somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী।। রেজা ঘটক

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১০ সালের ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল, ভারত ও বাংলাদেশ কতগুলো দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে পারস্পারিক উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করতে অঙ্গীকার করে। সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ৫১ দফা যৌথ দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর আর্টিকেল ৩৫ অনুসারে ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব এবং ভারতের বিদ্যুৎ সচিব একটি এমওইউ (memorandum of understanding) চুক্তি সাক্ষর করেন। ওই এমওইউ অনুযায়ী, ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (the National Thermal Power Company of India) ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (the Power Development Board of Bangladesh) যৌথভাবে বাগেরহাটের রামপাল এলাকায় একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ এপ্রিল ২০১৩ সালে ঢাকায় বিদ্যুৎ ভবনে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি আসলে কী?
১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য বাগেরহাটের রামপালে এই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ করা হবে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই নির্মাণ ব্যয়ের শতকরা ৭০ ভাগ বৈদেশিক ঋণ থেকে ধার করা হবে। বাকী শতকরা ৩০ ভাগ প্রকল্প ব্যয় বাংলাদেশ ও ভারত সমানভাবে অর্থ্যাৎ শতকরা ১৫ ভাগ হারে বহন করবে। এই প্রকল্প থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সেই বিদ্যুৎ কিনবে ভারতের কাছ থেকে! আর বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হবে একটা ফর্মুলা অনুসারে। কী সেই ফর্মূলা?
যদি কয়লার দাম প্রতি টন ১০৫ ডলার হয় তবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ৫ টাকা ৯০ পয়সা। আর যদি কয়লার দাম প্রতি টন ১৪৫ ডলার হয় তবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়লার দাম প্রতি টন ১৪৫ ডলার চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ এই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ যদি বিদ্যুৎ কিনতে চায় তবে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা।
অথচ এর আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, খুলনার লবণচরা এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারায় যে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশের ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে পিডিবির চুক্তি করেছিল, সেখানে পিডিবি মাওয়া থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে ৪ টাকায় এবং আনোয়ারা ও লবণচড়া থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে ৩ টাকা ৮০ পয়সা হিসেবে। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে পিডিবি'র প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। এটা কার স্বার্থে করা হল? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অংকের এই খেলা বুঝবে না, তাই? নাকী একদল লোক সরাসরি পার্সেন্টেজ ব্যবসায় জড়িত!! তারা কত শক্তিশালী তা আমাদের মতো আমজনতার বোঝার সাধ্য নাই।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে কি পরিমাণ জমি লাগবে?
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ওই এলাকায় সরকারকে মোট প্রায় ১৮৩০ একর ধানী জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ১৮৩০ একর ধানী জমি অধিগ্রহণের ফলে ওই এলাকা থেকে প্রায় ৮ হাজার পরিবারকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রতি পরিবারে যদি গড়ে পাঁচজন সদস্য হয়, তাহলে মোট প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করতে হবে। ৪০ হাজার মানুষকে তাদের বাপদাদার বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদ করে আমরা কী পাব? ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ আবার কিনতে হবে প্রায় দ্বিগুন দামে। কার স্বার্থে আমরা এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করব? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আরো ভয়ংকর বিষয় সামনে চলে আসবে। যদিও এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মাত্র ৬০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কেন্দ্রটিতে ৬৬০ মেগাওয়াটের মোট দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট থাকবে। যার মধ্যে প্রথম ইউনিটটি নির্মাণ করতে প্রায় সাড়ে চার বছর সময় লাগবে। অর্থ্যাৎ প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে ২০১৮ সাল নাগাদ। আর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পরবর্তী ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সময় লাগবে আরো সাড়ে চার বছর। অর্থ্যাৎ ২০২৩ সাল নাগাদ এই রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে আমরা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে পারি। ততোদিন ওই এলাকায় কী কী হতে পারে একবারও কী আমাদের সরকারের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা তা ভেবে দেখেছেন?
এই নয় বছরে গোটা এলাকার পরিবেশ, কৃষি, মৎস্য ও পানিসম্পদের উপর বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। যে কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে আমাদের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের প্রায় গোটাটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। মানে হল, ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে আমরা সুন্দরবন ধ্বংস করার বীজ রোপন করেছি!!!

