দেখেন। আগে গ্রামের একটা স্কুলে মাস্টারি করতেন। একমাত্র সন্তান কে হারিয়ে এখন একাই দিন কাটাচ্ছেন। স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। এখন নিজের বাপের বাড়ির পাশে ছোট একটা খুপরির মত ঘরে বাস করেন তিনি। অথচ তার মত হতদরিদ্র মহিলাকে দেখে কেউ ধারনা করতে পারবেনা যে তার একটা অবস্থাসম্পন্ন ছোট বোন আছে। ঢাকা শহরে যার বাড়ি,গাড়ি আর কাড়ি কাড়ি টাকা আছে।

রবিন বেশ কয়েকবার নক করার পর মহিলা দরজা খুলে দিলেন।

“স্লামালাইকুম!”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম”।

“আপনি কি মাহেলা বেগম? সাব্বিরের মা?”

“হ্যাঁ। কে তুমি বাবা? তোমাকে তো চিনলাম না”।

“জী... আমাকে আপনি আগে দেখেন নাই! আমার নাম আশরাফ রবিন। আমি সাব্বিরের বন্ধু। ঢাকা থেকে এসেছি”।

“তাই? তুমি আমার সাব্বিরের বন্ধু? এস এস বাবা!" মহিলা ব্যাতিবাস্ত হয়ে উঠল। "কোথায় যে বসতে দেই! গরিবের ঘরে বসার মত তো কিছু নাই”।

“খালাম্মা আপনি ব্যাস্ত হবেন না”।

“তুমি খাটের উপর বস বাবা। আরাম করে বস। আমি তোমাকে বাতাস করছি”।

রবিন বসল। “খালাম্মা আমি বেশিক্ষন থাকব না। কিছু কথা বলার জন্য আপনার কাছে এসেছি”।

“তাই বললে কি হয়? যা বলার খাওয়ার পর বলবে। তুমি আমার ছেলের বন্ধু! তোমার অযত্ন হলে আমার ছেলের আত্মা কষ্ট পাবে যে!” মহিলা কাদতে লাগলেন।

রবিন কি বলবে বুঝতে পারল না।

“তুমি বস বাবা । আমি বাজার করতে লোক পাঠাচ্ছি। এই গফুর? গফুর কই গেলি? একটু বাজারে যা তো....আমার সাব্বিরের বন্ধু এসেছে.........” বলতে বলতে মহিলা বাইরে চলে গেলেন।

রবিন বুঝল মহিলা কে থামানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। মহিলা ছেলের বন্ধুকে কাছে পেয়ে সব ভুলে গেছেন। এতে যদি এই নিঃসঙ্গ জীবনে একটু আনন্দ পান তাতে ক্ষতি কি?

হঠাৎ একটা অপরাধবোধ পেয়ে বসল রবিনকে। সাব্বিরের মায়ের কাছে এই মিথ্যে পরিচয় দেয়াটা কি ঠিক হল? অবশ্য এছাড়া আর কিই বা করতে পারত সে? সাব্বিরের মাকে বলা সম্ভব নয় যে সে সাব্বিরের মৃত্যুর তদন্ত করছে। তদন্ত করা তো পুলিশের কাজ। রবিন পুলিশ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স পাশ করে বর্তমানে এখানেই লেকাচারার হয়েছে। মহিলার মনে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক, একজন শিক্ষক কেন মৃত্যুর তদন্ত করছে?


***

তিন দিন আগের কথা!

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জীবনটা রুটিন মাফিক চলে। কিন্তু রুটিন মেনে চলার এই ব্যাপারটা রবিনের একদম পছন্দ না। তাই মাঝে মাঝে রুটিনের ব্যাতিক্রম হলে তার ভালই লাগে। এই যেমন আজ ঘটেছে। একটু আগে তার কলেজ জীবনের বান্ধবী সুমি জরুরী তলব করেছে। তাই আজ আর ভার্সিটি যাচ্ছে না। সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্টদের সাথে একটা ক্লাস ছিল। স্টুডেন্টরা আসবে, হয়ত আধাঘণ্টা অপেক্ষা করবে, তার পর বুঝে নেবে তাদের স্যার আজও ফাকি মেরেছেন। রবিনের স্টুডেন্টরা এই ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত।

***

"আবার দেখেছেন দুঃস্বপ্নটা?"

"হ্যাঁ"। জাহিদ বলল।

"এবার বাতিক্রম কিছু দেখেছেন? নাকি আগে যা যা ঘটত তাই ঘটতে দেখেছেন?"

