ড.সলিমুল্লার বিশ্লেষনটি ছিলো ২০১৮ সালের নির্বাচনটি নিয়ে একটি সঠিক বিশ্লেষন ।উনার ধার করা কথাটি নিয়েই আমার ২০১৮ সালের নির্বাচনটি নিয়ে দু'একটি কথা।
এতদিনের রাজনৈতিক তর্ক/বিতর্ক,আলোচনা -সমালোচনা সবকিছুর সমাধান ছিলো একটি সঠিক নির্বাচন।অর্থাত সকল কিছুর জবাব হতে পারতো জাতিয় নির্বাচনটি।এবং সেটাই হতো সঠিক অথবা বেঠিক সমাধান।শতভাগ নিস্কলংকের নির্বাচন যে হবেনা সেটা প্রথম থেকেই বোধগম্য ছিলো।খুব বড় কিছু চাওয়া আমাদের ছিলোনা এই নির্বাচনে।আমার মত কিছু মানুষের চাওয়া ছিলো এই নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির চিরতরে বিদায়।অর্থাত ইংরাজি শব্দে এলিমিনেট করে দেওয়া।আর কখনই যেনো প্রতিস্থাপন হতে না পরে সেই ব্যাবস্থা।কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ করলাম সেই সুযোগটি অনেকটা ইচ্ছে করেই জলান্জলী দেওয়া হলো।এই নির্বাচনটি হতেই পারতো অনেক সমস্যার প্রকৃত সমাধান।যেমন জঙ্গীদের ও দুর্ণিতীবাজদের আর কোন দিনই ফিরে না আসার সংকেত।আদর্শহীন রাজনিতীবিদদের চিরতরে কবর দিয়ে দেওয়া।অনেক সহজ কাজ ছিলো সেগুলো বাস্তবায়নে এই নির্বাচনকে কাজে লাগানো।আরো পরিস্কার করা যেতো ভবিষ্যত নেতৃত্ব কারা দিবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে।কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে তার কোন কিছুই প্রতিয়মান করা গেলোনা আরো একটি অস্বচ্ছ নির্বাচন করার মাধ্যমে।অসহায় আমি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়াটুকুই শুধু জানাতে পারছি এই ব্লগ ও সোস্যাল মাধ্যমটুকু ব্যাবহার করে।
পুরো ভোট চলাকালীন সময়টা আমি খুব নিবিরভাবে পর্যবেক্ষন করছিলাম।২৭টি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রায় অধিকাংশ মিডিয়ায়ই দৃষ্টি ছিলো আমার।সাথে সাথে প্রত্যক্ষ করছিলাম নিজের ও আশে পাশের অনেক নির্বাচনি এলাকার চলমান ঘটণা ও পরিবেশ।৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের দুপুর পর্যন্ত চিত্রটা ছিলো খুবই স্বচ্ছ।অর্থাত ২/১টি বিচ্ছিন্ন ঘটণা ছাড়া ।কিন্তু এরপরেই কি করে ,কেমন করে ,কেনইবা ফ্যাকাসে হতে থাকলো নির্বাচনি প্রক্রিয়া তা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা এখন অবধি।এই আত্মঘাতি কাজগুলো কি করে কারা করলো সেটাই অনুধাবন করতে পারছিনা।অর্থাত এখানে একটি গ্রে এরিয়া সৃস্টি করে দেওয়া হলো নির্বাচনটি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করার।প্রশ্নগুলোর উত্তর কোথায় আছে জানিনা।তাই প্রশ্নগুলো কাকে করবো সেটাও বুঝতে পারছিনা।অথচ নির্বাচন বিষয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতো যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশন।একমাত্র নির্বাচন কমিশন।অথচ এখন আমাকে অন্ধকার হাতরে খুজতে হচ্ছে উত্তরগুলো ।
একটি নির্বাচনে শতভাগ ভোট প্রয়োগের ইতিহাস পৃথিবিতেই নেই।এটা কখনই সম্ভব নয়।একমাত্র হবুচন্দ্রের গবু রাজার দেশেই সম্ভব।যা হয়েছিলো আমাদের দেশেই উর্দিপরা এক জোকারের হ্যা/না সেই বিখ্যাত নির্বাচনে।তাহলে কি সেই নির্বাচনের প্রতাত্মারা আবার ফিরে এসেছে ! প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে ৮০% ভোটের অর্থ হইতেছে শতভাগ ভোট প্রয়োগ।আসুন একটু অংকটা করে দেখি রাফলি।বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি ভোটার রয়েছেন প্রবাসী।অর্থাত যাদের ন্যুনতম সম্ভাবনা নেই ভোট প্রয়োগের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া।যেমন অনেকে শুধু ভোট উপলক্ষেই ছুটে যান দেশে এবং কেউ কেউ যদি তখন দেশে উপস্থিত থাকেন কোন কারনে বা অকারনে।