ন্যুনতম পরিবেশগত ও সামাজিক মান রক্ষা না হওয়ায় বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবন বিধ্বংসী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফ্রান্সের তিনটি ব্যাংক।
গার্ডিয়ানের এক নিবন্ধে বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানানো হয়।
যে তিনটি ব্যাংক রামপালে বিনিয়োগে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এগুলো হলো- বিএনপি পরিবাস, এসএ গ্রুপ এবং ব্যাংক ট্রাক।
নিবন্ধে বলা হয়, এর ছয় মাস আগে এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা ভারতের ন্যাশনালম থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনে বিনিয়োগ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় নরওয়ের দুটি পেনসন ফান্ড।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জুনের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরকালে রামপালে বিতর্কিত ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সম্মতি দেন।
২০১২ সালের একটি চুক্তি অনুসারে ভারতের বৃহত্তম কয়লাবিত্তিক বিদ্যুৎ কোম্পানি রাষ্ট্রায়ত্ব ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে।
তবে পরিবেশবাদীরা সুন্দরবন থেকে মাত্র ৫ থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রকল্পটির ফলে পানি ও বায়ু মারাত্মকভাবে দূষণের আশঙ্কা করছেন।
সুন্দরবনের ক্ষতির আশঙ্কায় শুরু থেকেই প্রকল্পটির বিরোধিতা করে আসছে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ অসংখ্য সংগঠন। এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনও করে আসছে তারা। তবে সব আন্দোলন আর বিরোধী মতকে উপেক্ষা করে কাজ শুরু হয়েছে রামপালে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের।
গার্ডিয়ান জানায়, ভারতে এনটিপিসির অধীনে রয়েছে ২৫টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পরিবেশগত দিক থেকে এগুলোর অন্তত ৬টি নিম্নমানের। যেখানে এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৮০ স্কোর পেয়ে থাকে সেখানে ওই ছয়টি পেয়েছে ১৬ থেকে ২৮ ভাগ নম্বর।
রামপাল প্রকল্পের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এসব ব্যাংক অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে জানান ক্রেডিট এগ্রিকোলের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের গ্লোবাল হেড স্টানিসলাস টিয়ার।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ না করার কারণ সম্পর্কে ব্যাংক ট্রাকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিশ্লেষণে দেখা গেছে প্রকল্পটির নকশা, পরিকল্পনা এবং বস্তবায়নে ভয়াবহ খুঁত রয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পটিতে ইকুয়েটর প্রিন্সিপলস এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের পারফরম্যান্স স্টান্ডার্ড অনুযায়ী ন্যূনতম সামাজিক ও পরিবেশগত মানদণ্ড রক্ষা করা হয়নি।’
ন্যূনতম মান ছাড়া কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করা হলে তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
১৫০ কোটি ডলার ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্পটিতে ভারত ও বাংলাদেশ মাত্র ৩০ ভাগ অর্থায়ন করবে। বাকিটা আসবে ঋণ থেকে।
বিগত ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আয়ালার পর সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। সিডর ও আয়ালা ছিল প্রাকৃতিক ঘটনা। তাই সুন্দরবন আবারো তার জৌলুস নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু মানুষ সৃষ্ট বিপর্যয় থেকে সুন্দরবন কোনো দিনও বাঁচতে পারবে না। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তা আমাদের সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দেবে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কি এবং এটা কিভাবে সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে এবং এতে আদৌ বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আছে কিনা বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
এই বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে পরিবেশের ব্যপক ক্ষতির আশংকা থাকায় ভিনদেশিরা অর্থায়ন নাকচ করছে, অথচ আমরা সেই ক্ষতিকে আলিঙ্গন করে গ্রহন করছি!!! এটা কার স্বার্থে....????
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১