“না, কোনও বাতিক্রম নেই”।

রবিন বসে আছে সুমিদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে। তার মুখোমুখি বসে আছে সুমি আর জাহিদ।

রবিন বলে চলেছে, “পুরো বিষয়টা তাহলে আবার গোঁড়া থেকে দেখি। সাব্বির ছিল সুমির খালাত ভাই। ছেলেটি সুমিকে ভালবাসত। কিন্তু সুমির বিয়ে ঠিক হয়েছিল আপনার সাথে। ব্যাপারটা সহ্য করতে না পেরে সাব্বির আত্মহত্যা করে। পরবর্তীতে ঘটনাটা জানতে পেরে আপনার মনে এক ধরনের অপরাধবোধ জন্ম হয়। এক সময় আপনি দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, সাব্বির আপনাকে ছুরি হাতে ধাওয়া করছে। এইতো?”

সুমি ও জাহিদ হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল।

“তবে আমার মনে হচ্ছে এর মধ্যে কোথাও একটা কিন্তু লুকিয়ে আছে। একটা ছেলে আত্মহত্যা করায় ৬ মাস পড়েও অন্য একজন মানুষ একটা দুঃস্বপ্ন দেখে চলেছেন, ব্যাপারটা ঠিক লজিকাল না”।

“পৃথিবীর সবকিছু কি লজিক মেনে চলে মি. রবিন?” জাহিদের প্রশ্ন। “মানুষের মন কি লজিক বুঝে?”

“সেটাই আমি বের করার চেষ্টা করছি জাহিদ ভাই”। রবিন সুমির দিকে তাকাল। “সাব্বির কিভাবে আত্মহত্যা করেছে?”

“সাব্বির ঢাকায় একটা মেসে থাকত। লঞ্চে উঠেছিল বরিশাল যাবে বলে। ওদের বাড়ি বরিশাল। যাওয়ার পথে লঞ্চ থেকে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে”।

"এটা কত আগের কথা?"

“আমার বিয়ের ৫-৬ দিন আগের কথা”।

“ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং তো!” শিশ দিয়ে উঠল রবিন, রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে সে। “মৃত্যুর ঘটনাটা তোরা জানলি কিভাবে?”

“আমার আম্মাই সাব্বিরকে বলেছিল তার মাকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু দুদিন পার হওয়ার পরও কোনও খোঁজ নেই। আমি সাব্বিরের নম্বরে ফোন দিয়ে বন্ধ পাই। পরে তার মায়ের কাছে ফোন দিলাম। ওর মা বলল সাব্বির বরিশাল আসেনি। তখন আমরা খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম। জানা গেল বরিশালগামী লঞ্চ থেকে একজন পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। লাশটা মর্গে আছে। আম্মা মৃতদেহটা শনাক্ত করে”।

“সব বুঝলাম”। রবিন মাথা ঝাকাল। “এবার একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করি সুমি?”

“কর”।

“তুই কি সাব্বিরকে পছন্দ করতি?”

“রবিন সাহেব। আপনি কিন্তু ইন্টারনাল বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন!” রাগত গলায় বলল জাহিদ। “আমার সমস্যাটা নিয়ে আমি কোনও সাইক্রিয়াটিষ্ট এর কাছে যাব ঠিক করেছিলাম। সুমি বলল, তার এক বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। মানুষকে এ ধরনের সমস্যায় সাহায্য করে। তাই আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। তারমানে এই নয় যে আপনি আমার পারিবারিক বিষয়ে নাক গলাবেন!”

“আপনি খামোখাই রাগছেন জাহিদ ভাই। সমস্যার কথা খুলে না বললে ডাক্তার কিন্তু সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারেনা, সঠিক সমাধানও দিতে পারেনা। ব্যাপারটা জানেন নিশ্চয়ই?”

জাহিদ হয়ত আরও কিছু বলত, সুমি তাকে থামিয়ে দিল।

“ঠিক আছে বলছি আমি..... জাহিদ অনেক বছর বিদেশে ছিল। জাহিদের বাবা আর আমার বাবা বাল্যবন্ধু। অনেক আগে থেকেই ঠিক হয়েছিল, জাহিদ দেশে ফিরলে আমাদের বিয়ে হবে। নিয়মিত ফোনে কথা হত আমাদের, তাই সাব্বিরকে ভালবাসার প্রস্নই ওঠেনা”।

“সাব্বির ঢাকায় কোথায় থাকত?”