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প দিয়ে আমরা কীভাবে সুন্দরবন ধ্বংস করব তার একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
১.রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত এলাকাটি আগে সুন্দরবনের অংশ ছিল। বর্তমানে সুন্দরবন থেকে ওই এলাকার দূরত্ব মাত্র ৫ থেকে ১৪ কিলোমিটার। সুন্দরবনের এতো নিকটে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করলে তা সুন্দরবনকে অবশ্যই ধ্বংস করবে।
২. রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সকল প্রয়োজনীয় মালামাল ও যন্ত্রপাতি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নদীপথে পরিবহন করা হবে। ফলে বাড়তি নৌযান চলাচল, তেল নিঃসরণ, শব্দদূষণ, আলো, বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি সুন্দরবনের টোটাল ইকো সিস্টেমকে, বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, ডলফিন, ম্যানগ্রোভ বন ইত্যাদির উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
৩. ভারী নৌযান চলাচলের জন্য প্রয়োজন হবে নদী ড্রেজিংয়ের। নদী ড্রেজিংয়ের কারণে নদীর পানি ঘোলা হবে। নদী ড্রেজিং সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বাড়তি তেল-গ্রিজ ইত্যাদি নিঃসৃত হয়ে নদীর পানি দূষিত হবে। ফলে ওই অঞ্চলের সকল নদীর মাছ ও ডলপিন মারা যাবে।
৪. মালামাল ও ভারী যন্ত্রপাতি খালাসের জন্য প্রকল্প এলাকায় জেটি নির্মাণ করতে হবে। এই জেটি নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে পশুর নদের তীরবর্তী বর্তমানে যে ম্যানগ্রোভ বনের সারি আছে, তা কাটা পড়বে। নদীতীরের ঝোপঝাড় কেটে ফেলার কারণে ঝোপঝাড়ের বিভিন্ন পাখি, বিশেষ করে সারস ও বকজাতীয় পাখির বসতি নষ্ট হবে।
৫. বিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন অপারেশনে থাকবে তখন ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন অন্তঃত প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড ও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। যা ওই অঞ্চলে চরম পরিবেশ ভারসাম্য নষ্ট করবে।
৬. বিদ্যুৎ কেন্দ্র যখন অপারেশনে থাকবে তখন পশুর নদ থেকে প্রতিঘণ্টায় ৯ হাজার ১৫০ ঘনমিটার করে পানি প্রত্যাহার করা হবে। যা পশুর নদের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করবে।
৭. রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিশোধন করার পর তরল বর্জ্য বা ইফ্লুয়েন্ট ঘন্টায় ১০০ ঘনমিটার হারে পশুর নদীতে নির্গত করা হবে, যা গোটা সুন্দরবন এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করবে।
৮. রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ২৭৫ মিটার উচু চিমনি থেকে নির্গত গ্যাসীয় বর্জ্যের তাপমাত্রা হবে ১২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে আশপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। যা সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
৯. কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে অন্তঃত ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। যাতে বিভিন্ন ভারী ধাতু, যেমন- আর্সেনিক, পারদ, সীসা, নিকেল, ভ্যানাডিয়াম, বেরিলিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, রেডিয়াম মিশে থাকবে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
১০. এই বিষাক্ত ছাই পরিবেশে নির্গত হলে যেমন ব্যাপক দূষণ হবে তেমনি এই ছাই দিয়েই প্রকল্পের মোট ১৮৩০ একর জমির মধ্যে ১৪১৪ একর জমি ভরাট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে! এই বর্জ্যছাইয়ের বিষাক্ত ভারী ধাতু নিশ্চিতভাবেই বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে প্রকল্প এলাকার মাটি ও মাটির নিচের পানির স্তর দূষিত করবে। এর প্রভাব শুধু প্রকল্প এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। গোটা সুন্দরবন এলাকায় ছড়িয়ে যাবে। ভবিষ্যতে যা সুন্দরবন অঞ্চলে প্রতিনিয়ত এসিড বৃষ্টির কারণ হতে পারে।
১১. সাধারণতঃ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রতি ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ২.২ বিলিয়ন গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়। রামপালের প্রকল্পের ক্ষেত্রে পানির এই প্রয়োজন নিঃসন্দেহে মেটানো হবে পশুর নদের পানি থেকে। পশুর নদের পানি নোনা ও মিঠা জলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের প্রয়োজন মেটাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই নদীর সঙ্গে ওই গোটা অঞ্চলের সামগ্রিক জীববৈচিত্র্যের সংযোগ রয়েছে। এটি ওই অঞ্চলের জনবসতির ক্ষেত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নদ। পশুর নদের পানির ভারসাম্য নষ্ট হলে গোটা সুন্দরবন অঞ্চলে বিপর্যয় নেমে আসবে। যা আসলে আমাদের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ধ্বংস করে ফেলবে।
এবার আসি কিছু প্রয়োজনীয় কথায়। যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, ২০১০ সালে দেশটির মোট কার্বন ডাই-অক্সাইডের ৮১ ভাগ উদগীরণ করেছে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলো। যা থেকে মোট শক্তির মাত্র ৪১ ভাগ পাওয়া গেছে। এ বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী সকল দেশেই কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আমেরিকার মতো সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবে না। তা এখনই একশোভাগ নিশ্চিত করে বলা যায়।
কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো মারাত্মকভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে বলে সাধারণতঃ বনাঞ্চলের কাছাকাছি এই ধরনের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় না। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা সুন্দরবনের ঘোষিত সংরক্ষিত ও স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে। বিশ্বের কোথাও মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটায় বলে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫-২০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় না। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কীভাবে অনুমোদন দেওয়া হল? এই অনুমোদনের আগে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কোনো গবেষণা কী করা হয়েছে? বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশে সুন্দরবনের মতো ইকো সিস্টেম ধ্বংস করার জন্য কেন আমরা এই প্রকল্প অনুমোদন করব, তা স্বাভাবিক কারণে কারোর পক্ষেই কাম্য হতে পারে না।
বিগত ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আয়ালার পর সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। সিডর ও আয়ালা ছিল প্রাকৃতিক ঘটনা। তাই সুন্দরবন আবারো তার জৌলুস নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু মানুষ সৃষ্ট বিপর্যয় থেকে সুন্দরবন কোনো দিনও বাঁচতে পারবে না। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তা আমাদের সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দেবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আকুল আবেদন, রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন করবেন না। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প গোটা সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দেবে। তাছাড়া এই প্রকল্পে ভারত মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে মুনাফা পাবে শতকরা ৫০ ভাগ। আবার এই প্রকল্পে ভারতীয় কোম্পানির মালিকানাও থাকবে অর্ধেক। আবার আমাদের বিদ্যুৎ কিনতে হবে দ্বিগুন দামে। এটা কোনোভাবেই কোনো গ্রহনযোগ্য প্রকল্প হতে পারে না। এর আগে, এই ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসির ভারতের মধ্যপ্রদেশে প্রস্তাবিত একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় বাতিল করে দিয়েছিল। ভারতের পরিবেশ মন্ত্রক তখন বলেছিল, “বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য প্রস্তাবিত স্থানটি কৃষিজমি। যা মোটেই প্রকল্পের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া নর্মদা নদী থেকে প্রকল্পের জন্য ৩২ কিউসেক পানি টেনে নেওয়া প্রকল্পের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। কৃষি জমির সল্পতা, নিকটবর্তী জনবসতি, পানির সল্পতা, পরিবেশগত প্রভাব এসব বিবেচনায় এই প্রকল্প বাতিল করা হল।”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে বিবেচনায় এনটিপিসি নিজের দেশ ভারতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারেনি, সেই একই বিবেচনায় বাংলাদেশে তাদের প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হবে আত্মঘাতী। যা আমাদের গোটা সুন্দরবনকেই ধ্বংস করে দেবে। তাছাড়া চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় কোম্পানিকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত মুনাফার উপর কোনো করও দিতে হবে না। এটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির সুস্পষ্ট বৈষম্যমূলক নীতি এবং বাংলাদেশের জন্য অলাভজনক। তাছাড়া, নয় বছরে মাত্র ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য আমাদের সুন্দরবনকে ধ্বংস করতে দেওয়ার সুযোগটি কোনো সুস্থ মাথার চিন্তা হতে পারে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সুন্দরবনকে বাঁচাতে চাইলে, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জীব-বৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা করতে চাইলে, এখনই বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী এই রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করুন। নইলে সভ্যতার কোনো সম্পূরক টিকাই এই ধ্বংস থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারবে না।
রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল কর, করতে হবে। নইলে গোটা সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে চোখের সামনে। আসুন এই রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের জন্য সবাই একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। সুন্দরবনের স্বাভাবিক জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সকল পরিবেশবাদী মানুষের এক কাতারে সামিল হবার জন্য অনুরোধ করছি। সুন্দরবন কারো ব্যক্তি সম্পত্তি নয়। সুন্দরবন ধ্বংস করার যে কোনো চক্রান্ত রুখে দিতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:১৯
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×