এবং এই সংখ্যাটা ১০% পার্সেন্টেরও অধিক।বাকি দশ পার্সেন্টের মধ্যে অনেকেই কাজের কল্যাণে অনুপস্থিত নিজস্ব ভোট এলাকা থেকে।আরো কিছু সংখ্যক মানুষ জড়িত থাকে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে ,নিশ্চই তারাও বঞ্চিত হন ভোট প্রয়োগে।আর কিছু মানুষ জিব-মৃত থাকে তারাও নিশ্চই ভোট প্রয়োগে সমর্থ নয়।যেহেতু ভোট স্বশরিরে উপস্থিত থেকেই প্রদান করার রীতি।আমাদের দেশে নিশ্চই পোস্টাল ভোটের প্রচলন নেই এখন পর্যন্ত।এর অর্থ দাড়াইতেছে ভোট যজ্ঞের শুরুটাই হয় এই ২০% ভোটারকে বাদ রেখে।এটা হলো প্রথম ব্যাত্যয় আমার দৃষ্টিতে।
এবার আসুন প্রদত্ত ভোটের ব্যাবধান নিয়ে একটু বিশ্লেষন করি।কোন কোন প্রার্থী ব্যাতিক্রম ভোট পেতেই পারে ।কিন্তু সব যায়গায় যখন একই সমীকরন হবে তখন সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়।আমাদের দেশে এমন নেতা খুব কমই আছে যারা প্রদত্ত ভোটের নব্বই থেকে আটানব্বই ভাগ ভোট পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।কাউকে অসন্মান করার বিন্দুমাত্র অভিলাষ নিয়ে এই কথা বলছিনা।এরকম ক্যরিশমাটিক লিডাররাই হয় জাতিয় নেতা।সেই পর্যায়ের নেতা কি বাংলাদেশে বিদ্যমান আছে ?আমার দৃষ্টিতে শেখ হাসিনা ব্যাতিত ১জনও নেই। এমনকি শেখ হাসিনার পরে সেকেন্ড চয়েজ ও নেই।ব্যাক্তিগতভাবে আমাদের দেশে খুব বেশি মানুষের ভোট নেই।২/১টি ব্যতিক্রম বাদ দিলে।সেটার প্রতিফলন দেখা গেলো মাত্র ৩জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর বেলায়।তারা প্রকৃত অর্থেই এলাকার কৃতি সন্তান বিধায় নির্বাচিত হয়েছেন।ব্যাক্তিগত না থাকলেও দলের কিছু কোর ভোট আছে প্রত্যেক এলাকাতেই।যেহেতু সংগঠণ আছে ।তার কাঠামো ঘিরে কিছু মানুষতো নিশ্চই আছে।সেই হিসেবে ডাইহার্ড কর্মিবাহিনির ভোট কখনই বিপক্ষ দল পাবেনা।এটাই স্বাভাবিক বলে বিবেচিত।তাহলে সেটা মাথায় রেখে আমার প্রশ্ন সর্বনিম্ন ধরলেও যদি মনে করি বিএনপি/জামাত মিলে তাদের ১০% ভোট একেবারে কোন অবস্থাতেই বিপরিত মেরুতে থাকা রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি আশা করতে পারে? আমার হিসেব বলে কখনই নয়।প্রথমেই ১০% নাকচ হয়ে যায়।তাহলে প্রদত্ত ভোটের ৯৫/৯৬/৯৮ ভাগ ভোট কি করে পায় প্রায় অধিকাংশ প্রার্থী ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজে পাইনা যখন তখন খুব অসহায় মনে হয় একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাধারণ নাগরিক হিসেবে।
বি,এন,পি/জামাত ২০ দলিয় জোট এবং ঐক্য ফ্রন্টের লেজেগোবরে অবস্থার জন্য এমনিতেই শতভাগ ভরাডুবি নিশ্চিত ছিলো।সবশেষে অতি নাটকিয়তার জন্ম দিয়ে যুদ্ধাপরাধী দলের সদস্য ।সরাসরি যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্তদের সন্তান সন্ততিদের নমিনেশন দিয়ে তাদের মহা -পরাজয় নিশ্চিত করেছিলো পুর্বাহ্নেই।এর উপরে ছিলো একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নিমিনেশন বানিজ্য।সঠিক মুল্যায়ন না করে মনোনয়ন দান ।তারাতো তাদের পরাজিত মনোভাব নিয়েই নির্বাচনে এসেছিলো।তাদের উদ্দেশ্যই ছিলনা নির্বাচনে লড়াই করে জয়ী হওয়ার ।তাদের প্রচেষ্টাই ছিলো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার।এবং আবার সেই মৃত ইস্যুকে জীবিত করার ব্যার্থ প্রচেষ্টা।এবং সেটাকে সহায়তা করার লক্ষেই মনে হয় শতভাগ ভোট কাস্টিং ।যা গৌরবের সাথে অর্জন করা যায় তার জন্য কেনো এই কুটকৌশল বা হীনপন্থা?
আপনাদের কারো কাছে যদি সঠিক উত্তর জানা থাকে আলোচনায় স্বাগতম।ধন্যবাদ,কষ্ট করে ও ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:১৮