“ওর কিছু বিজনেস ছিল। ঢাকায় একটা মেসে থাকত। আমাদের বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রায়ই আসত। আমার সাথে কথা হত। হয়ত এরই এক পর্যায়ে সে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পরে!”

“জাহিদ ভাই দেশে ফিরেছেন বিয়ের কত আগে?”

“প্রায় মাসখানেক আগে”। জাহিদ বলল। “এসেই ভাল একটা চাকরি পেলাম। জয়েনও করলাম”।

রবিন এবার সত্যি সত্যি একটা রহস্য দেখতে পাচ্ছে। জাহিদ ভাই দেশে ফিরেছে বিয়ের মাসখানেক আগে, আর সাব্বির আত্মহত্যা করেছে বিয়ের ৫-৬ দিন আগে। তাহলে মাঝখানের দিন গুলোতে কি ঘটেছে?

“সাব্বির কি কখনো আপনাদেরকে কোনও হুমকি দিয়েছে? বা বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করেছে?”

“না করেনি”।

“আজ তাহলে উঠি”। রবিন উঠে দাঁড়াল। “পুরো বিষয়টা নিয়ে একটু ভাবব আমি। আশাকরি সুন্দর একটা সমাধান দিতে পারব। কাল কি জাহিদ ভাই ফ্রি আছেন?”

“না, ভাই। অফিস আছে”।

“তাহলে আপনার অফিসেই আসি? দুপুর বেলা?”

“আসুন, তবে একটা শর্ত আছে। খালি পেটে আসতে হবে কিন্তু!”

***

“বসুন মি. রবিন”।

রবিন বসল।

জাহিদ বলল, “লাঞ্চের অর্ডার দেয়াই আছে। খেতে খেতে কথা বলা যাক”।

পিয়ন এসে লাঞ্চ দিয়ে গেল। গরুর মাংস, চিকেন রোস্ট, দাল, ভাত, ভর্তা, ভাজি- বিশাল আয়োজন! দুজনে খেতে আরম্ভ করল।

“আমি কথা বলার জন্য আপনার অফিসে কেন এসেছি বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই জাহিদ ভাই?”

“পারছি। আপনি হয়ত এমন কিছু প্রশ্ন করবেন যার উত্তর আমি সুমির সামনে দিতে পারতাম না!”

“ঠিক ধরেছেন”।

“করুন প্রশ্ন”।

‘তার আগে বলুন যা যা প্রশ্ন করব ঠিক ঠিক জবাব দিবেন। মনে রাখবেন আমি কিন্তু আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি”।

“হ্যাঁ আমি সত্যি কথাই বলব” ।

“আপনার কি মনে হয় সুমির প্রতি সাব্বিরের ভালবাসা একতরফা ছিল?”

“তাই তো মনে হয়। সুমির সাথে আমার সব সময় যোগাযোগ ছিল। না হলে সুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে কেন? আর সাব্বিরই বা আত্মহত্যা করবে কেন?”

“ব্যাপারটা যে আত্মহত্যাই ছিল সেটা শিওর হচ্ছেন কি করে? জাহিদের চোখে চোখ রাখল রবিন। পা পিছলে পরে যেতে পারে অথবা কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে!”

জাহিদ চোখ সরিয়ে নিল। “হতে পারে”।

“সাব্বিরের মৃত্যুর সময় আপনি কোথায় ছিলেন?” রবিনের প্রশ্ন।

“ঠিক মনে নেই”।

“আমি কি একটু মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করব?”

“মানে?”

“ঐ সময় টাতে আপনাকে অফিস থেকে জরুরী একটা কাজে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছিল তাইনা?”

“ওহ...হ্যাঁ হবে হয়ত। আমার ঠিক খেয়াল নেই, প্রায়ই ঢাকার বাইরে যেতে হয় কিনা! কিভাবে জানলেন বলুন তো?”

“আমি এখানে আসার আগে আপনার মায়ের কাছে গিয়েছিলাম। তথ্যটা তিনিই দিয়েছেন”। রবিন হাসল।

জাহিদ চুপ করে থাকল।

খাওয়া প্রায় শেষ। রবিন বলল, “শেষ একটা প্রশ্ন। সাব্বিরের সাথে কখনো কথা হয়েছে আপনার?”

