নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"জীবন শেখায়, আমি লিখে রাখি। গল্প অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার মিশেলে এটাই আমার ছোট্ট জগৎ\" গতানুগতিক সাধারণ মানুষ

মহিউদ্দিন হায়দার

শব্দে আমার আশ্রয়, লেখায় আমার মুক্তি। এখানে আমি লিখি, ভেবে দেখি, আর খুঁজি মানুষের মনের গল্প।

মহিউদ্দিন হায়দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুধা ও ভালোবাসার রাজ্য।

২৪ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৭




শুক্রবার। সরকারি ছুটির দিন। অন্য দিনের মতো সকালবেলা অফিসে ছুটে যাওয়ার তাড়া নেই, তাই একটু বেশিই রাত জেগে ছিলাম। শরীরটা কিছুটা খারাপ ছিল, তাই রাতের রান্না হয়নি। কলা আর বিস্কুটে ডিনার সেরেছিলাম। মনে হয়েছিল, ছুটির সকালে একটু বেলা করে ঘুমাবো—শরীরটাও বিশ্রাম পাবে, মনও একটু প্রশান্তি খুঁজে পাবে।

কিন্তু বিশ্রামের সে পরিকল্পনা আর বাস্তব হলো না। রাতে বই পড়তে পড়তে হঠাৎ যেন এক গভীর নীরবতার মধ্যে আমার অতীত ফিরে এলো। আমার প্রাক্তন সম্পর্কের মানুষ —যে আজ আর আমার জীবনের অংশ নয়, অথচ প্রতিটি নীরব মুহূর্তে সে যেন আমার বুকের গোপন কোনো ঘরে বসে থাকে, ঠিক এমনভাবে যেন আমি তাকে ভুলে গেলেও সে আমাকে ভোলেনি। আমি ভাবি, আমার সুখের সময় হোক বা কষ্টের—প্রতিটি ক্ষণেই কেন তার কথা মনে পড়ে? মনে হয়, সে অপেক্ষা করছে, কখন আমি দুর্বল হবো, আর তখনই সে স্মৃতির ঝাপি খুলে আমার সমস্ত প্রশান্তি কেড়ে নেবে।

নজরুলের সেই অমর পঙ্‌ক্তি মনে পড়ে—
“আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো, তবু আমারে দেবো না ভূলিতে।”
এই লাইনটা যেন আমার জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে গেছে। আমি ভুলতে চাই, কিন্তু ভোলারও এক সীমা আছে। স্মৃতি যে শুধু মস্তিষ্কে থাকে না—তা বাসা বাঁধে হৃদয়ে, আত্মায়, রক্তের প্রতিটি স্রোতে।

রাত গভীর হলো। ঘুমে চোখ বুজে এলো, কিন্তু সেই ঘুমও শান্তির নয়—অস্থিরতা আর শূন্যতার মিশেল। মনে মনে বলেছিলাম, যেহেতু অফিস নেই, তাই এলার্ম বন্ধ থাকুক; সকালটা ধীরে ধীরে আসুক। কিন্তু মানুষ যা ভাবে, জীবনের বাস্তবতা তা মানে না।

ভোরের ক্ষুধা আমার সমস্ত পরিকল্পনা ভেঙে দিলো। শরীর জানে, কখন সে খাবার চায়। রাতের সেই কলা-বিস্কুটে ভরা পেট ভোরের আগে বিদ্রোহ করে উঠল। ক্ষুধার ডাক নিঃশব্দ নয়—সে অন্তরের নিঃসঙ্গতার থেকেও প্রবল। এলার্মের চেয়ে তীক্ষ্ণ, অভিমানী ভালোবাসার চেয়ে নির্মম।

ক্ষুধার এই রাজ্যে কোনো আবেগ, কোনো ভালোবাসা টেকে না। মানুষ যতই অনুভূতির মানুষ হোক, পেটের শূন্যতা সব অনুভূতিকে গ্রাস করে নেয়। এক সময় মনে হয়—ভালোবাসা বিলাসিতা, ক্ষুধা বাস্তবতা। তবুও হৃদয়ের এক কোণে সেই ভালোবাসার জ্বালাটা রয়ে যায়, ঠিক যেন চাপা আগুন—যা নিভে গেলেও ছাইয়ের নিচে জ্বলজ্বল করে।

আজ আমি বুঝেছি—ক্ষুধা ও ভালোবাসা দুটোই মানুষকে অসহায় করে। ক্ষুধা শরীরকে দুর্বল করে, ভালোবাসা মনকে। আর এই দুইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মানুষ চিরকাল এক নীরব আত্মসমর্পণ করে চলে—কখনো পেটের কাছে, কখনো স্মৃতির কাছে।

ভালোবাসা ভুলে থাকা যায় না, ক্ষুধাকে অপেক্ষা করানো যায় না। একদিকে হৃদয়ের শূন্যতা, অন্যদিকে পেটের শূন্যতা—জীবনের ভারসাম্য যেন এই দুই অনিবার্য ক্ষুধার মাঝেই হারিয়ে যায়। আর আমি? আমি কেবল একজন সাধারণ মানুষ—যে ভালোবাসায় হারিয়েছে, ক্ষুধায় জেগে উঠেছে, তবু বেঁচে আছে এক নিঃসঙ্গ শুক্রবার সকালে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: অর্থ্যাত ভালোবাসার চেয়ে ক্ষুধা গুরুত্বপূর্ন।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৫

মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: ক্ষুধা ও ভালোবাসা দুটোই মানুষকে অসহায় করে। ক্ষুধা শরীর কে অসহায় করে আর ভালোবাসা মনকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.