“না, শুধু নামই শুনেছি। কথা হয়নি কখনো”।

“ধন্যবাদ জাহিদ ভাই”।

***

রাত জাগাটা রবিনের কাছে নতুন কিছু না। প্রায়ই অনেক রাত জেগে বই পড়ে বা সিনেমা দেখে। কিন্তু গত দুদিন যাবত একটা অস্থির সময়ের মদ্ধ দিয়ে যাচ্ছে সে। মানুষের বিভিন্ন ধরনের মানুষিক সমস্যাতে সাহায্য করাটা রবিনের কাছে অনেকটা শখের মত। কিন্তু এবার যে সমস্যা নিয়ে কাজ করছে সে এটা শুধু সমস্যা না, এর পিছনে বড় ধরনের একটা কিছু লুকিয়ে আছে।

একটা ব্যাপার রবিনের কাছে পরিস্কার। সবাই বেশ কিছু মিথ্যে বলেছে তার কাছে। তাই সমস্যা টা নিয়ে যতই ভাবছে ততই জট পাকিয়ে যাচ্ছে। কোনও সমাধানে পৌঁছান যাচ্ছে না।

রবিনের কাজ সাইকোলজি নিয়ে। মৃত্যুর রহস্য বের করা তার কাজ না। কিন্তু এই কেসটার ক্ষেত্রে কেমন যেন একটা দায়িত্ববোধ জন্ম নিয়েছে তার মনে। ভেতর থেকে একটা তাগিদ অনুভব করছে। কেন যেন মনে হচ্ছে এর সামাধান করা দরকার। কিন্তু ঢাকায় বসে থেকে এর সমাধান হবেনা। যেতে হবে বরিশাল। সাব্বিরের মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। পরদিনই বরিশাল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রবিন।

***

দুপুরের খাবারের পাট চুকেছে। রবিন সাব্বিরের মায়ের সাথে কথা বলছে।

“খালাম্মা, বেশ কিছুদিন আমার সাথে সাব্বিরের কোনও যোগাযোগ ছিলনা। তাই ওর মৃত্যুর খবর জানতে পারিনি। পরে যখন জানলাম আমার কাছে কেমন যেন একটা রহস্য আছে বলে মনে হয়েছে”।

“রহস্যের কিছুই নাই বাবা! ঐ ডাইনীটাই আমার ছেলেকে মারছে!”

“কার কথা বলছেন?”

“সুমি। আমার ছোট বোন রাহেলার মেয়ে। তাকে না পেয়েই তো সাব্বির আত্মহত্যা করল”।

“খালাম্মা। ভালবাসা তো একতরফা হতেই পারে। সাব্বির সুমিকে ভালবাসত। কিন্তু সুমি হয়ত ভালবাসতনা। তাই বলে আত্মহত্যা করতে হবে?”

“ভালবাসত কিনা জানিনা, তবে ভালবাসার ভান অবশ্যই করেছিল?”

“তারমানে?”

“তুমি জান ওদের দুজনকে নিয়ে এইগ্রামে কি কেলেঙ্কারি ঘটেছিল?”

“বলেন কি? কি ঘটেছিল?”

“ওদের মামাত ভাইয়ের বিয়েতে সুমিরা সবাই গ্রামে এসেছিল। তখন গ্রামের কিছু লোকজন সুমি আর সাব্বিরকে একটা রুমের ভেতর বাজে অবস্থায় দেখে ফেলে। সেই ঘটনা সারা গ্রামে রটে যায়। সবাই বলল ওদের দুজনের বিয়ে দিয়ে দেয়ার জন্য। সুমির বাবা বদরাগী লোক। লোকের কথা শুনলেন না। মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে গেলেন। আর এই গ্রামে কখনো আসেনি”।

“আশ্চর্য বাপার তো!” রবিন স্বভাবসুলভ শিষ দিয়ে উঠল।

“তোমার কি মনে হয় সাব্বির জোর করে কিছু করার চেষ্টা করছিল? তাহলে সুমি চিৎকার করেনি কেন?”

“সাব্বিরের মৃত্যুর খবর কিভাবে পেলেন? ঐ ডাইনী আমার কাছে ফোন দিয়ে জানতে চাইল সাব্বির এখানে এসেছে কিনা, আমি বললাম না। তারপর ওরাই খোজ খবর নিল”।

“আপনি জানতেন না যে সাব্বির বরিশাল আসছে?”

“না, সাব্বির প্রতিবার আসার আগে আমার কাছে ফোন দিয়ে জানাত। কিন্তু শেষবার আসার আগে কেন যেন সে আমার কাছে ফোন দেয় নি”।

রবিন বুঝল ঢাকার ফেরার পালা চলে এসেছে। রহস্যের জট প্রায় খুলে গেছে!

***

জাহিদের অফিস রুম। তার মুখোমুখি বসে আছে রবিন।

“জাহিদ ভাই খুব সম্ভবত আমাকে বেশ কিছু মিথ্যে বলেছেন তাইনা?”

“যেমন?”

“যেমন ধরেন, সাব্বিরের সাথে আপনার কথা হয়নি”।

“জাহিদ মাথা নিচু করে থাকল”।

“সাব্বির খুব সম্ভবত আপনার অফিসে এসেছিল। আপনাকে ব্লাক মেইলিং করার চেষ্টা করেছিল। বলেছিল তার কাছে সুমির সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় তোলা ছবি আছে। কি ঠিক বলেছি?”

“হ্যাঁ”।

“সাব্বির কি আপনার কাছে টাকা চেয়েছিল?”

“না, বলেছিল সুমির জীবন থেকে সরে দাড়াতে”।

“আপনি কি করলেন?”

“আমি সুমিকে ভালবাসতাম। সুমির অতিত জীবন নিয়ে আমার মাথা বাথা ছিল না। সুমি বিয়েতে রাজি ছিল। তাই আমি সাব্বিরকে কিছু টাকা নিয়ে সরে যেতে প্রস্তাব দিলাম”।

“সাব্বির কি বলল?”

“কিছু না বলে বেড়িয়ে গেল”।

“আর একটা জিনিশ বলবেন কি?”

“কি?”

“সাব্বিরের মৃত্যু আত্মহত্যা? নাকি হত্যা?”

“কি বলতে চাইছেন আপনি?”

“সাব্বির যখন মারা যায় তখন আপনি অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে যাননি”।

“তবে কোথায় ছিলাম?”

“লঞ্চে, সাব্বির যে লঞ্চে ছিল”।

“প্রমান কই?”

“প্রমান করা পুলিশের কাজ। আমি পুলিশ নই জাহিদ ভাই”।

“আপনি কি পুরো বিষয়টা আমাকে খুলে বলবেন?”

“অবশ্যই বলব। সেই জন্যই আপনার কাছে এসেছি। আমি চাইনা আমাদের এই কথাগুলো সুমির কানে পৌঁছাক”।

“বলুন”।

“……..…সাব্বির সুমিকে গভিরভাবে ভাল বাসত। হয়ত সুমির প্রস্রয় ছিল! তাদের মামাত ভাইয়ের বিয়ের সময় সুমিকে একান্তে কাছে পেয়ে যায় সাব্বির। সুমি আর সাব্বিরের নামে স্কাণ্ডাল ছড়িয়ে পরে। সুমির বাবা সুমিকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। এখানে সুমির ভুমিকাটা আমার কাছে ক্লিয়ার না। যতটুকু মনে হয় সুমি তার সাথে প্রেম প্রেম খেলছিল। কিন্তু ব্যাপারটা এতদুর গড়াবে সেটা সুমি ভাবতে পারেনি। এর মধ্যে আপনি দেশে ফিরে আসলেন। চাকরিতে জয়েন করলেন। বিয়ের ডেট ফিক্সড হল। সাব্বির একদিন আপনার অফিসে এল। আপনাকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করল। বলল সুমির জীবন থেকে সরে দাড়াতে। সুমি এদিকে যাই করুক না কেন, আপনি ঠিকই তাকে ভালবাসতেন। আপনি বিদেশে ছিলেন, আধুনিক মনের মানুষ। স্ত্রীর অতিত জীবন আপনার কাছে কোনও চিন্তার ব্যাপার ছিলনা। তাই আপনি সাব্বিরকে টাকা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলেন।

কিন্তু আপনি আসলে জানতেন না যে, সত্যিকার অর্থে সাব্বিরের কাছে কোনও ছবি ছিলনা! সে ভেবেছিল এসব জানলে আপনি সুমিকে ঘৃণা করে সরে যাবেন। কিন্তু তাকে আশভঙ্গ হতে হল। সুমিকে পাওয়ার আর কোনও উপায় না দেখে সাব্বির আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। সাব্বির প্রতিবার গ্রামে যাওয়ার সময় তার মাকে বলে যেত। কিন্তু শেষবার যাওয়ার সময় মাকে জানায় নি। এতে বুঝা যায় যে বরিশালে যাওয়া তার উদ্দেশ্য ছিলনা।

কিন্তু আপনি এটা জানতেন না। ভয় পেলেন যে সাব্বির যদি ছবিগুলো প্রকাশ করে তাহলে সুমির বদনাম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আপনি সুমিকে বাঁচানোর জন্য ভয়ঙ্কর একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। সাব্বিরকে মেরে ফেলবেন ঠিক করলেন। আপনি জানতে পারলেন সাব্বির তার মায়ের কাছে বরিশাল যাচ্ছে। আপনিও অফিসের কাজের কথা বলে সাব্বিরকে ফলো করলেন......”।

“এইখানে আপনার একটা ভুল হয়েছে ভাই, সাব্বিরকে মেরে ফেলা আমার উদ্দেশ্য ছিলনা। জাহিদ প্রতিবাদ করতে চাইল। আমি আসলে বরিশাল যাচ্ছিলাম সুমি আর সাব্বিরের স্কাণ্ডাল সম্পর্কে জানতে.........”

“কি কারনে যাচ্ছিলেন সেটা বড় কথা নয়, জাহিদ ভাই। আপনি সেখানে ছিলেন সেটাই বড় কথা। তবে এখানে আমি একটু কনফিউজড। আপনি সাব্বিরকে খুন করেছেন নাকি সাব্বির আত্মহত্যা করেছে সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। খুব সম্ভবত আপনি ওকে হত্যা করেছেন। আর তাই দুঃস্বপ্ন আপনাকে তারা করে ফিরছে। এই জন্যই আমি সেদিন আপনাকে বলেছিলাম একজন আত্মহত্যা করেছে বলে ৬ মাস যাবত অন্য একজন দুঃস্বপ্ন দেখছে ব্যাপারটা লজিকাল না”।

এই পর্যন্ত বলে রবিন একটু সময় নিল। তারপর আবার শুরু করল, “এখন আমি আপনাকে কিছু সাজেশন দিচ্ছি। এই দুঃস্বপ্ন থেকে বাঁচার একটা উপায় হল সাব্বিরের মায়ের সাথে দেখা করা। মহিলা খুব ভাল, আপনি তার সাথে দেখা করে আসুন। যতটা বলা সম্ভব তাকে বলবেন। মনটা হালকা হবে। সুমির সাথেও কথা বলুন। ভাল লাগবে। আশাকরি আপনি এই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পাবেন”।

জাহিদ কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল, তাকে হাত তুলে থামিয়ে দিল রবিন। “কোনও কিছু বলার দরকার নেই জাহিদ ভাই। আমি পুলিশ না, আমার কাছে সাফাই গাওয়ার দরকার নেই। আপনি আমার ক্লায়েন্ট, আমি আপনাকে সাহায্য করছি। একটা কথা শুধু মাথায় রাখবেন, আপনি সেই লঞ্চে না থাকলেও সাব্বির মারা যেত!”

***
ক্লাশ চলছে। এলিমেণ্টারি সাইকোলজির ক্লাস।

ডিফেন্স মেকানিজমের থিওরিগুলো স্টুডেন্টদের বুঝিয়ে দেয়ার জন্য রীতিমত কসরত কতে হচ্ছে রবিনকে। কিন্তু লাভ হচ্ছেনা। সার কি বলছে সেদিকে কারো মনোযোগ নেই।

এর মধ্যে আবার বেসুরো শব্দে মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। ক্লাসে মোবাইলটা সাইলেন্ট রাখার কথা কখনই রবিনের মনে থাকেনা। স্টুডেন্টরা মুখ টিপে হাসছে।

মোবাইলটা হাতে নিল সে, সুমির ফোন!

“তোমরা একটু বইয়ে চোখ বুলাও। আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কল এসেছে। আমি দু-মিনিট বাদেই আসছি...” বলে ক্লাসরুম থেকে বেড়িয়ে এলো রবিন।

রিসিভ করল, "হ্যালো!"

“জাহিদ নিরুদ্দেশ”। ওপাশ থেকে সুমির উদ্দিগ্ন কণ্ঠ।

“কখন থেকে?”

“গতকাল বিকেল থেকে”।

"মানে?"

“গতকাল বিকেলে অফিস থেকে ফিরল। পোশাক বদলে আমাকে কিছু না বলেই বেড়িয়ে গেল। তারপর থেকে তার খোজ নেই। মোবাইলটাও অফ। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও যায়নি। শেষে আর উপায় না দেখে তোর কাছে এলাম”।

ররিন হাসল।

“হাসছিস কেন?”

“তোর সেই পুরনো চাল!”

“মানে?”

“মানে কথা আদায়ের জন্য প্যাচ খেলা। তোর পুরনো চাল এটা। আমি জানি তুই মিথ্যে বলছিস। জাহিদ ভাই অফিস থেকে ফিরে বলেছেন যে তিনি বরিশাল জাচ্ছেন। ঠিক না?”

“ঠিক ধরেছিস। এই জন্যই তোকে আমি বুদ্ধিবাবা বলে ডাকি!”

“তুই কি আমার মুখ থেকে পুরো বিষয়টা শুনতে চাস?”
“হ্যাঁ”।

“আমার মনে হয় তুই জাহিদ ভাইয়ের মুখ থেকে ব্যাপারটা শুনিস। সেটাই ভাল হবে। জাহিদ ভাই সাব্বিরের মায়ের সাথে দেখা করে ফেরার পর দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। আর সমস্যা থাকবেনা”।

“তুই কি সব ধরতে পেরেছিস?” সুমি নিচু স্বরে বলল।

“হ্যাঁ আমি সব ঘটনা জেনে ফেলেছি”। রবিন গলা শান্ত।

“জাহিদকে সব বলেছিস?”

“হ্যাঁ বলেছি”।

“আমি রাখলাম তাহলে”। হঠাৎ তাড়াহুড়ো শুরু করল সুমি।

রবিন বলল, “চিন্তা করিস না, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সব ভুলে যা। জাহিদ ভাই খুব ভাল মানুষ। তোকে খুব ভালবাসে”।

***

সেদিন বিকেলেই খুব জরুরী একটা কাজ ছিল রবিনের। চিন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অ্যাবনরমাল সাইকোলজির উপর একটা ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার আছে।

প্যান্ট শার্ট পড়া শেষ। গালায় একটা টাই লাগাচ্ছে এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ হল।

রবিন এসে খুলে দিয়ে চমকে উঠল! “জাহিদ ভাই! আপনি না বরিশাল গেছেন?”

“বরিশাল? আমি? কই নাত!”

“কেন? সুমি তো বলল! গতকাল বিকেল বেলা অফিস থেকে এসেই চলে গেছেন!”

“কি বলছেন? আমি তো গতকাল আপনি অফিস থেকে আসার পরই বাড়ি চলে যাই। আর বের হইনি!”

“তবে সুমি কেন একথা বলল?”

“আমি কেমন করে বলব? সুমি তো সেই সকাল বেলা বাড়ি থেকে বের হয়েছে আর ফেরেনি। মোবাইল অফ। আমি বেরিয়েছি কোথায় গেল খোজ নিতে!”

হঠাৎ একটা চিন্তা উদয় রবিনের মাথায়! কোথাও কোনও ভুল হয়নি তো? আরে... ভুল হয়েছে তো! মারাত্মক ভুল হয়েছে!

“জাহিদ ভাই! আমি মারাত্মক একটা ভুল করে ফেলেছি! সুমির বড় বিপদ! মেয়েটা আত্মহত্যা করতে চলেছে!”

“কি বলছেন ভাই? কেন?”

“একটা বিষয়ে ভুল ধারনা করেছিলাম আমি! এক্ষুনি আমার সাথে আসেন। আশাকরি এখনো দেরি হয়ে যায়নি!”

"কোথায় যাচ্ছি?"

“আসুন আপনি, যেতে যেতে সব বলব!”

***

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল।

জাহিদ ও রবিন খোজ নিল বরিশালগামী কোনও লঞ্চ ছেড়ে গেছে কিনা। জানা গেল ঘণ্টা খানিক বাদে একটা লঞ্চ ছেড়ে যাবে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল রবিন।

অপেক্ষারত যাত্রীদের ভিরে ওরা সুমিকে খুজতে লাগল। খুব বেশি খুজতে হলনা। এক কোনায় মেয়েটি চুপচাপ বসে ছিল। তার চোখে কেমন যেন ঘোর লাগা দৃষ্টি।

জাহিদ এগিয়ে গিয়ে সুমির সামনে দাঁড়াল। জাহিদকে দেখে সুমি মাথা নিচু করে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। জাহিদ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।

“কেদনা সুমি, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছিনা?”

রবিন জাহিদের কাঁধে একটা হাত রাখল। “জাহিদ ভাই, আপনিও সুমির সাথে বরিশাল যান। সাব্বিরের মায়ের সাথে দেখা করে আসুন। বিশ্বাস করুন এতভাল মানুষ আর দেখিনি আমি। ওনার সাথে দেখা করে মাফ চাইবেন। দেখবেন সব সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন”।

***

রাত হয়েছে অনেক। প্রতিদিনের অভ্যাসমত ডায়রি লিখতে বসেছে রবিন।

....প্রথম থেকেই আমার একটা ভুল ধারনা ছিল। যার ফলে আমি একটা ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম সাব্বির একাই জাহিদকে ব্লাকমেইলিং করছে, শেষে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু একবারও চিন্তা করিনি একাজে তাকে কেউ একজন সাহায্য করছে।

প্রকৃত ঘটনা হল সাব্বির ও সুমি পরস্পরকে ভালবাসত। যদিও অনেক আগে থেকেই সুমির বিয়ে ঠিক করা ছিল জাহিদের সাথে, মানুষের মন বড় বিচিত্র! সাব্বিরের সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাতের এক পর্যায়ে সুমিও ছেলেটার প্রেমে পরে যায়। কিন্তু তারা দুজনেই জানত যে তাদের এই সম্পর্ক কেউ মেনে নিবে না। সুমির বাবা ভয়ঙ্কর রকম রাগী মানুষ। সুমির সাহস ছিলনা বাবার অবাধ্য হওয়ার। তাই তারা দুজনে পরিকল্পনা করে তাদের মামাত ভাইয়ের বিয়েতে একটা কেলেঙ্কারির সৃষ্টি করে, যেন সুমির বাবা দুজনের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনা সফল হয়নি।

এর মদ্ধে জাহিদ ভাই দেশে চলে এলেন। সুমির বিয়ের ডেট ফিক্সড হল। সুমি সাব্বিরকে বুদ্ধি দিল জাহিদকে ব্লাকমেইল করার। ভেবেছিল কেলেঙ্কারি আর এই সংক্রান্ত ছবির কথা শুনলে জাহিদ ভাই সরে যাবেন। এই পরিকল্পনাও ভেস্তে গেল। কিন্তু জাহিদ ভাইয়ের আগ্রহ হল প্রকৃত ঘটনা জানার। তিনি বরশাল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। সুমি জানত জাহিদ বরিশাল যাচ্ছে। মিলনের আর কোনও পথ না দেখে প্রেমিক যুগল ভয়ংকর এক সিদ্ধান্ত নিল। সাব্বিরকে সুমিই পাঠাল জাহিদকে মেরে ফেলার জন্য। সুমিকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকা সাব্বির সাথে সাথে রাজি হল। গ্রামে গিয়ে একটা ফাক খুজে জাহিদকে মারা তার জন্য কঠিন হবেনা।

জাহিদ ভাইকে ফলো করে লঞ্চে উঠল সাব্বির। যাত্রাপথে কোনও একসময় জাহিদ ভাই লঞ্চের রেলিং ধরে দাড়িয়ে পানি দেখছিলেন। হয়ত আশে পাশে কেউ ছিলনা। হঠাৎ সাব্বিরের মনে হল এই সুযোগ! গ্রামে যাওয়ার আগেই কাজ সেরে ফেলা যায়! সাব্বির পেছন থেকে এগিয়ে গেল। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য জাহিদ পিছন ফিরে তাকে দেখে ফেলল। শুরুহল দুজনের মাঝে ধস্তা ধস্তি। এক পর্যায়ে সাব্বির লঞ্চ থেকে পরে যায়।
বাস্তবিক অর্থে জাহিদ ভাই আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিলেন। তাই সাব্বিরের খুনের দায় সরাসরি তার উপর ফেলা যায়না। প্রতিদ্বন্দ্বীর মৃত্যুতে সুমিকে পাওয়া জাহিদ ভাইয়ের জন্য সহজ হয়ে গেল। সুমি ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেলেও বাইরে তা প্রকাশ করেনি। জাহিদ ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেল। প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও, শেষ পর্যন্ত সুমি সব কিছু মেনে নেয়। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাড়ায় জাহিদ ভাইয়ের দুঃস্বপ্ন।

আমি যখন সুমিকে বললাম আমি সব জেনে ফেলেছি এবং জাহিদ ভাইকে বলে দিয়েছি, সুমি জাহিদ ভাইকে কিভাবে মুখ দেখাবে ভেবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়! মানুষের মন আসলেই বড় বিচিত্র! সাব্বির যেভাবে গেছে, সুমিও সেভাবে যেতে চাইল! ভাগ্যিস! আমি ব্যাপারটা ধরতে পেরেছিলাম।

যাই হোক, একটা বিশাল ঝড়ের পর আবার সুমি ও জাহিদ এক হয়েছে। পরস্পরের অনেক কাছে চলে এসেছে তারা। আশাকরি বাকি জীবনটা তাদের সুখেই কাটবে....
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×